ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এক নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এরপর প্রায় একবছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে বিভিন্ন মত-পথের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ধর্মীয় মেরুকরণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যুর পর দেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, নির্বাচনি ও সাংবিধানিক সংস্কার এবং দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু এক বছর পরও ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের চাপের কথাও উঠে এসেছে। সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য ঘুচিয়ে তাদের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলাকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাসিনাকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। দেশটির দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও হাসিনার আওয়ামী লীগের প্রভাব বলয় ভেঙে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু দলটির বিরোধীরা অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। বলা হচ্ছে, এসব সুবিধা নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে এনসিপি।
দেশের বৃহত্তম ‘ইসলামপন্থি’ দল জামায়াতে ইসলামী হাসিনা সরকারের শাসনামলের দমননীতি কাটিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় পর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে এসেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এই দলটির মাঠপর্যায়ের শক্তি এখন অজানা। জামায়াত নির্বাচনি রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট আরও বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
এর মধ্যে গত মে মাসে ‘বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত’ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। সে শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছে সব দলই। একসময়ের নির্বাচনি জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুই দলই এখন প্রশাসন ও বিচার বিভাগ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
নতুন সংসদীয় নির্বাচনের সময় নিয়েও তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্পষ্ট ঐকমত্যের অভাব বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রধানও এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন, যে অবস্থান ইউনূস সরকারের পছন্দ হয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক এবং এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বিপ্লব-পরবর্তী মধুচন্দ্রিমা প্রায়ই দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাপক প্রত্যাশার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু জনমত ছাড়া একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এটা করা বিশেষভাবে কঠিন।’
সংস্কারের ব্যাপারে বিভিন্ন দলের মধ্যে ঐক্য থাকলেও ঠিক কতটুকু সংস্কার হলে নির্বাচন দেওয়া যাবে, এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অনৈক্য। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ঐকমত্য কমিশন।
নানা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে— একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন তার সময়সীমা নির্ধারণ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ার মতো বিষয়। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী শর্তসাপেক্ষে কিছু ব্যাপারে একমত হয়েছে। তবে মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কারের নানা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা জটিল আকার ধারণ করেছে।
জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি শুরুতে ডিসেম্বর ও পরে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে সংস্কার ইস্যুতে এনসিপির বেশিরভাগ মতামতই জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে মিলে যায়।
কুগেলম্যান মনে করেন, সংস্কারের ইস্যুটিরই দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু এর বদলে এটি নিয়েই আলোড়ন তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা সংস্কার দেখতে চায় এবং আরও সময় দিতে চায় এবং যারা মনে করে যে এখনই সময় এসেছে সবকিছু শেষ করে নির্বাচনের ওপর মনোযোগ দেওয়ার, তাদের মধ্যে বিভক্তি এখন স্পষ্ট।’
অধ্যাপক ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশে মানবাধিকার ক্রমশ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছে হিন্দুরা।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, গত বছর শত শত হামলার ঘটনায় সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। শেখ হাসিনার দলও কয়েক হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনা সরকারের অধীনে ঘটে যাওয়া বলপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার, কিন্তু নিরাপত্তা খাতে স্থায়ী সংস্কার বা শক্তিশালী, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রতিশ্রুতি পূরণে খুব কম অগ্রগতি হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে থাকা ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ নারী অধিকারে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে এবং শরিয়া আইন প্রবর্তনের দাবি করে ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে। কোনো কোনো দল বিএনপি বা জামাতে ইসলামীর মতো বড় দলের সঙ্গে জোট গঠনের পরিকল্পনাও করছে।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ধর্মভিত্তিক দলগুলো ঐতিহাসিকভাবেই নির্বাচনে সাফল্য অর্জনে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। তাদের উত্থান দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে আরও বিভক্ত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীদার ছিল বাংলাদেশ। তার ক্ষমতাচ্যুতির পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার তুলনামূলকভাবে ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে বেশি ঝুঁকেছে।
ইউনূসের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর ছিল মার্চ মাসে চীনে। সেই সফরে তিনি বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের ব্যাপারে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছেন।
অন্যদিকে ভারতের আচরণে তার পুরনো মিত্র হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কারণে ক্ষোভই ফুটে উঠেছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ঢাকার অনুরোধেও সাড়া দেয়নি ভারত। উলটো হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
তবে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের কাছ থেকে অধ্যাপক ইউনূস এখনো শক্ত সমর্থন পাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, বিভিন্ন পরাশক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার যে নীতি বাংলাদেশ এতদিন অনুসরণ করে এসেছে, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারও সেই পররাষ্ট্রনীতিই অব্যাহত রাখবে।
তবে কুগেলম্যান মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে ‘ট্রাম্প ফ্যাক্টর’।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তে বাংলাদেশেও ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত হয়ে যায়। অথচ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর গুরুত্বপূর্ণ পুনর্গঠনের সময়কালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মার্কিন সহায়তার প্রত্যাশা ছিল এ সহায়তা সংস্থাটির কাছে।
কুগেলম্যান বলেন, ‘ঢাকাকে এখন এমন একটি প্রথাবিরুদ্ধ মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যেটি মূলত বাংলাদেশকে একটি বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখবে।’
