বিবিসি বাংলা
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে দলের মনোনয়ন জিতে নিয়ে যে জোহরান মামদানি মার্কিন রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছেন, সেই ৩৩ বছরের যুবক ভোটের প্রচারণার সময় বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে বাংলাতেও একটি ক্যাম্পেইন ভিডিও তৈরি করেছেন।
সেই ভিডিওতে লিটল বাংলাদেশ কেনসিংটনের বাঙালি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা আরিফকে সঙ্গে নিয়ে তাকে ভাঙা ভাঙা বাংলায় 'র্যাংক চয়েস ভোটিং' পদ্ধতিটা সাধারণ ভোটারদের কাছে বাঙালি মিষ্টির প্লেট নিয়ে ব্যাখ্যা করতেও শোনা গেছে।
ভিডিওর শেষ দিকে এসে হাসতে হাসতে মামদানি বেশ ঝরঝরে ভঙ্গিতেই শাহানা আরিফকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার বাংলা ভালই, না?’ শাহানা একটু ইতস্তত করে জবাব দেন, ‘খারাপ না!’
এই চমকজাগানো ক্যাম্পেইন যে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই তাতে কোনো সন্দেহ নেই – এবং ভারতীয় অরিজিনের মামদানি যে হিন্দি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও মোটামুটি কথাবার্তা বলতে পারেন, এটা অনেককেই অবাক করেছে।
নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটস-সহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় প্রচারের সময় তাকে বাঙালি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গেও টুকরো টাকরা বাংলায় কথা বলতেও দেখা গেছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে হেভিওয়েট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারিয়ে নিজের মনোনয়ন (এবং খুব সম্ভবত মেয়র পদও) নিশ্চিত করার পর মামদানি যে 'অ্যাকসেপ্টেন্স স্পিচ' দিয়েছেন, তাতেও কিন্তু এই সাফল্যে 'বাংলাদেশি আন্টি'দের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে ভোলেননি!
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, জোহরান কে মামদানির এই বাংলা-প্রীতি কি শুধু ভোটের জন্যই – না কি এর পেছনে অন্য কারণও আছে? এক কথায় এর সহজ উত্তর হলো, মামদানির বাংলা কানেকশনের পেছনে সবচেয়ে বড় 'ক্যাটালিস্ট' হলেন তার মা – আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রপরিচালক মীরা নায়ার।
মীরা নায়ারের জন্ম ভারতের ওড়িশাতে বাঙালি অধ্যুষিত শহর রাউরকেল্লাতে – আর তিনি বড় হয়েছেন ওই রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরে, সেখানেও জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বাঙালি।
মীরা নায়ারের ঝলমলে ফিল্মোগ্রাফিতে খুব উজ্জ্বল একটা নাম হল 'নেমসেক' – যেটা তিনি তৈরি করেছিলেন বাঙালি পরিবারের আমেরিকান লেখিকা, পুলিতজার-জয়ী ঝুম্পা লাহিড়ির লেখা উপন্যাস অবলম্বনে।
সেই সিনেমাটাও ছিল আবার আমেরিকায় পাড়ি দেওয়া এক প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী বাঙালি দম্পতিকে নিয়েই। এই ছবিটা বানাতে ছেলে জোহরানই যে তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলো, সেটাও তিনি পরে একাধিকবার জানিয়েছেন।
জোহরান মামদানির বাংলা ভাষায় ক্যাম্পেইন ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি
মীরা নায়ার ও তার সিনেমা, সংস্কৃতি
ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ার আর উগান্ডা থেকে আমেরিকায় আসা ভারতীয় বংশোদ্ভুত লেখক-শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানির একমাত্র সন্তান হলেন জোহরান কে মামদানি। বাবার দিক থেকে তার বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের কোনো সুযোগ না থাকলেও মা মীরা নায়ার যে সেটা কড়ায়-গন্ডায় পুষিয়ে দিয়েছেন, সেটা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে।
সিভিল সার্ভেন্ট বাবা ও সমাজকর্মী মায়ের কন্যা মীরা নায়ারের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও স্কুলের পড়াশুনা বাংলা লাগোয়া ওড়িশাতেই, যেখানে তার অনেক বাঙালি বন্ধুবান্ধব ছিল। তার নিজের গানের শিক্ষকও ছিলেন একজন বাঙালি।
তিনি যে দিব্বি বাংলা বোঝেন এবং একটু-আধটু বলতেও পারেন – কলকাতায় প্রায় দুই যুগ আগে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদক নিজেই তার সাক্ষী।
মুম্বাইয়ের পথশিশুদের নিয়ে তৈরি, ১৯৮৮তে মুক্তি পাওয়া 'সালাম বোম্বে' ছবির সূত্র ধরেই মীরা নায়ার আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান। সেরা বিদেশি ছবির ক্যাটেগরিতে হিসেবে সালাম বোম্বে সেবার অস্কার, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব – সবগুলো অ্যাওয়ার্ডেই নমিনেশন জিতেছিল।
ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'গোল্ডেন লায়ন' ও কানে 'ক্যামেরা ডি'ওর' জেতা এই পরিচালক 'মিসিসিপি মসালা' ও 'মনসুন ওয়েডিং'-এর মতো অনেক কাল্ট মুভি বানিয়েছেন – তবে বাঙালি দর্শক তাকে মনে রেখেছে মূলত নেমসেক ছবিটির জন্যই!
