
বিবিসি বাংলা

ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপাল শহরের এক হাসপাতালের বিছানায় বসে ছিল ১৫ বছর বয়সী আরিশ। ওর চোখের কালো চশমার পেছনে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল বাঁ চোখের ক্ষতটা।
আলোর উৎসব দিওয়ালি পালন করতে এমন এক নতুন ধরনের বাজি কিনেছিল, যেটা ওর মুখের কাছে ফেটে যায় সপ্তাহ খানেক আগে। আঘাত লেগে বাঁ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে আরিশ।
জরুরি অপারেশন হয়েছে ওর চোখে, তবুও চিকিৎসকরা বলতে পারছেন না যে কতটা দৃষ্টি ফিরে পাবে ওই কিশোর।
ও স্কুলে যায় না, কিন্তু ওর দুশ্চিন্তা হলো কাজে কী করে ফিরে যাবে। ওর বাবা মালির কাজ করেন আর পরিবারে কিছুটা অর্থ সাহায্য করতে আরিশ নিজে টেলিভিশন সারাই করে।
যদিও শিশু শ্রম ভারতে নিষিদ্ধ, তবুও লক্ষ লক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক কাজ করে থাকে। ভারতের আইন অনুযায়ী, ১৪ বছর বয়স হলে ক্ষতিকারক নয় – এমন শিল্পে কাজ করার নিয়ম রয়েছে।
কয়েকশ শিশু-কিশোরের চোখে আঘাত
আরিশের মতোই উত্তর ভারতের অন্তত পাঁচটি রাজ্যের কয়েকশো শিশু-কিশোর দেওয়ালির সময়ে ওই নতুন ধরনের বাজি ফেটে চোখে আঘাত পেয়েছে। 'কার্বাইড গান' নামের এই নতুন বাজিটির কথা আগে কখনও শোনা যায়নি। দেওয়ালির কিছুদিন আগে থেকে সামাজিক মাধ্যমে ঘরে তৈরি এই বাজিটির ভিডিও সামনে আসে।
একটি সাধারণ প্লাস্টিকের পাইপের ভেতরে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ভরে দেওয়া হচ্ছে – তারপরেই গুলির আওয়াজের মতো শব্দ, সঙ্গে আলোর ঝলকানি।
তবে ঠিক কখন শব্দ হবে, তা অনিশ্চিত। অনেক সময়ে দেরিতেও ফাটছে এই ঘরোয়া বাজিটি। কেন বাজি ফাটছে না, সেটা দেখতে গিয়ে যখন বাচ্চারা পাইপের ভেতরে উঁকি দিচ্ছে – অনেক ক্ষেত্রে ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড কেনা-বেচা ভারতে নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু কৃষক আর দোকানদারেরা অনেক সময়েই কৃত্রিমভাবে ফল পাকানোর জন্য এই রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলছেন যে চাষের খেত থেকে জন্তু-জানোয়ারদের ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর জন্যও এ ধরনের ঘরোয়াভাবে তৈরি বন্দুক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তবে গত সপ্তাহে এত বেশি সংখ্যায় আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্তও ভারতের বেশির ভাগ মানুষই এই ঘরোয়া বন্দুকের নামও শোনেননি।
হঠাৎ জনপ্রিয় এই বাজি
ঘরোয়াভাবে তৈরি এরকম যন্ত্র যে বাজি হিসাবেও ব্যবহার করা যায়, সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই উত্তর ভারতে ব্যাপকভাবে বিক্রি হতে থাকে এই কার্বাইড গান।
মধ্য প্রদেশের শুধু ভোপাল জেলাতেই 'কার্বাইড গান' ফেটে একশরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের চোখে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অন্য তিন জেলা থেকেও একশর বেশি ঘটনা সামনে এসেছে।
বিহারের রাজধানী পাটনার রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজির প্রধান ড. বিভূতি প্রসন্ন সিনহা জানিয়েছেন যে, ওই রাজ্যে একই ধরনের বিস্ফোরণে ১৭০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০ জনের চোখে অপারেশন করতে হয়েছে। তবে তিনি বলছেন, অনেক ঘটনার কথা হয়ত তারা এখনও জানেন না, তাই আহতদের সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি।
ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড আর উত্তর প্রদেশ ছাড়া ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও একই ধরনের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। মধ্য প্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্য এখন ওই 'কার্বাইড গান' বাজি হিসাবে ব্যবহারের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, কয়েকজন বিক্রেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
ভোপালের হামিদিয়া হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিভাগের প্রধান কভিথা কুমার বলছিলেন যে, তাদের কাছে যেসব রোগী আসছেন, তাদের মধ্যে হালকা, মাঝারি আর ব্যাপক আঘাত পেয়েছেন চোখে – সব ধরনের মানুষই আছেন।
"যারা কম আঘাত পেয়ে আসছেন, তাদের মূলত চোখের পাতায় রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে হালকা জ্বলে গেছে। মাঝারি ধরনের আঘাত প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাসায়নিক কণা কর্ণিয়াতে ঢুকে গিয়ে মাঝারি ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করেছে। যাদের বেশি আঘাত, তাদের কর্ণিয়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সাময়িক ভাবে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়েছে। অপারেশন করলে এ ধরনের রোগীদের দৃষ্টিশক্তি ফিরতেও পারে, তবে তাতে সময় লাগবে," জানাচ্ছিলেন ডা. কুমার।
আঘাতের ভয়াবহতা দেখে চমকে গেছেন বলে কয়েকজন চিকিৎসক বিবিসিকে জানিয়েছেন।
ওই হামিদিয়া হাসপাতালেরই চিকিৎসব ড. অদিতি দুবে জানাচ্ছিলেন যে দেওয়ালির বাজি ফেটে রাসায়নিক আঘাত হয়েছে – এমনটা তিনি আগে কখনও দেখেননি, তাই 'কার্বাইড গান' নিয়ে তাকে খোঁজ খবর করতে হয়েছে চিকিৎসা করার আগে।
সামাজিক মাধ্যমের ভিডিও
অনেক রোগী জানিয়েছেন যে ইনস্টাগ্রাম রিলস আর ইউটিউবের ভিডিও দেখে তারা ওই কার্বাইড গান কিনেছিলেন। এই ঘরোয়া বাজি কেনার পেছনে অন্যতম আকর্ষণ ছিল এর দাম – মাত্র দেড়শো-দু-শো ভারতীয় টাকা- বেশি শব্দ আর আলোর ঝলকানি হবে অথচ দামও তুলনামূলকভাবে সস্তা।
'কার্বাইড গান' দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করে ইনস্টাগ্রাম আর ইউটিউবে কয়েক ডজন ভিডিও পাওয়া গেছে, যেখানে অল্পবয়সীরা এই বাজি নিজেরাই বানিয়ে তারপরে তা ফাটিয়েও দেখাচ্ছেন।
ওইসব ভিডিওর পেছনে কখনও আবার র্যাপ সংগীত যোগ করে দেওয়া হয়েছিল।
এসব ভিডিও যারা বানিয়েছেন, তাদের কেউ এগুলোর নাম দিয়েছেন 'বিজ্ঞানের পরীক্ষা', কোনওটিতে হ্যাশট্যাগ দেওয়া হয়েছে 'ইউজফুল প্রজেক্ট' বা 'এক্সপেরিমেন্ট ভিডিও'।
পাটনার হাসপাতালের চিকিৎসক ড. সিনহা বিবিসিকে বলছিলেন যে, তার কাছে আসা এক রোগী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। সামাজিক মাধ্যমে ওই ভিডিওগুলি দেখে সে নিজেই বাড়িতে 'কার্বাইড গান' বানিয়েছিল। বিস্ফোরণে তার একটি চোখের দৃষ্টি চলে গেছে।
ফল পাকানোর রাসায়নিক দিয়ে বাজি
ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ক্ষতিকারক প্রভাব আর সম্ভাব্য অপব্যবহার রুখতেই ভারতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড উৎপাদন আর মজুত রাখার ওপরে নিয়ন্ত্রণ জারি আছে।
