সিরিয়ায় আসাদের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া কে এই আল-জোলানি

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনে অবদান রাখা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবার আগে আসবে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নাম। আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি এই গোষ্ঠীটির প্রধান। সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরে এইচটিএস আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও মধ্যপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেন জোলানি।

আজ রোববার যখন বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে তিনি তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন, যাতে তারা জনসাধারণের জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে না যায়। গুলি ছুড়ে উদ্‌যাপন না করে। এই মধ্য দিয়ে তাঁর তুলনামূলক মধ্যমপন্থা গ্রহণের দিকটিই প্রকাশিত হয়।

আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি বছরের পর নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন। তবে সম্প্রতি তিনি আলোচনায় এসেছেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন এবং এমন ঘোষণা দিচ্ছেন যা বিশ্বের সমস্ত সিরিয়ানদের নজর কেড়েছে। বিশেষ করে, তাদের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে সে সম্পর্কে কিছু সূত্র খুঁজতে সিরিয়ানরা এখন জোলানির বক্তব্যের দিকে তাকিয়ে আছেন।

শুরুর দিকে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি তথাকথিত আল-কায়েদা নেতাদের মতো পাগড়ি পরতেন না বরং বেশির ভাগ সময়ই সামরিক পোশাক পরতে পছন্দ করেন। ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর জোলানি নিজেকে একজন আরও মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি এখনো বিশ্লেষক এবং পশ্চিমা সরকারগুলোর সন্দেহ দূর করতে পারেননি। তাদের অনেকেই এখনো এইচটিএস-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করেন।

আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি ১৯৮২ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। তাঁর পরিবার ছিল বেশ উচ্চবিত্তের এবং শিক্ষা জীবনে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে তাঁর প্রকৃত নাম আহমদ আল-শারা। ২০২১ সালে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল পিবিএস-কে বলেছিলেন যে, তাঁর ছদ্মনামটি মূলত তাঁর পরিবারের মূল উৎস গোলান মালভূমির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কারণে।

ইরাকে মার্কিন হামলা শুরু হলে তিনি সিরিয়া ছেড়ে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি আল-কায়েদা ইন ইরাকের সদস্য হন যার নেতৃত্ব দেন আবু মুসাব আল-জারকাবি। সে সময় তিনি পাঁচ বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন। পরে ২০১১ সালের মার্চে যখন সিরিয়ায় আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে জোলানি ইসলামিক স্টেটের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির আনুগত্য করতে অস্বীকার করেন এবং পরিবর্তে আল-কায়েদার প্রধান আইমান আল-জওয়াহিরির প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।

সমর্থকদের চোখে জোলানি একজন বাস্তববাদী এবং প্রতিপক্ষের কাছে সুযোগসন্ধানী। ২০১৫ সালের মে মাসে জোলানি বলেছিলেন, তিনি আইএসের মতো পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর কোনো ইচ্ছা রাখেন না। তিনি আরও ঘোষণা করেছিলেন, আসাদ পরাজিত হলেও প্রেসিডেন্টের গোত্রভুক্ত আলাওয়ি বা আলভি সংখ্যালঘুর ওপর কোনো প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালানো হবে না।

আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে জোলানি দাবি করেন, তিনি এটি করেছেন যেন পশ্চিমা দেশগুলো তাঁর সংগঠনের ওপর হামলা চালানোর কারণ না পায়। এরপর থেকে তিনি নিজেকে একজন বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জোলানি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপ দিয়ে তাদের সঙ্গে এইচটিএসের (হায়াত তাহরির আল-শাম) একীভূত হওয়ার ব্যবস্থা করেন, এর ফলে সরকারবিরোধী ইদলিব প্রদেশের বিশাল অংশ তার নিয়ন্ত্রণে আসে।

নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে এইচটিএস একটি বেসামরিক সরকার গড়ে তোলে এবং ইদলিব প্রদেশে একটি রাষ্ট্রের আকার সৃষ্টি করে, একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রতিপক্ষদের দমন করে। এই প্রক্রিয়ায় এইচটিএস স্থানীয় বাসিন্দা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছ থেকে গুরুতর নির্যাতনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়, যা জাতিসংঘ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

নিজ দলকে ঘিরে থাকা ভীতি এবং ঘৃণার ব্যাপারে সচেতন জোলানি আলেপ্পোর বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন যে, তার নতুন শাসনের অধীনে তারা কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। তিনি তাঁর যোদ্ধাদের আহ্বান জানান আসাদের শাসন থেকে ‘মুক্ত’ করা এলাকাগুলোর নিরাপত্তা বজায় রাখতে।

তথ্যসূত্র: এএফপি

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন চায় ইইউ

আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে চার মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আসছে নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে প্রত্যাশা করি। সেপ্টেম্বরে আমাদের বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসবে।

১ দিন আগে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনছে ইউক্রেন

ট্রাম্পের সঙ্গে সোমবারের এ বৈঠককে এখন পর্যন্ত ‘সেরা বৈঠক’ মন্তব্য করে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমন্বয়ই করবে না, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশীদারও হবে- স্পষ্ট এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি বড় একটি অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।’

১ দিন আগে

ট্রাম্পের সাথে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকে যা যা হলো

এই বৈঠকেই গুরুত্ব পায় যুদ্ধবিরতি বা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি। ট্রাম্প সেখানে বলেন- যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার আগে যুদ্ধবিরতি জরুরি নয়।

১ দিন আগে

আইন ভঙ্গ : যুক্তরাষ্ট্রের ৬ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল

বিবিসি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসননীতি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারির অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও ‘সন্ত্রাসবাদে সহায়তা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা পরিষ্কার করেনি স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

১ দিন আগে