আ.লীগ নেতা বাবুল হত্যায় পৌর মেয়র আক্কাসের সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্ত

রাজশাহী ব্যুরো

দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল (৫০) হত্যার ঘটনায় পৌর মেয়র আক্কাস আলীর সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা তদন্ত করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ঘটনা তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে গত ২৭ জুন স্থানীয় সরকারের পৌর-১ শাখার উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, গত ২২ জুন বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ উভয় পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। পরে ওইদিনই একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন।’এই সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টির তদন্ত শুরু করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ২৭ জুন স্থানীয় সরকারের পৌর-১ শাখার উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ চিঠি ইস্যুর আগের দিন ২৬ জুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মারা যান।

এদিকে, সংঘর্ষের পর ২৩ জুন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদি হয়ে দ্রুত বিচার আইনে বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীকে প্রধান আসামী করে ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে করা হয়েছে। তবে এ মামলাটি ২৬ জুন হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে ২২ জুন সংঘর্ষের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন বাবুল হত্যার প্রধান আসামি পৌর মেয়র আক্কাছ আলী। গত ১০ দিন থেকে অফিসেও অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, ২৭ জুন বেলা ১১টায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাবুলের জানাজার নামাজে উপস্থিতি হয়ে মরদেহ সামনে রেখে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খুনি আক্কাস (পৌর মেয়র), খুনি মেরাজ (ইউপি চেয়ারম্যান)। তাদের পেছনে মদতদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাস বহিষ্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে সেই কথা এখানে বলেছিলেন। এস এম কামাল বলেছিলেন, সে বহিষ্কৃত। এ ঘোষণার সাত দিনের মাথায় খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে আক্কাস ও মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পেছন থেকে মদতদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ (রাজশাহী-৩ আসনের এমপি), এএইচএম খায়রুজ্জামান (আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র) এবং লায়েব উদ্দিনের (বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আমাদেরও দায়িত্ব আছে।’

শাহরিয়ার আলমের এই বক্তব্যের পর রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়ায়। খুনের ঘটনা বাদ দিয়ে আলোচনা ঘুরে যায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দলের দিকে। ২৮ জুন শাহরিয়ার আলমের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা শাহরিয়ার আলমকে রাজশাহীতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তার কুশপুতুল দাহ করেন।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলের লাশ নিয়ে রাজনীতি চায় না তার পরিবার। এসব দলাদলির কারণে বাবুলের প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

নিহত বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবী বলেন, ‘লিটন ভাই ও আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব ছিল না। একসময় আমার স্বামী তাঁদের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। সবার সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিল না। আমরা লাশ নিয়ে রাজনীতি চাই না। প্রকৃত খুনির বিচার চাই।’

নিহত বাবুলের ছেলে আশিক জাবেদ বলেন, ‘লিটন-আসাদ ইস্যুতে এখন আলোচনা ভিন্নদিকে মোড় নিয়েছে। তাতে প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারেন। আমরা এই বর্বর হত্যার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে বাঘা থানার তদন্ত (ওসি) ও বাবুল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোয়েব খান বলেন, বাবুল হত্যা মামলায় ৭ জনকে গ্রেফতার করে একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলাটিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘মেয়র আক্কাস আলী ঘটনার দিন বাবুলকে কুপিয়েছিলেন কি না, তা তদন্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ আমাকে চিঠি দিয়েছে। আমি এটি আমার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আশরাফুল ইসলামকে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছি। তিনি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে তিনি প্রতিবেদন দিলে ঢাকায় পাঠানো হবে।’

উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, গত ২২ জুন বাঘা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন বাবুল। গত বুধবার (২৬ জুন) বিকালে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান।রিত কোনো আলোচনা করা হয়নি।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ভূমিকম্পে প্রাণ গেলো বাবা-ছেলের

সূত্র জানায়, চাকরিজনিত কারণে দেলোয়ার হোসেন পরিবার নিয়ে নরসিংদী শহরের গাবলতি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ভূমিকম্পের সময় পাশের বাসার একটি দেওয়াল ধসে তাদের ওপর পড়ে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়।

২১ ঘণ্টা আগে

ভূমিকম্প: ভবনের রেলিং ধসে সলিমুল্লাহ মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর পুরান ঢাকার কসাইটুলিতে ভূমিকম্পে পাঁচতলা ভবনের রেলিং ধসে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (২০২৩-২৪) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলামের (২১) মৃত্যু হয়েছে।

১ দিন আগে

নারায়ণগঞ্জে তুলার গোডাউনে আগুন

স্থানীয় তুলা ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়া দাবি করে বলেন, তুলার গোডাউনে আগুন লাগার ফলে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগুন লাগার পর মুহূর্তেই গুদামের ভেতরের তুলা দাহ্য হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

১ দিন আগে

গানের আসরে আল্লাহকে ‘কটূক্তি’, বাউল শিল্পী আবুল সরকার কারাগারে

আবুল সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরাখালা পাগলীর মেলামঞ্চে গান পরিবেশন করেন আবুল সরকার। এ সময় তিনি ধর্ম অবমাননা করেন ও আল্লাহকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করেন।

২ দিন আগে