ময়মনসিংহে মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদীন উদ্যানে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চটি উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ছবি: ডয়েচে ভেলে বাংলা

ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদীন উদ্যানে স্থাপিত সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। এ নিয়ে সেখানকার কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি কর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এ ঘটনায় প্রশাসকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। মুক্তমঞ্চটি তাদের পুনর্নির্মাণ করে দিতে হবে।

গত বুধবার জেলা প্রশাসনের অভিযানে ভেঙে দেওয়া হয় মুক্তমঞ্চটি। পরে পাশেই আরেকটি নির্মাণাধীন একতলা স্থাপনা ভাঙতে গেলে কবি-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি কর্মীদের বাধার মুখে অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তারা।

এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে সাহিত্য সংসদ। গান-কবিতায় তারা মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদ জানান।

কবি শামীম আশরাফ বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের মুক্তমঞ্চটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সরকারের সময়েও কেউ এত বড় সাহস করেনি, যা করে দেখাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন। এর পেছনে কোনো বড় ইন্ধন আছে বলে আমি মনে করি।

কবি শামীম আশরাফ আরও বলেন, প্রশাসনকে দুই দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করে যদি মুক্তমঞ্চটি পুনর্নির্মাণ না করে দেয়, তাহলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদে অংশ নিয়ে কবি আশরাফ মীর বলেন, আমরা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই প্রায় ৪৩ বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। হঠাৎ করে প্রশাসন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে যা করেছে, তা মোটেই কাম্য হয়নি। এটি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জন্য হুমকি বলে আমরা মনে করছি। আমরা চাই, আপনারা ভুল-ত্রুটি শুধরে অক্ষত মঞ্চ ফিরিয়ে দিন।

মুক্তমঞ্চের আশপাশে অনেক অবৈধ দখলদার থাকতেও কেন সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চই ভেঙে ফেলতে হয়েছে— এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জগতের সবাই। এটি কোনো গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য করা হয়েছে কি না, উঠেছে সে প্রশ্নও।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল নাকিব বলেন, মুক্তমঞ্চের পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদের পার নামে-বেনামে প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে। গত ছয় মাস ধরে বাণিজ্যমেলার প্যান্ডেল করে নদের জায়গা দখল করা হয়েছে। তা না সরিয়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় আঘাত তারা হেনেছে। কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে তারা। টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছেন কবি-সাহিত্যিকদের। এই অঞ্চলের মানুষ তা কখনো মেনে নেবে না।

Protest-Against-Mymensingh-Shahitya-Sangsad-Muktomoncho-Vandalism-01-05-2025

অভিযানে মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন ময়মনসিংহের কবি-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি কর্মীরা। ছবি: ডয়েচে ভেলে বাংলা

কবি-সাহিত্যি-সংস্কৃতি কর্মীরা জানান, কবি মুশাররাফ করিমের হাত ধরে ১৯৮০ সালের ২১ মে ময়মনসিংহে সাহিত্য সংসদ যাত্রা শুরু করে। নগরের জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ম শফিউল আলম সাড়ে ছয় শতক জমি সাহিত্য সংসদকে লিখিতভাবে বরাদ্দ দেন। সেই লিখিত চিঠি মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসক এ এস এম মতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাহিত্য সংসদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর থেকেই সেখানে সাহিত্য সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।

১৯৮৩ সাল থেকে সাহিত্য সংসদের নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হলেও জয়নাল আবেদিন উদ্যানে ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে আসরটি হয়ে আসছে। আজ শুক্রবারও (২ মে) বীক্ষণের দুই হাজার ১৪৬তম আসর হওয়ার কথা রয়েছে।

সংস্কৃতি কর্মীরা বলছেন, প্রায় তিন দশক পথচলার পর ২০১৪ সালের দিকে সংগঠনটির সভাপতি কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজলের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে সাহিত্য সংসদের দুটি আলাদা কমিটিও গঠিত হয়। ওই সময় থেকে বীক্ষণ আসরটি কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল গ্রুপের অনুসারীরা জয়নুল আবেদিন উদ্যানের মুক্তমঞ্চে এবং ইয়াজদানী কোরায়শী কাজলের অনুসারীরা যুবলীঘাট চেতনামঞ্চে করে আসছেন।

সংগঠন বিভক্ত হয়ে গেলেও দুপক্ষই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়ায় সমানভাবে ক্ষুব্ধ। সাহিত্য সংসদের সাবেক সভাপতি কবি ফরিদ আহমেদ বলেন, সাহিত্য সংসদের নামে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় আমি সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এরপর থেকে সরকার বা প্রশাসন এ নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া মুক্তমঞ্চটি গুঁড়িয়ে দেওয়ায় আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সারা দেশে এমন হচ্ছে। কোথাও কেউ মন খুলে গান-বাজনা বা সাহিত্য চর্চা করতে পারছে না।

ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, আমাদের সংগঠনের নেতাদের মধ্যে পদ-পদবি নিয়ে মত-দ্বিমত বা বিভক্তি আছে। আমাদের বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়েছে প্রশাসন। চারদিকে কত শত অবৈধ দখলদার, কেউ তো তাদের কিছু বলছে না বা উচ্ছেদও করছে না। এখানে তো সাহিত্য চর্চা ছাড়া আর কিছু হয় না। তাহলে এই জায়গায় আঘাত কেন?

সাহিত্য সংসর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল বলেন, আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও তার মানে এই নয় যে আমরা প্রশাসনের উচ্ছেদকে সমর্থন দিচ্ছি। আমরাও এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অচিরেই প্রশাসনের সঙ্গে বসে সুন্দর একটি সমাধানের চেষ্টা করব।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। যদি তাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র থাকে, আমাদের দেখালে আমরা মঞ্চটি পুনরায় নির্মাণ করে দেবো। সেখানে নিয়মিত মাদকের আড্ডা বসতো— এমন অভিযোগও আমাদের কাছে ছিল।

সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর জেলা প্রশাসককে জিজ্ঞাসা করেছি, কেন সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভাঙা হলো। সেটি না ভাঙলেও তো হতো। আসলে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে অন্য স্থাপনার সাথে সেটি ভাঙা হয়েছে। জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ভালো একটু জায়গা দেখে সাহিত্য সংসদের নামে একটি স্থাপনা বৈধভাবে করে দেওয়ার জন্য।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

রাজশাহীতে নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা প্রকল্পের উদ্বোধন

নারীর ক্ষমতায়ন, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে রাজশাহীতে লাইট হাউজ নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমা

১৯ ঘণ্টা আগে

রাজশাহীতে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু

দেশব্যাপী সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অংশ হিসেবে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন–২০২৫। আজ রোববার সকালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এবং জেলার পবা উপজেলার সিলিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৃথক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন

২০ ঘণ্টা আগে

বিপিএলের জন্য নতুন রূপে প্রস্তুত হচ্ছে রাজশাহী স্টেডিয়াম

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়াম। উত্তরাঞ্চলের এ ঐতিহ্যবাহী ভেন্যুকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে একাধিক সংস্কার ও উন্নয়নকাজ হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

২০ ঘণ্টা আগে

রাবির ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলার সব আসামি খালাস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বহুল আলোচিত ছাত্রলীগ কমী ফারুক হত্যা মামলায় ১০৫ আসামির সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. জুলফিকার উল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন।

১ দিন আগে