
এ কে এম মাহফুজুর রহমান

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা সদর আজ এক অভূতপূর্ব সড়ক সংকটে পড়েছে। অবৈধ ব্যাটারিচালিত তিনচাকার অটোরিকশা, ইলেকট্রিক হাইব্রিড থ্রি-হুইলার, ইঞ্জিন বসানো রিকশা, নসিমন-করিমন ও স্থানীয়ভাবে পরিবর্তিত অসংখ্য রোড-অযোগ্য যানবাহন নগর ও উপনগর সড়ক কার্যত দখল করে নিচ্ছে। ‘ইজিবাইক’, ‘লেগুনা’, ‘বেবি ট্যাক্সি’সহ নানা নামে পরিচিত এসব যান কখনোই নগর সড়কে চলাচলের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়নি। তবু ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা থেকে শুরু করে প্রায় সব জেলা ও উপজেলা সদরেই এদের প্রভাব আজ স্পষ্ট।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্যে, শহর ও উপজেলা শহরগুলোতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ এবং জাতীয় পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ লাখ পর্যন্ত থ্রি-হুইলার চলছে, যার প্রায় ৬০ শতাংশই অনিবন্ধিত বা কাঠামোগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এদের দখলে সংকীর্ণ সড়কগুলো এতটাই ভরাট যে ট্রাফিক সিগন্যাল, লেন, পথচারী, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, বাস—সবই কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। উল্টো পথে চালানো, মোড়ে মোড়ে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকা, সিগন্যাল না দিয়ে হঠাৎ টার্ন নেওয়া, হুইসেল বা সিগন্যাল উপেক্ষা করার প্রবণতা শহুরে জীবনকে ক্রমেই শ্বাসরুদ্ধ করে তুলছে; অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, স্কুলবাস ও অফিসযাত্রী—সবাই যেন আজ এই অটোরিকশার কাছে জিম্মি। সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা সহনীয় মাত্রার বাইরে চলে গেছে।
ঢাকা শহরের সংকট এই বাস্তবতাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, শহরে অন্তত ২০–২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা, সেখানে ঢাকায় সড়কের অনুপাত মাত্র ৭ শতাংশ। এর মধ্যেও অনেক এলাকায় অফ-পিক সময়ে চলমান যানবাহনের অর্ধেকেরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ব্যাটারিচালিত অবৈধ থ্রি-হুইলার। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) ২০২৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার বিভিন্ন মোড়ের প্রায় ৩০ শতাংশ যানবিলম্বের জন্য দায়ী এসব ধীরগতির ও অশৃঙ্খল যান।
অন্যদিকে বিআইডিএসের হিসাবে, শুধু যানজটের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩৭ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে। উৎপাদনশীল সময় নষ্ট, অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়া, সড়ক ক্ষয় ও পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি এর কারণ। মাত্র ১০–২৫ কিলোমিটার গতিতে চলা এ যানগুলো ইউ-টার্নে বিশৃঙ্খলা, ভুল লেনে প্রবেশ, হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা–নামানো ও অননুমোদিত থামার মাধ্যমে এক ধরনের ‘ঢেউ-জ্যাম’ সৃষ্টি করে, যার প্রভাব এক মোড় থেকে অন্য মোড়ে, এমনকি মহাসড়ক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। সড়ক নিরাপত্তাও ভেঙে পড়ছে; অননুমোদিত ইঞ্জিন বসানো, দুর্বল ব্রেক, ওভারলোডিং এবং অতিরিক্ত ব্যাটারির কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার দুর্ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হাজারো অবৈধ চার্জিং স্টেশন, যেখানে নিম্নমানের জ্বালানি পোড়ানো, বিদ্যুৎ চুরি এবং সীসাযুক্ত ব্যাটারির বর্জ্য নর্দমায় ফেলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও পানির উৎসকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
এই সংকট এখন শুধু যানজটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা রূপ নিয়েছে মানবিক ও সামাজিক সংকটে। জরুরি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে থেকে হারাচ্ছে অমূল্য সময়; হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা প্রসবকালীন জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এই কয়েক মিনিটই প্রাণ-মৃত্যুর ফারাক তৈরি করছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষায় ও ক্লাসে দেরি করছে, কর্মজীবী নারী–পুরুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, সংকীর্ণ গলিতে অতিরিক্ত যানজটের কারণে নারীরা বাড়তি হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন। ফুটপাথ দখল হয়ে পথচারীর নিরাপদ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আবার বৈধ সিএনজি অটোরিকশা ও বাস অপারেটররা ভাড়া প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে জীবিকার অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
