ডাকসুর সেমিনারে বক্তারা

আবরার ফাহাদ দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক ও আধিপত্যবাদ বিরোধী চেতনার বাতিঘর

ঢাবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনের কারণে মৃত্যুবরণ করা বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক ও আধিপত্যবাদ বিরোধী চেতানার বাতিঘর বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ছাত্র নেতৃবৃন্দরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত “ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব: স্মরণে শহিদ আবরার ফাহাদ” শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন৷

বক্তারা বলেন, শহীদ আবরার ফাহাদ শুধু একটি নাম বা ব্যক্তি নন তিনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বাতিঘর হিসেবে এই প্রজন্মের সামনে হাজির হয়েছেন। আবরারের শহীদ হওয়া ছিল একটি রাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্ট। যা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশে তরুণ সমাজকে জাগিয়ে তুলেছিল এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বীজ বপন করেছিল।

তারা আরও বলেন, আবরারের মতো দেশপ্রেমিক তরুণদের উত্থান প্রমাণ করে যে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দেশের কোটি কোটি তরুণদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বক্তারা এই চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ডাকসুর ভিপি আবু সাদেক কায়েম বলেন, শহীদ আবরার ফাহাদ এদেশের তরুণ প্রজন্মকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছে। আধিপত্যবাদীর বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে আমাদের ন্যাজ্যতা নিশ্চিত করতে হয় সেটা আমরা ফাহাদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ থেকে দেখতে পারি। আজকে যে জুলাই বিপ্লব হয়েছে সেই জুলাই বিপ্লবের বীজটা মূলত শহীদ আব্রার ফাহাদ বপন করে দিয়েছিল। আবরার ফাহাদ শাহাদাত পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে একটা প্রজন্ম তৈরি হয়ে গেছে। এর পরবর্তীসময়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দেখেন, পরবর্তীতে আরো অসংখ্য আন্দোলন হয়েছে। একটা প্রজন্মের মধ্যে একটা কনসেনসাস চলে আসছে এবং তার পূর্ণ বাস্তবায়ন আমরা জুলাই বিপ্লবে দেখতে পেয়েছি।

সেমিনারে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, আবরার ফাহাদ কোন একটি দলের বা সিঙ্গুলার কোনো একটা পার্টিকুলার কাওকে রিপ্রেজেন্ট করে না। আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আবরার ফাহাদকে আমরা শুধুমাত্র সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে তখনই আমরা রিপ্রেজেন্ট করতে পারব যখন আমরা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে সকল ভেদাভেদ ভুলে দাঁড়াতে পারব।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, আমরা আবরার ফাহাদকে এই জন্য সেলিব্রেট করব না শুধু যে আবরার শহীদ হয়ে আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ দেখিয়েছে। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের সামনে আগ্রাসন এবং আধিপত্যবাদ আরো শতগুণ, হাজার গুণ, লক্ষ গুণ শক্তি নিয়ে আবারও ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশের যেই স্বাধীন সীমান্তে আবার যদি আগ্রাসন নেমে আসে আবার যদি আধিপত্যবাদ নেমে আসে তাহলে আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আবারো কোটি কোটি আবরার শুধু বুয়েট নয়, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেমে আসতে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রস্তুতি স্বাধীন সীমান্ত তৈরি করা, সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের লক্ষ্য কোটি আবরার লাগবে। এই আবরার শুধু কোনো দলের হবে না সারা বাংলাদেশের হবে।

সেমিনারে আবরার ফাহাদ সারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ মানুষের কাছে একটি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞার নাম উল্লেখ করে জবানের সম্পাদক রেজাউল করিম রনি বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ধারণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ফাউন্ডেশন অফ জিওপলিটিক্স। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ফাউন্ডেশনটা তৈরি করা হয়েছে ভারতকে খুশি করার জন্য। এইজন্য দেখবেন 'বন্ধু রাষ্ট্র' কথাকে আবিষ্কার করা হয়েছে। । পৃথিবীতে বন্ধু রাষ্ট্র বলে কিছু নাই, রাষ্ট্র তৈরি হয় এনিমি পারসেপশনের উপর ভিত্তি করে। আমি যে একটা আলাদা রাষ্ট্র, স্টেট অফ এক্সেপশন, ভিন্নতা আমার সেটার কারণ হলো আমি অন্য অপরাপর রাষ্ট্রকে আমার শত্রু মনে করি। কিন্তু আপনাকে আমাকে শেখানো হয়েছে বন্ধু রাষ্ট্র এবং '৭১-এর এক আওয়ামী বয়ানের ভিতর দিয়ে। এখানে ভারতীয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের আধিপত্যকে সাংস্কৃতিকভাবে, সাহিত্যিকভাবে এমনভাবে মূলধারা করা হয়েছে যে, বন্ধু হওয়ার, একতরফা বন্ধু হওয়াটাই যেন গৌরবের, সম্মানের।

আপ বাংলাদেশের মুখ্য সংগঠক রাফে সালমান রিফাত বলেন, আবরার ফাহাদ আমাদের জন্য একটা মহান সিম্বল। একটা প্রতীক যিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন। তার শাহাদাতের পরে এই দেশের তরুণ ছাত্র সমাজ 'ডি-হিউম্যানাইজেশনের' যে রাজনীতি, ঘৃণা উৎপাদনের যে রাজনীতি এই রাজনীতির বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে ঐক্যবদ্ধ হওয়া শুরু করে, প্রতিরোধ শুরু করে এবং তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পারি ২০২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।

সেমিনারের উদ্বোধন ঘোষণা করেন আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ৷ এতে আরও বক্তব্য রাখেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, আমরা দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইন্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন