বিজ্ঞান

কালনাগিনী কতটা মারত্মক সাপ

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ০৮
কালনাগিনী।

সাপের নাম শুনলেই আমাদের অনেকের গা ছমছম করে ওঠে। বিশেষ করে যদি বলা হয় ‘কালনাগিনী’! সিনেমা-নাটক বা পুরান কাহিনিতে কালনাগিনীকে এমনভাবে দেখানো হয়, যেন সে অতিপ্রাকৃত শক্তির অধিকারী, চোখের দৃষ্টিতে মানুষ মেরে ফেলতে পারে! বাস্তবে কি সত্যিই এমন ভয়ংকর এই সাপটি?

চলুন, আজ আমরা কালনাগিনী সাপকে নিয়ে ছড়িয়ে থাকা ভ্রান্ত ধারণা ভাঙি এবং বিজ্ঞানের আলোয় জেনে নিই এর প্রকৃত রূপ।

কালনাগিনী মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া যায়, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ এবং আশেপাশের কয়েকটি দেশে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Boiga forsteni। এটি একটি বিষধর সাপ হলেও, তার বিষের শক্তি তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ, এটি এমন কোনো সাপ নয় যার কামড়ে সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

এই সাপটি মাঝারি আকারের হয় এবং এর গায়ের রং গাঢ়, কিছুটা কালচে হওয়ায় একে ‘কালনাগিনী’ বলা হয়। এটি রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং সাধারণত ছোট প্রাণী যেমন টিকটিকি, ব্যাঙ, ছোট সাপ ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

বিষ কতটা মারাত্মক?

বিজ্ঞান বলছে, কালনাগিনীর বিষ মৃদু নিউরোটক্সিক ধরনের। অর্থাৎ এই বিষ স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। তবে মানুষের শরীরে এটি খুব একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। ছোট প্রাণীদের জন্য এ বিষ কার্যকর হলেও, মানুষের শরীরে এর পরিমাণ ও শক্তি—দু'টোই এতটাই কম যে, সাধারণত এটা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে না।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. রোমান উইটলেস জানিয়েছেন, “কালনাগিনী সাধারণত বিষাক্ত হলেও এটি মানুষ মারার জন্য যথেষ্ট নয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে কোনো বড় ক্ষতি হয় না।”

কামড়ালে কী হতে পারে?

যদি কাউকে কালনাগিনী কামড়ায়, তাহলে কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন—

কামড়ের জায়গায় ব্যথা বা ফোলাভাব

মাথা ঘোরা বা শরীরে ঝিমঝিম ভাব

অল্প মাত্রায় স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া

কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, আবার ক্ষতস্থানে জীবাণু সংক্রমণ হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তবে এসবই বিরল ঘটনা, এবং দ্রুত চিকিৎসা পেলে কোনো বড় সমস্যা হয় না।

কালনাগিনী মানুষকে আক্রমণ করে?

এই ধারণাটা অনেকটাই ভুল। কালনাগিনী সাধারণত লাজুক প্রকৃতির এবং মানুষের কাছাকাছি আসলে নিজেই পালিয়ে যেতে চায়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হেরপেটোলজির গবেষক রাজীব মেননের মতে, “কালনাগিনীর কামড় অত্যন্ত বিরল, এবং এটি মানুষকে দেখে ভয় পেলেই পালায়—আক্রমণ করে না।”

কামড়ালে কী করবেন?

প্রথম কথা হলো আতঙ্কিত না হওয়া। ভয় পেলে শরীরের রক্তসঞ্চালন দ্রুত হয়, এতে বিষ শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই—

কামড়ের জায়গা পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন

দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যান

ভুলেও কোনো ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেবেন না।

ভয় নয়, সচেতনতা জরুরি

সিনেমা-নাটকের কারণে আমাদের সমাজে সাপ নিয়ে ভীতির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে কালনাগিনীকে নিয়ে যত রকমের গল্প শোনা যায়, তার বেশিরভাগই বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। বরং এই ধরনের সাপ প্রকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—পোকামাকড় ও ছোট প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

তাই অকারণে সাপ দেখলেই মেরে ফেলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বরং সচেতন হতে হবে, সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে এবং সাপদের তাদের নিজের মতো করে বাঁচতে দিতে হবে।

কালনাগিনী সম্পর্কে বহু কাহিনি প্রচলিত থাকলেও, বাস্তবতা হলো—এটি ভয়ংকর নয়, বরং আমাদের পরিবেশের জন্য উপকারী এক প্রাণী। ভয় নয়, জানুন ও সচেতন হোন।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

যত যুদ্ধে হেরেছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে অসংখ্য যুদ্ধে জড়িয়েছে। কখনও তারা সরাসরি অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, আবার কখনও তৃতীয় কোন দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়েছে

১৭ ঘণ্টা আগে

ডুমুর ফল কেন খাবেন?

ডুমুরে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা আমাদের হজমে সহায়তা করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাঁদের জন্য ডুমুর একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা।

১৮ ঘণ্টা আগে

রোমান্টিক সময় কাটাচ্ছেন তাহসান-রোজা

ছবিতে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-আর এমন সময় সুইমিংপুলে তাদের আদুরে এক মুহূর্ত!

২ দিন আগে

সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।

২ দিন আগে