সরকার ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যান নিষিদ্ধ করলেও বাস্তবায়ন দুর্বল; অভিযান শুরু হয়, কয়েক দিন পরই সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়, কারণ কোনো কেন্দ্রীয় নজরদারি নেই, স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছায়া–প্রশ্রয় আছে, চালকদের আর্থসামাজিক দুরবস্থাও বাস্তবতা। মোহাম্মদপুরে প্রচলিত প্যাডেল রিকশাচালক মো. শাহিনের ভাষায়, “এসব অটোরিকশা রিকশার ঐতিহ্য নষ্ট করছে, দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে, আমাদের আয় কমে যাচ্ছে, সরকার কঠোর হলে বরং আমরা বাঁচব। সড়কেও নিয়ম ফিরবে।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাইনুল হোসেন (হেলাল) মনে করেন, “এগুলোকে একদিনে শহর থেকে হটানো সম্ভব নয়; ধাপে ধাপে মহানগর থেকে উপশহর ও গ্রামে স্থানান্তরই যৌক্তিক।” সহযোগী অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান সোহাগের মতে, “ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এ যান অনিরাপদ, তবে শহরের বাইরে নির্দিষ্ট রুটে কঠোর লাইসেন্সের আওতায় চালানো যেতে পারে।”
অন্যদিকে চালক রফিকুল উল্লাহর বক্তব্য, “আমরা মানুষের শেষ মাইল যাতায়াত সহজ করি, সরকার লাইসেন্স দিলে নিয়ম মেনে চালাব।” অর্থাৎ, এর সমাধান হতে হবে দ্রুত এবং শৃঙ্খলা, মানবিকতা ও ভূগোলভিত্তিক বাস্তবতার সমন্বয়ে; কেবলমাত্র শহরকে মুক্ত করে কাঠামোবদ্ধ সংস্কার ও বৈধ লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে।
এদের সংখ্যা বিবেচনায় এখন আর প্রতীকী বা সাময়িক অভিযানে কাজ হবে বলে কেউ মনে করছেন না; প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে পরিবহন পুনর্গঠনের সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা। প্রথমত, দেশব্যাপী অবৈধ থ্রি-হুইলার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত, কঠোর ও বহুসংস্থার সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে, যেখানে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ও লাইসেন্স-শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে কোন ধরনের যান কোথায় চলবে—মহানগর, উপশহর, উপজেলা বা গ্রাম—তা পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে হবে। তৃতীয়ত, অবৈধ ওয়ার্কশপ, ইঞ্জিন বসানো কেন্দ্র ও চার্জিং স্টেশন বন্ধ করে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। চতুর্থত, নিরাপদ বিকল্প পরিবহন বাড়াতে হবে—নতুন বাস ফ্লিট, আধুনিক সিএনজি অটোরিকশা, এমআরটি/বিআরটি সম্প্রসারণ এবং পরিকল্পিত লাস্ট-মাইল সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। পঞ্চমত, যারা এ খাতে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা জরুরি; মাইক্রোক্রেডিট, প্রশিক্ষণ, বৈধ লাইসেন্সিং ও বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা না দিলে কোনো সিদ্ধান্তই টেকসই হবে না। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি, উৎপাদনশীলতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবা—সবকিছুই আজ অচল সড়কব্যবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। একটি স্মার্ট, নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশ কখনোই এমন অগোছালো পরিবহন বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই দেশের ভবিষ্যৎ ও নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ থ্রি-হুইলারের এই যুগেরই ইতি টানতে হবে এখনই—সুসংহত নীতি, প্রয়োজনে বিকল্প কর্মসংস্থানের নির্দেশনা, কঠোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগের মাধ্যমে।
