মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আমানতের টাকা ৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে ২০১০ সালে পাঁচ লাখ টাকার একটি স্থায়ী আমানত (এফডিআর) খোলা হয়েছিল কৃষি বাংক স্থানীয় শাখায়। তৎকালীন যাঁরা স্থায়ী আমানত খুলেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমানত ভেঙে সব টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। উত্তোলিত অর্থ পরবর্তীতে তিনজনের নামে খোলা ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও ইউএনও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে হিসাব সংক্রান্ত তথ্য চাইলে প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যক্তি নামে স্থানান্তরের ঘটনাটি জানাজানি হয়।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলে ও নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঈশ্বরগঞ্জ শাখায় পাঁচ বছর মেয়াদি পাঁচ লাখ টাকার একটি স্থায়ী আমানত রাখা হয়। স্থায়ী আমানতের হিসাবটি ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে। ওই সময় সংসদের কমান্ডার ও সহকারী কমান্ডার ছিলেন যথাক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুছ ছাত্তার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তফাজ্জল হোসেন।

হিসাব খোলার কয়েকবছর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে কয়েকজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার আর্থিক সহায়তার আবেদন জমা পড়ে। এ বিষয়টি নিয়ে সংসদের আলোচনার হয়। পরে ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন স্থায়ী আমানতের হিসাবে টাকা নেই। সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে তৎকালীন সময়ের কমান্ডার ও সহকারী কমান্ডার বিভিন্ন অজুহাতে ব্যাংক হিসাবে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি এড়িয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, তাঁরা ছিলেন প্রভাবশালী। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করছিলেন তাঁরা। তাই স্থায়ী আমানতের টাকার হিসাব চাইতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা। কালক্ষেপণের ফলে বিষয়টি একপর্যায়ে চাপা পড়ে যায়।

৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা স্থায়ী আমানতের প্রসঙ্গটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদকে (সদ্য বদলি হয়েছেন) অবহিত করেন। ইউএনও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের স্থায়ী আমানতের এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে কৃষি ব্যাংকে চিঠি পাঠান। ফিরতি চিঠিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সংসদের প্রশাসককে বিস্তারিত অবহিত করেন।

কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আবু রায়হানের পাঠানো চিঠির একটি ছাঁয়ালিপি সংগ্রহ করে দেখা যায়, বর্তমান হিসাবটি প্রাতিষ্ঠানিক অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে নয় বরং ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৯ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত ব্যক্তি নামে খোলা হয়েছে। যাঁরা হিসাবটি খুলেছেন তাঁরা হচ্ছেন, (যেভাবে নথিতে লেখা আছে) আ. সাত্তার, তফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া ও মো. নুরুল হক। উল্লেখিত ব্যক্তিরা ঈশ্বরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সংশ্লিষ্ট বলে ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

ঈশ্বরগঞ্জে ইউএনওর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে কৃষি ব্যাংক থেকে চিঠি আসার পর হিসাবধারী তিন মুক্তিযোদ্ধার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়। তাঁরা গত ২০ মে কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জবাব দিয়ে গেছেন।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রহমান মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বেশিরভাগ টাকা ফেরত এসেছে। বাকি টাকা দু-এক দিনের মধ্যে এসে যাবে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. আবদুছ ছাত্তারকে পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলতে পারেননি।

অন্যদিকে সহকারী কমান্ডার মো. তফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল হক এ বিষয়ে জানান, তাঁর কাছ থেকে শুধু দস্তখত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি তেমন কিছু জানতেন না।

ঈশ্বরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপকমিটির প্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান হলুদকে প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

সাপের কামড়ে প্রাণ গেল ইজিবাইকের চালকের

১ দিন আগে

হঠাৎ ঝড়ে ঘরবাড়ি-গাছপালা লণ্ডভণ্ড, পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি

ঝড়ের কবলে পড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের পর গাছে চাপা পড়ে জাটিয়া ইউনিয়নের নিজতুলন্দর গ্রামের সুরুজ আলীর দুটি, নুরুল ইসলামের একটি, আব্দুর রহিমের দুটি, আবু সিদ্দিকের একটি ও ইদ্রিস আলীর দুটি এবং সোহাগী ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের রিপনের দুটি, শাহ্ নেওয়াজের একটি ও সিরাজুল ইসলামের একটি বসতঘর ভেঙে গেছে

১ দিন আগে

আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এখন সিলেটের ডিসি

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা সারোয়ার আলমকে সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি ও পদায়ন করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

১ দিন আগে

৩ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ৪৩তম নন-ক্যাডারদের

প্রার্থীরা জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিপুলসংখ্যক শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকারি উদাসীনতার কারণে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে দেশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শূন্যপদ বাড়ছে, অন্যদি

১ দিন আগে