বিবিসি বাংলা
‘পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল’— এভাবেই ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় অপরাধীর মতো আটকে রাখার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল (ছদ্মনাম)। উন্নত জীবনের আশায় গত বছরের অক্টোবরে ট্যুরিস্ট ভিসায় পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। মাত্র আটদিন পরেই তাকে আটক করা হয়, নেওয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে।
দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে রাখা হয় ২৯ বছর বয়সী রুবেলকে। কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারে দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার। অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে সবশেষ সামরিক বিমানে চাপিয়ে অন্য অনেকের সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সঙ্গে ছিল অন্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবাইকেই শেকল বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আড়াই দিনের সেই যাত্রায় কেবল চিজ দেওয়া চারটি পাউরুটি, আর আধা লিটারেরও অর্ধেক পানি দেওয়া হয়েছিল।
রুবেল বলেন, পানির জন্য ধরেন গলা শুকায়ে গেছে। আমরা এত পানি চাইছি, আমাদের ওনারা পানিই দেয় না। কিন্তু ওনারা ঠিকই একটার পর একটা বোতল খুইলা পানি খাইতাছে, এই খাবার খাইতাছে, ওই খাবার খাইতাছে, কিন্তু আমাদের কোনো গুরুত্বই নাই।
পেটে শিকল বেঁধে রাখার কারণে সেই পানিটাও মুখে তুলে খেতে কষ্ট হয়েছে বলে জানান রুবেল। বলেন, শৌচাগারে নেওয়ার সময়ও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি হাতকড়া। ভেতরে ঢুকলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন কোনো অফিসার।
তার অভিযোগ, আমরা যে চেয়ারে বসছি, সেখান থেকে হেলতে পারি না। হেললে ওনারা আইসা যাইতা ধইরা বসায় দেয়।
গত ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উড়োজাহাজে ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। ছবি: সংগৃহীত
সূত্র বলছে, গত ২ অগাস্ট ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক উড়োজাহাজে একজন নারীসহ ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সেই ফ্লাইটে ফেরত আসা আরেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি বলেন, সেই ফ্লাইটটিতে অন্য দেশের নাগরিকও ছিল। আর বেঁধে রাখার বিষয়টিও পুরোটা সময় ‘কন্টিনিউ’ করেছে।
ঈদুল আজহার আগেও ফেরত পাঠানো আরেকটি দলের সঙ্গে দেশে ফিরেছিলেন নোয়াখালীর ইমরান হোসেন। ব্রাজিলের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সড়ক পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সময় খুব কম খাবার দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনিও।
অবশ্য ফেরত পাঠানোর সময় বিমানে শেকল পরানো হয়নি বলে জানান ইমরান। জানান, বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের ছোট একটি কক্ষে ১৫ ঘণ্টার মতো রাখা হয়েছিল, সেখানে পরানো হয়েছিল শিকল আর হাতকড়া।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কর্মরত একটি বেসরকারি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ ভাড়া করা বিমানে একজন নারীসহ ৩০ বাংলাদেশিকে একইভাবে হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তাদেরই একজন নোয়াখালীর আসগর হোসেন। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক ওই ফ্লাইটে ছিল। একেক দেশে গিয়ে তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাঁচ দিনের যাত্রার পুরোটা সময় তাদের শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল।
আসগর বলেন, ‘বিমান যখন আমাদের এখানে ল্যান্ড করছে, তখন আমাদের হাত থেকে শেকলটা খুলছে।
তিন ঘণ্টা রানওয়েতে থাকা বিমানে বহনকারী যাত্রীদের হাতকড়া ও শেকল খোলা হয় এবং বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়াতে পৌঁছানোর আগেই সবাইকে শেকলমুক্ত করে দেওয়া হয়।
আগস্টে আসা আগের দলটির মতোই তাদেরও শৌচাগারে যাওয়ার সময় কেবল এক হাত খুলে দেওয়া হয়েছে, খাবারও দেওয়া হয়েছে সামান্য।
২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
বিমানবন্দর ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে। অথচ এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
অভিবাসন খাতের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে ফেরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরে আনা হয়। এ সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা কোনো ধরনের ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অমানবিকভাবে দেশের ফেরত পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশনের ডিআইজি পদে থাকা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি বলেন, এভাবে কোনো বাংলাদেশি এয়ারপোর্টে আসে নাই। গতকালও আসে নাই। অ্যামেরিকা থেকে যেগুলা এসেছে কোনোটাই এভাবে আসে নাই। যারা বলে, তারা কেন বলে বা কী জন্য বলে, আপনারা দেখবেন এটা।
তবে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার ও তার আগে যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের কারও কারও সঙ্গে পায়ে শেকল পরানোর মতো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