এই রাসায়নিক জলের সংস্পর্শে এলেই প্রবলভাবে দাহ্য ও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক অ্যাসিটাইলিন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড কেনাবেচা ও মজুত রাখতে গেলে ১৯৮৭ সালের ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স নিতে হয়। তবে এই নিয়ম দু-শ কিলোগ্রামের বেশি পরিমাণের জন্য প্রযোজ্য।
নাম উল্লেখ না করার শর্তে ভোপালের এক সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন যে, কেন্দ্রীয়ভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও কৃত্রিমভাবে ফল পাকানোর জন্য ব্যাপকভাবেই ব্যবহৃত হয় এই বিষাক্ত রাসায়নিকটি।
ভোপালের পুলিশ কমিশনার হরিনারায়নাচারি মিশ্র বিবিসিকে বলেছেন, উত্তর ভারতে বিয়ের অনুষ্ঠানে অথবা চাষের খেত থেকে বাঁদর তাড়াতে 'কার্বাইড গান' ব্যবহারের চল রয়েছে।
'নিষিদ্ধ হোক এই বাজি'
অল ইন্ডিয়া অপথালমোলজিকাল সোসাইটির সভাপতি ড. পার্থ বিশ্বাস বলছেন, 'কার্বাইড গান' অতি দ্রুত নিষিদ্ধ করা হোক।
তার কথায়, "এটা একটা জাতীয় স্তরের সমস্যা হয়ে উঠেছে। দেওয়ালির উৎসবের সময়ে দুর্ঘটনা বলে এই ঘটনাগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দেখা উচিত নয়।"
তিনি আরও বলছিলেন যে, ভারত ক্রিকেট ম্যাচ জিতলে বা নববর্ষের মতো উৎসব উদ্যাপনের সময়েও এই ঘরোয়া যন্ত্রগুলি ভবিষ্যতে বাজি হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে।
"ঘরোয়াভাবে তৈরি এই 'কার্বাইড বোমা' বা 'কার্বাইড গান' স্থায়ীভাবে অন্ধ করে দিতে পারে।এমনকি শরীরের অন্য অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পঙ্গুও হয়ে যেতে পারেন কেউ," বলছিলেন ড. পার্থ বিশ্বাস।
এসব যন্ত্র যারা বানাচ্ছে, তাদের ধরপাকড়ের জন্য দেশব্যাপী অভিযান যেমন চালানো উচিত, তেমনই ক্যালসিয়াম কার্বাইডের উৎপাদন ও বিক্রির ওপরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ফিরে যাওয়া যাক ভোপালের ওই হামিদিয়া হাসপাতালে। মাকে আঁকড়ে ধরে বসেছিল সাত বছর বয়সের আলজাইন। দৃষ্টিশক্তি হারানোর পরে তার চোখে অপারেশন হয়েছে। ইউটিউবের ভিডিও দেখে কাকার কাছে বায়না ধরে এই 'কার্বাইড গান' কিনিয়েছিল সে।
ও সপ্তাহখানেক আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ওর মা আফরিন ছেলের পাশ থেকে নড়েননি।
তিনি বলছিলেন, "ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছি, একটাই কামনা – ও যেন আবার দেখতে পায়।"

ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপাল শহরের এক হাসপাতালের বিছানায় বসে ছিল ১৫ বছর বয়সী আরিশ। ওর চোখের কালো চশমার পেছনে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল বাঁ চোখের ক্ষতটা।
আলোর উৎসব দিওয়ালি পালন করতে এমন এক নতুন ধরনের বাজি কিনেছিল, যেটা ওর মুখের কাছে ফেটে যায় সপ্তাহ খানেক আগে। আঘাত লেগে বাঁ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে আরিশ।
জরুরি অপারেশন হয়েছে ওর চোখে, তবুও চিকিৎসকরা বলতে পারছেন না যে কতটা দৃষ্টি ফিরে পাবে ওই কিশোর।
