হাতজোড় করে বলছি, ভুল তথ্য ছড়াবেন না: মাইলস্টোন শিক্ষক

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৪: ০৫
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের অনেকে এখনো জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ছবি: ফোকাস বাংলা

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য না ছড়াতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষক পূর্ণিমা দাস। বলেছেন, মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে হতাহতের সংখ্যা তুলে ধরবে, যার মাধ্যমে অনেকের সন্দেহ নিরসন হবে।

বুধবার (২৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনের এই শিক্ষক এ কথা বলেন।

পূর্ণিমা লিখেছেন, ‘আপনাদেরকে দুই হাতজোড় করে বলছি, ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম। আমার চেয়ে বেশি আপনারা ফেসবুকবাসী জানবেন না, তাই না?’

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে হতাহতের ‘প্রকৃত সংখ্যা’ প্রকাশের দাবি ওঠে। বলা হচ্ছে, দেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম এ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ‘প্রকৃত সংখ্যা’ প্রকাশ করা হচ্ছে না। এ নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে অনেকেই সরব হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মাইলস্টোনে দিনভর শিক্ষার্থীরা যে ছয় দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম দাবিও ছিল এটি। এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম মাইলস্টোন কলেজ পরিদর্শনে গেলে সেখানে তাদের ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

এমন সব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ণিমা দাস লিখেছেন, স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়। আমি ঠিক তার এক থেকে দুই মিনিটে স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখি ওখানে শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়ানো। কেউ ছিল না, সবাই চলে গেছিল। আপনারা জানেন না ছুটির সময় হলে বাচ্চারা তিন-চার মিনিট আগে থেকেই কীভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য?

তিনি আরও লিখেছেন, আমি চলে আসার পর অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাইয়ে কিছু বাচ্চা ঢুকেছিল। তাদেরও আমাদের আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়। এরপরও আবার কয়েকজন (পাঁচ-ছয়জন) ঢুকেছিল। তাদেরই আমরা হারিয়ে ফেলেছি, বা যারা করিডোরে-দোলনায় খেলছিল বা সিঁড়িঘরে ছোটাছুটি করছিল বা ওই মুহূর্তে ওই জায়গায় কাকতালীয়ভাবে ছিল (এদের সংখ্যা অনিশ্চিত)।

মাইলস্টোনের এই শিক্ষক আরও বলেন, ক্লাউড সেকশনে বাচ্চার সংখ্যা স্কাইয়ের চেয়ে বেশি (৮-১০ জন) ছিল। আমার ধারণা, মাহরীন মিস, মাসুকা মিস ও মাহ্ফুজা মিস ওখান থেকেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করছিলেন এবং তাদের বের করতে করতে নিজেরা ঝলসে যান। তাদের মধ্যে মাহরীন মিস ও মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। মাহফুজা মিসের অবস্থা এখনো গুরুতর, উনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। উনার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

স্কুলের অন্যান্য সেকশনের কথা তুলে ধরে পূর্ণিমা দাস লিখেছেন, ক্লাউডের পাশের রুম ময়না। এখানে কিছু বাচ্চা ইনজুরড, কেউ মারা যায়নি। ময়নার পাশে দোয়েল। এই ক্লাসের একটা বাচ্চা আর নেই। দোয়েলের পাশে টিউবরোজ ও ওয়াটারলিলিতেও সবাই সেফ আছে। দ্বিতীয় তলার বাচ্চাদেরও ঘটনা একই। দুটি ক্লাসরুম, একটা টিচার্স রুম পুড়ে গেছে। ওখানেও ১৫-২০ জন ছিল।

মাইলস্টোনে যে ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে সেই হায়দার আলী ভবনের মুখে, দোলনায় ও করিডোরে বেশকিছু শিশু হাঁটাহাঁটি করছিল বলে উল্লেখ করেন পূর্ণিমা দাস। বলেন, এসব বাচ্চার সংখ্যা এভাবে বলতে পারা যায় না। অনুমানও করা কঠিন। তার মধ্যে অনেকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যে লাশগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আছেন ওখানকার আয়ারাও। এখান থেকেই বেশির ভাগ আহত। তাদের সংখ্যাও ঠিকভাবে বলা যায় না।

