অরুণাভ বিশ্বাস
চিরুনি অভিযান—শুনতে যতটা সাধারণ, এর তাৎপর্য কিন্তু অনেক গভীর। সাধারণত আমরা "চিরুনি" শব্দটি ব্যবহার করি মাথার চুল আঁচড়াতে। কিন্তু প্রশাসনিক ভাষায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষায় এই "চিরুনি" একটি রূপক। এতে বোঝানো হয় এমন এক ধরণের অভিযান, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট এলাকা, পাড়া, মহল্লা বা শহরের অংশে খুব সূক্ষ্মভাবে, ঘরে ঘরে, অলিতে-গলিতে খুঁজে দেখা হয় সন্দেহভাজন অপরাধী, অস্ত্র, মাদক, অবৈধ বস্তু, কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের। যেন একেবারে চুলে আঁচড় দেওয়ার মতো খুঁটিয়ে তল্লাশি করা হয়। তাই এর নামই চিরুনি অভিযান বা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Comb Operation বা Comb-out Search।
বাংলাদেশে এই শব্দটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে ২০১৬ সালের পর, বিশেষ করে গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলার পরে। এসব ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে চিরুনি অভিযান চালানো হয়, যাতে করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর আস্তানা খুঁজে বের করা যায় এবং নাশকতা প্রতিরোধ করা যায়। তবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই পদ্ধতি বহু দেশেই ব্যবহৃত হয়, বিশেষত জঙ্গি, মাফিয়া, ড্রাগ চক্র কিংবা অস্ত্রপাচার চক্র ধরার ক্ষেত্রে।
চিরুনি অভিযান কেন চালানো হয়, তা বোঝার জন্য আগে বোঝা দরকার অপরাধ দমন বা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে। ধরুন কোনো এলাকায় হঠাৎ করে অপরাধ বেড়ে গেছে। খুন, ডাকাতি বা মাদক বিক্রি বেড়ে গেছে। আবার কখনও গোপন সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় কোনো চরমপন্থী বা সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয়। তখন সাধারণ নিয়মে পুলিশ বা র্যাব কাউকে গ্রেফতার করলে অনেক অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আর একাধিক সন্দেহভাজন এক জায়গায় অবস্থান করলে শুধু একজনকে ধরে লাভ হয় না। তখন প্রয়োজন হয় ব্যাপকভিত্তিক তল্লাশি। সেখানেই আসে চিরুনি অভিযানের প্রয়োজনীয়তা।
চিরুনি অভিযানে সাধারণত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট অংশ নেয়। আগে থেকেই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়, কারা কোন এলাকায় সক্রিয়, কে কোন বাসায় ভাড়া থাকছে, কারা গত কয়েক মাসে হঠাৎ করে এলাকা ছেড়েছে বা এসেছে—এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। তারপর একদিন হঠাৎ করে কয়েকটি টিম একযোগে অভিযান চালায়। বাসায় বাসায় গিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই, সন্দেহভাজনের ঘর তল্লাশি, অস্ত্র বা মাদক খোঁজা—সবকিছুই হয় খুব পেশাদারভাবে। এতে অনেক সময় নিরপরাধ মানুষও ভীত হয়ে পড়ে, কিন্তু প্রশাসনের দাবি—এটি নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই করা হয়।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অপরাধবিজ্ঞানী অধ্যাপক জেমস হিল বলেন, "চিরুনি অভিযান অনেক সময় সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ করে বটে, তবে শহরের মধ্যে গোঁড়া গেঁড়ে বসা হুমকি খুঁজে বের করতে গেলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।"
বিশ্বের অন্যান্য দেশে চিরুনি অভিযানের ইতিহাস বেশ পুরনো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনী ফ্রান্স, পোল্যান্ড কিংবা ইয়াহুদি অধ্যুষিত এলাকায় এভাবে অভিযান চালাত, যদিও তাদের উদ্দেশ্য ছিল দমন ও নিপীড়ন। তবে আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে এই কৌশল এখন ব্যবহৃত হয় মূলত সন্ত্রাস বা অপরাধ দমনের জন্য। ২০০৪ সালে মাদ্রিদে ট্রেন বিস্ফোরণের পরে স্পেনের মাদ্রিদ পুলিশ ব্যাপক চিরুনি অভিযান চালায়। একইভাবে, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরে ভারতের মুম্বাই পুলিশ ও এনএসজি একযোগে শহরের নানা প্রান্তে চিরুনি অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি উন্মোচন করে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ থিংকট্যাংক কুইলিয়াম ফাউন্ডেশন-এর সন্ত্রাসবাদবিষয়ক গবেষক রাফায়েল উয়াল্ড বলেন, "নির্দেশিত চিরুনি তল্লাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ এতে তাদের আস্তানা ও স্থানীয় সহযোগী নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে পড়ে।"
