ট্রাম্পের কণ্ঠে নরম সুর, মোদিও বললেন ‘পূর্ণ প্রতিদান দেবো’

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩: ৪৩
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ আচরণ অব্যাহত রেখেছেন। আগের দিন পর্যন্ত যেখানে চীন-ভারত সম্পর্কের জের ধরে ভারতকে নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন, সেখান থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর বদলে গেল তার। নরেন্দ্র মোদি তার কাছে হয়ে উঠলেন ‘বন্ধু’, ‘মহান প্রধানমন্ত্রী’।

সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্পের কণ্ঠে যখন এমন নরম সুর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন! তিনিও ইতিবাচক সাড়া দিলেন ট্রাম্পের পোস্টের জবাবে। বললেন, তিনিও যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ প্রতিদানই দেবেন।

ট্রাম্প-মোদির সুর পালটে দেওয়া এমন নরম বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, গত কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সম্পর্কে যে চড়াই-উৎরাই চলছে, তাতে কি শেষ পর্যন্ত বরফ গলতে শুরু করল?

ট্রাম্প এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির সম্পর্কগুলো ওলট-পালট করে চলেছেন ট্রাম্প। বিশেষ করে তার শুল্কনীতি রীতিমতো বৈশ্বিক বাণিজ্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এর বড় ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছে চীন আর ভারত।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বরাবরই সাপে-নেউলে। তবে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হিসেবেই সুবিদিত। এবার রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের জ্বালানি তেল আর অস্ত্র কেনার ‘অপরাধে’ বাড়তি শুল্কের ‘শাস্তি’ আরোপ করেছেন ট্রাম্প।

ধারণা করা হচ্ছিল, ট্রাম্পের এই বাড়তি শুল্কের চাপে ভারত কিছুটা হলেও সরে আসবে রাশিয়ার দিক থেকে। বাস্তবে সেটি তো হয়ইনি, উলটো যে চীনের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বৈরিতা, সেই চীনের আরও কাছে সরে গেছে ভারত।

এর মধ্যেই চীনে এসসিও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এক মঞ্চে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রীতিমতো বিশ্ব রাজনীতির ‘টক অব দ্য মোমেন্ট’ হয়ে ওঠে। ট্রাম্প পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এ নিয়ে। তিন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের একটি ছবি শেয়ার করে শুক্রবার এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা ভারত ও রাশিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি গভীরতম, অন্ধকারতম চীনের কাছে।’

এর কয়েক ঘণ্টা পরই হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানেই ভারতীয় একটি বার্তা সংস্থার এক সংবাদ কর্মী জানতে চান— ভারতকে হারিয়ে ফেলা বলতে ট্রাম্প প্রকৃত অর্থে কী বোঝাতে চেয়েছেন, চীনকে ‘গভীরতম ও অন্ধকারতম’ বলেই বা ট্রাম্প কী বুঝিয়েছেন?

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারতকে হারিয়ে ফেলিনি তো! মোদি আমার খুব ভালো বন্ধু, সবসময় সে বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। তিনি একজন মহান প্রধানমন্ত্রী, তিনি দুর্দান্ত... এই বিশেষ মুহূর্তে তিনি যা করছেন তা আমার পছন্দ নয়, তবে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ভয়ের কিছু নেই।’

নরেন্দ্র মোদিকে নিয়েও প্রশংসা করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘আপনারা তো জানেন, মোদির সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। মাস দুয়েক আগেও উনি এখানে এখানে এসেছিলেন। এমনকি আমরা রোজ গার্ডেনে গিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও করেছিলাম।’

ট্রাম্পের ভারত ও মোদিকে নিয়ে এসব প্রশংসাসূচক কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়ার পর মোদির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে খুব একটা সময় লাগেনি। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে মোদি জবাব দিয়েছেন ট্রাম্পকে।

মোদি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুভূতি এবং আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তার ইতিবাচক বক্তব্যের প্রশংসা করছি। আমরা এর সম্পূর্ণ প্রতিদান দেবো।’

ট্রাম্প যেমন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে; একই ধরনের কথা লিখেছেন মোদিও। তার ভাষ্য, ‘ভারত ও আমেরিকার মধ্যে অত্যন্ত ইতিবাচক, ভবিষ্যৎমুখী ও কৌশলগত অংশীদারি রয়েছে।’

শুধু মোদি নয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ট্রাম্পের এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক এবং ভারতের জন্য সুযোগ হিসেবেই দেখছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) অসম্ভব গুরুত্ব দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও রসায়নও খুব ভালো। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছি। তাই এ পরিস্থিতিতে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

মোদি আর ভারতকে নিয়ে ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যে একদিকে যেমন ইতিবাচক ধারণা মিলেছে, রয়েছে বিপরীতমুখী আলোচনাও। কারণ মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক শনিবার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা একেবারেই বিপরীতমুখী। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, দুয়েক মাসের মধ্যেই ভারত আলোচনার টেবিলে ফিরে আসবে। তারা বলবে তারা সরি এবং তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করবে।’

ব্লুমবার্গের সঙ্গে আলাপচারিতায় মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে আরও বলেন, ‘ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন না করে, তাহলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতেই হবে।’

একদিকে ট্রাম্পের কণ্ঠে ইতিবাচক সুর, অন্যদিকে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি— বাস্তবে রাজনীতির কোন সমীকরণ মিলে যাবে, তা বুঝতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হামলার শঙ্কা, ট্রাম্পের যুদ্ধবিমান মোতায়েন

মার্কিন সরকারের একটি সূত্র জানায়, পুয়ের্তো রিকোর বিমানঘাঁটিতে অন্তত ১০টি যুদ্ধবিমান পাঠানো হচ্ছে। এগুলো মাদক চক্রের ওপর হামলায় ব্যবহার করা হবে। এই চক্রগুলোকে ‘মাদ্রক-জঙ্গি’ হিসেবে তকমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২১ ঘণ্টা আগে

গাজায় নিহত ছাড়াল ৬৪ হাজার, অনাহারে বাড়ছে মৃত্যু

গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৯ জনের মরদেহ আনা হয়েছে। ৪২২ জন আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৫ জন। ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তায় আটকে পড়া অসংখ্য মানুষের কাছে এখনো পৌঁছাতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা।

১ দিন আগে

নাফ নদীতে একের পর এক বাংলাদেশি জেলে নিখোঁজ, কী হচ্ছে সেখানে?

নাফ নদী, সেই নদীর মোহনা এবং সেন্ট মর্টিন দ্বীপের দক্ষিণ সাগরে মাছ ধরেই মূলত: জীবিকা নির্বাহ করেন বাংলাদেশি জেলেরা। কিন্তু একের পর এক জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আতঙ্কে জেলেদের অনেকেই সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

১ দিন আগে

ভারত-রাশিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি চীনের কাছে— ট্রাম্পের কণ্ঠে বেদনা নাকি ক্ষোভ?

সম্প্রতি এক মঞ্চে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পাশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি ও যৌথ ঘোষণার পর ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এমন প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছেন ট্রাম্প।

১ দিন আগে