ঝুম্পা লাহিড়ীর একই নামের বইটি অবলম্বনে যখন মীরা নায়ার 'নেমসেক' বানান, তখন গল্পের অভিবাসী বাঙালি দম্পতি অশোক ও অসীমা গাঙ্গুলির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে ইরফান খান ও টাবু।
বলিউডের অবাঙালি তারকা টাবু ও ইরফানকে আমেরিকা-প্রবাসী বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে ও উচ্চারণে বাংলা অ্যাকসেন্ট আনতে তাকে যে কত রকম কসরত করতে হয়েছিল, সে গল্পও মীরা নায়ার নিজেই বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন।
বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি তিনি যে অন্যরকম একটা টান অনুভব করেন, মীরা সেটাও জানিয়েছেন বিভিন্ন সাক্ষাতকারেই।
‘এবিসিডি’ প্রজন্মের হয়েও ব্যতিক্রমী?
অথচ 'নেমসেক' ছবিটা হয়তো মীরা নায়ারের বানানোই হতো না – যদি না এর পেছনে তার কিশোর ছেলে জোহরানের একটা বড় ভূমিকা থাকতো!
২০১৮ সালে জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে সাংবাদিক বীর সাংভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মীরা নায়ার জানিয়েছিলেন, তিনি যখন নেমসেক বানানোর পরিকল্পনা শুরু করেছেন – ঠিক তখনই বিখ্যাত হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির পঞ্চম পর্ব 'অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স' মুভিটা পরিচালনার প্রস্তাব আসে তার কাছে।
যথারীতি সেটা খুবই মোটা অঙ্কের লোভনীয় প্রস্তাব ছিল – আর দ্বিধান্বিত মা নিজের ছেলের কাছেই জিজ্ঞেস করেন, তার কোন কাজটা করা উচিত হবে।
সেটা ২০০৭ সাল। জোহরান মামদানির বয়স তখন মাত্রই চোদ্দ – এবং সে নিজেই পটার সিরিজের বিরাট ভক্ত – কিন্তু মা'কে সে না কি বলেছিল, ‘আরও অনেক ভাল ভাল পরিচালক আছেন যারা হ্যারি পটার বানাতে পারবেন – কিন্তু নেমসেক একজনই বানাতে পারবে, আর সেটা তুমি!’
আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত সেলুলয়েডের পর্দায় প্রাণ পেয়েছিল নেমসেক। জোহরান মামদানির মতো দক্ষিণ এশিয় অরিজিনের বাবা-মার যে সন্তানরা আমেরিকায় দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী হিসেবে বেড়ে ওঠেন, তাদের দুটো সংস্কৃতির জাঁতাকলের মাঝে যে আত্মপরিচয়ের সঙ্কট বা বিভ্রান্তিতে ভুগতে হয় – সেই জন্য অনেকে তাদের 'আমেরিকা বর্ন কনফিউজড দিশি' বা এবিসিডি প্রজন্ম বলেও বর্ণনা করেন।
নেমসেকের মুখ্য চরিত্র, গোগল গাঙ্গুলিও ছিল এরকমই এক তরুণ – আর মজার ব্যাপার, মায়ের ছবিতে এই ভূমিকায় যাতে গুজরাটি অরিজিনের মার্কিন অভিনেতা এবং তার অতি প্রিয় কল পেন-কে কাস্ট করা হয় সে জন্যও কিশোর জোহরান এক রকম জেদ ধরে বসেছিল!