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিরুনি অভিযান বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে। ২০১৬ সালের গুলশান হামলার পর এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চিরুনি অভিযান চলে। পুলিশের তথ্যমতে, তখন ঢাকায় ১৪ হাজারের বেশি বাসা তল্লাশি করা হয়। বিপুল পরিমাণ সন্দেহভাজন গ্রেফতার হন, যাদের অনেকে পরবর্তীতে অপরাধে যুক্ত ছিলেন বলে প্রমাণিত হয়। আবার কেউ কেউ হয়তো প্রকৃত অপরাধী ছিলেন না, তবে পুলিশ তাঁদের তথ্য যাচাই করে ছেড়ে দেয়। এতে নাগরিক হয়রানির অভিযোগও উঠে, তবে অনেকের মতে, এই অভিযানে শহরের জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট তৎপরতা অনেকটাই থেমে যায়।
তবে এ ধরনের অভিযানের সঙ্গে কিছু মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রশ্নও জড়িয়ে থাকে। কারণ বাসায় হঠাৎ করে পুলিশি ঢুকে পড়া, বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি বা প্রশ্ন করা—এসব অনেক সময় নাগরিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মাঝে মধ্যেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে।
তবে এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যুক্তি হলো—"প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ শ্রেয়।" কোনো জঙ্গি হামলার পরে শোক পালন করে লাভ নেই, যদি আগে থেকেই সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় এমন অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া যায়। আর অভিযানের সময় যদি পেশাদারিত্ব ও মানবাধিকার মেনে চলা হয়, তবে তা অনেক নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে সমাজকে বাঁচাতে পারে।
একই বক্তব্য উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির অপরাধ সমাজবিজ্ঞানী এলেনা মিচেলসনের গবেষণায়। তিনি বলেন, "গণতান্ত্রিক সমাজে চিরুনি অভিযান আদর্শ পন্থা নয়, তবে যদি জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়, তাহলে তা নিরাপদ শহর গঠনে সহায়ক হতে পারে।"
তবে সবসময়ই মনে রাখতে হবে, চিরুনি অভিযান কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এটি একধরনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, যা সময়ের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। অপরাধ নির্মূল করতে হলে সমাজের ভেতরে থাকা বৈষম্য, হতাশা, বেকারত্ব, ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা বা রাজনৈতিক আশ্রয়—এসব বিষয়েও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে এক এলাকা থেকে অপরাধী তাড়ানো গেলেও, আরেক এলাকায় তারা আবার ঘাঁটি গড়ে তুলবে।
বাংলাদেশে এই চিরুনি অভিযান আরও আধুনিক হয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড, সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ, এমনকি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হচ্ছে কারা কোন এলাকায় প্রবেশ করছে বা অবস্থান করছে তা ধরার জন্য। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিনির্ভর অভিযান আরও নিখুঁত হবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
শেষ কথা হলো, চিরুনি অভিযান একদিকে যেমন অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর হাতিয়ার, অন্যদিকে এটি যেন অসহায় বা নিরপরাধ মানুষের হয়রানির কারণ না হয়, সেটিও দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো নাগরিক নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকার—এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা। চিরুনি অভিযান সেই ভারসাম্যের এক জটিল অথচ প্রয়োজনীয় প্রয়াস।
চিরুনি অভিযান—শুনতে যতটা সাধারণ, এর তাৎপর্য কিন্তু অনেক গভীর। সাধারণত আমরা "চিরুনি" শব্দটি ব্যবহার করি মাথার চুল আঁচড়াতে। কিন্তু প্রশাসনিক ভাষায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষায় এই "চিরুনি" একটি রূপক। এতে বোঝানো হয় এমন এক ধরণের অভিযান, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট এলাকা, পাড়া, মহল্লা বা শহরের অংশে খুব সূক্ষ্মভাবে, ঘরে ঘরে, অলিতে-গলিতে খুঁজে দেখা হয় সন্দেহভাজন অপরাধী, অস্ত্র, মাদক, অবৈধ বস্তু, কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের। যেন একেবারে চুলে আঁচড় দেওয়ার মতো খুঁটিয়ে তল্লাশি করা হয়। তাই এর নামই চিরুনি অভিযান বা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Comb Operation বা Comb-out Search।
