
বিবিসি বাংলা

বিজয় দিবসের দু'দিনের মাথায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে দুটি শীর্ষ গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একের পর এক নজিরবিহীন মব হামলার সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার এবং ছায়ানটের ভবনে চালানো হয়েছে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া হয়েছে 'ভারতের দালাল', 'ফ্যাসিস্টের দোসরের' মতো ট্যাগ।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করলেও পরবর্তী সময়ে দেশটির বিরুদ্ধে সীমান্তে মানুষ হত্যা, পানি বণ্টন প্রশ্নে তাদের ভূমিকা কিংবা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশে নানা সময়ে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
অনেকেই ধারণা করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ভারতবিরোধী মনোভাবের যে ব্যবহার বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, এবারের হামলাগুলো তারই নতুন উদাহরণ।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৬ মাসের শাসনে একটি বড় ইস্যু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আর নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
তবে আসন্ন নির্বাচন বানচালে ভারতবিরোধী মনোভাব ব্যবহার করে একটি পক্ষ সহিংসতা উসকে দিচ্ছে, এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজনীতিবিদদের অনেকে।
হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতবিরোধিতার রাজনীতি?
দীর্ঘ সময় ধরেই নানা কারণে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী যে মনোভাব তৈরি হয়েছে, তা নতুন মাত্রা পায় গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর দেশটির সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
"দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যে আধিপত্য সেটার একটা প্রতিরোধের ব্যাপার সবসময় থেকেছে। এরসাথে যুক্ত হয়েছে পতিত সরকারের প্রতি তার সমর্থন", বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পরও না দেয়া এবং সবশেষ ওসমান হাদি হত্যার পর সামাজিক মাধ্যমে হত্যাকারীর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রচারণায় ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন তীব্র রূপ ধারণ করে।
যদিও প্রশাসন ও সরকার বলছে, হাদির হত্যাকারীরা দেশ ছেড়ে পালানোর বিষয়ে তারা এখনও নিশ্চিত নয়।
রোববার বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, "আসামি বর্ডার পার হয়ে চলে গেছে কিনা, এই বিষয়ে সুনর্দিষ্ট তথ্য আমরা এখনও কনফার্ম (নিশ্চিত) হতে পারিনি"।
পরদিন সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসামি কোথায় আছে সে বিষয়ে তথ্য থাকলে তাকে ধরা হতো।
ভারতবিরোধিতার নাম দিয়ে সহিংসতা উসকে দেয়া হচ্ছে?
বিশ্লেষকেদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতবিরোধিতার বিষয়টি বিভিন্ন সময় ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচী ভবন এবং গুড়িয়ে দেয়া ধানমন্ডি-৩২'র বাড়িটি আবার ভাঙার সময় ভারতবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সেই ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে দেখা যায় জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনের নেতাদের।
"প্রথম আলো-ডেইলি স্টারসহ এসব সুশীল পত্রিকাকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে", হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিলের পর করা সমাবেশে একথা বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি ও শাখা শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান।
একই দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকাল বাম, শাহবাগি, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে"।
বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বক্তব্যগুলো অস্বীকার না করলেও ভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, এই বক্তব্যের মাধ্যমে সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগকে যে বৈধতা দিয়েছে সেটি ভেঙে দেয়া বা তাদের মতে, গণমাধ্যম দু'টি যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে, তারা সেটি বন্ধ করার কথা বলেছেন।
অন্যদিকে নেতাদের 'মুখ ফসকে' বলা কথার কারণে হামলার দায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
তবে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরের মতে, "ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে সংহত করতে চাওয়া" গোষ্ঠীর জন্য ভারতবিরোধী স্লোগান সামনে রাখা সুবিধাজনক।
"জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে পদ্ধতিতে ভারত তার প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করেছে, তার কারণে ভারতের ওপর রাগ বেড়েছে। এরা, যারা বাংলাদেশে হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিজেদের একটা ধর্মবাদী রাজনীতিকে সংহত করতে চায়, তারা এটাকে নতুন করে আরও বেশি করে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে"।
"যখন এই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার জন্যে দেশেরই মানুষ তৎপর হয়, তখন এই ভারতবিরোধী স্লোগান সামনে রাখা তাদের এক ধরনের সুবিধা দেয়", বলেন তিনি।
সহিংসতার সাথে সরকারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