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এক নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এরপর প্রায় একবছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে বিভিন্ন মত-পথের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ধর্মীয় মেরুকরণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যুর পর দেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, নির্বাচনি ও সাংবিধানিক সংস্কার এবং দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু এক বছর পরও ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের চাপের কথাও উঠে এসেছে। সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য ঘুচিয়ে তাদের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলাকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাসিনাকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। দেশটির দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও হাসিনার আওয়ামী লীগের প্রভাব বলয় ভেঙে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু দলটির বিরোধীরা অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। বলা হচ্ছে, এসব সুবিধা নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে এনসিপি।
দেশের বৃহত্তম ‘ইসলামপন্থি’ দল জামায়াতে ইসলামী হাসিনা সরকারের শাসনামলের দমননীতি কাটিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় পর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে এসেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এই দলটির মাঠপর্যায়ের শক্তি এখন অজানা। জামায়াত নির্বাচনি রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট আরও বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
এর মধ্যে গত মে মাসে ‘বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত’ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। সে শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছে সব দলই। একসময়ের নির্বাচনি জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুই দলই এখন প্রশাসন ও বিচার বিভাগ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
নতুন সংসদীয় নির্বাচনের সময় নিয়েও তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্পষ্ট ঐকমত্যের অভাব বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রধানও এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন, যে অবস্থান ইউনূস সরকারের পছন্দ হয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক এবং এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বিপ্লব-পরবর্তী মধুচন্দ্রিমা প্রায়ই দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাপক প্রত্যাশার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু জনমত ছাড়া একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এটা করা বিশেষভাবে কঠিন।’
সংস্কারের ব্যাপারে বিভিন্ন দলের মধ্যে ঐক্য থাকলেও ঠিক কতটুকু সংস্কার হলে নির্বাচন দেওয়া যাবে, এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অনৈক্য। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ঐকমত্য কমিশন।
নানা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে— একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন তার সময়সীমা নির্ধারণ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ার মতো বিষয়। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী শর্তসাপেক্ষে কিছু ব্যাপারে একমত হয়েছে। তবে মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কারের নানা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা জটিল আকার ধারণ করেছে।
জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি শুরুতে ডিসেম্বর ও পরে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে সংস্কার ইস্যুতে এনসিপির বেশিরভাগ মতামতই জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে মিলে যায়।
কুগেলম্যান মনে করেন, সংস্কারের ইস্যুটিরই দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু এর বদলে এটি নিয়েই আলোড়ন তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা সংস্কার দেখতে চায় এবং আরও সময় দিতে চায় এবং যারা মনে করে যে এখনই সময় এসেছে সবকিছু শেষ করে নির্বাচনের ওপর মনোযোগ দেওয়ার, তাদের মধ্যে বিভক্তি এখন স্পষ্ট।’
অধ্যাপক ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশে মানবাধিকার ক্রমশ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছে হিন্দুরা।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, গত বছর শত শত হামলার ঘটনায় সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। শেখ হাসিনার দলও কয়েক হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনা সরকারের অধীনে ঘটে যাওয়া বলপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার, কিন্তু নিরাপত্তা খাতে স্থায়ী সংস্কার বা শক্তিশালী, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রতিশ্রুতি পূরণে খুব কম অগ্রগতি হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে থাকা ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ নারী অধিকারে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে এবং শরিয়া আইন প্রবর্তনের দাবি করে ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে। কোনো কোনো দল বিএনপি বা জামাতে ইসলামীর মতো বড় দলের সঙ্গে জোট গঠনের পরিকল্পনাও করছে।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ধর্মভিত্তিক দলগুলো ঐতিহাসিকভাবেই নির্বাচনে সাফল্য অর্জনে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। তাদের উত্থান দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে আরও বিভক্ত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীদার ছিল বাংলাদেশ। তার ক্ষমতাচ্যুতির পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার তুলনামূলকভাবে ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে বেশি ঝুঁকেছে।
ইউনূসের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর ছিল মার্চ মাসে চীনে। সেই সফরে তিনি বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের ব্যাপারে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছেন।
অন্যদিকে ভারতের আচরণে তার পুরনো মিত্র হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কারণে ক্ষোভই ফুটে উঠেছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ঢাকার অনুরোধেও সাড়া দেয়নি ভারত। উলটো হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
তবে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের কাছ থেকে অধ্যাপক ইউনূস এখনো শক্ত সমর্থন পাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, বিভিন্ন পরাশক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার যে নীতি বাংলাদেশ এতদিন অনুসরণ করে এসেছে, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারও সেই পররাষ্ট্রনীতিই অব্যাহত রাখবে।
তবে কুগেলম্যান মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে ‘ট্রাম্প ফ্যাক্টর’।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তে বাংলাদেশেও ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত হয়ে যায়। অথচ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর গুরুত্বপূর্ণ পুনর্গঠনের সময়কালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মার্কিন সহায়তার প্রত্যাশা ছিল এ সহায়তা সংস্থাটির কাছে।
কুগেলম্যান বলেন, ‘ঢাকাকে এখন এমন একটি প্রথাবিরুদ্ধ মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যেটি মূলত বাংলাদেশকে একটি বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখবে।’
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমরা গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেছি। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় নিরাপদে জেলা ছাড়তে পেরেছি।
৩ ঘণ্টা আগেগোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার পথে সড়ক অবরোধ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
৪ ঘণ্টা আগেসিআইডির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোলাম দস্তগীর গাজীর রূপগঞ্জের খাদুন এলাকার ৬৯টি দলিলে সর্বমোট জমির পরিমাণ- চার হাজার ৮৭৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, যার দলিল মূল্য- ১৬ কোটি ৫২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এছাড়া গাজী টায়ার প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি ও তদস্থিত বিভিন্ন অবকাঠামোসহ সর্বমোট প্রায় ৪০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি
৫ ঘণ্টা আগেগোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্নস্থানে নাশকতা, সড়ক অবরোধ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
৭ ঘণ্টা আগে