ডা. রওশন আরা বেগম
চলতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর শ্লোগানটা ছিল ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত—ভবিষ্যত হোক আলোকিত’। জন্ম সুরক্ষিত হোক— এটা একজন মায়ের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারছি! একজন নারীর জীবনে কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। সবচেয়ে কঠিন ধাপটি হল মা হওয়ার সময়টা। তিনি মা হতে কখন চাইবেন, হতে পারবেন কিনা, সময় হয়েছে কিনা, জটিলতা কতখানি—সব জানবার অধিকার তার আছে। কিন্তু প্রাক এ সময়টাকে আমরা কখনোই স্বাস্থ্য কার্যক্রমে প্রাধান্য দিই না, Pre Conceptional Counseling (প্রসব পূর্ববর্তী) আলোচনার জন্য এই ধাপটা অবশ্যই নারীর জীবনে জরুরি এবং বিশেষ সময়।
প্রসব পূর্ববর্তী আলোচনার জন্য প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি শ্লোগান হওয়া উচিত ‘২০ বছরের আগে মা হবেন না, ৩৫-এর পর সন্তান জন্ম দান থেকে বিরত থাকুন’ এবং তার সাথেই মা হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই আপনি/আপনারা দুজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এগুলো নিয়ে আমরা চিকিৎসক/স্বাস্থ্য কর্মীরা কথা বলি না অথবা কম বলি, কিন্তু এই কথাগুলোই পরবর্তী সকল জটিলতা থেকে মাকে রক্ষা করতে পারে। প্রসব পূর্ববর্তী আলোচনার পরই, প্রসবকালীন সময়ে মা কোথায় যাবেন, কীভাবে দেখাবেন এবং শেষ পর্ব অর্থ্যৎ প্রসব কোথায় হবে, সেটাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪৫.৪ লক্ষ নারী (১৫-৪১ বয়সের) প্রজনন ক্ষমতার অধিকারী, তার মধ্যে ২০১৫-২০১৯ বছরে প্রায় ৫.৩৩ লক্ষ মা গর্ভধারণ করেন। ২.৬০ লক্ষ অপরিকল্পিত গর্ভধারণ করেন এবং ১.৫৮ লক্ষ গর্ভপাত হয়ে যায়।
বয়সানুযায়ী ২০২৩ এ ১৫-১৯ এর মধ্যে ১ হাজারে ৭৩ জন গর্ভবতী হন। ১৮-র নীচেই গর্ভ ধারণ করে ৪৩%।
একজন নারী গর্ভধারণ করবে এবং সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিবেন, দেবার সুযোগ পাবেন এটি তার মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সবাই এই অধিকার পান না। যখনই একজন নারী গর্ভধারণ করেন, তিনি ইচ্ছে অনুযায়ী একজন চিকিৎসক দেখাতে পারবেন কিনা সেজন্য তাঁকে অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সংসার কর্তারা অনুমতি দিলেই তবে তিনি অধিকারটা পেতে পারেন। ফলে অনেকটা বিলম্ব হয় তার প্রথম ধাপের চিকিৎসা। এর পরের ধাপটা হলো সঠিক জায়গা—নিকটস্থ কার কাছে যাবেন, কীভাবে যাবেন, বাহন কি হবে, যেখানে যাবেন সেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কেউ আছেন কিনা এবং সেখানে যথাযথভাবে ডেলিভারী সম্পন্ন করার ব্যবস্থা আছে কিনা! এভাবেই মাদের জন্য আমরা অনেক বিলস্ব করি, করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশে এখনো সন্তান গর্ভে আসার পর মাত্র একবার ভিজিটে আসেন ৮৩% এবং ৪ বার আসেন ৪৪% শতাংশ। এর মধ্যে মানসম্মত চিকিৎসা পান মাত্র ২১% মা। এই অবস্থার মধ্যেই আমরা চাই, প্রতিটি গর্ভবতী মা নিশ্চিন্তে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসবেন এবং আস্থাজনক একটি প্রসব ঘর পাবেন। সেখানে তাঁকে সহায়তা করবেন মিডওয়াইফ, প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক। প্রসবের চিহ্ন নির্ধারণ হওয়ার সাথে সাথেই তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে—যেমন মিডওয়াইফ ছাড়াও তাকে সঙ্গ দেবেন তাঁর একজন আত্মীয়।
প্রসব ঘরটি হবে খোলামেলা, আলো-বাতাস প্রবেশ করে, কিন্তু তার প্রাইভেসি ঠিক রাখতে পারবে। ডেলিভারির সকল সরঞ্জাম থাকবে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করার এবং খিঁচুনির চিকিৎসার সব সরঞ্জাম হাতের কাছেই থাকবে। মিডওয়াইফকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হতে হবে।
মাতৃবান্ধব এই ঘরটি হোক প্রতিটি মায়ের জন্য একটি আস্থার জায়গা। তৃণমূল থেকে শহর পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ে মায়েদের জন্য প্রসব ঘরটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। অনেক বেসরকারী ক্লিনিক আছে, যেখানে আউটডোর থেকে সোজা মাকে সিজারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে পাঠানো হয়। প্রসব ঘরটি হবে মার জন্য প্রাথমিক পরীক্ষার ঘর, এখানে স্বাভাবিক প্রসব ব্যর্থ হলে তিনি অপারেশনে যাবেন।