লেখক: ডেপুটি ডিরেক্টর–ফ্যাকাল্টি এইচআর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা সদর আজ এক অভূতপূর্ব সড়ক সংকটে পড়েছে। অবৈধ ব্যাটারিচালিত তিনচাকার অটোরিকশা, ইলেকট্রিক হাইব্রিড থ্রি-হুইলার, ইঞ্জিন বসানো রিকশা, নসিমন-করিমন ও স্থানীয়ভাবে পরিবর্তিত অসংখ্য রোড-অযোগ্য যানবাহন নগর ও উপনগর সড়ক কার্যত দখল করে নিচ্ছে। ‘ইজিবাইক’, ‘লেগুনা’, ‘বেবি ট্যাক্সি’সহ নানা নামে পরিচিত এসব যান কখনোই নগর সড়কে চলাচলের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়নি। তবু ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা থেকে শুরু করে প্রায় সব জেলা ও উপজেলা সদরেই এদের প্রভাব আজ স্পষ্ট।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্যে, শহর ও উপজেলা শহরগুলোতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ এবং জাতীয় পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ লাখ পর্যন্ত থ্রি-হুইলার চলছে, যার প্রায় ৬০ শতাংশই অনিবন্ধিত বা কাঠামোগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এদের দখলে সংকীর্ণ সড়কগুলো এতটাই ভরাট যে ট্রাফিক সিগন্যাল, লেন, পথচারী, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, বাস—সবই কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। উল্টো পথে চালানো, মোড়ে মোড়ে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকা, সিগন্যাল না দিয়ে হঠাৎ টার্ন নেওয়া, হুইসেল বা সিগন্যাল উপেক্ষা করার প্রবণতা শহুরে জীবনকে ক্রমেই শ্বাসরুদ্ধ করে তুলছে; অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, স্কুলবাস ও অফিসযাত্রী—সবাই যেন আজ এই অটোরিকশার কাছে জিম্মি। সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা সহনীয় মাত্রার বাইরে চলে গেছে।
ঢাকা শহরের সংকট এই বাস্তবতাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, শহরে অন্তত ২০–২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা, সেখানে ঢাকায় সড়কের অনুপাত মাত্র ৭ শতাংশ। এর মধ্যেও অনেক এলাকায় অফ-পিক সময়ে চলমান যানবাহনের অর্ধেকেরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ব্যাটারিচালিত অবৈধ থ্রি-হুইলার। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) ২০২৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার বিভিন্ন মোড়ের প্রায় ৩০ শতাংশ যানবিলম্বের জন্য দায়ী এসব ধীরগতির ও অশৃঙ্খল যান।
অন্যদিকে বিআইডিএসের হিসাবে, শুধু যানজটের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩৭ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে। উৎপাদনশীল সময় নষ্ট, অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়া, সড়ক ক্ষয় ও পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি এর কারণ। মাত্র ১০–২৫ কিলোমিটার গতিতে চলা এ যানগুলো ইউ-টার্নে বিশৃঙ্খলা, ভুল লেনে প্রবেশ, হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা–নামানো ও অননুমোদিত থামার মাধ্যমে এক ধরনের ‘ঢেউ-জ্যাম’ সৃষ্টি করে, যার প্রভাব এক মোড় থেকে অন্য মোড়ে, এমনকি মহাসড়ক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। সড়ক নিরাপত্তাও ভেঙে পড়ছে; অননুমোদিত ইঞ্জিন বসানো, দুর্বল ব্রেক, ওভারলোডিং এবং অতিরিক্ত ব্যাটারির কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার দুর্ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হাজারো অবৈধ চার্জিং স্টেশন, যেখানে নিম্নমানের জ্বালানি পোড়ানো, বিদ্যুৎ চুরি এবং সীসাযুক্ত ব্যাটারির বর্জ্য নর্দমায় ফেলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও পানির উৎসকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
এই সংকট এখন শুধু যানজটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা রূপ নিয়েছে মানবিক ও সামাজিক সংকটে। জরুরি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে থেকে হারাচ্ছে অমূল্য সময়; হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা প্রসবকালীন জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এই কয়েক মিনিটই প্রাণ-মৃত্যুর ফারাক তৈরি করছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষায় ও ক্লাসে দেরি করছে, কর্মজীবী নারী–পুরুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, সংকীর্ণ গলিতে অতিরিক্ত যানজটের কারণে নারীরা বাড়তি হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন। ফুটপাথ দখল হয়ে পথচারীর নিরাপদ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আবার বৈধ সিএনজি অটোরিকশা ও বাস অপারেটররা ভাড়া প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে জীবিকার অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