ভুল তথ্য না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে পূর্ণিমা লিখেছেন, ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আপনারা যত মৃতের সংখ্যা বলছেন, সেটা একেবারে সম্ভব না। তার মধ্যে আমরা যারা দুই কর্নারে ছিলাম, তারা তো অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি।

তিনি আরও লিখেছেন, লাশ গুম করার কথা যারা বললেন, আপনাদের কতখানি মাথায় সমস্যা আমার জানা নেই। কারণ একটা বাচ্চা, যাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি, তার লাশটা তো অন্তত আমরা তার মা-বাবার কাছে পৌঁছানোর সর্বাত্মক চেষ্টাটা করব, তাই না? আমরা টিচার, রাজনীতিবিদ নই।

মানুষের আবেগ নিয়ে না খেলার অনুরোধও করেন পূর্ণিমা দাস। বলেন, আপনাদের কোনো ধারণা নেই এই শিক্ষক-শিক্ষিকাগুলো কীভাবে বাচ্চাদের সারা দিন আগলে রাখে। ছুটি হওয়ার সময় মাহরীন মিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন বাচ্চাদের অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেন। যতক্ষণ একটা বাচ্চারও অভিভাবক থাকে, উনি গেট থেকে নড়েন না। তাই হাত জোর করে বলছি, ভুল তথ্য ছড়াবেন না। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না।

শিশুদের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে এই শিক্ষক লিখেছেন, নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে, আপনাদের বাড়াতে হবে না। আসুন, আমরা প্রার্থনা করি প্রতিটা ফুলের জন্য, যারা অকালে ঝরে গেল। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্টাফ আর ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য আসুন আজ প্রার্থনা করি।

এ স্ট্যাটাস নিয়ে অনেকের নেতিবাচক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরে পূর্ণিমা আরেক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আজ (বুধবার) প্রেস ব্রিফিং হবে। একটু অপেক্ষা করেন, ধৈর্য ধরেন। দোয়া করেন আমাদের বাচ্চাগুলার জন্য। আমি মৃতের সংখ্যা নিয়ে পোস্ট করেছি। আহত নিয়ে তো কোনো তথ্য দিইনি। আপনারা কীভাবে সবাইকে মৃত ঘোষণা করলেন? প্রতিটা বাচ্চার প্রমাণ পাবেন। অপেক্ষা করেন।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

গার্টনার ম্যাজিক কোয়াড্রান্ট তালিকায় টানা ৩ বছর শীর্ষে হুয়াওয়ে

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তারযুক্ত ও তারহীন লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক অবকাঠামো সেবা দিয়ে গার্টনার ম্যাজিক কোয়াড্রান্টের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে ‘লিডার’ গ্রুপে জায়গা করে নিয়েছে হুয়াওয়ে।

২ ঘণ্টা আগে

পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে : প্রধান উপদেষ্টা

বৈঠকে অংশ নেওয়া সকল দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে সমর্থন জানান। তারা আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরও নিয়মিতভাবে রাজ

২ ঘণ্টা আগে

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৮ জন এখনো সংকটাপন্ন

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন আরও জানান, এই আটজন ছাড়াও বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও ৩৬ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ১৩ জন জনের শারীরিক অবস্থা ‘সিভিয়ার’ বা গুরুতর এবং বাকি ২৩ জনের শারীরিক অবস্থা ‘ইন্টারমিডিয়েট’ বা মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে।

২ ঘণ্টা আগে

তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন নেতৃত্বশূন্য রাখা বিব্রতকর রেকর্ড : টিআইবি

তিনি বলেন, তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন গঠন সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং মানবাধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। অথচ দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের কাছাকাছি সময় পার হয়ে গেলেও কমিশন দুটি গঠনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

৩ ঘণ্টা আগে