ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি বলে যুদ্ধাপরাধ থেকে উদ্ভূত মানবতাবিরোধী অপরাধও সংঘটিত হয়নি বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন। জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলিকে রাজনৈতিক বিরোধ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনাসহ দুই আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তিনি।
প্রসিকিউশন বলছে, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা— তা নির্ধারণ হবে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর পর।
সোমবার (৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানি হয়। এ মামলার বাকি দুই আসামি হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনজনের মধ্যে সাবেক আইজিপি গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাকে শুনানির সময় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বাকি দুজন পলাতক থাকায় তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তাদের আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
মামলার শুনানিতে তিন আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনের কারণ হিসেবে আমির হোসেন বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল।
আমির হোসেন বলেন, কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি। এখানে রাজনৈতিক যে পটপরিবর্তন, হিংসা-প্রতিহিংসার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা। অতএব যেহেতু কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি, অতএব যুদ্ধাপরাধ থেকে উদ্ভূত যেসব অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ, তা এখানে সংঘটিত হয়নি।
আমির হোসেনের শুনানির পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার যুক্তিকে ‘ফ্ল্যাট ডিনায়াল’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানান ট্রাইব্যুনালে।
দুপক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারসহ তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে আমির হোসেনকে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট পাঁচ অভিযোগে গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। গত ১ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এ মামলায় শুনানি শেষ করেন।
প্রস্তুতি না থাকায় সে দিন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন সময় আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন নির্ধারণ করেন। এ দিন শুনানি শুরুর আগেই শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আইনজীবী আমির হোসেন লিখিত আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে।
পরে শুনানির শুরুতে এ আইনজীবী বলেন, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল প্রভৃতি নির্মাণের মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধন করেন। দেশের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ মামলায় প্রসিকিউশন যেসব অভিযোগে নথি দাখিল করেছেন, এসবের সঙ্গে শেখ হাসিনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
পরে সংবাদ সম্মেলনে আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে মামলাটি করা হয়েছে।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন। ছবি: ফোকাস বাংলা
আন্দোলন চলাকালীন শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতি’ বলে মন্তব্য করেছেন বলে এর আগে অভিযোগ করেছিল প্রসিকিউশন। এ প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ এভাবে বলতে চান নাই, বলেনও নাই। অপমান করেন নাই। উনি দীর্ঘ বছর শাসনামলে ছিলেন। উনি যদি রাজাকারদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চাইতেন, আরও আগেই করতে পারতেন।
তিনি আরও বলেন, এর আগে যেহেতু রাজাকারদের হত্যা করেননি, জুলাই-আগস্টে কেন ছোট বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের হত্যা করবেন? তাপস সাহেবের সঙ্গে ফোনালাপের যে কথা আসছে যে উনি বিভিন্ন ছাত্রদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, আমি বলেছি এ রকম সঠিক না।
যারা আন্দোলন চলাকালীন নিহত হয়েছেন তাদের সুরতহাল, ময়নাতদন্ত করতে দেয়া হয়নি— প্রসিকিউশনের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, এ রকম কোনো প্রমাণ প্রসিকিউশন আনতে পারেনি।
সেতু ভবন, মেট্রোরেল ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগের ঘটনায় প্রসিউশন ‘ডকুমেন্টারি এভিডেন্স’ আনতে পারেনি বলেও শুনানিতে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন। শুনানিতে বলেন, বরং শেখ হাসিনা ব্যথিত হয়ে তা মেরামতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে বিনা উসকানিতে হত্যার শিকার হওয়ার পর শেখ হাসিনা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আমির হোসেন। বলেন, আবু সাইদকে তিনি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন— এ রকম কোনো বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ এ রকম কোনো ডকুমেন্টারি এভিডেন্স রাষ্ট্রপক্ষে তার যে দাখিলীয় কাগজ, তার মধ্যে নেই।
আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার সময় শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না উল্লেখ করে আমির হোসেন বলেন, আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা, চাঁনখারপুলে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগ সঠিক নয়। ৫ আগস্ট দুপুরে তো তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো ৪, ৫ নম্বরে এসেছে, এগুলো ওনার বেলায় প্রযোজ্য না।
আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানমাল রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছে এবং অনেক পুলিশ নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানান আমির হোসনে। তবে কতজন পুলিশ নিহত হয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা তিনি জানাননি।
শুনানির পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার প্রকাশিত কল রেকর্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করলে আমির হোসেন বলেন, সাক্ষ্য যখন হবে তখন কলরেকর্ড যদি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারি তাহলে সেটা আমার পক্ষে যাবে। আর যদি মিথ্যা প্রমাণ করতে না পারি তবে সেটা আমার বিপক্ষে যাবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়’— এ অভিযোগও সঠিক নয় বলে দাবি করেন আমির হোসেন। বলেন, এটা শেখ হাসিনার বেলায় প্রযোজ্য নয়। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কোনো রকমের নির্দেশ তিনি প্রদান করেন নাই।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউশন টিমের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। ছবি: ফোকাস বাংলা
এদিকে আদালতে শুনানির পর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউশন বলেছে, অভিযোগ গঠনের পরে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলে তাদের আনা অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা তা প্রমাণিত হবে।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, সব কিছুই নির্ধারণ হবে বিচারে এসে। এখনো বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। বিচার শুরু হবে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে। অতএব অভিযোগ গঠন না হলে উনি যা বলছেন অথবা আমরা যে অভিযোগ এনেছি, এটা সত্য কি না, সেটি কীভাবে নিরূপণ হবে? যদি সত্য না হয় তাহলে ওনারা খালাস পাবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই অপরাধের বিচার করা যাবে না— আসামি পক্ষের এমন যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে দাবি করেন তামিম। বলেন, আমরা বলেছি, এই আইনের সেকশন থ্রি সাবসেকশন ওয়ানে সুষ্পষ্টভাবে বলা আছে— এই আইন প্রণয়নের আগে অথবা পরে যদি কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ এই বাংলাদেশের টেরিটরির মধ্যে সংঘটিত হয়, তাহলে এই ট্রাইব্যুনাল ওই অপরাধের বিচার করতে পারবেন। অতএব এটি যে যুদ্ধাপরাধের আইন, এটি এই আইনের আগাগোড়া কোথাও বলা নাই।
আশুলিয়ায় ছয় জনকে পুড়িয়ে মারা ও চাঁনখারপুলে পাঁচজনকে গুলি করে মারার সময় শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না— আসামিপক্ষের এমন দাবির বিষয়ে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, এটা সত্য কি অসত্য, সেটা বিচারে নির্ধারণ হবে। শেখ হাসিনা সে সময় না থাকলেও তার আদেশ বলবৎ ছিল এবং তা কার্যকর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রসিকিউশন থেকে আমরা বলেছি, উনি যে উসকানিমূলক বক্তব্য ও আদেশ দিয়েছেন লিথ্যাল উইপেন ব্যবহার করে হত্যার, সেই অর্ডারটা তখনো চলছিল। উনি চলে গেছেন, কিন্তু ওনার অর্ডারের এক্সিকিউশনটা, অর্ডারের প্রিভিলেন্সটা তখনো বিদ্যমান ছিল। এ জন্য ওই অর্ডারের ফলশ্রুতিতে এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ ‘ওয়াইডস্প্রেড অ্যান্ড সিস্টেমেটিক’ নয়— আসামিপক্ষের এমন যুক্তির বিপক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ‘ওয়াইডস্প্রেড অ্যান্ড সিস্টেমেটিক’ মানে হলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমসের ডেফিনিশনে অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো অপরাধ কোনো একটি জায়গায় সংঘটিত হয়ে সেটি সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে হয়। সব হত্যাকাণ্ড একই প্যাটার্নে হতে হয়। এটাই হলো ‘সিস্টেমেটিক অ্যান্ড ওয়াইডস্প্রেড’।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য একই— এটি ঘটেছে কি ঘটেনি, এটি নির্ধারিত হবে ট্রায়ালে গিয়ে। অতএব চার্জ ফ্রেম হলেই বোঝা যাবে যখন সাক্ষ্য আসবে, যখন ডকুমেন্টারি এভিডেন্স ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন হবে, তখন বোঝা যাবে যে এটি ঘটেছে কি ঘটেনি।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি বলে যুদ্ধাপরাধ থেকে উদ্ভূত মানবতাবিরোধী অপরাধও সংঘটিত হয়নি বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন। জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলিকে রাজনৈতিক বিরোধ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনাসহ দুই আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তিনি।