ও স্কুলে যায় না, কিন্তু ওর দুশ্চিন্তা হলো কাজে কী করে ফিরে যাবে। ওর বাবা মালির কাজ করেন আর পরিবারে কিছুটা অর্থ সাহায্য করতে আরিশ নিজে টেলিভিশন সারাই করে।
যদিও শিশু শ্রম ভারতে নিষিদ্ধ, তবুও লক্ষ লক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক কাজ করে থাকে। ভারতের আইন অনুযায়ী, ১৪ বছর বয়স হলে ক্ষতিকারক নয় – এমন শিল্পে কাজ করার নিয়ম রয়েছে।
কয়েকশ শিশু-কিশোরের চোখে আঘাত
আরিশের মতোই উত্তর ভারতের অন্তত পাঁচটি রাজ্যের কয়েকশো শিশু-কিশোর দেওয়ালির সময়ে ওই নতুন ধরনের বাজি ফেটে চোখে আঘাত পেয়েছে। 'কার্বাইড গান' নামের এই নতুন বাজিটির কথা আগে কখনও শোনা যায়নি। দেওয়ালির কিছুদিন আগে থেকে সামাজিক মাধ্যমে ঘরে তৈরি এই বাজিটির ভিডিও সামনে আসে।
একটি সাধারণ প্লাস্টিকের পাইপের ভেতরে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ভরে দেওয়া হচ্ছে – তারপরেই গুলির আওয়াজের মতো শব্দ, সঙ্গে আলোর ঝলকানি।
তবে ঠিক কখন শব্দ হবে, তা অনিশ্চিত। অনেক সময়ে দেরিতেও ফাটছে এই ঘরোয়া বাজিটি। কেন বাজি ফাটছে না, সেটা দেখতে গিয়ে যখন বাচ্চারা পাইপের ভেতরে উঁকি দিচ্ছে – অনেক ক্ষেত্রে ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড কেনা-বেচা ভারতে নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু কৃষক আর দোকানদারেরা অনেক সময়েই কৃত্রিমভাবে ফল পাকানোর জন্য এই রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলছেন যে চাষের খেত থেকে জন্তু-জানোয়ারদের ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর জন্যও এ ধরনের ঘরোয়াভাবে তৈরি বন্দুক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তবে গত সপ্তাহে এত বেশি সংখ্যায় আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্তও ভারতের বেশির ভাগ মানুষই এই ঘরোয়া বন্দুকের নামও শোনেননি।
হঠাৎ জনপ্রিয় এই বাজি
ঘরোয়াভাবে তৈরি এরকম যন্ত্র যে বাজি হিসাবেও ব্যবহার করা যায়, সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই উত্তর ভারতে ব্যাপকভাবে বিক্রি হতে থাকে এই কার্বাইড গান।
মধ্য প্রদেশের শুধু ভোপাল জেলাতেই 'কার্বাইড গান' ফেটে একশরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের চোখে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অন্য তিন জেলা থেকেও একশর বেশি ঘটনা সামনে এসেছে।
বিহারের রাজধানী পাটনার রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজির প্রধান ড. বিভূতি প্রসন্ন সিনহা জানিয়েছেন যে, ওই রাজ্যে একই ধরনের বিস্ফোরণে ১৭০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০ জনের চোখে অপারেশন করতে হয়েছে। তবে তিনি বলছেন, অনেক ঘটনার কথা হয়ত তারা এখনও জানেন না, তাই আহতদের সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি।
ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড আর উত্তর প্রদেশ ছাড়া ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও একই ধরনের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। মধ্য প্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্য এখন ওই 'কার্বাইড গান' বাজি হিসাবে ব্যবহারের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, কয়েকজন বিক্রেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