জোহরান মামদানির নিজের জন্ম যদিও আফ্রিকাতে – কয়েক বছর আগেই তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়েছেন, এবং এযাবতকালের সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবনেই তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন পরিচয়ে 'এবিসিডি' হলেও তার জীবনদর্শন বা রাজনৈতিক ভাবনায় কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই!
সোজা কথায়, তার রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে প্রবল বিতর্ক থাকতে পারে – কিন্তু অস্পষ্টতা নেই একেবারেই! আর এর পেছনে তার ফিল্মনির্মাতা মায়ের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু ও বাংলাতেও ক্যাম্পেইন ভিডিও তৈরি করেছে জোহরান মামদানির টিম – যার কোনো কোনোটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বলিউডের পুরনো ব্লকবাস্টার 'দিওয়ার' ছবির থিম।
এই দিওয়ারেরই বিখ্যাত সংলাপ ‘মেরে পাস মা হ্যায়’- এর আদলে মামদানিও যেন নীরবে বারবার বলে যাচ্ছেন ‘আমার সঙ্গে আমার মা মীরা নায়ারও কিন্তু আছেন!’
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে দলের মনোনয়ন জিতে নিয়ে যে জোহরান মামদানি মার্কিন রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছেন, সেই ৩৩ বছরের যুবক ভোটের প্রচারণার সময় বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে বাংলাতেও একটি ক্যাম্পেইন ভিডিও তৈরি করেছেন।
সেই ভিডিওতে লিটল বাংলাদেশ কেনসিংটনের বাঙালি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা আরিফকে সঙ্গে নিয়ে তাকে ভাঙা ভাঙা বাংলায় 'র্যাংক চয়েস ভোটিং' পদ্ধতিটা সাধারণ ভোটারদের কাছে বাঙালি মিষ্টির প্লেট নিয়ে ব্যাখ্যা করতেও শোনা গেছে।
ভিডিওর শেষ দিকে এসে হাসতে হাসতে মামদানি বেশ ঝরঝরে ভঙ্গিতেই শাহানা আরিফকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার বাংলা ভালই, না?’ শাহানা একটু ইতস্তত করে জবাব দেন, ‘খারাপ না!’
এই চমকজাগানো ক্যাম্পেইন যে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই তাতে কোনো সন্দেহ নেই – এবং ভারতীয় অরিজিনের মামদানি যে হিন্দি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও মোটামুটি কথাবার্তা বলতে পারেন, এটা অনেককেই অবাক করেছে।
নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটস-সহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় প্রচারের সময় তাকে বাঙালি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গেও টুকরো টাকরা বাংলায় কথা বলতেও দেখা গেছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে হেভিওয়েট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারিয়ে নিজের মনোনয়ন (এবং খুব সম্ভবত মেয়র পদও) নিশ্চিত করার পর মামদানি যে 'অ্যাকসেপ্টেন্স স্পিচ' দিয়েছেন, তাতেও কিন্তু এই সাফল্যে 'বাংলাদেশি আন্টি'দের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে ভোলেননি!
