২ হাজারেরও বেশি ‘বাংলাদেশি’কে ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় ভারত

বিবিসি বাংলা
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ০০: ১৭
গত ৮ মে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে অন্তত ৮০ বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করেছে ভারত। ফাইল ছবি

দুই হাজারেরও বেশি ‘বাংলাদেশি’কে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বাংলাদেশিরা ‘বেআইনিভাবে’ ভারতে থাকছিলেন এবং তাদের প্রত্যর্পণের আগে পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ভারত বাংলাদেশকে জানিয়েছে বলেও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, যেসব বিদেশি বেআইনিভাবে ভারতে আছেন, তারা বাংলাদেশি হোন বা যেকোনো দেশেরই হোন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জয়সওয়াল আরও বলেন, দুই হাজার তিন শরও বেশি এমন বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে রয়েছেন, যাদের প্রত্যর্পণ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে তাদের নিজ দেশে ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না।

এদের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছেন, যারা বেআইনিভাবে ভারতে এসে ধরা পড়েন এবং কারাদণ্ড ভোগ করেন। তবে সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাই না হওয়ায় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ভারতে একটি বড় সংখ্যায় বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন, যাদের প্রত্যর্পণ করা হবে। আমরা বাংলাদেশকে জানিয়েছি এদের নাগরিকত্ব যাচাই করে দেখতে। প্রত্যর্পণের অপেক্ষায় আছেন, এরকম ২৩৬০ জনেরও বেশি মানুষের তালিকা রয়েছে। এদের অনেকেই তাদের কারাবাসের সাজা সম্পূর্ণ করেছেন।

গত পাঁচ বছর ধরে এই বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে উল্লেখ করে জয়সওয়াল বলেন, আমরা বাংলাদেশকে অনুরোধ করব, তারা যেন দ্রুততার সঙ্গে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজটা শেষ করে, যেন বাংলাদেশের কাছে যাদের প্রত্যর্পণ করার কথা তাদের ফেরত দেওয়া যায়।

ভারত থেকে প্রত্যর্পণ যেভাবে হয়

ভারতে যদি কোনো বিদেশি বেআইনিভাবে, অর্থাৎ বৈধ ভিসা ছাড়া প্রবেশ করে গ্রেপ্তার হন, তাহলে বিদেশি আইনের (ফরেনার্স অ্যাক্ট) ১৪ নম্বর ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। আদালত তাকে যতদিনের সাজা দেন, সেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ভারতীয় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়।

সেখান থেকে সেই তথ্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে বাংলাদেশের দূতাবাস, তারপর বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছায় নথি। যাচাইয়ের পরে ওই একই পথে তা আবার ফিরে যায় ভারতের কারা কর্তৃপক্ষের কাছে।

এরপর কারা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে হস্তান্তর করে। বিএসএফ আবার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ফেরত দেয়।

এই পুরো পদ্ধতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওই বাংলাদেশি নাগরিককে জেলেই থাকতে হয়। এদের বলা হয়ে থাকে ‘জান-খালাস’।

Gujrat-1024-Bangladesh-Detained-26-04-2025

সম্প্রতি গুজরাটে অভিযান চালিয়ে সহস্রাধিক ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিকে আটক করে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: এনডিটিভি

কলকাতায় এই জান-খালাস বন্দিদের (যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনো কারাগার থেকে বের হননি) নিয়ে কাজ করেন, এমন মানবাধিকার কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার আবেদন জানিয়ে আসছেন।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন নাগরিকত্ব যাচাইয়ের এই প্রক্রিয়া সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে শুরু না করে আগে থেকেই তা চালু করা হয় না? একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করে থাকেন, পরিচয় যাচাইয়ের কাজ যেহেতু হয়ে থাকে বাংলাদেশে, সেখানেও যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সামাজিক কর্মকর্তা সূরজ দাস নিয়মিতভাবেই ভারতে আটক হওয়া কিশোর-কিশোরীদের প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, আমরা যেটা দেখি যে বাংলাদেশের তরফে নাগরিকত্ব যাচাইয়ে প্রচুর সময় লেগে যায়। প্রথমে তো বাংলাদেশ থেকে স্বীকারই করতে চাওয়া হয় না যে ওই ব্যক্তি সে দেশের নাগরিক। ‘নট ফাউন্ড’ বলে নোট দিয়ে দেয়। এরপর যাদের পরিবারের সামর্থ্য আছে, তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নথি জমা করলে দ্বিতীয়বার ভেরিফিকেশন হয়।

সূরজ দাস আরও বলেন, শিশু-কিশোর ও তাদের পরিবারের কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি যে সে দেশে স্থানীয় স্তরে কিছু দালাল শ্রেণির মানুষও আছেন, যারা অর্থের বিনিময়ে দ্রুত নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ করে থাকেন। সেই অর্থ যাদের দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের ভেরিফিকেশনও আটকে থাকে মাসের পর মাস।

পুশ-ব্যাক না প্রত্যর্পণ?

প্রত্যর্পণের বাইরেও দুই দেশের সমন্বয়ের মাধ্যমে যে বন্দি বিনিময় হয়েছে, তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ গত বছর ডিসেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় আটক বাংলাদেশি মৎস্যজীবী ও একই সময়ে বাংলাদেশে ধৃত ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ফেরত দেওয়ার ঘটনা।

কিন্তু সম্প্রতি ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে কথিত বেআইনি বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের যে অভিযান চলছে, তাদের ক্ষেত্রে এই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে না বলেই একাধিক নিরাপত্তা এজেন্সি বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছে। মূলত গুজরাট, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে এ ধরনের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।

ওই সব রাজ্যে বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ‘প্রত্যর্পণ’ করার কথা বলা হলেও তাদের প্রায় কাউকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি, আদালতের সামনেও হাজির করা হয়নি।

আটক হওয়ার পরে তাদের ‘ডিটেনশন সেন্টারে’ রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে ধাপে ধাপে তাদের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কোনো রাজ্যে নিয়ে গিয়ে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিকেই বলা হয়ে থাকে ভারত থেকে ‘পুশ-ব্যাক’ বা বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’।

এ ক্ষেত্রে বেআইনি বলে যাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা আসলেই বাংলাদেশের নাগরিক কি না, না কি তারা বাংলাভাষী ভারতীয়, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে কাজের সুযোগ, বেতন ৮০ হাজার

১৫ ঘণ্টা আগে

অনশনের ২ দিন পার হলেও ডাকসু ইস্যুতে নীরব ঢাবি প্রশাসন

গত ২১ মে (বুধবার) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন তিন শিক্ষার্থী-বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, একই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাহতাব ইসলাম এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন খালিদ।

১৫ ঘণ্টা আগে

রাতে ১৮ জেলায় হতে পারে ৬০ কিমি বেগে ঝড়

এতে বলা হয়, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অথবা দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যে

১৭ ঘণ্টা আগে

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধানের স্ট্যাটাস

স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ১/১১-এর পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না, দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এরূপ অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনী অতীতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে আরও ভোগান্তি ডেকে আনা ঠিক হবে না।

১৭ ঘণ্টা আগে