তসলিমার বই রাখায় ‘তৌহিদি জনতা’র চাপে সব্যসাচী প্রকাশনার স্টল বন্ধ

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২: ০২
বইমেলায় সব্যসাচীর স্টল। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশনা সংস্থা সব্যসাচীর স্টলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রকাশনা সংস্থাটির অন্যতম স্বত্বাধিকারী ও লেখক শতাব্দী ভব হামলাকারী ‘তৌহিদি জনতা‘র রোষানলে পড়েন। পরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয় তাকে। পুলিশ তাকে বইমেলা থেকে বের করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর সব্যসাচীর স্টল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রকাশনা সংস্থাটির বিরুদ্ধে হামলাকারীদের অভিযোগ, স্টলটিতে নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করা হচ্ছিল।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ১২৮ নম্বর স্টল সব্যসাচীতে এ ঘটনা ঘটে। তবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত হলে স্টলটি খুলে দেওয়া হয়েছে। স্টলটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে টাস্কফোর্সের সভার পর।

সব্যসাচীর আরেক কর্ণধার অভিনয়শিল্পী সানজানা মেহেরান সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, তাদের স্টলটিতে হামলা চালানো হয়েছে। কিছু সময় পরে তিনি আরেক স্ট্যাটাসে জানান, শতাব্দী ভবকে স্টল থেকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই অবশ্য তার ফেসবুক প্রোফাইলটি আর সক্রিয় পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করতে দেখে সব্যসাচীর স্টলে ভিড় করেন একদল লোক। লেখক শতাব্দী ভবন সেখানে বসেছিলেন। তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাদের মধ্যে তীব্র বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। শতাব্দী এ সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলে উত্তেজিত তৌহিদি জনতা তাকে মারধর করতে উদ্যত হয়। এ সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে শতাব্দী হাতজোড় করে ক্ষমা চান এবং পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। এ সময় স্টলটি পর্দা টাঙিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বইমেলা টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ড. সেলিম রেজা বলেন, দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটেছে। সব্যসাচী স্টলটি কিছুক্ষণ বন্ধ রাখার পর খুলে দেওয়া হয়েছে। এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বইমেলা কমিটি ও সেখানে উপস্থিত টাস্কফোর্সের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘দুপক্ষের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলছেন। সেখানে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

প্রকাশক সানজানা অবশ্য ফেসবুকে জানিয়েছিলেন, তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করা নিয়ে আগে থেকেই হুমকি পেয়ে আসছিলেন তিনি। এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘হুমকির মুখে সব্যসাচী। সব্যসাচী আমার সন্তান। জানি না এবার এই সন্তানকে মেলার মাঠে রাখতে পারব কি না! যাই হোক, প্রশাসনের কেউ আমার লিস্টে থাকলে ইনবক্স করেন।’

পরে তিনি জানান, মেলা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ উভয় তরফই তাকে স্টল থেকে তসলিমা নাসরিনের বই সরিয়ে ফেলতে বলেছে। স্ট্যটাসে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলা একাডেমির মেলার মাঠের দায়িত্বে যিনি আছেন, আমাকে কল দিয়ে বললেন তসলিমা নাসরিনের বই সরিয়ে ফেলতে। শাহবাগ থানার ওসিও একই কথা বললেন। বাধ্য হয়ে সরাতে হচ্ছে তসলিমা নাসরিনের চুম্বন বইটি।’

তসলিমা নাসরিনের বই নিষিদ্ধ ও সব্যসাচী স্টল বন্ধ করা নিয়ে অনলাইনে ‘তৌহিদি জনতা’ গতকাল সোমবার থেকেই সক্রিয় ছিল। মুসান্না আল ফাইয়াজ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সোমবার এক পোস্টে বলা হয়, ‘বইমেলায় সব্যসাচী স্টল নং ১২৮ পুরাটাই গো**স্তা*খে রাসুলের স্টল। সেখানে তাসলিমা নাসরিনসহ আরও বিভিন্ন শা*তি*মের বই বিক্রি হচ্ছে। আয় আল্লাহ, ওদের এত সা-হস হলো কীভাবে? আমরা লোহার ব্যাবহার ছেড়ে দেওয়াতে ওদের সাহস কী পরিমাণ বেড়েছে, ভাবা যায়?’

ওই স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, ‘আমরা বলি, তাসলিমা নাসরিনকে পেলে জীবনের মায়া ভুলে যাব, ওকে জাহান্নামে পাঠাব, আরও কত কী, এই সেই। অথচ ওর বই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বইমেলায়, এসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা আসলে সবাই মি*থ্যাবাদী, মি*থ্যা আশেকে রাসূল। জানি না, কিয়ামতের দিন কোন মুখ নিয়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দাঁড়াব।’

সব্যসাচীর স্টল বা তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ওই স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, ‘পোস্টটি সবাই প্রচার করুন, হাইলাইটস করুন, কপি বা শেয়ার করুন। সবাই আওয়াজ তুলুন, বড়দের নজরে আনুন। এই স্টল কোনোভাবেই রাখা যাবে না। নয়তো এসব বই পড়ে আরও নতুন নতুন শা*তি*ম গজাবে।’

তসলিমা নাসরিনের যে বইটি নিয়ে এবার এত আলোচনা, ‘চুম্বন‘ শিরোনামের বইটি মূলত গল্পগ্রন্থ। তার উপন্যাস ‘লজ্জা’, আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ক’ (পশ্চিমবঙ্গে দ্বিখণ্ডিত নামে প্রকাশিত), ‘আমার মেয়েবেলা’সহ কয়েকটি বই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। একপর্যায়ে তাকে দেশের বাইরে নির্বাসনে যেতে হয়।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন