১৫ আগস্টে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধর ও পরে গ্রেপ্তারের শিকার রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমান জামিন পেয়েছেন। জুলাই আন্দোলনের সময়কার এক ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছিল পুলিশ।

আগের দিন জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর রোববার (১৭ আগস্ট) আজিজুরের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী ফের তার জামিন চেয়ে আবেদন আবেদন করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলাম তাকে জামিন দেন।

আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী বলেন, গতকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত আজিজুর রহমানকে জামিন দিয়েছেন।

আজিজুর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ফুল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মারধর করে আজিজুরকে যখন পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল ওই সময় আজিজুর বলছিলেন, ‘আমি কোনো দল করি না। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসি। তাই এসেছিলাম। আমি আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আসিনি। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই আমার হালাল টাকা দিয়ে কেনা ফুল নিয়ে এসেছি।’

এ ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আজিজুরকে শনিবার আদালতে উপস্থাপন করেছিল পুলিশ। আদালত সূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত ঘটনায় গত ২ এপ্রিল ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা এক হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম ইসরাত জেনিফার জেরিন রিকশাচালক আজিজুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর মধ্যে রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আজিজুর রহমানকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক।

পুলিশের দাবি, আজিজুরকে ধানমন্ডি থানায় এপ্রিল মাসে দায়ের করা দণ্ডবিধির নিয়মিত একটি মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। তবে এপ্রিল মাসের কত তারিখে দায়ের করা কোন মামলায় আজিজুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেটি অবশ্য ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিজ্ঞপ্তির কয়েক ঘণ্টা পর অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে দিয়ে এ ঘটনায় পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বলে জানায়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে আটক রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।

পাশাপাশি ধানমন্ডি থানার ওসির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি না, তা ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানানো হয়েছে বার্তায়।

প্রেস উইং আরও বলছে, দায়ের করা মামলায় আজিজুর রহমানের সম্পৃক্ততা তদন্ত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি সংশোধিত সিআরপিসির ১৭৩(এ) ধারা অনুযায়ী অতি দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।