অরুণাভ বিশ্বাস
২০২০ সালের জুন মাস। চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। হিমালয়ের এক দুর্গম উপত্যকা—যার নাম **গালওয়ান ভ্যালি**। এখানে ঘটল এমন একটি সংঘর্ষ, যা শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই টালমাটাল করল না, বরং গোটা বিশ্বের নজর কাড়ল। কারণ এই সংঘর্ষে ব্যবহার হয়েছিল না অস্ত্র, না বন্দুক—তবুও নিহত হল অন্তত ২০ জন ভারতীয় ও অজানা সংখ্যক চীনা সৈন্য। গালওয়ান সংঘর্ষ প্রমাণ করে দিল, আজকের দিনে এসেও দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সামরিক দ্বন্দ্ব কতটা হঠাৎ, কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
গালওয়ান উপত্যকা ভারতের লাদাখ অঞ্চলে অবস্থিত। এর পাশ দিয়েই বয়ে গেছে গালওয়ান নদী, যার উৎপত্তি আকসাই চিন থেকে। এই অঞ্চল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বহু দশক ধরেই সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় এই গালওয়ান উপত্যকাই ছিল অন্যতম সংঘর্ষস্থল। সেই যুদ্ধের পর দুই দেশ একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা নির্ধারণ করে, যাকে বলা হয় **এলএসি (Line of Actual Control)**। কিন্তু এই রেখাটি কখনোই নির্দিষ্ট ও চূড়ান্ত সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, ফলে প্রায়ই এর অবস্থান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে চীন বিপুলসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করতে শুরু করে লাদাখ সীমান্তে। তারা এলএসি পার করে ভারতের দাবি করা ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে, এবং সেখানে তাঁবু খাটিয়ে ঘাঁটি তৈরি করে। ভারত এই অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করে এবং সৈন্য মোতায়েন করে পাল্টা অবস্থান নেয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল, উত্তেজনা বাড়ছিল। অবশেষে ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক সংঘর্ষ।
সেই রাতের সংঘর্ষে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়নি। কারণ ১৯৯৬ ও ২০০৫ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছিল যে সীমান্তে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ফলে সেই রাতের সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয়েছিল লোহার রড, কাঁটা লাগানো বাঁশ, পাথর, হাত ও পা—একটি প্রাগৈতিহাসিক লড়াইয়ের মতো। সংঘর্ষ স্থায়ী হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রাতভর চলে মারামারি। এতে ২০ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান, যার মধ্যে ছিলেন কর্নেল সন্তোষ বাবু। চীনের পক্ষ থেকে মৃতের সংখ্যা কখনোই স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি, তবে ২০২১ সালে তারা প্রথমবার স্বীকার করে যে তাদের চারজন সৈন্য মারা গেছেন।
এই ঘটনার পর ভারতের অভ্যন্তরে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশজুড়ে চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়, চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা শুরু হয়। এক সময় যে সম্পর্ক “বাণিজ্য সহযোগিতায় ভরপুর” বলে মনে করা হতো, সেটি মুহূর্তে শত্রুতার দিকে মোড় নেয়।
গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্ট্র্যাটফোর -এর সামরিক বিশ্লেষক জর্জ বার্নস বলেন, “এই সংঘর্ষ মূলত চীনের এক দীর্ঘমেয়াদি ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য ভারতের সীমান্তে চাপ সৃষ্টি করে তাকে কূটনৈতিকভাবে দুর্বল করা।” তাঁর মতে, “চীন জানে যে, সীমান্তে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি করলে ভারতকে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে মনোযোগ দিতে হবে এবং তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে।”
অন্যদিকে কার্নেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. অ্যাশলি টেলিস মনে করেন, “গালওয়ান সংঘর্ষ একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা। এটি চীনের আগ্রাসী মনোভাব এবং ভারতের প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রকাশ—দুই পক্ষেরই শক্তির পরীক্ষা। কিন্তু এই সংঘর্ষের পর দুই দেশ বুঝেছে, আর কোনোদিন সীমান্তে অদৃশ্য রেখায় আস্থা রাখা যাবে না।”
