২ আসনে বিভক্ত ভাঙ্গা উপজেলা, প্রতিবাদে ২ মহাসড়ক অবরোধ

ফরিদপুর জেলার সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গিয়ে ভাঙ্গা উপজেলাকে দুই আসনে বিভক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের পর দুই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলার বাসিন্দারা।

ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) উপজেলাকে ভেঙে দুই আসনে ভাগ করে দেওয়ার এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। প্রথমে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। সকাল ৯টার মধ্যে হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ, মাধবপুর ও পুকুরিয়া এলাকায় অবরোধ করা হয় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনের সময় থেকে ৪৬টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে।

ইসির গেজেট অনুযায়ী, ফরিদপুরের দুটি আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনে ছিল ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা। ফরিদপুর-২ আসনে ছিল নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা। এবারে ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গিয়ে ভাঙ্গা উপজলা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলোকে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই ভাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। স্থানীয় বিএনপি ও এনসিপি আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। শুক্রবার সকালেই তারা দুই মহাসড়ক অবরোধ করলেন।

স্থানীয়রা জানান, ‘আমরা ভাঙ্গার মানুষ, ভাঙ্গার সঙ্গেই থাকতে চাই’ স্লোগানে সকালে অবরোধে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় দুই পাশে শত শত বাস ও ট্রাক আটকা পড়ে। ভাঙ্গা থানা ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলেও বিক্ষোভকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তারা কিছু করতে পারছেন না।

হামিরদী ইউনিয়নের হামিদ গ্রামের বাসিন্দা পলাশ সাহা বলেন, আমরা ভাঙ্গাতে আছি, ভাঙ্গাতেই থাকতে চাই। কোনো অবস্থাতেই নগরকান্দার আধিপত্য আমরা মেনে নেব না।

আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ভোটাধিকার ও স্বার্থকে এভাবে উপেক্ষা করা যাবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব।

হামিরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের দাবি মানতে হবে। এটা ভাঙ্গাবাসীর প্রাণের দাবি, এই দাবির গুরুত্ব নির্বাচন কমিশনকে বুঝতে হবে।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, আপনাদের দাবি বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের কথা বলেছি। আপনাদেরকে আশ্বস্ত করছি, দ্রুত দাবিগুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।

এদিকে ভাঙ্গা উপজেলা বিভক্তির সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন ফরিদপুর-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল।

বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমাদের অঙ্গীকার—এই দুই ইউনিয়নকে ভাঙ্গার সঙ্গে আমরা যেকোনো মূল্যে ফেরত আনব। যা যা করা প্রয়োজন, সব করব। আমরা অঙ্গীকার করছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।

‘ভাঙ্গা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে এনসিপি ভাঙ্গা উপজেলার আহ্বায়ক মো. আশরাফ ফেসবুক পোস্টে জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভাঙ্গা পৌরসভার সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে ঘোষিত সময়ের আগেই সর্বস্তরের মানুষ অবরোধ শুরু করে দেন।

এর আগে ফরিদপুরে পাঁচটি সংসদীয় আসন ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাস করে চারটি করা হয়। তখন ভাঙ্গাকে চরভদ্রাসন ও সদরপুরের সঙ্গে যুক্ত করে ফরিদপুর-৪ আসন তৈরি করা হয়।