ইসরায়েলের হামলায় গাজায় আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
ইসরায়েলি হামলায় নিহত স্বজনদের জন্য শোক প্রকাশ করছেন ফিলিস্তিনিরা। ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় একদিনে আরও ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৭ জনই গাজা শহরের বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে ১১ জন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

রোববার (৩১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জজিরা।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজা শহর দখল করে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতে চায়। এর ফলে বহু ফিলিস্তিনিকে বারবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রধান ইসরায়েলের এই পরিকল্পনাকে "অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য" বলেছেন। তবে আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েল হামলা থামায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের সমর্থন করছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযানের মুখে গাজা নগরী ছেড়ে শত শত ফিলিস্তিনি পালাচ্ছেন। হাতে গোনা সামান্য মালপত্র ট্রাক, ভ্যান ও গাধার গাড়িতে তুলে তারা এলাকা ছাড়ছেন।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকে দেইর আল-বালাহর কাছে বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাঁবু ফেলতে শুরু করেছে। এদের অধিকাংশকেই একাধিকবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ মারুফ বলেন, “আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। কী বলব? কুকুরের মতো? না, কুকুরের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছি আমরা”। তিনি জানান, ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে তারা আগেই উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

আরেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ আবু ওয়ারদা আল জাজিরাকে বলেন, তিনি উত্তর গাজার জাবালিয়া ছেড়ে পশ্চিম গাজার দিকে যাচ্ছেন। তবে গন্তব্য ঠিক জানা নেই। তার ভাষায়, “অবস্থা এত ভয়াবহ ছিল যে সেখান থেকে বেরোতে বাধ্য হয়েছি। এখানে তাঁবু খাটানোর জায়গা পেলেই ভাগ্য ভালো হবে। কোথাও নিরাপদ নয়, ইসরায়েলিরা সর্বত্র আক্রমণ চালাচ্ছে।”

আগস্টের শুরু থেকে ইসরায়েলি সেনারা টানা হামলা চালাচ্ছে গাজা নগরীতে। শহর দখল ও প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যেই এই অভিযান— এমন আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।

গত শুক্রবার ইসরায়েল জানায়, তারা নগরী দখলের ‘প্রাথমিক ধাপ’ শুরু করেছে এবং এটিকে “যুদ্ধক্ষেত্র” ঘোষণা করেছে।

শনিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই দিন একদিনেই গোটা গাজায় ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু গাজা নগরীতেই নিহত ৪৭ জন। এর মধ্যে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।

অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আবাসিক ভবনে হামলায় সাতজন নিহত হন। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালাতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, “গাজা নগরীজুড়ে হামলা আরও বাড়ছে। ঘরবাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনধারার ভিত্তি ভেঙে পড়ছে। এ সব ঘটছে যখন মানুষ দুর্ভিক্ষ, অনাহার আর পানিশূন্যতার মধ্যে রয়েছে। পুরো পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ে গড়াচ্ছে।”

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রধান মিরজানা স্পোলজারিচ এগার শনিবার বলেন, গাজা নগরীর জনগণকে গণহারে উচ্ছেদ করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা “অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য”। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কিছু নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে করা সম্ভব নয়।

তবে আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার অভিযানে কোনো বিরতি দিচ্ছে না।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দায়মুক্তি দিয়ে আসছে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা কার্যত জাতিগত নিধনের শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ফিলিস্তিনি নেতাদের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অভিযোগ করেছেন, ফিলিস্তিনি নেতারা শান্তি প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন এবং "একটি কাল্পনিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একতরফা স্বীকৃতি" চাইছেন।

২ দিন আগে

ট্রাম্পের জারি করা বেশির ভাগ শুল্ক নীতি অবৈধ: মার্কিন আদালত

ট্রাম্প সতর্ক করে লিখেছেন, "এই শুল্ক যদি কখনো তুলে নেওয়া হয়, তা হবে দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়। এতে আমেরিকা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু আমাদের শক্তিশালী থাকতে হবে"।

২ দিন আগে

গাজায় হামলায় ৪ ইসরায়েলি সেনা নিখোঁজ

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম এই হামলাকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর সবচেয়ে মারাত্মক হিসেবে বর্ণনা করেছে। হামাসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা দাবি করেছেন, গাজা দখলের জন্য ইসরায়েলি সেনাদের রক্তই মূল্য হিসেবে দিতে হবে।

২ দিন আগে

আদালতের রায়ও থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে অপসারণের পক্ষে

আদালতের এ রায়ের ফলে পেতংতার্নের আর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার কোনো ‍সুযোগ থাকছে না। খুব শিগগিরিই তাকে স্থায়ীভাবে এ পদ থেকে অপসারণ করা হবে। এ রায়কে পেতংতার্নের দল ও সিনাওয়াত্রা রাজবংশের জন্য একটি বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।

৩ দিন আগে