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, চীনের আগ্রাসনের পেছনে রয়েছে **বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)**-এর সামরিক রূপায়ণ। চীন আকসাই চিন অঞ্চলকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, যাতে তারা পশ্চিম চীন থেকে পাকিস্তানের গওয়াদার বন্দর পর্যন্ত সহজে পৌঁছাতে পারে। এই করিডরটি ভারতের লাদাখের খুব কাছে হওয়ায় চীন চায় না, সেখানে ভারতের উপস্থিতি শক্তিশালী হোক।
অন্দিযকে ভারত মনে করে, এলএসি বরাবর চীনের এই আগ্রাসন শুধু ভূখণ্ডের জন্যই নয়, এটি ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ রিটায়ার্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল দীপেন্দ্র সিং হুডা বলেন, “ভারত এখন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় ভাবতে বাধ্য হয়েছে। আগে আমরা বিশ্বাস করতাম যে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত হলে সীমান্তে শান্তি থাকবে, কিন্তু গালওয়ান প্রমাণ করল তা ভুল ধারণা ছিল।”
গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে একাধিক বৈঠক হয়। সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার, উত্তেজনা কমানো এবং ভবিষ্যতে সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয় উভয় পক্ষ। কিছু জায়গা থেকে সেনা সরানো হলেও, এখনো বেশ কিছু এলাকাজুড়ে দুই দেশের সৈন্য মুখোমুখি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। কারণ মূল সমস্যাটি—সীমান্ত নির্ধারণ—আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। যেহেতু এলএসি কেবল একটি সাময়িক রেখা, যা দুই দেশের ম্যাপে ভিন্নভাবে চিহ্নিত, সেহেতু সংঘর্ষের সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে।
গালওয়ান সংঘর্ষের একটি বড় শিক্ষা হলো, আধুনিক যুগেও ভূখণ্ডের জন্য এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। এটা শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই প্রভাবিত করে না, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিক স্থিতিশীলতাকেও নাড়িয়ে দেয়। ভারত-চীন উভয়ই বিশাল অর্থনীতি ও পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ—তাদের মধ্যে যুদ্ধ মানেই বিশাল ঝুঁকি, যার প্রভাব শুধু এশিয়া নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির ভূরাজনীতি বিশ্লেষক ড. লিন হুয়াং বলেন, “ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু গালওয়ানের মতো সহিংস সংঘর্ষ কূটনীতির পরাজয় এবং অস্ত্রের অগ্রাধিকারকে স্পষ্ট করে দেয়।”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই পরিস্থিতির সমাধান কী? অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা ও সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তির মাধ্যমেই এই উত্তেজনা কমানো সম্ভব। কিন্তু বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যেখানে জাতীয়তাবাদ ও প্রতিযোগিতা চরমে, সেখানে এমন সমঝোতা আদৌ সম্ভব কি না—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সুতরাং গালওয়ান সংঘর্ষ শুধু একটি সীমান্ত সংঘাত নয়, এটি এক নতুন বাস্তবতা—যেখানে ভূরাজনীতি, সামরিক কৌশল, অর্থনীতি এবং কূটনীতি—সবকিছু জটিলভাবে জড়িত। দুই পরাশক্তির মধ্যে এই অদৃশ্য দড়ি টানাটানি চলবে কতদিন, তা সময়ই বলবে।
২০২০ সালের জুন মাস। চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। হিমালয়ের এক দুর্গম উপত্যকা—যার নাম **গালওয়ান ভ্যালি**। এখানে ঘটল এমন একটি সংঘর্ষ, যা শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই টালমাটাল করল না, বরং গোটা বিশ্বের নজর কাড়ল। কারণ এই সংঘর্ষে ব্যবহার হয়েছিল না অস্ত্র, না বন্দুক—তবুও নিহত হল অন্তত ২০ জন ভারতীয় ও অজানা সংখ্যক চীনা সৈন্য। গালওয়ান সংঘর্ষ প্রমাণ করে দিল, আজকের দিনে এসেও দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সামরিক দ্বন্দ্ব কতটা হঠাৎ, কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