সরকার ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যান নিষিদ্ধ করলেও বাস্তবায়ন দুর্বল; অভিযান শুরু হয়, কয়েক দিন পরই সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়, কারণ কোনো কেন্দ্রীয় নজরদারি নেই, স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছায়া–প্রশ্রয় আছে, চালকদের আর্থসামাজিক দুরবস্থাও বাস্তবতা। মোহাম্মদপুরে প্রচলিত প্যাডেল রিকশাচালক মো. শাহিনের ভাষায়, “এসব অটোরিকশা রিকশার ঐতিহ্য নষ্ট করছে, দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে, আমাদের আয় কমে যাচ্ছে, সরকার কঠোর হলে বরং আমরা বাঁচব। সড়কেও নিয়ম ফিরবে।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাইনুল হোসেন (হেলাল) মনে করেন, “এগুলোকে একদিনে শহর থেকে হটানো সম্ভব নয়; ধাপে ধাপে মহানগর থেকে উপশহর ও গ্রামে স্থানান্তরই যৌক্তিক।” সহযোগী অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান সোহাগের মতে, “ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এ যান অনিরাপদ, তবে শহরের বাইরে নির্দিষ্ট রুটে কঠোর লাইসেন্সের আওতায় চালানো যেতে পারে।”
অন্যদিকে চালক রফিকুল উল্লাহর বক্তব্য, “আমরা মানুষের শেষ মাইল যাতায়াত সহজ করি, সরকার লাইসেন্স দিলে নিয়ম মেনে চালাব।” অর্থাৎ, এর সমাধান হতে হবে দ্রুত এবং শৃঙ্খলা, মানবিকতা ও ভূগোলভিত্তিক বাস্তবতার সমন্বয়ে; কেবলমাত্র শহরকে মুক্ত করে কাঠামোবদ্ধ সংস্কার ও বৈধ লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে।
এদের সংখ্যা বিবেচনায় এখন আর প্রতীকী বা সাময়িক অভিযানে কাজ হবে বলে কেউ মনে করছেন না; প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে পরিবহন পুনর্গঠনের সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা। প্রথমত, দেশব্যাপী অবৈধ থ্রি-হুইলার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত, কঠোর ও বহুসংস্থার সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে, যেখানে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ও লাইসেন্স-শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে কোন ধরনের যান কোথায় চলবে—মহানগর, উপশহর, উপজেলা বা গ্রাম—তা পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে হবে। তৃতীয়ত, অবৈধ ওয়ার্কশপ, ইঞ্জিন বসানো কেন্দ্র ও চার্জিং স্টেশন বন্ধ করে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। চতুর্থত, নিরাপদ বিকল্প পরিবহন বাড়াতে হবে—নতুন বাস ফ্লিট, আধুনিক সিএনজি অটোরিকশা, এমআরটি/বিআরটি সম্প্রসারণ এবং পরিকল্পিত লাস্ট-মাইল সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। পঞ্চমত, যারা এ খাতে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা জরুরি; মাইক্রোক্রেডিট, প্রশিক্ষণ, বৈধ লাইসেন্সিং ও বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা না দিলে কোনো সিদ্ধান্তই টেকসই হবে না। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি, উৎপাদনশীলতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবা—সবকিছুই আজ অচল সড়কব্যবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। একটি স্মার্ট, নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশ কখনোই এমন অগোছালো পরিবহন বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই দেশের ভবিষ্যৎ ও নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ থ্রি-হুইলারের এই যুগেরই ইতি টানতে হবে এখনই—সুসংহত নীতি, প্রয়োজনে বিকল্প কর্মসংস্থানের নির্দেশনা, কঠোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগের মাধ্যমে।
লেখক: ডেপুটি ডিরেক্টর–ফ্যাকাল্টি এইচআর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

দেশটিতে প্রথমবারের মতো অপ্রাপ্তবয়স্কদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার নতুন আইন কার্যকর হওয়ার আগেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন এই প্রযুক্তি জায়ান্ট।
৩ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে ৬৪ জেলার পুলিশকে। এটি সাধারণ নির্বাচন নয়, এটি গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। তাই শহীদদের আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। সেভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
৩ ঘণ্টা আগে
এদিন, ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যার দায়ে জয় ও পলকের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) জমা দেয় প্রসিকিউশন। এর আগে, বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর তামিম।
৪ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও জুনায়েদ আহমেদ পলক। তবে দেশের বাইরে রয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
৫ ঘণ্টা আগে