ভোপালের হামিদিয়া হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিভাগের প্রধান কভিথা কুমার বলছিলেন যে, তাদের কাছে যেসব রোগী আসছেন, তাদের মধ্যে হালকা, মাঝারি আর ব্যাপক আঘাত পেয়েছেন চোখে – সব ধরনের মানুষই আছেন।
"যারা কম আঘাত পেয়ে আসছেন, তাদের মূলত চোখের পাতায় রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে হালকা জ্বলে গেছে। মাঝারি ধরনের আঘাত প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাসায়নিক কণা কর্ণিয়াতে ঢুকে গিয়ে মাঝারি ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করেছে। যাদের বেশি আঘাত, তাদের কর্ণিয়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সাময়িক ভাবে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়েছে। অপারেশন করলে এ ধরনের রোগীদের দৃষ্টিশক্তি ফিরতেও পারে, তবে তাতে সময় লাগবে," জানাচ্ছিলেন ডা. কুমার।
আঘাতের ভয়াবহতা দেখে চমকে গেছেন বলে কয়েকজন চিকিৎসক বিবিসিকে জানিয়েছেন।
ওই হামিদিয়া হাসপাতালেরই চিকিৎসব ড. অদিতি দুবে জানাচ্ছিলেন যে দেওয়ালির বাজি ফেটে রাসায়নিক আঘাত হয়েছে – এমনটা তিনি আগে কখনও দেখেননি, তাই 'কার্বাইড গান' নিয়ে তাকে খোঁজ খবর করতে হয়েছে চিকিৎসা করার আগে।
সামাজিক মাধ্যমের ভিডিও
অনেক রোগী জানিয়েছেন যে ইনস্টাগ্রাম রিলস আর ইউটিউবের ভিডিও দেখে তারা ওই কার্বাইড গান কিনেছিলেন। এই ঘরোয়া বাজি কেনার পেছনে অন্যতম আকর্ষণ ছিল এর দাম – মাত্র দেড়শো-দু-শো ভারতীয় টাকা- বেশি শব্দ আর আলোর ঝলকানি হবে অথচ দামও তুলনামূলকভাবে সস্তা।
'কার্বাইড গান' দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করে ইনস্টাগ্রাম আর ইউটিউবে কয়েক ডজন ভিডিও পাওয়া গেছে, যেখানে অল্পবয়সীরা এই বাজি নিজেরাই বানিয়ে তারপরে তা ফাটিয়েও দেখাচ্ছেন।
ওইসব ভিডিওর পেছনে কখনও আবার র্যাপ সংগীত যোগ করে দেওয়া হয়েছিল।
এসব ভিডিও যারা বানিয়েছেন, তাদের কেউ এগুলোর নাম দিয়েছেন 'বিজ্ঞানের পরীক্ষা', কোনওটিতে হ্যাশট্যাগ দেওয়া হয়েছে 'ইউজফুল প্রজেক্ট' বা 'এক্সপেরিমেন্ট ভিডিও'।
পাটনার হাসপাতালের চিকিৎসক ড. সিনহা বিবিসিকে বলছিলেন যে, তার কাছে আসা এক রোগী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। সামাজিক মাধ্যমে ওই ভিডিওগুলি দেখে সে নিজেই বাড়িতে 'কার্বাইড গান' বানিয়েছিল। বিস্ফোরণে তার একটি চোখের দৃষ্টি চলে গেছে।
ফল পাকানোর রাসায়নিক দিয়ে বাজি
ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ক্ষতিকারক প্রভাব আর সম্ভাব্য অপব্যবহার রুখতেই ভারতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড উৎপাদন আর মজুত রাখার ওপরে নিয়ন্ত্রণ জারি আছে।
এই রাসায়নিক জলের সংস্পর্শে এলেই প্রবলভাবে দাহ্য ও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক অ্যাসিটাইলিন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড কেনাবেচা ও মজুত রাখতে গেলে ১৯৮৭ সালের ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স নিতে হয়। তবে এই নিয়ম দু-শ কিলোগ্রামের বেশি পরিমাণের জন্য প্রযোজ্য।
নাম উল্লেখ না করার শর্তে ভোপালের এক সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন যে, কেন্দ্রীয়ভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও কৃত্রিমভাবে ফল পাকানোর জন্য ব্যাপকভাবেই ব্যবহৃত হয় এই বিষাক্ত রাসায়নিকটি।