হামলাকারীরা পৌঁছানোর আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সাহায্য চেয়েও তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার।
এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এলেও মব থামাতে তারা সক্রিয় হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফলে এসব সহিংস কর্মকাণ্ডের পেছনে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
"এটা সামগ্রিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা। এই সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকাংশে মনে হচ্ছে এই সরকার এসমস্ত উসকানি, সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে", বলেন অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
হামলার ঘটনায় তিন শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছে ছায়ানট। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে ৯ জন।
যদিও ঘটনার দিন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অনেক ভিডিওর একটিতে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে হামলাকারীদের প্রতিহত করার পরিবর্তে তাদের সাথে দেনদরবার করতে দেখা যায়।
ভবনে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধারের জন্য ওই কর্মকর্তাকে হামলাকারীদের কাছ থেকে ২০ মিনিট সময় চেয়ে নিতে দেখা যায়।
নূরুল কবীরের মতে, সরকারের মধ্যে থাকা একটি অংশের সমর্থনেই এই সহিংসতা ঘটেছে।
"তারা ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোতে অগ্নিসংযোগের পরে যতক্ষণ লেগেছে সরকারের হস্তক্ষেপ করবার জন্যে, সেটা এই সরকারের ব্যর্থতা। আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলবো সরকারের প্রশাসনের মধ্যে, ইউনূস সরকারের মন্ত্রীসভার মধ্যে এমন লোকেরা নিশ্চয়ই আছেন যারা এই ঘটনাটাকে ঘটতে দিতে চেয়েছেন", বলেন তিনি।
একই অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দলটিতে যোগ দেয়ার আগে প্রায় সাড়ে ছয় মাস তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
সোমবার সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব) এর উদ্যোগে আয়োজিত যৌথ প্রতিবাদ সভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমাদের স্লোগানগুলো ব্যবহার করে তারা সেখানে আক্রমণ করেছে এবং সেটার পক্ষে সম্মতি তৈরি করেছে। এই ঘটনার পরে আমরা বলেছি যে, সরকারের ভেতরের একটা অংশের এখানে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে"।

বিজয় দিবসের দু'দিনের মাথায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে দুটি শীর্ষ গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একের পর এক নজিরবিহীন মব হামলার সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার এবং ছায়ানটের ভবনে চালানো হয়েছে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া হয়েছে 'ভারতের দালাল', 'ফ্যাসিস্টের দোসরের' মতো ট্যাগ।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করলেও পরবর্তী সময়ে দেশটির বিরুদ্ধে সীমান্তে মানুষ হত্যা, পানি বণ্টন প্রশ্নে তাদের ভূমিকা কিংবা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশে নানা সময়ে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
অনেকেই ধারণা করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ভারতবিরোধী মনোভাবের যে ব্যবহার বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, এবারের হামলাগুলো তারই নতুন উদাহরণ।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৬ মাসের শাসনে একটি বড় ইস্যু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আর নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
তবে আসন্ন নির্বাচন বানচালে ভারতবিরোধী মনোভাব ব্যবহার করে একটি পক্ষ সহিংসতা উসকে দিচ্ছে, এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজনীতিবিদদের অনেকে।
হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতবিরোধিতার রাজনীতি?
দীর্ঘ সময় ধরেই নানা কারণে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী যে মনোভাব তৈরি হয়েছে, তা নতুন মাত্রা পায় গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর দেশটির সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
"দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যে আধিপত্য সেটার একটা প্রতিরোধের ব্যাপার সবসময় থেকেছে। এরসাথে যুক্ত হয়েছে পতিত সরকারের প্রতি তার সমর্থন", বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পরও না দেয়া এবং সবশেষ ওসমান হাদি হত্যার পর সামাজিক মাধ্যমে হত্যাকারীর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রচারণায় ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন তীব্র রূপ ধারণ করে।
যদিও প্রশাসন ও সরকার বলছে, হাদির হত্যাকারীরা দেশ ছেড়ে পালানোর বিষয়ে তারা এখনও নিশ্চিত নয়।
রোববার বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, "আসামি বর্ডার পার হয়ে চলে গেছে কিনা, এই বিষয়ে সুনর্দিষ্ট তথ্য আমরা এখনও কনফার্ম (নিশ্চিত) হতে পারিনি"।
পরদিন সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসামি কোথায় আছে সে বিষয়ে তথ্য থাকলে তাকে ধরা হতো।
ভারতবিরোধিতার নাম দিয়ে সহিংসতা উসকে দেয়া হচ্ছে?