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, জোহরান কে মামদানির এই বাংলা-প্রীতি কি শুধু ভোটের জন্যই – না কি এর পেছনে অন্য কারণও আছে? এক কথায় এর সহজ উত্তর হলো, মামদানির বাংলা কানেকশনের পেছনে সবচেয়ে বড় 'ক্যাটালিস্ট' হলেন তার মা – আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রপরিচালক মীরা নায়ার।
মীরা নায়ারের জন্ম ভারতের ওড়িশাতে বাঙালি অধ্যুষিত শহর রাউরকেল্লাতে – আর তিনি বড় হয়েছেন ওই রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরে, সেখানেও জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বাঙালি।
মীরা নায়ারের ঝলমলে ফিল্মোগ্রাফিতে খুব উজ্জ্বল একটা নাম হল 'নেমসেক' – যেটা তিনি তৈরি করেছিলেন বাঙালি পরিবারের আমেরিকান লেখিকা, পুলিতজার-জয়ী ঝুম্পা লাহিড়ির লেখা উপন্যাস অবলম্বনে।
সেই সিনেমাটাও ছিল আবার আমেরিকায় পাড়ি দেওয়া এক প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী বাঙালি দম্পতিকে নিয়েই। এই ছবিটা বানাতে ছেলে জোহরানই যে তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলো, সেটাও তিনি পরে একাধিকবার জানিয়েছেন।
জোহরান মামদানির বাংলা ভাষায় ক্যাম্পেইন ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি
মীরা নায়ার ও তার সিনেমা, সংস্কৃতি
ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ার আর উগান্ডা থেকে আমেরিকায় আসা ভারতীয় বংশোদ্ভুত লেখক-শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানির একমাত্র সন্তান হলেন জোহরান কে মামদানি। বাবার দিক থেকে তার বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের কোনো সুযোগ না থাকলেও মা মীরা নায়ার যে সেটা কড়ায়-গন্ডায় পুষিয়ে দিয়েছেন, সেটা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে।
সিভিল সার্ভেন্ট বাবা ও সমাজকর্মী মায়ের কন্যা মীরা নায়ারের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও স্কুলের পড়াশুনা বাংলা লাগোয়া ওড়িশাতেই, যেখানে তার অনেক বাঙালি বন্ধুবান্ধব ছিল। তার নিজের গানের শিক্ষকও ছিলেন একজন বাঙালি।
তিনি যে দিব্বি বাংলা বোঝেন এবং একটু-আধটু বলতেও পারেন – কলকাতায় প্রায় দুই যুগ আগে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদক নিজেই তার সাক্ষী।
মুম্বাইয়ের পথশিশুদের নিয়ে তৈরি, ১৯৮৮তে মুক্তি পাওয়া 'সালাম বোম্বে' ছবির সূত্র ধরেই মীরা নায়ার আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান। সেরা বিদেশি ছবির ক্যাটেগরিতে হিসেবে সালাম বোম্বে সেবার অস্কার, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব – সবগুলো অ্যাওয়ার্ডেই নমিনেশন জিতেছিল।
ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'গোল্ডেন লায়ন' ও কানে 'ক্যামেরা ডি'ওর' জেতা এই পরিচালক 'মিসিসিপি মসালা' ও 'মনসুন ওয়েডিং'-এর মতো অনেক কাল্ট মুভি বানিয়েছেন – তবে বাঙালি দর্শক তাকে মনে রেখেছে মূলত নেমসেক ছবিটির জন্যই!
ঝুম্পা লাহিড়ীর একই নামের বইটি অবলম্বনে যখন মীরা নায়ার 'নেমসেক' বানান, তখন গল্পের অভিবাসী বাঙালি দম্পতি অশোক ও অসীমা গাঙ্গুলির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে ইরফান খান ও টাবু।
বলিউডের অবাঙালি তারকা টাবু ও ইরফানকে আমেরিকা-প্রবাসী বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে ও উচ্চারণে বাংলা অ্যাকসেন্ট আনতে তাকে যে কত রকম কসরত করতে হয়েছিল, সে গল্পও মীরা নায়ার নিজেই বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন।
বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি তিনি যে অন্যরকম একটা টান অনুভব করেন, মীরা সেটাও জানিয়েছেন বিভিন্ন সাক্ষাতকারেই।
‘এবিসিডি’ প্রজন্মের হয়েও ব্যতিক্রমী?
অথচ 'নেমসেক' ছবিটা হয়তো মীরা নায়ারের বানানোই হতো না – যদি না এর পেছনে তার কিশোর ছেলে জোহরানের একটা বড় ভূমিকা থাকতো!