মাহবুবুল আলম বলেন, ডিপোর্ট (ফেরত পাঠানো) করার সময় কেউ কেউ হয়তো ভায়োলেন্ট আচরণ করে, এ রকম নজির হয়তো আছে। আর বিভিন্ন দেশে যখন ডিপোর্ট করা হয়, সে ক্ষেত্রে তাদেরও বোধহয় সিমিলারি বিষয়টাকে অ্যাড্রেস করা হয়।
এছাড়া ফ্লাইটে অন্যান্য দেশের নাগরিক থাকার কারণেও এমনটা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে আরও জানার জন্য সংশ্লিষ্ট উইং চেষ্টা করছে বলেও জানান মাহবুবুল আলম। বলেন, এ প্রক্রিয়ায় পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের ‘কনসার্ন’ যথাযথ উপায়ে তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
পৃথিবীর যে দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে কাজ করতে যায়, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনিয়মিত পথে যারা ইউরোপে প্রবেশ করে সেই তালিকায়ও গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ প্রায় শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল অর্থনৈতিক কারণেই না, সুশাসনের ঘাটতিসহ নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অনেকে দেশ ছাড়তে চায়। সে কারণে তৎপর থাকে দালাল চক্রও।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, যেকোনো মানুষের যেমন বৈধ পথে যেকোনো দেশে যাওয়ার নাগরিক অধিকার আছে, আবার কোনো দেশ যদি মনে করে সে আনডকুমেন্টেড মানুষ, তার নথি নাই, তাকে ফেরতও পাঠাতে পারে। ওইটা ওই দেশের অধিকার।
তবে এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবশ্যই মানবিক হতে হয় বলেও জানান শরিফুল। তিনি বলেন, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নাই। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাদের হাতে হাতকড়া, শরীরে শেকল লাগিয়ে দীর্ঘসময় রাখা হচ্ছে। এই বিষয়টা আমরা বলব মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা অন্তত এভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের এভাবে ফেরত পাঠাতে পারে না বলে মন্তব্য করেন শরিফুল। এ বিষয়ে সরকারকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে সোচ্চার থাকতে হবে যেন বাংলাদেশের নাগরিকদের এ রকম অমানবিক প্রক্রিয়ায় পাঠানো না হয়। এ বার্তা যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া উচিত।
‘পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল’— এভাবেই ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় অপরাধীর মতো আটকে রাখার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল (ছদ্মনাম)। উন্নত জীবনের আশায় গত বছরের অক্টোবরে ট্যুরিস্ট ভিসায় পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। মাত্র আটদিন পরেই তাকে আটক করা হয়, নেওয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে।
দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে রাখা হয় ২৯ বছর বয়সী রুবেলকে। কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারে দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার। অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে সবশেষ সামরিক বিমানে চাপিয়ে অন্য অনেকের সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সঙ্গে ছিল অন্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবাইকেই শেকল বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আড়াই দিনের সেই যাত্রায় কেবল চিজ দেওয়া চারটি পাউরুটি, আর আধা লিটারেরও অর্ধেক পানি দেওয়া হয়েছিল।
রুবেল বলেন, পানির জন্য ধরেন গলা শুকায়ে গেছে। আমরা এত পানি চাইছি, আমাদের ওনারা পানিই দেয় না। কিন্তু ওনারা ঠিকই একটার পর একটা বোতল খুইলা পানি খাইতাছে, এই খাবার খাইতাছে, ওই খাবার খাইতাছে, কিন্তু আমাদের কোনো গুরুত্বই নাই।
পেটে শিকল বেঁধে রাখার কারণে সেই পানিটাও মুখে তুলে খেতে কষ্ট হয়েছে বলে জানান রুবেল। বলেন, শৌচাগারে নেওয়ার সময়ও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি হাতকড়া। ভেতরে ঢুকলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন কোনো অফিসার।
তার অভিযোগ, আমরা যে চেয়ারে বসছি, সেখান থেকে হেলতে পারি না। হেললে ওনারা আইসা যাইতা ধইরা বসায় দেয়।
গত ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উড়োজাহাজে ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। ছবি: সংগৃহীত
সূত্র বলছে, গত ২ অগাস্ট ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক উড়োজাহাজে একজন নারীসহ ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সেই ফ্লাইটে ফেরত আসা আরেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি বলেন, সেই ফ্লাইটটিতে অন্য দেশের নাগরিকও ছিল। আর বেঁধে রাখার বিষয়টিও পুরোটা সময় ‘কন্টিনিউ’ করেছে।
ঈদুল আজহার আগেও ফেরত পাঠানো আরেকটি দলের সঙ্গে দেশে ফিরেছিলেন নোয়াখালীর ইমরান হোসেন। ব্রাজিলের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সড়ক পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সময় খুব কম খাবার দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনিও।