গালওয়ান উপত্যকা ভারতের লাদাখ অঞ্চলে অবস্থিত। এর পাশ দিয়েই বয়ে গেছে গালওয়ান নদী, যার উৎপত্তি আকসাই চিন থেকে। এই অঞ্চল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বহু দশক ধরেই সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় এই গালওয়ান উপত্যকাই ছিল অন্যতম সংঘর্ষস্থল। সেই যুদ্ধের পর দুই দেশ একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা নির্ধারণ করে, যাকে বলা হয় **এলএসি (Line of Actual Control)**। কিন্তু এই রেখাটি কখনোই নির্দিষ্ট ও চূড়ান্ত সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, ফলে প্রায়ই এর অবস্থান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে চীন বিপুলসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করতে শুরু করে লাদাখ সীমান্তে। তারা এলএসি পার করে ভারতের দাবি করা ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে, এবং সেখানে তাঁবু খাটিয়ে ঘাঁটি তৈরি করে। ভারত এই অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করে এবং সৈন্য মোতায়েন করে পাল্টা অবস্থান নেয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল, উত্তেজনা বাড়ছিল। অবশেষে ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক সংঘর্ষ।
সেই রাতের সংঘর্ষে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়নি। কারণ ১৯৯৬ ও ২০০৫ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছিল যে সীমান্তে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ফলে সেই রাতের সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয়েছিল লোহার রড, কাঁটা লাগানো বাঁশ, পাথর, হাত ও পা—একটি প্রাগৈতিহাসিক লড়াইয়ের মতো। সংঘর্ষ স্থায়ী হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রাতভর চলে মারামারি। এতে ২০ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান, যার মধ্যে ছিলেন কর্নেল সন্তোষ বাবু। চীনের পক্ষ থেকে মৃতের সংখ্যা কখনোই স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি, তবে ২০২১ সালে তারা প্রথমবার স্বীকার করে যে তাদের চারজন সৈন্য মারা গেছেন।
এই ঘটনার পর ভারতের অভ্যন্তরে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশজুড়ে চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়, চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা শুরু হয়। এক সময় যে সম্পর্ক “বাণিজ্য সহযোগিতায় ভরপুর” বলে মনে করা হতো, সেটি মুহূর্তে শত্রুতার দিকে মোড় নেয়।
গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্ট্র্যাটফোর -এর সামরিক বিশ্লেষক জর্জ বার্নস বলেন, “এই সংঘর্ষ মূলত চীনের এক দীর্ঘমেয়াদি ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য ভারতের সীমান্তে চাপ সৃষ্টি করে তাকে কূটনৈতিকভাবে দুর্বল করা।” তাঁর মতে, “চীন জানে যে, সীমান্তে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি করলে ভারতকে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে মনোযোগ দিতে হবে এবং তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে।”
অন্যদিকে কার্নেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. অ্যাশলি টেলিস মনে করেন, “গালওয়ান সংঘর্ষ একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা। এটি চীনের আগ্রাসী মনোভাব এবং ভারতের প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রকাশ—দুই পক্ষেরই শক্তির পরীক্ষা। কিন্তু এই সংঘর্ষের পর দুই দেশ বুঝেছে, আর কোনোদিন সীমান্তে অদৃশ্য রেখায় আস্থা রাখা যাবে না।”
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, চীনের আগ্রাসনের পেছনে রয়েছে **বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)**-এর সামরিক রূপায়ণ। চীন আকসাই চিন অঞ্চলকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, যাতে তারা পশ্চিম চীন থেকে পাকিস্তানের গওয়াদার বন্দর পর্যন্ত সহজে পৌঁছাতে পারে। এই করিডরটি ভারতের লাদাখের খুব কাছে হওয়ায় চীন চায় না, সেখানে ভারতের উপস্থিতি শক্তিশালী হোক।
