গাজার প্রধান আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক

বিবিসি বাংলা
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ২০
শেখ রাদওয়ানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ফলে হাজার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ছাড়ছেন

গাজা সিটির একটি প্রধান আবাসিক এলাকায় কয়েক ডজন ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সামরিক বাহন ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের স্থল অভিযানের দ্বিতীয় দিনেই গাজা শহর দখলের লক্ষ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ট্যাঙ্ক, বুলডোজার এবং সাঁজোয়া যানগুলো উত্তর গাজা শহরের শেখ রাদওয়ানের পথে চলেছে।

নিজেদের অগ্রযাত্রাকে আড়াল করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী কামানের গোলা এবং স্মােক বম্ব নিক্ষেপ করায় চারদিকে মেঘের মত ঘন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।

যুদ্ধের আগে এই শেখ রাদওয়ান জেলায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস ছিলো। এটি সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।

গাজা সিটিতে ইসরায়েলের অভিযানের লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্ত করা এবং সেখানে থাকা হামাসের আনুমানিক তিন হাজার যোদ্ধাকে পরাজিত করা।

ইসরায়েল এই দলটিকে "সবশেষ শক্ত ঘাঁটি" হিসেবে অভিহিত করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এ অভিযানের ব্যাপক নিন্দা করা হয়েছে।

" গাজার পরিস্থিতি অমানবিক, বিবেকহীন" বলে সতর্ক করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অক্সফামসহ ২০টির বেশি প্রধান দাতা সংস্থার নেতারা।

বুধবারের অনুপ্রবেশের পর আশেপাশের ভবন এবং প্রধান সড়কগুলোতে ভারী বিমান হামলা চালানো হয়, যা স্থল অভিযানের প্রস্তুতি বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ রাদওয়ানের বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা সাদ হামাদা পরিবার নিয়ে বুধবার সকালেই দক্ষিণে পালিয়ে গেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, " ড্রোনগুলো কিছুই বাকি রাখেনি। তারা সোলার প্যানেল, বিদ্যুৎ জেনারেটর, পানির ট্যাঙ্ক, এমনকি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কেও আঘাত করেছে।"

"জীবন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিপদ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল" বলেন তিনি।

আবু ইস্কান্দার, আল তাওয়াম এবং আল সাফতাওয়ি এলাকাগুলো শেখ রাদওয়ানের অন্তর্ভূক্ত।

আল-জালা সড়ক দিয়ে এই শেখ রাদওয়ান বিভাজিত, যেটি গাজা সিটির মধ্যবর্তী অঞ্চলের সাথে এর উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোকে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।

শহরের আরো গভীরে ইসরায়েলি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর পথ খুলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গাজা সিটির সড়কে ট্যাঙ্কের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিশেষ করে যারা এখনো শহরের পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছেন।

ট্যাঙ্কগুলোকে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ইসরায়েলের আগের হামলার স্মৃতি জাগিয়ে তোলে, যেটা পুরো এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

শেখ রাদওয়ানে ইসরায়েলি বাহিনীর এই অনুপ্রবেশের ফলে এখন আরেক দফায় মানুষের ঘর-বাড়ি ছাড়ার ঢেউ শুরু হয়েছে যাতে হাজার হাজার পরিবার দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সালাহেদীন রোড দিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার পথ খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সড়কে গাড়ি এবং জিনিসপত্র বোঝাই করা বাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

পরিবহন সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ভ্রমনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে এবং শত শত শেকেল খরচ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

এই যুদ্ধের আগে, শেখ রাদওয়ান গাজা সিটির ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি ছিল। কয়েক ডজন স্কুল, মসজিদ এবং দোকানপাটের শহর ছিল এটি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই শেখ রাদওয়ান এলাকায় বেশ কয়েকবার বিমান হামলার শিকার হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।

তবে এলাকার একদম ভেতরে ট্যাঙ্কের উপস্থিতি এখন ইসরায়েলের স্থল অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য নতুন ধাপ।

