
ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এমন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন শুরু করল দেশটি। এ নিয়ে দেশটির কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত তথা বুধবারের (১০ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় অস্ট্রেলিয়ার এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের প্রক্রিয়া ও প্রভাবের ওপর নজর রাখছে গোটা বিশ্ব।
অস্ট্রেলিয়ায় কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে— ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, থ্রেডস, টিকটক, এক্স, ইউটিউব, রেডিট, কিক ও টুইচ। তবে ইউটিউব কিডস, গুগল ক্লাসরুম ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। আরও কোনো প্ল্যাটফর্ম নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে কি না— তা পর্যালোচনার মধ্যেই থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।
আইন বলছে, ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকেই ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নিতে হবে। এ আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ চার কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করা হবে। আইন কার্যকর হওয়ার আগেই অবশ্য মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেডস) অস্ট্রেলিয়ার অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দিতে শুরু করে।
অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে প্রায় ৫০ লাখ, যার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সরকার বলছে, শিশু-কিশোরদের শৈশব ও কৈশোর ফিরিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় থেকেই এ আইন পাস করা হয়েছে।
আইনটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, আমরা চাই আমাদের সন্তানরা তাদের শৈশব উপভোগ করুক। অভিভাবকরাও জানুক— আমরা তাদের পাশে আছি।
সরকারি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, অস্ট্রেলিয়ার ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ৯৬ শতাংশই কোনো না কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ক্ষতিকর কনটেন্ট দেখেছে, যেসব কনটেন্টের মধ্যে রয়েছে নারীবিদ্বেষ, সহিংসতা কিংবা আত্মহত্যার মতো স্পর্শকাতর বিষয়।
দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস বলেন, প্রযুক্তি কোম্পানির চাপ বা হুমকিতে সরকার পিছু হটবে না। অনেক অভিভাবকের দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাকে শক্তি দিয়েছে। প্রযুক্তি কোম্পানির ভীতিপ্রদর্শনে আমরা ভীত নই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অনেকে নিশ্চিত না যে এ নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য ভালো কিছু নাকি খারাপ। কেউ কেউ আবার নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন দিয়েছে।
১৪ বছর বয়সী জ্যাসিন্তা মনে করছে, সরকার তাদের বয়সী শিশু অবিশ্বাস দেখাচ্ছে। তার ভাষায়, ‘এটা অপমানজনক। সরকার ভাবছে আমরা মনে হয় ইন্টারনেট বুঝি না!’ একই বয়সী অলিভার অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘বিরক্তিকর’ অভিহিত করলেও এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বলে জানিয়েছে।
তবে ১২ বছর বয়সী পালোমা জানিয়েছে, স্ন্যাপচ্যাট ও টিকটকে সে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, যা এখন বন্ধ হয়ে যাবে। তার ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ডের অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি। গেমিংয়ের মতো অনেক বিষয়েই আমাদের মিল রয়েছে। এসব মাধ্যমে যুক্ত থাকলে বিশ্বের সঙ্গেই সংযুক্ত আছি বলে মনে হয়।’
পক্ষাঘাতগ্রস্ত কিশোর এজরা শলের (১৫) কাছেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার সঙ্গে যোগাযোগের উপায়। তার কথায়, ‘আমি এনবিএ দেখি। ফুটবল দেখি। মুভি দেখি, গান শুনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে দিলে সেটি আমার পৃথিবীকেই ছোট করে দেবে। আমার মতো যারা শারীরিক সীমাবদ্ধতায় আক্রান্ত, তাদের কাছ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকার ছিনিয়ে নেওয়াটাও সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলেও স্বীকার করছে এজরা। তবে নিষেধাজ্ঞাকে তার সমাধান মনে করছে না সে। তার ভাষায়, ‘কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব তাদের প্ল্যাটফর্মকে নিরাপদ রাখা। এর বদলে নিষেধাজ্ঞা ফার্স্ট এইড ব্যান্ডের মতো, স্থায়ী কোনো সমাধান না।’
কনটেন্ট ক্রিয়েটর এলা ও জোয়ি দুজনের বয়সই ১৪। ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের জন্য তারা কনটেন্ট তৈরি করে থাকে। ভ্লগের পাশাপাশি নাচ ও শপিংয়ের ভিডিও পোস্ট করে থাকে তারা।