বাংলাদেশে এই শব্দটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে ২০১৬ সালের পর, বিশেষ করে গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলার পরে। এসব ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে চিরুনি অভিযান চালানো হয়, যাতে করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর আস্তানা খুঁজে বের করা যায় এবং নাশকতা প্রতিরোধ করা যায়। তবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই পদ্ধতি বহু দেশেই ব্যবহৃত হয়, বিশেষত জঙ্গি, মাফিয়া, ড্রাগ চক্র কিংবা অস্ত্রপাচার চক্র ধরার ক্ষেত্রে।
চিরুনি অভিযান কেন চালানো হয়, তা বোঝার জন্য আগে বোঝা দরকার অপরাধ দমন বা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে। ধরুন কোনো এলাকায় হঠাৎ করে অপরাধ বেড়ে গেছে। খুন, ডাকাতি বা মাদক বিক্রি বেড়ে গেছে। আবার কখনও গোপন সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় কোনো চরমপন্থী বা সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয়। তখন সাধারণ নিয়মে পুলিশ বা র্যাব কাউকে গ্রেফতার করলে অনেক অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আর একাধিক সন্দেহভাজন এক জায়গায় অবস্থান করলে শুধু একজনকে ধরে লাভ হয় না। তখন প্রয়োজন হয় ব্যাপকভিত্তিক তল্লাশি। সেখানেই আসে চিরুনি অভিযানের প্রয়োজনীয়তা।
চিরুনি অভিযানে সাধারণত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট অংশ নেয়। আগে থেকেই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়, কারা কোন এলাকায় সক্রিয়, কে কোন বাসায় ভাড়া থাকছে, কারা গত কয়েক মাসে হঠাৎ করে এলাকা ছেড়েছে বা এসেছে—এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। তারপর একদিন হঠাৎ করে কয়েকটি টিম একযোগে অভিযান চালায়। বাসায় বাসায় গিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই, সন্দেহভাজনের ঘর তল্লাশি, অস্ত্র বা মাদক খোঁজা—সবকিছুই হয় খুব পেশাদারভাবে। এতে অনেক সময় নিরপরাধ মানুষও ভীত হয়ে পড়ে, কিন্তু প্রশাসনের দাবি—এটি নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই করা হয়।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অপরাধবিজ্ঞানী অধ্যাপক জেমস হিল বলেন, "চিরুনি অভিযান অনেক সময় সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ করে বটে, তবে শহরের মধ্যে গোঁড়া গেঁড়ে বসা হুমকি খুঁজে বের করতে গেলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।"
বিশ্বের অন্যান্য দেশে চিরুনি অভিযানের ইতিহাস বেশ পুরনো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনী ফ্রান্স, পোল্যান্ড কিংবা ইয়াহুদি অধ্যুষিত এলাকায় এভাবে অভিযান চালাত, যদিও তাদের উদ্দেশ্য ছিল দমন ও নিপীড়ন। তবে আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে এই কৌশল এখন ব্যবহৃত হয় মূলত সন্ত্রাস বা অপরাধ দমনের জন্য। ২০০৪ সালে মাদ্রিদে ট্রেন বিস্ফোরণের পরে স্পেনের মাদ্রিদ পুলিশ ব্যাপক চিরুনি অভিযান চালায়। একইভাবে, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরে ভারতের মুম্বাই পুলিশ ও এনএসজি একযোগে শহরের নানা প্রান্তে চিরুনি অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি উন্মোচন করে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ থিংকট্যাংক কুইলিয়াম ফাউন্ডেশন-এর সন্ত্রাসবাদবিষয়ক গবেষক রাফায়েল উয়াল্ড বলেন, "নির্দেশিত চিরুনি তল্লাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ এতে তাদের আস্তানা ও স্থানীয় সহযোগী নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে পড়ে।"