বাংলাদেশে এখনো ৩৫% শতাংশ প্রসব হয় বাড়িতে মাত্র ১৮ শতাংশ প্রসব হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে, ২% হচ্ছে এনজিও প্রতিষ্ঠানে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ অধিদপ্তর ওজিএসবির সহায়তায় প্রসব ঘরের ওপর এবার তৃতীয় অধ্যাদেশ বইটি সরবরাহ করছেন। আমরা ওজিএসবি’র প্রতিটি সদস্যসহ নার্সিং মিডওয়াইফ—সবাই যদি দায়িত্ব নিই, তবে প্রসব ঘরটি মায়ের জন্য একটি আস্থার জায়গা হয়ে উঠবে। এজন্য অবশ্য বাধ্যতামূলক সরকারি আদেশ থাকতে হবে। সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রসব ঘরটিকে প্রাধান্য দিয়ে আদেশ জারি করতে হবে।
একজন গর্ভবতী মায়ের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে আসুন আমরা প্রসব ঘরটিকে একটি আস্থার জায়গায় পরিণত করি।
লেখক: সাবেক অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান (প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ), হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট, ওজিএসবি
চলতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর শ্লোগানটা ছিল ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত—ভবিষ্যত হোক আলোকিত’। জন্ম সুরক্ষিত হোক— এটা একজন মায়ের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারছি! একজন নারীর জীবনে কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। সবচেয়ে কঠিন ধাপটি হল মা হওয়ার সময়টা। তিনি মা হতে কখন চাইবেন, হতে পারবেন কিনা, সময় হয়েছে কিনা, জটিলতা কতখানি—সব জানবার অধিকার তার আছে। কিন্তু প্রাক এ সময়টাকে আমরা কখনোই স্বাস্থ্য কার্যক্রমে প্রাধান্য দিই না, Pre Conceptional Counseling (প্রসব পূর্ববর্তী) আলোচনার জন্য এই ধাপটা অবশ্যই নারীর জীবনে জরুরি এবং বিশেষ সময়।
প্রসব পূর্ববর্তী আলোচনার জন্য প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি শ্লোগান হওয়া উচিত ‘২০ বছরের আগে মা হবেন না, ৩৫-এর পর সন্তান জন্ম দান থেকে বিরত থাকুন’ এবং তার সাথেই মা হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই আপনি/আপনারা দুজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এগুলো নিয়ে আমরা চিকিৎসক/স্বাস্থ্য কর্মীরা কথা বলি না অথবা কম বলি, কিন্তু এই কথাগুলোই পরবর্তী সকল জটিলতা থেকে মাকে রক্ষা করতে পারে। প্রসব পূর্ববর্তী আলোচনার পরই, প্রসবকালীন সময়ে মা কোথায় যাবেন, কীভাবে দেখাবেন এবং শেষ পর্ব অর্থ্যৎ প্রসব কোথায় হবে, সেটাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪৫.৪ লক্ষ নারী (১৫-৪১ বয়সের) প্রজনন ক্ষমতার অধিকারী, তার মধ্যে ২০১৫-২০১৯ বছরে প্রায় ৫.৩৩ লক্ষ মা গর্ভধারণ করেন। ২.৬০ লক্ষ অপরিকল্পিত গর্ভধারণ করেন এবং ১.৫৮ লক্ষ গর্ভপাত হয়ে যায়।
বয়সানুযায়ী ২০২৩ এ ১৫-১৯ এর মধ্যে ১ হাজারে ৭৩ জন গর্ভবতী হন। ১৮-র নীচেই গর্ভ ধারণ করে ৪৩%।
একজন নারী গর্ভধারণ করবে এবং সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিবেন, দেবার সুযোগ পাবেন এটি তার মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সবাই এই অধিকার পান না। যখনই একজন নারী গর্ভধারণ করেন, তিনি ইচ্ছে অনুযায়ী একজন চিকিৎসক দেখাতে পারবেন কিনা সেজন্য তাঁকে অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সংসার কর্তারা অনুমতি দিলেই তবে তিনি অধিকারটা পেতে পারেন। ফলে অনেকটা বিলম্ব হয় তার প্রথম ধাপের চিকিৎসা। এর পরের ধাপটা হলো সঠিক জায়গা—নিকটস্থ কার কাছে যাবেন, কীভাবে যাবেন, বাহন কি হবে, যেখানে যাবেন সেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কেউ আছেন কিনা এবং সেখানে যথাযথভাবে ডেলিভারী সম্পন্ন করার ব্যবস্থা আছে কিনা! এভাবেই মাদের জন্য আমরা অনেক বিলস্ব করি, করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশে এখনো সন্তান গর্ভে আসার পর মাত্র একবার ভিজিটে আসেন ৮৩% এবং ৪ বার আসেন ৪৪% শতাংশ। এর মধ্যে মানসম্মত চিকিৎসা পান মাত্র ২১% মা। এই অবস্থার মধ্যেই আমরা চাই, প্রতিটি গর্ভবতী মা নিশ্চিন্তে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসবেন এবং আস্থাজনক একটি প্রসব ঘর পাবেন। সেখানে তাঁকে সহায়তা করবেন মিডওয়াইফ, প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক। প্রসবের চিহ্ন নির্ধারণ হওয়ার সাথে সাথেই তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে—যেমন মিডওয়াইফ ছাড়াও তাকে সঙ্গ দেবেন তাঁর একজন আত্মীয়।
প্রসব ঘরটি হবে খোলামেলা, আলো-বাতাস প্রবেশ করে, কিন্তু তার প্রাইভেসি ঠিক রাখতে পারবে। ডেলিভারির সকল সরঞ্জাম থাকবে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করার এবং খিঁচুনির চিকিৎসার সব সরঞ্জাম হাতের কাছেই থাকবে। মিডওয়াইফকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হতে হবে।
মাতৃবান্ধব এই ঘরটি হোক প্রতিটি মায়ের জন্য একটি আস্থার জায়গা। তৃণমূল থেকে শহর পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ে মায়েদের জন্য প্রসব ঘরটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। অনেক বেসরকারী ক্লিনিক আছে, যেখানে আউটডোর থেকে সোজা মাকে সিজারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে পাঠানো হয়। প্রসব ঘরটি হবে মার জন্য প্রাথমিক পরীক্ষার ঘর, এখানে স্বাভাবিক প্রসব ব্যর্থ হলে তিনি অপারেশনে যাবেন।
বাংলাদেশে এখনো ৩৫% শতাংশ প্রসব হয় বাড়িতে মাত্র ১৮ শতাংশ প্রসব হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে, ২% হচ্ছে এনজিও প্রতিষ্ঠানে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ অধিদপ্তর ওজিএসবির সহায়তায় প্রসব ঘরের ওপর এবার তৃতীয় অধ্যাদেশ বইটি সরবরাহ করছেন। আমরা ওজিএসবি’র প্রতিটি সদস্যসহ নার্সিং মিডওয়াইফ—সবাই যদি দায়িত্ব নিই, তবে প্রসব ঘরটি মায়ের জন্য একটি আস্থার জায়গা হয়ে উঠবে। এজন্য অবশ্য বাধ্যতামূলক সরকারি আদেশ থাকতে হবে। সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রসব ঘরটিকে প্রাধান্য দিয়ে আদেশ জারি করতে হবে।
একজন গর্ভবতী মায়ের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে আসুন আমরা প্রসব ঘরটিকে একটি আস্থার জায়গায় পরিণত করি।
লেখক: সাবেক অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান (প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ), হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট, ওজিএসবি
আচমকা সেই স্বাভাবিক দুপুর পরিণত হলো ভয়াল এক মুহূর্তে। একটি প্রশিক্ষণ বিমান আকাশ থেকে আছড়ে পড়ল স্কুলের ওপর। আগুন ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। শিশুদের কান্না, চিৎকার আর আগুনে পুড়ে যাওয়া শরীর— সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি জাতীয় ট্রাজেডি— যা আমাদের হৃদয় ছিন্নভিন্
৬ দিন আগেদেশে একটি যথার্থ যুগোপযুগী শিক্ষানীতি এবং উচ্চশিক্ষা কমিশন না থাকার মূল্য এখন চুকাতে হচ্ছে দেশের শিক্ষাখাতকে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা যায় শিক্ষাখাতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যয়কারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দুর্বলতাকে। অর্থাৎ শিক্ষায় রাষ্ট্রের বিনিয়োগ অপ্রতুল এবং তা আত্মঘাতী।
১০ দিন আগেঘটনার শুরু হয় এক র্যালিকে ঘিরে। এনসিপি এই র্যালির আয়োজন করে। এটি ছিল ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে। ওই আন্দোলনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। র্যালিটি গোপালগঞ্জে হয়। এই র্যালিতে বাধা দেয় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। অভিযোগ আছে, তারা এনসিপির নেতাদের মারধর করে। ভেন্যু ভাঙচুর করে।
১১ দিন আগেসরকারের সহনশীলতা আর এনবিআরের কর্মীদের আত্মসমালোচনা জরুরি, নয়তো দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ
১৩ দিন আগে