স্বাস্থ্য

ডিম কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০০: ১২
যতটা মনে করা হয়, হার্টের জন্য ততটা ক্ষতিকর নয় ডিম

ডিম –প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা একটি পুষ্টিকর খাবার। সকালের নাশতা হোক বা দুপুরের ভাতের মেন্যু, ডিম সবখানেই দারুণ জনপ্রিয়। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে অনেকেই এখনও একটা প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধায় থাকেন—ডিম খাওয়া কি হার্টের (হৃদযন্ত্রের) জন্য ক্ষতিকর?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, বিষয়টি আসলে নির্ভর করছে ডিম খাওয়ার পরিমাণ, ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাসের ওপর।

কেন ডিম নিয়ে এমন বিতর্ক?

মূলত, ডিমের কুসুমে প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল থাকে। একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। আগে ধারণা করা হতো, ডায়েটারি কোলেস্টেরল (অর্থাৎ খাবারের মাধ্যমে নেওয়া কোলেস্টেরল) সরাসরি রক্তে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অনেকেই ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলতেন।

কিন্তু বিজ্ঞান যতই এগিয়েছে, ততই এই ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে।

কী বলছেন গবেষকরা?

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষক ড. রুডি স্যানচেজ জানান, “দিনে একটি ডিম অধিকাংশ মানুষের জন্য একদমই নিরাপদ। এমনকি এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। তবে যাদের উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে বা যারা হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের সপ্তাহে ৩-৪টি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।”

তিনি আরও বলেন, ডিমে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন ডি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে ডিম একা নয়, বরং সুষম খাবার—যার মধ্যে শাকসবজি, ফলমূল, শস্যজাতীয় খাবার থাকে—সেটাই হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রাংক হু বলেন, “ডিম খাওয়ার কারণে সরাসরি হৃদরোগ বাড়ে—এমন শক্ত কোনো প্রমাণ নেই। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ডিম খাওয়াটা কিছুটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”

অন্যদিকে, চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি হেলথ সায়েন্স সেন্টারের গবেষক ড. লি কুইং এক গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, “যারা প্রতিদিন এক থেকে দুইটি ডিম খান, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তবে এটা তখনই সত্যি হয়, যখন ডিম একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে খাওয়া হয়।”

ডিম খাওয়ার নিরাপদ উপায় কী?

গবেষকরা বলছেন, ডিম খাওয়া যাবে—তবে সেটার একটা মাত্রা থাকা উচিত। দিনে একটি ডিম অধিকাংশ মানুষের জন্যই নিরাপদ। ডিম ভাজা না করে সেদ্ধ করে খাওয়াটাই ভালো, কারণ তেল বা মাখন দিয়ে রান্না করলে খাবারের চর্বির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, যা হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

এছাড়াও, ডিমের পাশাপাশি প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, এবং হোলগ্রেইন জাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি। এতে করে ডিমের পুষ্টিগুণ আরও ভালোভাবে কাজে দেয় এবং শরীর ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ক্যারোলিন স্মিথ বলেন, “ডিম খাওয়া ও রক্তের কোলেস্টেরলের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নেই বললেই চলে। বরং সুষম ডায়েটের মধ্যে ডিম রাখলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। ডিমে থাকা লুটেইন ও জিয়াজ্যান্থিন চোখ ও মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী।”

সবশেষে বলা যায়, ডিম খাওয়া একেবারে বাদ দেওয়ার মতো কিছু না। বরং পরিমিত ডিম খেলে শরীর উপকৃত হয়। তবে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাওয়া উচিত। সঠিক পরিমাণে, স্বাস্থ্যকরভাবে রান্না করে এবং একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে ডিম খেলে সেটা হার্টের জন্য কোনো ক্ষতি নয়—বরং উপকারই করে।

তাই, ডিম নিয়ে ভয় না পেয়ে সচেতনভাবে খাওয়া শিখুন। কারণ খাবারটা তখনই ওষুধ হয়, যখন সেটা বুঝে-শুনে খাওয়া হয়।

সূত্র: স্মিথসনিয়ান ম্যাগাজিন

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র সবসময় কেন ইসরায়েলের পক্ষ নেয়

যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেন, তখন আবার সম্পর্ক উষ্ণ হলো। তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, মার্কিন দূতাবাস সেখানে স্থানান্তর করলেন এবং গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে মেনে নিলেন। এ সময়ের নীতিগুলো ফিলিস্তিনের জন্য ছিল বড় ধাক্কা।

১ দিন আগে

হার্টের রোগীদের যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত

হার্টের রোগীদের জন্য আরেকটি বিপজ্জনক খাবার হলো প্রসেসড মাংস। হট ডগ, সসেজ, প্যাকেটজাত সালামি কিংবা বেকন জাতীয় খাবারগুলোতে থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম নাইট্রেট ও প্রিজারভেটিভ, যেগুলো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এসব খাবারে হেম আয়রন নামের একটি উপাদান থাকে, এট হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর।

১ দিন আগে

দেশে এসএসসি পরীক্ষার সূচনা হয় কবে?

বাংলাদেশ যখন ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল, সেই সময় থেকেই এই ম্যাট্রিক পরীক্ষা চালু হয়েছিল। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এই অঞ্চলে প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার প্রবর্তন হয় ১৮৫৭ সালে, যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

১ দিন আগে

কোন ভিটামিনের অভাবে বেরিবেরি রোগ হয়?

বেরিবেরি রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়— ‘ওয়েট বেরিবেরি’ ও ‘ড্রাই বেরিবেরি’। ওয়েট বেরিবেরিতে মূলত হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। আর ড্রাই বেরিবেরিতে প্রভাব পড়ে স্নায়ুতন্ত্রে। ড্রাই বেরিবেরিতে আক্রান্ত ব্যক্তির -পায়ে ঝিনঝিন অনুভব হয়, হাঁটতে কষ্ট হয়, পায়ের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে।

১ দিন আগে