যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হওয়ার পথে: ইলন মাস্ক

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হওয়ার পথে।

মূলত মার্কিন অর্থনীতিবিদ পিটার সেন্ট অনজের একটি ভিডিও বিশ্লেষণ শেয়ার করে ইলন মাস্ক তাঁর এই আশঙ্কার কথা বলেছেন। এক্সে প্রকাশিত সেই বিশ্লেষণে পিটার সেন্ট অনজ জানিয়েছেন, গত জুন মাসে মার্কিন নাগরিকেরা যত আয়কর দিয়েছেন, তার ৭৬ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করেছে বাইডেন প্রশাসন। অর্থাৎ প্রতি চার ডলার আয়করের তিন ডলারই যাচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধে। ওই অর্থ যাচ্ছে মূলত চীন ও ওয়ালস্ট্রিটের ঋণদাতাদের কাছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে পিটার অনজ বলেন, জুন মাসে মার্কিন সরকার ১৮৫ বা ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার আয়কর সংগ্রহ করেছে। এই অর্থ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অর্থের মধ্যে ১৪ হাজার কোটি ডলার ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় করা হয়েছে।

ইলন মাস্ক বলেন, এটা খুশির সংবাদ। তিনি যে আয়কর দিচ্ছেন তার ৭৬ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় হচ্ছে, যেমন সাবেক সরকারগুলোর অদক্ষতার খেসারত হিসেবে।

পিটার সেন্ট অনজ বলেন, বার্ষিক ভিত্তিতে হিসাব করা হলে দেখা যায়, এক বছরে এই সুদ ব্যয় বেড়েছে ৮ শতাংশ। সুদ পরিশোধের ব্যয় এই গতিতে বাড়তে থাকলে আগামী ছয় বছর নয় মাসের মধ্যে ফেডারেল সরকার যত আয়কর সংগ্রহ করবে, তার চেয়ে বেশি সুদ পরিশোধ করতে হবে।

সমস্যা হলো, মার্কিন ফেডারেল সরকারের আয়কর আদায় কমছে, যদিও এ বিষয়টি কেবল মন্দার সময় দেখা যায়। কিন্তু এই সময়ে জাতীয় ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে পিটার অনজ বলেন, সরকারের ঘাটতি যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ঋণের ব্যয়।

সামগ্রিক হিসাব করে পিটার অনজ দেখিয়েছেন, গত এক বছরে মার্কিন সরকার কেবল সুদ পরিশোধ করেছে ৮৬৮ বিলিয়ন বা ৮৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। তাঁর পূর্বাভাস, আগামী বছর তা ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে।

তুলনা করে বিষয়টি বোঝাতে জর্জ বুশের প্রথম জমানার উদাহরণ দিয়ে পিটার অনজ বলেন, সেই সময় মার্কিন সরকারের মোট ঘাটতি ছিল ১৫৮ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এখন তার পাঁচ গুণ অর্থ কেবল ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে। আগামী বছর তা সাত গুণে উন্নীত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের ইতিহাসে আলো ফেলেন পিটার অনজ। তিনি বলেন, ফেডারেল সরকারের প্রথম ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলার ঋণ করতে লেগেছিল ১৯২ বছর। অথচ শেষ ১ লাখ কোটি ডলার ঋণ করতে সময় লেগেছে মাত্র ১০০ দিন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপুল পরিমাণ জাতীয় ঋণের জন্য দুজন ব্যক্তিকে দায়ী করেন। দুজনই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট—প্রথমত, ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট; দ্বিতীয়ত, রিচার্ড নিক্সন।

রুজভেল্ট সেই ১৯৩৩ সালে ডলার ছাপানোর জন্য স্বর্ণ ভিত্তি রাখার নিয়ম বাতিল করেন। এরপর অন্যান্য দেশের স্বর্ণ যুক্তরাষ্ট্রে মজুত থাকত। কিন্তু ১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ঘোষণা করেন, এত দিন অন্যান্য দেশ সোনার বিনিময়ে যে ডলার নিত, তা আর থাকবে না। এর অর্থ হলো, ফেডারেল রিজার্ভ ইচ্ছামতো ডলার ছাপতে পারবে; পরিণামে যেকোনো অঙ্কের বাজেট ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

১৭৮৯ সাল থেকে রুজভেল্টের সময় পর্যন্ত মার্কিন জাতীয় ঋণ ছিল মাত্র ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার। রুজভেল্টের সিদ্ধান্তের পর নিক্সনের জমানা পর্যন্ত তা বেড়েছে ২০ গুণ। নিক্সনের ‘শকের’ পর তা ১০০ গুণ বেড়ে আজ ৩৫ ট্রিলিয়ন বা ৩৫ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।

সমাধানের সূত্রও দিয়েছেন পিটার অনজ। তিনি ৫০ শতাংশ ব্যয় কমাতে বলেছেন। তাঁর সমাধান হলো, আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া অর্থাৎ ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রা ছাপানোর ক্ষমতা সীমিত করা। হতে পারে আবার স্বর্ণ মানে ফিরে যাওয়া; তা না হলে বিটকয়েন বা তেল বা খাদ্যশস্যের মতো মজুতের ভিত্তিতে মুদ্রা ছাপানো। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, রাজনীতিবিদদের চিন্তায় এসব নেই। এর অর্থ হলো, মার্কিন জাতীয় ঋণ ও মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

হংকংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৪ জনের মৃত্যু

অ্যাপার্টমেন্টগুলোর জানালা দিয়ে আগুনের শিখা বেরোতে দেখা গেছে। গোটা এলাকা ঢেকে গেছে ঘন কালো ধোঁয়ায়। দমকলকর্মীরা উঁচু মই ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। দমকল বাহিনীর চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও এখনও পুরোপুরি নেভানো যায়নি।

১ দিন আগে

বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল শহর ঢাকা: জাতিসংঘ

জনবহুল শহরের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিও। তবে জাকার্তা এবং ঢাকার তুলনায় গত ২৫ বছরে শহরটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।

২ দিন আগে

হংকংয়ে একাধিক ভবনে আগুন, বহু হতাহতের শঙ্কা

হংকংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট নামের বৃহৎ আবাসিক এলাকায় একাধিক টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আর এতে বহু হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দমকল ও জরুরি সেবা বিভাগ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে

২ দিন আগে

থাইল্যান্ডে ৩০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ বৃষ্টি, নিহত ৩৩

থাইল্যান্ডে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন এবং লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে এই দুর্যোগের ফলে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

২ দিন আগে