অন্দিযকে ভারত মনে করে, এলএসি বরাবর চীনের এই আগ্রাসন শুধু ভূখণ্ডের জন্যই নয়, এটি ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ রিটায়ার্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল দীপেন্দ্র সিং হুডা বলেন, “ভারত এখন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় ভাবতে বাধ্য হয়েছে। আগে আমরা বিশ্বাস করতাম যে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত হলে সীমান্তে শান্তি থাকবে, কিন্তু গালওয়ান প্রমাণ করল তা ভুল ধারণা ছিল।”
গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে একাধিক বৈঠক হয়। সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার, উত্তেজনা কমানো এবং ভবিষ্যতে সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয় উভয় পক্ষ। কিছু জায়গা থেকে সেনা সরানো হলেও, এখনো বেশ কিছু এলাকাজুড়ে দুই দেশের সৈন্য মুখোমুখি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। কারণ মূল সমস্যাটি—সীমান্ত নির্ধারণ—আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। যেহেতু এলএসি কেবল একটি সাময়িক রেখা, যা দুই দেশের ম্যাপে ভিন্নভাবে চিহ্নিত, সেহেতু সংঘর্ষের সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে।
গালওয়ান সংঘর্ষের একটি বড় শিক্ষা হলো, আধুনিক যুগেও ভূখণ্ডের জন্য এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। এটা শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই প্রভাবিত করে না, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিক স্থিতিশীলতাকেও নাড়িয়ে দেয়। ভারত-চীন উভয়ই বিশাল অর্থনীতি ও পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ—তাদের মধ্যে যুদ্ধ মানেই বিশাল ঝুঁকি, যার প্রভাব শুধু এশিয়া নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির ভূরাজনীতি বিশ্লেষক ড. লিন হুয়াং বলেন, “ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু গালওয়ানের মতো সহিংস সংঘর্ষ কূটনীতির পরাজয় এবং অস্ত্রের অগ্রাধিকারকে স্পষ্ট করে দেয়।”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই পরিস্থিতির সমাধান কী? অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা ও সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তির মাধ্যমেই এই উত্তেজনা কমানো সম্ভব। কিন্তু বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যেখানে জাতীয়তাবাদ ও প্রতিযোগিতা চরমে, সেখানে এমন সমঝোতা আদৌ সম্ভব কি না—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সুতরাং গালওয়ান সংঘর্ষ শুধু একটি সীমান্ত সংঘাত নয়, এটি এক নতুন বাস্তবতা—যেখানে ভূরাজনীতি, সামরিক কৌশল, অর্থনীতি এবং কূটনীতি—সবকিছু জটিলভাবে জড়িত। দুই পরাশক্তির মধ্যে এই অদৃশ্য দড়ি টানাটানি চলবে কতদিন, তা সময়ই বলবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধি দল। আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের প্রতীকের তালিকায় শাপলা না রাখার সিদ্ধান্তের মধ্যেই হাসনাত-সারজিসরা সিইসির সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন।
১২ ঘণ্টা আগেটানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি কোণঠাসা ছিল বিএনপি। হামলা-মামলা, গ্রেপ্তারের ঘানি টানতে হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের। গত জুলাই-আগস্টের অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর স্বস্তিতে থাকা বিএনপি আবারও চাপের মধ্যে পড়েছে। অন্যায়-অপরাধে জড়ানো নেতাকর্মীদের ক
১২ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ ১১ বছর পর নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেবিএনপি অন্যায়কে সমর্থন করে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন গণতন্ত্রের জন্য। সবাইকে বিরত রাখুন, কেউ যেন অন্যায় কাজ করতে না পারে। বিএনপি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অতীতেও করেছে এবং এবারও করবে।’
১ দিন আগে