বিশ্লেষকেদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতবিরোধিতার বিষয়টি বিভিন্ন সময় ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচী ভবন এবং গুড়িয়ে দেয়া ধানমন্ডি-৩২'র বাড়িটি আবার ভাঙার সময় ভারতবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সেই ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে দেখা যায় জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনের নেতাদের।
"প্রথম আলো-ডেইলি স্টারসহ এসব সুশীল পত্রিকাকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে", হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিলের পর করা সমাবেশে একথা বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি ও শাখা শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান।
একই দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকাল বাম, শাহবাগি, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে"।
বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বক্তব্যগুলো অস্বীকার না করলেও ভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, এই বক্তব্যের মাধ্যমে সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগকে যে বৈধতা দিয়েছে সেটি ভেঙে দেয়া বা তাদের মতে, গণমাধ্যম দু'টি যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে, তারা সেটি বন্ধ করার কথা বলেছেন।
অন্যদিকে নেতাদের 'মুখ ফসকে' বলা কথার কারণে হামলার দায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
তবে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরের মতে, "ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে সংহত করতে চাওয়া" গোষ্ঠীর জন্য ভারতবিরোধী স্লোগান সামনে রাখা সুবিধাজনক।
"জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে পদ্ধতিতে ভারত তার প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করেছে, তার কারণে ভারতের ওপর রাগ বেড়েছে। এরা, যারা বাংলাদেশে হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিজেদের একটা ধর্মবাদী রাজনীতিকে সংহত করতে চায়, তারা এটাকে নতুন করে আরও বেশি করে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে"।
"যখন এই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার জন্যে দেশেরই মানুষ তৎপর হয়, তখন এই ভারতবিরোধী স্লোগান সামনে রাখা তাদের এক ধরনের সুবিধা দেয়", বলেন তিনি।
সহিংসতার সাথে সরকারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
হামলাকারীরা পৌঁছানোর আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সাহায্য চেয়েও তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার।
এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এলেও মব থামাতে তারা সক্রিয় হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফলে এসব সহিংস কর্মকাণ্ডের পেছনে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
"এটা সামগ্রিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা। এই সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকাংশে মনে হচ্ছে এই সরকার এসমস্ত উসকানি, সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে", বলেন অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
হামলার ঘটনায় তিন শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছে ছায়ানট। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে ৯ জন।
যদিও ঘটনার দিন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অনেক ভিডিওর একটিতে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে হামলাকারীদের প্রতিহত করার পরিবর্তে তাদের সাথে দেনদরবার করতে দেখা যায়।
ভবনে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধারের জন্য ওই কর্মকর্তাকে হামলাকারীদের কাছ থেকে ২০ মিনিট সময় চেয়ে নিতে দেখা যায়।
নূরুল কবীরের মতে, সরকারের মধ্যে থাকা একটি অংশের সমর্থনেই এই সহিংসতা ঘটেছে।
"তারা ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোতে অগ্নিসংযোগের পরে যতক্ষণ লেগেছে সরকারের হস্তক্ষেপ করবার জন্যে, সেটা এই সরকারের ব্যর্থতা। আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলবো সরকারের প্রশাসনের মধ্যে, ইউনূস সরকারের মন্ত্রীসভার মধ্যে এমন লোকেরা নিশ্চয়ই আছেন যারা এই ঘটনাটাকে ঘটতে দিতে চেয়েছেন", বলেন তিনি।
একই অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দলটিতে যোগ দেয়ার আগে প্রায় সাড়ে ছয় মাস তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
সোমবার সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব) এর উদ্যোগে আয়োজিত যৌথ প্রতিবাদ সভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমাদের স্লোগানগুলো ব্যবহার করে তারা সেখানে আক্রমণ করেছে এবং সেটার পক্ষে সম্মতি তৈরি করেছে। এই ঘটনার পরে আমরা বলেছি যে, সরকারের ভেতরের একটা অংশের এখানে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে"।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই আলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়।
৩ ঘণ্টা আগে
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। শিলিগুড়ি টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এ দিন বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও ভিসা অফিস ঘেরাও করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠন।
১৪ ঘণ্টা আগে
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানান, হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা করেছে ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ। মামলায় অজ্ঞাত ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে অগ্নিসংযোগে পত্রিকাটির ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির কথা বলা হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে ১০ রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি এ দিন তিনটি স্বল্প দূরত্বের কমিউটার ট্রেন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
১৭ ঘণ্টা আগে