২০১৮ সালে জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে সাংবাদিক বীর সাংভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মীরা নায়ার জানিয়েছিলেন, তিনি যখন নেমসেক বানানোর পরিকল্পনা শুরু করেছেন – ঠিক তখনই বিখ্যাত হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির পঞ্চম পর্ব 'অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স' মুভিটা পরিচালনার প্রস্তাব আসে তার কাছে।
যথারীতি সেটা খুবই মোটা অঙ্কের লোভনীয় প্রস্তাব ছিল – আর দ্বিধান্বিত মা নিজের ছেলের কাছেই জিজ্ঞেস করেন, তার কোন কাজটা করা উচিত হবে।
সেটা ২০০৭ সাল। জোহরান মামদানির বয়স তখন মাত্রই চোদ্দ – এবং সে নিজেই পটার সিরিজের বিরাট ভক্ত – কিন্তু মা'কে সে না কি বলেছিল, ‘আরও অনেক ভাল ভাল পরিচালক আছেন যারা হ্যারি পটার বানাতে পারবেন – কিন্তু নেমসেক একজনই বানাতে পারবে, আর সেটা তুমি!’
আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত সেলুলয়েডের পর্দায় প্রাণ পেয়েছিল নেমসেক। জোহরান মামদানির মতো দক্ষিণ এশিয় অরিজিনের বাবা-মার যে সন্তানরা আমেরিকায় দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী হিসেবে বেড়ে ওঠেন, তাদের দুটো সংস্কৃতির জাঁতাকলের মাঝে যে আত্মপরিচয়ের সঙ্কট বা বিভ্রান্তিতে ভুগতে হয় – সেই জন্য অনেকে তাদের 'আমেরিকা বর্ন কনফিউজড দিশি' বা এবিসিডি প্রজন্ম বলেও বর্ণনা করেন।
নেমসেকের মুখ্য চরিত্র, গোগল গাঙ্গুলিও ছিল এরকমই এক তরুণ – আর মজার ব্যাপার, মায়ের ছবিতে এই ভূমিকায় যাতে গুজরাটি অরিজিনের মার্কিন অভিনেতা এবং তার অতি প্রিয় কল পেন-কে কাস্ট করা হয় সে জন্যও কিশোর জোহরান এক রকম জেদ ধরে বসেছিল!
জোহরান মামদানির নিজের জন্ম যদিও আফ্রিকাতে – কয়েক বছর আগেই তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়েছেন, এবং এযাবতকালের সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবনেই তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন পরিচয়ে 'এবিসিডি' হলেও তার জীবনদর্শন বা রাজনৈতিক ভাবনায় কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই!
সোজা কথায়, তার রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে প্রবল বিতর্ক থাকতে পারে – কিন্তু অস্পষ্টতা নেই একেবারেই! আর এর পেছনে তার ফিল্মনির্মাতা মায়ের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু ও বাংলাতেও ক্যাম্পেইন ভিডিও তৈরি করেছে জোহরান মামদানির টিম – যার কোনো কোনোটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বলিউডের পুরনো ব্লকবাস্টার 'দিওয়ার' ছবির থিম।
এই দিওয়ারেরই বিখ্যাত সংলাপ ‘মেরে পাস মা হ্যায়’- এর আদলে মামদানিও যেন নীরবে বারবার বলে যাচ্ছেন ‘আমার সঙ্গে আমার মা মীরা নায়ারও কিন্তু আছেন!’
ইরানের মতো একটি মহান দেশ ও জাতির জন্য, আত্মসমর্পণের কথা বলাই অপমান জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইরানী জাতি সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল। ইরানীরা বিশিষ্ট চরিত্র প্রদর্শন করে দেখিয়েছে যে, প্রয়োজনে, এই জাতির পক্ষ থেকে একক কণ্ঠস্বর শ
১ দিন আগেগত ১৩ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর বাংকারে আত্মগোপনে যান খামেনি। সংবাদপত্রটি বলছে, যুদ্ধবিরতির সময়ও জেরুজালেম তাকে হত্যার চেষ্টা করতে পারে- এ আশঙ্কায় তিনি সম্ভবত এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তার অবস্থা সম্পর্কে কোনো আপডেট দেওয়া হয়নি। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত তদারকি করছেন কি না- তা স্পষ্ট নয়।
১ দিন আগেমুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ২৪ জুন বাছাইপর্বের নির্বাচনে তিনি নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোসহ প্রায় এক ডজন প্রার্থীকে পরাজিত করে রীতিমতো ইতিহাস গড়েছেন
১ দিন আগে‘আমেরিকাই ইসরায়েলকে বাঁচিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকেও যুক্তরাষ্ট্র রক্ষা করবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
১ দিন আগে