এলা জানাচ্ছে, তার সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট পুরোটাই তার মা-বাবা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। সরকারের নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ শিশু-কিশোরদের ‘মঙ্গল কামনা’য় নেওয়া হলেও তাদের চেয়ে বয়স্করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপকারিতা বুঝতে পারবে না— এমনটিই মনে করে সে।
জোয়ি বলছে, নিষেধাজ্ঞা তার দৈনন্দিন রুটিনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। কারণ এখন থেকে আর সে ভিডিও বানাতে কিংবা ‘সৃজনশীলতা’ দেখাতে পারবে না।
১৪ বছরের কিশোরী এমিলি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার বাসিন্দা। তার কাছে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক মনে হয়েছে। এসব মাধ্যমকে ‘বিপজ্জনক ও আসক্তিকর’ অভিহিত করে সে বলছে, এর ফলে কিশোর-কিশোরীদের বুলিংয়ের শিকার হওয়ার ঘটনা কমবে।
এমিলির ভাষ্য, ‘কিশোর-কিশোরীদের অনেকেই হয়তো ভাবছে যে এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী দরকার বা আমরা এখন সরকারকে ঘৃণা করব। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এগুলো হাস্যকর। কারণ এটি ভালো ফল বয়ে আনবে।’
নিষেধাজ্ঞার পক্ষ নিলেও এর প্রভাব নিজের জীবনে পড়বে উল্লেখ করে এমিলি বলছে, স্কুলের বন্ধুবান্ধব বা অন্যদের সঙ্গে তো যোগাযোগ করেই থাকি। এখন থেকে হয়তো সেটা আর পারব না। তাদের মিস করব। অনলাইনে স্ক্রল করতে না পেরে আমি হয়তো বিরক্তও হয়ে যাব। তখন হয়তো আমাকে বাইরে যেতে হবে বা অন্য কিছু করতে হবে।’

এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগেই এর কার্যকারিতা নিয়ে নোয়া জোন্স ও ম্যাসি নেইল্যান্ড নামে দুই কিশোর ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্টের সহায়তায় হাইকোর্টে মামলা করেছে। তাদের যুক্তি, এ আইন কিশোরদের স্বাধীন যোগাযোগের অধিকারের বিরুদ্ধে।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্টের দাবি, গ্রামীণ অঞ্চলের শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর, ফার্স্ট ন্যাশনস কমিউনিটির শিশু এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকার অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, হুমকি বা মামলায় তারা নীতিগত অবস্থান থেকে সরে আসবে না।

অস্ট্রেলিয়ার এ নিষেধাজ্ঞা এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিশু-কিশোরদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যালগরিদমিক কনটেন্ট, সাইবার বুলিং, সহিংসতা, নারী বিদ্বেষ, মাদক সংক্রান্ত তথ্য, যৌন শোষণের ঝুঁকি ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়ে উদ্বেগও বাড়ছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে মা-বাবার অনুমতি বা আইডি যাচাইয়ের মতো পদক্ষেপ কার্যকর করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্টের আওতায় সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্ট অপসারণ ও শিশুদের জন্য টার্গেটেড বিজ্ঞাপন বন্ধের মতো প্রক্রিয়া অনুসরণে বাধ্য করছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার আইনটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নিউজিল্যান্ড। দেশটি ইঙ্গিত দিয়েছে, একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদেরও বিবেচনায় রয়েছে। কানাডা শিশুদের অনলাইন ক্ষতি প্রতিরোধে ‘অনলাইন হার্মস বিল’ প্রণয়ন করছে।
দক্ষিণ কোরিয়া আগে থেকেই কিশোরদের গেমিং সময় নিয়ে কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করে আসছে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরির আলোচনা চলছে দেশটিতে।
সব মিলিয়ে সারা বিশ্বই তাকিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দিকে, কীভাবে তারা শিশু-কিশোরদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করে। অস্ট্রেলিয়া সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আরও অনেক দেশই একই পথে অগ্রসর হবে, তা বলাই যেতে পারে।
[সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, এএফপি]

অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এমন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন শুরু করল দেশটি। এ নিয়ে দেশটির কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত তথা বুধবারের (১০ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় অস্ট্রেলিয়ার এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের প্রক্রিয়া ও প্রভাবের ওপর নজর রাখছে গোটা বিশ্ব।
অস্ট্রেলিয়ায় কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে— ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, থ্রেডস, টিকটক, এক্স, ইউটিউব, রেডিট, কিক ও টুইচ। তবে ইউটিউব কিডস, গুগল ক্লাসরুম ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। আরও কোনো প্ল্যাটফর্ম নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে কি না— তা পর্যালোচনার মধ্যেই থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।
আইন বলছে, ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকেই ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নিতে হবে। এ আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ চার কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করা হবে। আইন কার্যকর হওয়ার আগেই অবশ্য মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেডস) অস্ট্রেলিয়ার অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দিতে শুরু করে।
অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে প্রায় ৫০ লাখ, যার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সরকার বলছে, শিশু-কিশোরদের শৈশব ও কৈশোর ফিরিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় থেকেই এ আইন পাস করা হয়েছে।
আইনটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, আমরা চাই আমাদের সন্তানরা তাদের শৈশব উপভোগ করুক। অভিভাবকরাও জানুক— আমরা তাদের পাশে আছি।
সরকারি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, অস্ট্রেলিয়ার ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ৯৬ শতাংশই কোনো না কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ক্ষতিকর কনটেন্ট দেখেছে, যেসব কনটেন্টের মধ্যে রয়েছে নারীবিদ্বেষ, সহিংসতা কিংবা আত্মহত্যার মতো স্পর্শকাতর বিষয়।
দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস বলেন, প্রযুক্তি কোম্পানির চাপ বা হুমকিতে সরকার পিছু হটবে না। অনেক অভিভাবকের দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাকে শক্তি দিয়েছে। প্রযুক্তি কোম্পানির ভীতিপ্রদর্শনে আমরা ভীত নই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অনেকে নিশ্চিত না যে এ নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য ভালো কিছু নাকি খারাপ। কেউ কেউ আবার নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন দিয়েছে।
১৪ বছর বয়সী জ্যাসিন্তা মনে করছে, সরকার তাদের বয়সী শিশু অবিশ্বাস দেখাচ্ছে। তার ভাষায়, ‘এটা অপমানজনক। সরকার ভাবছে আমরা মনে হয় ইন্টারনেট বুঝি না!’ একই বয়সী অলিভার অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘বিরক্তিকর’ অভিহিত করলেও এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বলে জানিয়েছে।
তবে ১২ বছর বয়সী পালোমা জানিয়েছে, স্ন্যাপচ্যাট ও টিকটকে সে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, যা এখন বন্ধ হয়ে যাবে। তার ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ডের অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি। গেমিংয়ের মতো অনেক বিষয়েই আমাদের মিল রয়েছে। এসব মাধ্যমে যুক্ত থাকলে বিশ্বের সঙ্গেই সংযুক্ত আছি বলে মনে হয়।’
পক্ষাঘাতগ্রস্ত কিশোর এজরা শলের (১৫) কাছেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার সঙ্গে যোগাযোগের উপায়। তার কথায়, ‘আমি এনবিএ দেখি। ফুটবল দেখি। মুভি দেখি, গান শুনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে দিলে সেটি আমার পৃথিবীকেই ছোট করে দেবে। আমার মতো যারা শারীরিক সীমাবদ্ধতায় আক্রান্ত, তাদের কাছ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকার ছিনিয়ে নেওয়াটাও সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলেও স্বীকার করছে এজরা। তবে নিষেধাজ্ঞাকে তার সমাধান মনে করছে না সে। তার ভাষায়, ‘কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব তাদের প্ল্যাটফর্মকে নিরাপদ রাখা। এর বদলে নিষেধাজ্ঞা ফার্স্ট এইড ব্যান্ডের মতো, স্থায়ী কোনো সমাধান না।’
কনটেন্ট ক্রিয়েটর এলা ও জোয়ি দুজনের বয়সই ১৪। ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের জন্য তারা কনটেন্ট তৈরি করে থাকে। ভ্লগের পাশাপাশি নাচ ও শপিংয়ের ভিডিও পোস্ট করে থাকে তারা।

