গাজায় শিশু ও সাংবাদিকসহ নিহত ৭৮

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
ছবি: সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসরায়েলি সেনারা হামলা জোরদার করেছে, যার ফলে গতকাল সারাদিনে শিশু ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩২ জনই খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণ ও বুলডোজার ব্যবহার করছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় এই নীতিকে "ভূমি পোড়াও নীতি" বলে অভিহিত করেছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ২৪৭ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর যানবাহন আক্রমণের দাবি করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৬৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে জোরপূর্বক সরিয়ে দিতে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল।

রোববার ভোর থেকে সারা গাজা উপত্যকায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৩২ জন খাদ্য সংগ্রহে বের হয়েছিলেন।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানায়, রোববার ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে আল-কুদস হাসপাতালের কাছে তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও তিনজন আহত হন।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা অভিযোগ করেন, আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা “বিস্ফোরক রোবট” ব্যবহার করছে এবং জোরপূর্বক মানুষ সরিয়ে দিচ্ছে। তিনি জানান, গত তিন সপ্তাহে অন্তত ৮০টি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এটিকে তিনি “ভূমি পোড়াও নীতি” আখ্যা দেন।

আল-থাওয়াবতা বলেন, ধ্বংস ও দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলের ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার নীতি মানতে অস্বীকার করছে।

ইনস্টাগ্রামে সাংবাদিক ফায়েজ ওসামা যে ভিডিও প্রকাশ করেছেন, আল জাজিরা তা যাচাই করে জানিয়েছে— সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। আহত এক শিশু পায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় চিৎকার করছে, আরেকজনকে মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আশপাশের ভবনগুলো।

আগস্টের শুরু থেকে গাজা সিটিতে নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। গত শুক্রবার তারা শহরটিকে “যুদ্ধক্ষেত্র” ঘোষণা করে এবং নতুন আক্রমণ শুরুর কথা জানায়।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ রোববার জানান, নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ ও বুলডোজার দিয়ে আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে গাজা সিটিকে “ধ্বংসস্তূপের মাঠে” পরিণত করছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, “সেখানে তেমন কোনো যুদ্ধ নেই, শুধু ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। মানুষ পালাতেও পারছে না, কারণ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই।”

রোববার ইসরায়েলি হামলায় আরও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আল-কুদস আল-ইয়াওম টিভির সাংবাদিক ইসলাম আবেদকে গাজা সিটিতে হত্যা করা হয়।

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৪৭ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অন্য হিসাবে এই সংখ্যা ২৭০ জনেরও বেশি। সোমবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হন, এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন সাংবাদিক।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৬৩ হাজার ৪৫৯ জন নিহত ও ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছিল।

রোববার ইসরায়েলি সেনাপ্রধান আইয়াল জামির শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে আরও হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। তিনি জানান, লড়াই আরও জোরদার করতে অনেক রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হয়েছে।

এদিকে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড দাবি করেছে, শনিবার তারা গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সেনাদের দুইটি যানবাহন আক্রমণ করেছে। এর মধ্যে একটি মার্কাভা ট্যাংকে ইয়াসিন-১০৫ রকেট নিক্ষেপ করা হয় এবং একটি ডি-৯ সামরিক বুলডোজারকে বিস্ফোরক দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ভারতের মানুষের মূল্যে ব্রাহ্মণরা মুনাফা কামাচ্ছে : ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পিটার নাভারো গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গ টিভির সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছিলেন যে, রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ আসলে ‘মোদীর যুদ্ধ’।

১৫ ঘণ্টা আগে

একই গাড়িতে চেপে বৈঠক করতে গেলেন পুতিন ও মোদি

দুই নেতার মধ্যে এই বৈঠক হলো এমন একটা আবহে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০শতাংশ হারে চড়া শুল্ক (ট্যারিফ) বসিয়েছেন – এবং এর অর্ধেকই (২৫%) হলো রাশিয়ার থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর বসানো ‘পেনাল্টি’।

১৬ ঘণ্টা আগে

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৮০০

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ৮০০ জন নিহত এবং আড়াই হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সরকারি মুখপাত্র মৌলভি জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

২১ ঘণ্টা আগে

আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়, ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৫০০

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল)। এরপর আরও অন্তত তিনটি পরাঘাত হয়েছে, যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ২-এর মধ্যে।

১ দিন আগে