বুধবার সকালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা করেছে, স্থল বাহিনীকে সাহায্য করতে দুইদিনে তারা গাজা সিটি জুড়ে দেড়শ'টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিযানের অংশ হিসেবে তারা আইডিএফ বিস্ফোরক ভর্তি পুরোনো সামরিক যানবাহন ব্যবহার করছে। যেগুলোকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংস্কার করা হয়েছে।

এই যানবাহনগুলো হামাসের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

সেখানকার বাসিন্দা নিদাল আল শেরবি বিবিসি অ্যারাবিকের মিডল ইস্ট ডেইলি প্রোগ্রামকে বলেছেন, " গত রাতটি খুব কঠিন ছিল, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবিরত বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। "

" ইসরায়েলি যানবাহন শেখ রাদওয়ান, তাল আল-হাওয়া এবং সেজাইয়া থেকেও অগ্রসর হয়েছে।এটা খুবই, খুবই ভয়াবহ রাত ছিল। "

দাতা সংস্থা, জাতিসংঘের সংস্থা এবং অন্যান্যরা বলছেন, 'মানবিক এলাকা' সেখানেই হবে যেখানে মানুষ স্থানান্তরিত হবে, প্রচুর মানুষের ভীড় হবে।

সেনাবাহিনীর নির্দেশ মেনে ওই অঞ্চলে চলে যাওয়া কয়েকজন বলেন, তারা তাঁবু খাটানোর জন্য কোনো জায়গা পাননি, তাই উত্তর দিকে ফিরে এসেছেন তারা।

" জায়গা খালি করার জন্য প্রতিদিন আমাদের দিকে লিফলেট ছুঁড়ে মারা হচ্ছে , যেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রতিটা দিকের ভবনের ওপর গুলিবর্ষণ করছে " কথাগুলো বিবিসি বলেন উত্তর গাজায় থাকা মুনির আজ্জাম।

" কিন্তু আমরা কোথায় যেতে পারি? দক্ষিণে আমাদের কোনো আশ্রয় নেই " বলেন আজ্জাম।

মঙ্গলবার আইডিএফ জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ গাজা শহর ছেড়ে পালিয়েছে।

যদিও অগাস্ট থেকে জাতিসংঘ এই সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজার জানিয়েছে। অনুমান করা যাচ্ছে, অন্তত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ এখনও রয়ে গেছে সেখানে।

দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর পাল্টা হামলা চালায়।

এতে বারশো মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৬২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।

বুধবার তারা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি গুলিতে ৯৮ জন নিহত এবং ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন।

অপুষ্টিতে আরো চারজন মারা গেছেন।

এদিকে, জাতিসংঘ সমর্থিত একটি সংগঠন, অগাস্টের শেষের দিকে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ চলছে - ঘোষণার পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে ১৫৪ জন মারা গেছেন বলেও হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

হামলার তীব্রতা বেসামরিক নাগরিকদের " আরও গভীর বিপর্যয়ের " দিকে ঠেলে দেবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি " বিকৃত এবং মিথ্যা।"

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল আরও ৯৮ জনের, নিহত ছাড়াল ৬৫ হাজার

ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক হতাহত আটকা পড়ে থাকায় প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে।

৬ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি এ ধরনের পুলিশবিরোধী সহিংসতাকে “সমাজের অভিশাপ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

৬ ঘণ্টা আগে

অবৈধ মাদক উৎপাদনকারী ২৩ দেশের তালিকায় ভারত-পাকিস্তান-চীন

যে ২৩টি দেশের নাম অবৈধ মাদক উৎপাদনকারী বা পরিবহনে সংশ্লিষ্ট হিসেবে তালিকায় রয়েছে সেগুলো হলো— আফগানিস্তান, বাহামা, বেলিজ, বলিভিয়া, বার্মা, চীন, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হাইতি, হন্ডুরাস, ভারত, জ্যামাইকা, লাওস, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, প

১৯ ঘণ্টা আগে

দোহায় হামলা চালানোয় নেতানিয়াহুর শাস্তি দাবি কাতারের

আনসারি বলেন, আমরা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বেপরোয়া নীতির কারণে প্রতিটি ব্যর্থতার ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা দেখছি। আমরাও তাকে একটি বার্তা দিতে চাই—আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

১ দিন আগে