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিরুনি অভিযান বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে। ২০১৬ সালের গুলশান হামলার পর এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চিরুনি অভিযান চলে। পুলিশের তথ্যমতে, তখন ঢাকায় ১৪ হাজারের বেশি বাসা তল্লাশি করা হয়। বিপুল পরিমাণ সন্দেহভাজন গ্রেফতার হন, যাদের অনেকে পরবর্তীতে অপরাধে যুক্ত ছিলেন বলে প্রমাণিত হয়। আবার কেউ কেউ হয়তো প্রকৃত অপরাধী ছিলেন না, তবে পুলিশ তাঁদের তথ্য যাচাই করে ছেড়ে দেয়। এতে নাগরিক হয়রানির অভিযোগও উঠে, তবে অনেকের মতে, এই অভিযানে শহরের জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট তৎপরতা অনেকটাই থেমে যায়।
তবে এ ধরনের অভিযানের সঙ্গে কিছু মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রশ্নও জড়িয়ে থাকে। কারণ বাসায় হঠাৎ করে পুলিশি ঢুকে পড়া, বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি বা প্রশ্ন করা—এসব অনেক সময় নাগরিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মাঝে মধ্যেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে।
তবে এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যুক্তি হলো—"প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ শ্রেয়।" কোনো জঙ্গি হামলার পরে শোক পালন করে লাভ নেই, যদি আগে থেকেই সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় এমন অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া যায়। আর অভিযানের সময় যদি পেশাদারিত্ব ও মানবাধিকার মেনে চলা হয়, তবে তা অনেক নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে সমাজকে বাঁচাতে পারে।
একই বক্তব্য উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির অপরাধ সমাজবিজ্ঞানী এলেনা মিচেলসনের গবেষণায়। তিনি বলেন, "গণতান্ত্রিক সমাজে চিরুনি অভিযান আদর্শ পন্থা নয়, তবে যদি জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়, তাহলে তা নিরাপদ শহর গঠনে সহায়ক হতে পারে।"
তবে সবসময়ই মনে রাখতে হবে, চিরুনি অভিযান কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এটি একধরনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, যা সময়ের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। অপরাধ নির্মূল করতে হলে সমাজের ভেতরে থাকা বৈষম্য, হতাশা, বেকারত্ব, ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা বা রাজনৈতিক আশ্রয়—এসব বিষয়েও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে এক এলাকা থেকে অপরাধী তাড়ানো গেলেও, আরেক এলাকায় তারা আবার ঘাঁটি গড়ে তুলবে।
বাংলাদেশে এই চিরুনি অভিযান আরও আধুনিক হয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড, সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ, এমনকি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হচ্ছে কারা কোন এলাকায় প্রবেশ করছে বা অবস্থান করছে তা ধরার জন্য। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিনির্ভর অভিযান আরও নিখুঁত হবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
শেষ কথা হলো, চিরুনি অভিযান একদিকে যেমন অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর হাতিয়ার, অন্যদিকে এটি যেন অসহায় বা নিরপরাধ মানুষের হয়রানির কারণ না হয়, সেটিও দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো নাগরিক নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকার—এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা। চিরুনি অভিযান সেই ভারসাম্যের এক জটিল অথচ প্রয়োজনীয় প্রয়াস।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতির দাবি সামনে এনে আন্দোলন করার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে পরবর্তী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে।’
১০ ঘণ্টা আগেসারজিস আলম বলেন, এক দিন হইত, দুই দিন হইত কিচ্ছু বলতাম না। তিন দিনের তিন দিনই এটা হইছে। যারা এটা করছে, তারা হচ্ছে রাজনৈতিক... (প্রকাশ অযোগ্য শব্দ)। এই রাজনৈতিক দেউলিয়াদের আমরা দেখে নেব তাদের কলিজা কত বড় হইছে। কলিজা ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে রাখব।
১ দিন আগেনতুন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মানববন্ধন হবে ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে। পরদিন বুধবার (১৫ অক্টোবর) একই কর্মসূচি পালন করা হবে দেশের সব জেলা সদরে।
১ দিন আগে