আল-আয়ালা— আমিরাতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো যে নাচ নিয়ে এত আলোচনা

বিবিসি বাংলা
আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ০০: ৫৭
ট্রাম্পকে আল-আয়ালা নামের বিশেষ ধরনের নাচের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈশ্বিক রাজনীতি-অর্থনীতির নানা হিসাব-নিকাশ এই সফরের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও অনলাইন-অফলাইনে তুমুল আলোচনা চলছে ট্রাম্পকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেওয়া রাজকীয় অভ্যর্থনা নিয়ে।

ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আমিরাতে পৌঁছালে স্থানীয় একদল মেয়ে নেচে তাকে স্বাগত জানান। তাদের সবার পরনে ছিল সাদা পোশাক। নাচের সময় সবার চুল ছিল খোলা। পথের দুপাশে দাঁড়িয়ে তারা সেই চুল ঝাঁকিয়ে স্বাগত জানাচ্ছিলেন ট্রাম্পকে, মাঝের পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ট্রাম্প।

‘আল-আয়ালা’ নামে আরব আমিরাতের মেয়েদের এমন বিশেষ ধরনের নৃত্য পরিবেশন অনেকেই আগে কখনো দেখেননি। ফলে তারা সবাই প্রশ্ন তুলেছেন— এই নৃত্য প্রকৃতপক্ষে কী? একটি ইসলামি দেশ কীভাবে কাউকে স্বাগত জানাতে এমন নৃত্য পরিবেশন করতে পারে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু হয় সৌদি আরব থেকে। সেখানে শুরুতেই তাকে সাদা আরব ঘোড়ার মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তার চলার পথে বিছানো হয় বিখ্যাত বেগুনি গালিচা।

এরপর কাতারে পৌঁছালে ঘোড়ার পাশাপাশি উটও যোগ হয় ট্রাম্পের অভ্যর্থনার আয়োজনে। রাজপ্রাসাদের দিকে যাওয়া তার গাড়ি বহরে সাইবার ট্রাকও ছিল। এরপর আরব আমিরাতে গিয়ে ‘আল-আয়ালা’ নাচে অভ্যর্থনা জন্ম দিয়েছে এত আলোচনা।

আল-আয়ালা কী

ইউনেসকোর ওয়েবসাইট ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তর থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যায় আল-আয়ালা নিয়ে। এসব সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এটি উত্তরপশ্চিম ওমান ও পুরো সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরিবেশিত একটি জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

আল-আয়ালা পরিবেশনের সময় গুনগুন করে গান গাওয়া হয়, ‘দফ’ নামে এক ধরনের ঢোল বাজানো হয়। এর মধ্যেই থাকে নাচ এবং এতে যুদ্ধের একটি দৃশ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়।

আরব আমিরাতের সংস্কৃতি দপ্তর বলছে, এই রীতি আরব বেদুইন গোত্রগুলোর থেকে এসেছে, যারা যুদ্ধের প্রস্তুতি বা কোনো আনন্দের মুহূর্তে এমন পরিবেশনা করত।

Trump-Reception-In-UAE-02-Photo-17-05-2025

বিখ্যাত বেদুইন নাচে ট্রাম্পকে বরণে প্রস্তুত আমিরাতের নারীরা

আল-আয়ালা পরিবেশনের জন্য প্রায় ২০ জন পুরুষ দুটি সারিতে একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড়ান এবং তাদের হাতে থাকে বাঁশের সরু লাঠি। এই লাঠিগুলো বর্শা বা তলোয়ারের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। এই দুই সারির মাঝে যন্ত্রশিল্পীরা বড় ও ছোট ঢোল বা দফ, খঞ্জনি ও পিতলের থালার মতো করতাল বাজাতে থাকেন।

সারি বেধে দাঁড়ানো পুরুষরা এসব বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাতের লাঠি ও মাথা নাড়ান এবং একসঙ্গে গান করেন। অন্য শিল্পীরা তলোয়ার বা বন্দুক হাতে সারিগুলোর চারপাশে ঘোরেন। এ সময় তারা হাতের অস্ত্রগুলো মাঝে মাঝে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেন এবং আবার ধরে ফেলেন।

এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা মেয়েরা তাদের লম্বা চুল এক দিক থেকে অন্যদিকে দোলান। এই নির্দিষ্ট নাচকে ‘আন-নিশআত’ বলা হয়। এর আধুনিক রূপকে বলা হয়ে থাকে ‘খালিজি ড্যান্স’ বা উপসাগরীয় নৃত্য।

বেদুইন সংস্কৃতিতে এটি ছিল পুরুষদের পক্ষ থেকে দেওয়া সুরক্ষার প্রতি মেয়েদের বিশ্বাস ও আস্থা প্রকাশের একটি উপায়। ওমান সালতানাত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত— এই দুই দেশেই বিয়ের অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য উৎসবে আল-আয়ালা পরিবেশিত হয়ে থাকে। যারা এটি পরিবেশন করেন তারা বিভিন্ন জাতি ও বয়সের হয়ে থাকেন।

প্রধান শিল্পী এই দায়িত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে পান এবং তার ওপর দায়িত্ব থাকে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। আল-আয়ালা পরিবেশনের জন্য বয়স, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থানের কোনো বাধা নেই।

সমালোচনার কারণ কী?

উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরকালে ট্রাম্প যে জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা পান তার জন্যও সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেওয়া এই অভ্যর্থনা নিয়ে সমালোচনার কারণ ভিন্ন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আশোক সোয়ান নামে একজন লিখেছেন, উপসাগরীয় দেশগুলো ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য সবকিছু করছে। যখন পশ্চিমা দেশের নারী নেতারা এই দেশগুলোতে আসেন, তখন তাদের মাথা ঢেকে চলতে হয়। কিন্তু এখন আমিরাতের মেয়েরা এক পশ্চিমা নেতার জন্য মাথা না ঢেকে নাচছে।

চেলসি হার্ট নামের আরেকজন লিখেছেন, একসময় এই নাচ শুধু ব্যক্তিগত আয়োজনে পরিবেশিত হতো। কিন্তু এখন আমিরাত তাদের সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার জন্য এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করছে।

মিয়া উমর নামে আরেকজনের ভাষ্য, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে একটি ইসলামি দেশে এমনটা ঘটছে।’ তাকে উত্তর দিয়ে একজন বলেন, ‘আপনার জ্ঞান অল্প, আপনি জানেন না যে এটি বহু পুরনো রীতি, যা আরব সংস্কৃতির অংশ।’

আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর মতে, ‘যখন আমি এক আরব দেশে কাজ করতাম, তখন কেউ আমাকে বলেছিল— আরবরা কেবল একজন শক্তিশালী নেতাকে সম্মান করে।’

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল শহর ঢাকা: জাতিসংঘ

জনবহুল শহরের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিও। তবে জাকার্তা এবং ঢাকার তুলনায় গত ২৫ বছরে শহরটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।

১৯ ঘণ্টা আগে

হংকংয়ে একাধিক ভবনে আগুন, বহু হতাহতের শঙ্কা

হংকংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট নামের বৃহৎ আবাসিক এলাকায় একাধিক টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আর এতে বহু হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দমকল ও জরুরি সেবা বিভাগ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে

২০ ঘণ্টা আগে

থাইল্যান্ডে ৩০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ বৃষ্টি, নিহত ৩৩

থাইল্যান্ডে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন এবং লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে এই দুর্যোগের ফলে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

২১ ঘণ্টা আগে

২ বছরের আগ্রাসন: গাজায় ৩৩ হাজার নারী-শিশুর প্রাণহানি

মন্ত্রণালয় আরও অভিযোগ করেছে, ফিলিস্তিনি নারীদের লক্ষ্যবস্তু বানাতে ইসরায়েল উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত ও ১ লাখ ৭১ হাজার মানুষ আহত হয়েছে।

১ দিন আগে