ভোপালের পুলিশ কমিশনার হরিনারায়নাচারি মিশ্র বিবিসিকে বলেছেন, উত্তর ভারতে বিয়ের অনুষ্ঠানে অথবা চাষের খেত থেকে বাঁদর তাড়াতে 'কার্বাইড গান' ব্যবহারের চল রয়েছে।
'নিষিদ্ধ হোক এই বাজি'
অল ইন্ডিয়া অপথালমোলজিকাল সোসাইটির সভাপতি ড. পার্থ বিশ্বাস বলছেন, 'কার্বাইড গান' অতি দ্রুত নিষিদ্ধ করা হোক।
তার কথায়, "এটা একটা জাতীয় স্তরের সমস্যা হয়ে উঠেছে। দেওয়ালির উৎসবের সময়ে দুর্ঘটনা বলে এই ঘটনাগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দেখা উচিত নয়।"
তিনি আরও বলছিলেন যে, ভারত ক্রিকেট ম্যাচ জিতলে বা নববর্ষের মতো উৎসব উদ্যাপনের সময়েও এই ঘরোয়া যন্ত্রগুলি ভবিষ্যতে বাজি হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে।
"ঘরোয়াভাবে তৈরি এই 'কার্বাইড বোমা' বা 'কার্বাইড গান' স্থায়ীভাবে অন্ধ করে দিতে পারে।এমনকি শরীরের অন্য অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পঙ্গুও হয়ে যেতে পারেন কেউ," বলছিলেন ড. পার্থ বিশ্বাস।
এসব যন্ত্র যারা বানাচ্ছে, তাদের ধরপাকড়ের জন্য দেশব্যাপী অভিযান যেমন চালানো উচিত, তেমনই ক্যালসিয়াম কার্বাইডের উৎপাদন ও বিক্রির ওপরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ফিরে যাওয়া যাক ভোপালের ওই হামিদিয়া হাসপাতালে। মাকে আঁকড়ে ধরে বসেছিল সাত বছর বয়সের আলজাইন। দৃষ্টিশক্তি হারানোর পরে তার চোখে অপারেশন হয়েছে। ইউটিউবের ভিডিও দেখে কাকার কাছে বায়না ধরে এই 'কার্বাইড গান' কিনিয়েছিল সে।
ও সপ্তাহখানেক আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ওর মা আফরিন ছেলের পাশ থেকে নড়েননি।
তিনি বলছিলেন, "ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছি, একটাই কামনা – ও যেন আবার দেখতে পায়।"

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। গাজা ও কম্বোডিয়ায় শান্তি চুক্তির জন্য তিনি এই পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
১ দিন আগে
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠিতব্য আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে (আইএসএফ) সেনা পাঠাতে পারে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সরকার ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। মার্কিন-মধ্যস্থতায় প্রস
১ দিন আগে
ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৭৫ মাইল বা ২৮২ কিলোমিটার গতিতে হারিকেন মেলিসা এখন ক্যাটাগরি পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। যেটি ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ স্তর। এটি ক্রমান্বয়ে আরও শক্তি সঞ্চয় করছে এবং মঙ্গলবার ভোরের দিকে ক্যারিবীয় দ্বীপ জ্যামাইকায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
১ দিন আগে
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যে তামিলনাড়ু উপকূলে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং অন্ধ্র, ওড়িশা ও তামিলনাড়ু—এই তিন রাজ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি স্কুল ও বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
১ দিন আগে