তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন?

বিবিসি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরে আসবেন সেটি নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। তাকে দেশে ফিরে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ভূমিকা পালন করতে পারে।

তার দেশে ফিরে আসার আগে মামলাগুলো প্রত্যাহার করানো সম্ভব হলে সেটি তার জন্য রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হবে। তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানিয়েছেন, তারেক রহমান চান তার প্রতিটি মিথ্যা মামলা যেন প্রত্যাহার করা হয়।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো প্রত্যাহার করার জন্য বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ধীরে ধীরে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন। সোমবার বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। মামলা প্রত্যাহার করা না হলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।

অন্যদিকে তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন সেটি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরাও বিষয়টি বুঝতে চাইছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, মামলা চলমান থাকায় তিনি কি দেশে ফিরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন? নাকি মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন?

তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কবে?

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকেই ভেবেছিলেন তারেক রহমান হয়তো দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় আড়াই মাস পার হতে চললেও রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন সেটি নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। তারেক রহমান কবে দেশে ফিরে আসবেন সেটি নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না বিএনপি নেতারা।

‘বিএনপির তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কেউ হয়রানি থেকে বাদ যাননি। তারেক রহমান শুধু তার নিজের মামলা নিয়ে চিন্তা করছেন না। বিএনপির নেতা-কর্মী, সমমনা রাজনৈতিক দল ও স্বাধীনচেতা মানুষের বিরুদ্ধে গত ১৬ বছরে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি চান প্রতিটি মিথ্যা মামলা যেন প্রত্যাহার করা হয়, বিবিসি বাংলাকে বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন।

বিএনপির বরাবরই দাবি করছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বিএনপির এ দাবি কতটুকু সত্য যেটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আমিন বলেন, তারেক রহমান যাতে দেশে ফিরে আসতে পারেন সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে আইনগত এবং রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

‘এমনও হতে পারে যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেল, কিন্তু অন্য নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়ে গেল। তিনি চাচ্ছেন, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত সবার মানবাধিকার যাতে সুরক্ষিত থাকে এবং তারা যেন আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত না হয়,’ বলছেন আমিন।

‘বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে মানবাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হলে তিনি দেশে ফিরবেন।’

মামলা প্রত্যাহারের দাবি কেন?

বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ইতোমধ্যে তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার করার জন্য দাবি তুলে ধরেছেন। তাদের অনেকের আশঙ্কা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এবং নানা ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এমন অবস্থায় মামলা প্রত্যাহার করার আগে তিনি দেশে আসলে বিষয়টি ইতিবাচক নাও হতে পারে।

এজন্য রহমান দেশে ফিরে আসার আগে মামলাগুলো প্রত্যাহার করানো সম্ভব হলে সেটি তার জন্য রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হবে। ‘প্রায় আড়াই মাস হতে চললো কিন্তু এখনো পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার করার কোন সাইন (লক্ষণ) দেখা যাচ্ছে না,’ বলেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল।

‘প্রতিটা মামলা ভিত্তিহীন। গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ৫ অগাস্টের পর সারা দেশের মানুষের এবং রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশা ছিল এসব মামলা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে,’ বলেন কায়সার কামাল।

ঠিক এর এক সপ্তাহ আগে কায়সার কামাল বলেছিলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল তখন বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে আসছি, আইন-আদালত-সংবিধানের প্রতি তারেক রহমান সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। তিনি জানেন তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, প্রতিটি মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট।’

‘ভিত্তিহীনভাবে কয়েকটি মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। তার পরও তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো মোকাবিলা করা হবে।’

তারা কি সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন? এমন প্রশ্নে কায়সার কামাল বলেন, ‘না, কোনো অবস্থাতে সরে আসি নাই। মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়টি আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ।’

কামাল বলেন, শুধু তারেক রহমানের মামলা নয়, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে’ আওয়ামী লীগের সময় যেসব রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল সেসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। দেশের বিভিন্ন জেলায় এখনো বিগত সরকারের নিয়োগ করা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রয়েছে। তাদের পদ থেকে না সরালে মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কয়টি মামলা?

কায়সার কামাল জানান, ওয়ান ইলেভেনের সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া ১৭টি মামলার মধ্যে অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা এবং সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় সাজা হয়েছে। এছাড়া কর ফাঁকি, চাঁদাবাজির বাকি ১৫টি মামলা স্থগিত রয়েছে।

মোট পাঁচটি মামলায় তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। এছাড়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৭০’রটির বেশি মানহানির মামলা আছে রহমানের বিরুদ্ধে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও ব্যবসায়ীদের আটক করা হয়। তারেক রহমানকে ওই বছরের সাতই মার্চ গ্রেফতার করা হয়। পরের বছর তেসরা সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে লন্ডন চলে যান তিনি।

সরকারের উদ্যোগ কী?

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক কারণে হওয়া ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।

এনিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে।

জেলা কমিটি সুপারিশ দেবার পর সেগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হবে এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করা হবে। এরপর তালিকা তৈরি করে মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।

জেলা পর্যায়ের কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের সঙ্গে এজাহার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে।

আবেদন পাবার সাত কর্মদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি জেলার পাবলিক প্রসিকিউটরের (ক্ষেত্রবিশেষে মেট্রোপলিটান পাবলিক প্রসিকিউটর) কাছে মতামতের জন্য পাঠাবেন।

এরপর ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটর (ক্ষেত্রবিশেষে মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর) তার মতামত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠাবেন। পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত সংগ্রহ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে জেলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন।

জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশ পাবার পর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সেগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করবে। প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করবে এবং মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৫ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৬ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৭ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

১০ দিন আগে