এলা জানাচ্ছে, তার সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট পুরোটাই তার মা-বাবা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। সরকারের নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ শিশু-কিশোরদের ‘মঙ্গল কামনা’য় নেওয়া হলেও তাদের চেয়ে বয়স্করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপকারিতা বুঝতে পারবে না— এমনটিই মনে করে সে।
জোয়ি বলছে, নিষেধাজ্ঞা তার দৈনন্দিন রুটিনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। কারণ এখন থেকে আর সে ভিডিও বানাতে কিংবা ‘সৃজনশীলতা’ দেখাতে পারবে না।
১৪ বছরের কিশোরী এমিলি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার বাসিন্দা। তার কাছে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক মনে হয়েছে। এসব মাধ্যমকে ‘বিপজ্জনক ও আসক্তিকর’ অভিহিত করে সে বলছে, এর ফলে কিশোর-কিশোরীদের বুলিংয়ের শিকার হওয়ার ঘটনা কমবে।
এমিলির ভাষ্য, ‘কিশোর-কিশোরীদের অনেকেই হয়তো ভাবছে যে এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী দরকার বা আমরা এখন সরকারকে ঘৃণা করব। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এগুলো হাস্যকর। কারণ এটি ভালো ফল বয়ে আনবে।’
নিষেধাজ্ঞার পক্ষ নিলেও এর প্রভাব নিজের জীবনে পড়বে উল্লেখ করে এমিলি বলছে, স্কুলের বন্ধুবান্ধব বা অন্যদের সঙ্গে তো যোগাযোগ করেই থাকি। এখন থেকে হয়তো সেটা আর পারব না। তাদের মিস করব। অনলাইনে স্ক্রল করতে না পেরে আমি হয়তো বিরক্তও হয়ে যাব। তখন হয়তো আমাকে বাইরে যেতে হবে বা অন্য কিছু করতে হবে।’

এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগেই এর কার্যকারিতা নিয়ে নোয়া জোন্স ও ম্যাসি নেইল্যান্ড নামে দুই কিশোর ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্টের সহায়তায় হাইকোর্টে মামলা করেছে। তাদের যুক্তি, এ আইন কিশোরদের স্বাধীন যোগাযোগের অধিকারের বিরুদ্ধে।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্টের দাবি, গ্রামীণ অঞ্চলের শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর, ফার্স্ট ন্যাশনস কমিউনিটির শিশু এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকার অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, হুমকি বা মামলায় তারা নীতিগত অবস্থান থেকে সরে আসবে না।

অস্ট্রেলিয়ার এ নিষেধাজ্ঞা এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিশু-কিশোরদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যালগরিদমিক কনটেন্ট, সাইবার বুলিং, সহিংসতা, নারী বিদ্বেষ, মাদক সংক্রান্ত তথ্য, যৌন শোষণের ঝুঁকি ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়ে উদ্বেগও বাড়ছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে মা-বাবার অনুমতি বা আইডি যাচাইয়ের মতো পদক্ষেপ কার্যকর করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্টের আওতায় সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্ট অপসারণ ও শিশুদের জন্য টার্গেটেড বিজ্ঞাপন বন্ধের মতো প্রক্রিয়া অনুসরণে বাধ্য করছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার আইনটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নিউজিল্যান্ড। দেশটি ইঙ্গিত দিয়েছে, একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদেরও বিবেচনায় রয়েছে। কানাডা শিশুদের অনলাইন ক্ষতি প্রতিরোধে ‘অনলাইন হার্মস বিল’ প্রণয়ন করছে।
দক্ষিণ কোরিয়া আগে থেকেই কিশোরদের গেমিং সময় নিয়ে কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করে আসছে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরির আলোচনা চলছে দেশটিতে।
সব মিলিয়ে সারা বিশ্বই তাকিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দিকে, কীভাবে তারা শিশু-কিশোরদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করে। অস্ট্রেলিয়া সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আরও অনেক দেশই একই পথে অগ্রসর হবে, তা বলাই যেতে পারে।
[সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, এএফপি]

জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) গুম ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আগামী ১৪ ডিসেম্বর আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
৬ ঘণ্টা আগে
আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭২ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩০ জন, ময়মনসিংহ ব
৬ ঘণ্টা আগে
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউসন পক্ষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামীম শুনানি করেন। এসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু ও আজিজুর রহমান দুলু-সহ অপর আইনজীবীরা।
৬ ঘণ্টা আগে
চন্দ্রাভিযানে যাওয়া মহাকাশযান প্রচলিত জ্বালানি নয়, বরং চাঁদের ধূলিকণা দিয়েই চলবে— এমন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে টেক জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন।
৭ ঘণ্টা আগে