প্রসিকিউশন বলছে, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা— তা নির্ধারণ হবে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর পর।
সোমবার (৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানি হয়। এ মামলার বাকি দুই আসামি হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনজনের মধ্যে সাবেক আইজিপি গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাকে শুনানির সময় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বাকি দুজন পলাতক থাকায় তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তাদের আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
মামলার শুনানিতে তিন আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনের কারণ হিসেবে আমির হোসেন বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল।
আমির হোসেন বলেন, কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি। এখানে রাজনৈতিক যে পটপরিবর্তন, হিংসা-প্রতিহিংসার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা। অতএব যেহেতু কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি, অতএব যুদ্ধাপরাধ থেকে উদ্ভূত যেসব অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ, তা এখানে সংঘটিত হয়নি।
আমির হোসেনের শুনানির পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার যুক্তিকে ‘ফ্ল্যাট ডিনায়াল’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানান ট্রাইব্যুনালে।
দুপক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারসহ তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে আমির হোসেনকে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট পাঁচ অভিযোগে গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। গত ১ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এ মামলায় শুনানি শেষ করেন।
প্রস্তুতি না থাকায় সে দিন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন সময় আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন নির্ধারণ করেন। এ দিন শুনানি শুরুর আগেই শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আইনজীবী আমির হোসেন লিখিত আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে।
পরে শুনানির শুরুতে এ আইনজীবী বলেন, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল প্রভৃতি নির্মাণের মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধন করেন। দেশের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ মামলায় প্রসিকিউশন যেসব অভিযোগে নথি দাখিল করেছেন, এসবের সঙ্গে শেখ হাসিনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
পরে সংবাদ সম্মেলনে আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে মামলাটি করা হয়েছে।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন। ছবি: ফোকাস বাংলা
আন্দোলন চলাকালীন শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতি’ বলে মন্তব্য করেছেন বলে এর আগে অভিযোগ করেছিল প্রসিকিউশন। এ প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ এভাবে বলতে চান নাই, বলেনও নাই। অপমান করেন নাই। উনি দীর্ঘ বছর শাসনামলে ছিলেন। উনি যদি রাজাকারদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চাইতেন, আরও আগেই করতে পারতেন।
তিনি আরও বলেন, এর আগে যেহেতু রাজাকারদের হত্যা করেননি, জুলাই-আগস্টে কেন ছোট বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের হত্যা করবেন? তাপস সাহেবের সঙ্গে ফোনালাপের যে কথা আসছে যে উনি বিভিন্ন ছাত্রদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, আমি বলেছি এ রকম সঠিক না।
যারা আন্দোলন চলাকালীন নিহত হয়েছেন তাদের সুরতহাল, ময়নাতদন্ত করতে দেয়া হয়নি— প্রসিকিউশনের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, এ রকম কোনো প্রমাণ প্রসিকিউশন আনতে পারেনি।
সেতু ভবন, মেট্রোরেল ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগের ঘটনায় প্রসিউশন ‘ডকুমেন্টারি এভিডেন্স’ আনতে পারেনি বলেও শুনানিতে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন। শুনানিতে বলেন, বরং শেখ হাসিনা ব্যথিত হয়ে তা মেরামতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে বিনা উসকানিতে হত্যার শিকার হওয়ার পর শেখ হাসিনা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আমির হোসেন। বলেন, আবু সাইদকে তিনি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন— এ রকম কোনো বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ এ রকম কোনো ডকুমেন্টারি এভিডেন্স রাষ্ট্রপক্ষে তার যে দাখিলীয় কাগজ, তার মধ্যে নেই।
আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার সময় শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না উল্লেখ করে আমির হোসেন বলেন, আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা, চাঁনখারপুলে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগ সঠিক নয়। ৫ আগস্ট দুপুরে তো তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো ৪, ৫ নম্বরে এসেছে, এগুলো ওনার বেলায় প্রযোজ্য না।
আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানমাল রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছে এবং অনেক পুলিশ নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানান আমির হোসনে। তবে কতজন পুলিশ নিহত হয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা তিনি জানাননি।
শুনানির পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার প্রকাশিত কল রেকর্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করলে আমির হোসেন বলেন, সাক্ষ্য যখন হবে তখন কলরেকর্ড যদি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারি তাহলে সেটা আমার পক্ষে যাবে। আর যদি মিথ্যা প্রমাণ করতে না পারি তবে সেটা আমার বিপক্ষে যাবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়’— এ অভিযোগও সঠিক নয় বলে দাবি করেন আমির হোসেন। বলেন, এটা শেখ হাসিনার বেলায় প্রযোজ্য নয়। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কোনো রকমের নির্দেশ তিনি প্রদান করেন নাই।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউশন টিমের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। ছবি: ফোকাস বাংলা
এদিকে আদালতে শুনানির পর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউশন বলেছে, অভিযোগ গঠনের পরে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলে তাদের আনা অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা তা প্রমাণিত হবে।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, সব কিছুই নির্ধারণ হবে বিচারে এসে। এখনো বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। বিচার শুরু হবে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে। অতএব অভিযোগ গঠন না হলে উনি যা বলছেন অথবা আমরা যে অভিযোগ এনেছি, এটা সত্য কি না, সেটি কীভাবে নিরূপণ হবে? যদি সত্য না হয় তাহলে ওনারা খালাস পাবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই অপরাধের বিচার করা যাবে না— আসামি পক্ষের এমন যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে দাবি করেন তামিম। বলেন, আমরা বলেছি, এই আইনের সেকশন থ্রি সাবসেকশন ওয়ানে সুষ্পষ্টভাবে বলা আছে— এই আইন প্রণয়নের আগে অথবা পরে যদি কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ এই বাংলাদেশের টেরিটরির মধ্যে সংঘটিত হয়, তাহলে এই ট্রাইব্যুনাল ওই অপরাধের বিচার করতে পারবেন। অতএব এটি যে যুদ্ধাপরাধের আইন, এটি এই আইনের আগাগোড়া কোথাও বলা নাই।
আশুলিয়ায় ছয় জনকে পুড়িয়ে মারা ও চাঁনখারপুলে পাঁচজনকে গুলি করে মারার সময় শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না— আসামিপক্ষের এমন দাবির বিষয়ে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, এটা সত্য কি অসত্য, সেটা বিচারে নির্ধারণ হবে। শেখ হাসিনা সে সময় না থাকলেও তার আদেশ বলবৎ ছিল এবং তা কার্যকর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রসিকিউশন থেকে আমরা বলেছি, উনি যে উসকানিমূলক বক্তব্য ও আদেশ দিয়েছেন লিথ্যাল উইপেন ব্যবহার করে হত্যার, সেই অর্ডারটা তখনো চলছিল। উনি চলে গেছেন, কিন্তু ওনার অর্ডারের এক্সিকিউশনটা, অর্ডারের প্রিভিলেন্সটা তখনো বিদ্যমান ছিল। এ জন্য ওই অর্ডারের ফলশ্রুতিতে এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ ‘ওয়াইডস্প্রেড অ্যান্ড সিস্টেমেটিক’ নয়— আসামিপক্ষের এমন যুক্তির বিপক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ‘ওয়াইডস্প্রেড অ্যান্ড সিস্টেমেটিক’ মানে হলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমসের ডেফিনিশনে অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো অপরাধ কোনো একটি জায়গায় সংঘটিত হয়ে সেটি সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে হয়। সব হত্যাকাণ্ড একই প্যাটার্নে হতে হয়। এটাই হলো ‘সিস্টেমেটিক অ্যান্ড ওয়াইডস্প্রেড’।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য একই— এটি ঘটেছে কি ঘটেনি, এটি নির্ধারিত হবে ট্রায়ালে গিয়ে। অতএব চার্জ ফ্রেম হলেই বোঝা যাবে যখন সাক্ষ্য আসবে, যখন ডকুমেন্টারি এভিডেন্স ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন হবে, তখন বোঝা যাবে যে এটি ঘটেছে কি ঘটেনি।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫১ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৩ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, রা
৫ ঘণ্টা আগেএক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শরীয়তপুরের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে গত ২১ জুন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
৫ ঘণ্টা আগেবিচার ব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে সব রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। তবে, এক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানে যেসব উপজেলা জেলা সদরের নিকটবর্তী সেখানে আদালত স্থাপনের বিপক্ষে দলগুলো।
৬ ঘণ্টা আগেসাংবাদিক শামিম আহমদ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
৭ ঘণ্টা আগে