অবশ্য ফেরত পাঠানোর সময় বিমানে শেকল পরানো হয়নি বলে জানান ইমরান। জানান, বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের ছোট একটি কক্ষে ১৫ ঘণ্টার মতো রাখা হয়েছিল, সেখানে পরানো হয়েছিল শিকল আর হাতকড়া।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কর্মরত একটি বেসরকারি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ ভাড়া করা বিমানে একজন নারীসহ ৩০ বাংলাদেশিকে একইভাবে হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তাদেরই একজন নোয়াখালীর আসগর হোসেন। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক ওই ফ্লাইটে ছিল। একেক দেশে গিয়ে তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাঁচ দিনের যাত্রার পুরোটা সময় তাদের শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল।
আসগর বলেন, ‘বিমান যখন আমাদের এখানে ল্যান্ড করছে, তখন আমাদের হাত থেকে শেকলটা খুলছে।
তিন ঘণ্টা রানওয়েতে থাকা বিমানে বহনকারী যাত্রীদের হাতকড়া ও শেকল খোলা হয় এবং বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়াতে পৌঁছানোর আগেই সবাইকে শেকলমুক্ত করে দেওয়া হয়।
আগস্টে আসা আগের দলটির মতোই তাদেরও শৌচাগারে যাওয়ার সময় কেবল এক হাত খুলে দেওয়া হয়েছে, খাবারও দেওয়া হয়েছে সামান্য।
২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
বিমানবন্দর ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে। অথচ এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
অভিবাসন খাতের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে ফেরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরে আনা হয়। এ সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা কোনো ধরনের ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অমানবিকভাবে দেশের ফেরত পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশনের ডিআইজি পদে থাকা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি বলেন, এভাবে কোনো বাংলাদেশি এয়ারপোর্টে আসে নাই। গতকালও আসে নাই। অ্যামেরিকা থেকে যেগুলা এসেছে কোনোটাই এভাবে আসে নাই। যারা বলে, তারা কেন বলে বা কী জন্য বলে, আপনারা দেখবেন এটা।
তবে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার ও তার আগে যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের কারও কারও সঙ্গে পায়ে শেকল পরানোর মতো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
মাহবুবুল আলম বলেন, ডিপোর্ট (ফেরত পাঠানো) করার সময় কেউ কেউ হয়তো ভায়োলেন্ট আচরণ করে, এ রকম নজির হয়তো আছে। আর বিভিন্ন দেশে যখন ডিপোর্ট করা হয়, সে ক্ষেত্রে তাদেরও বোধহয় সিমিলারি বিষয়টাকে অ্যাড্রেস করা হয়।
এছাড়া ফ্লাইটে অন্যান্য দেশের নাগরিক থাকার কারণেও এমনটা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে আরও জানার জন্য সংশ্লিষ্ট উইং চেষ্টা করছে বলেও জানান মাহবুবুল আলম। বলেন, এ প্রক্রিয়ায় পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের ‘কনসার্ন’ যথাযথ উপায়ে তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
পৃথিবীর যে দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে কাজ করতে যায়, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনিয়মিত পথে যারা ইউরোপে প্রবেশ করে সেই তালিকায়ও গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ প্রায় শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল অর্থনৈতিক কারণেই না, সুশাসনের ঘাটতিসহ নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অনেকে দেশ ছাড়তে চায়। সে কারণে তৎপর থাকে দালাল চক্রও।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, যেকোনো মানুষের যেমন বৈধ পথে যেকোনো দেশে যাওয়ার নাগরিক অধিকার আছে, আবার কোনো দেশ যদি মনে করে সে আনডকুমেন্টেড মানুষ, তার নথি নাই, তাকে ফেরতও পাঠাতে পারে। ওইটা ওই দেশের অধিকার।
তবে এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবশ্যই মানবিক হতে হয় বলেও জানান শরিফুল। তিনি বলেন, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নাই। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাদের হাতে হাতকড়া, শরীরে শেকল লাগিয়ে দীর্ঘসময় রাখা হচ্ছে। এই বিষয়টা আমরা বলব মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা অন্তত এভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের এভাবে ফেরত পাঠাতে পারে না বলে মন্তব্য করেন শরিফুল। এ বিষয়ে সরকারকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে সোচ্চার থাকতে হবে যেন বাংলাদেশের নাগরিকদের এ রকম অমানবিক প্রক্রিয়ায় পাঠানো না হয়। এ বার্তা যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া উচিত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার দ্য কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা এবং গুরুতর আঘাতের ঘটনা তদন্তের জন্য তদন্ত কমিশন গঠন করল।
৪ ঘণ্টা আগে১১ দশমিক ২২৭ টন ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে তাঁবু, কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার পানি, শুকনো খাবার, কাপড়, বিস্কুট, মিল্ক পাউডার, নুডলস ও ওষুধ।
৬ ঘণ্টা আগে