গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কী আছে?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকায় বৃহস্পতিবার মিষ্টি বিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধবিরতির আনন্দ উদ্‌যাপন। ছবি : এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এই চুক্তির ফলে উপত্যকাটিতে সংঘাত বন্ধ হবে, বন্দিবিনিময় শুরু হবে এবং ইসরায়েল নির্দিষ্ট এলাকা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতার খবরে গাজার বাসিন্দারা যেমন আনন্দ-উল্লাস করছেন, তেমনি হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের পরিবারেও মুক্তির আশায় উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

আলজাজিরা জানিয়েছে, মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে চলমান আলোচনার তৃতীয় দিনে গত বুধবার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস ও ইসরায়েল। এই চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর ও তুরস্ক।

দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার খবর বুধবার রাতে প্রথম সামনে আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ তিনি লেখেন, ‘আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস—দুই পক্ষই সই করেছে। এর অর্থ হলো খুব শিগগির সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। আর ইসরায়েল সমঝোতার ভিত্তিতে একটি এলাকা বরাবর সেনা প্রত্যাহার করবে। এটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির পথে প্রথম ধাপ।’

ট্রাম্পের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দেওয়ার কথা। অনুমোদন সাপেক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশা বেডরোসিয়ান।

যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার খবর নিশ্চিত করে হামাস বলেছে, তারা এমন এক চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাবে। গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, ত্রাণ প্রবেশ ও বন্দিবিনিময়ের পথও সুগম হবে। পরে হামাসের আলোচক দলের প্রধান খলিল আল-হায়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চয়তা দিয়েছে যে ‘যুদ্ধ’পুরোপুরি শেষ হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় টানা নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই সময়ের মধ্যে দুই ধাপে মাত্র দুই মাসের কিছুটা বেশি সময় সেখানে যুদ্ধবিরতি ছিল। বাকি সময়ে হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এতে আহত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি।

কী আছে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে

মিসরের শারম আল শেখে যে ‘শান্তি পরিকল্পনা’নিয়ে আলোচনা চলছে, তা গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর, উপত্যকাটি থেকে বাকি জিম্মিদের ইসরায়েলে ফেরানো, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং সংঘাত-পরবর্তী গাজা পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

পরিকল্পনা ঘোষণার দিনই এতে সায় দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল। পরে যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারসহ ২০ দফা পরিকল্পনার বেশ কয়েকটিতে রাজি হয় হামাস। তবে বিদেশিদের তদারকিতে সংঘাত-পরবর্তী গাজায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনসহ কিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল তাদের। এসব বিষয় নিয়ে গত সোমবার থেকে মিসরে আলোচনা শুরু হয়। তবে বুধবার যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

ইসরায়েলের এক মুখপাত্রের বরাতে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান পিছিয়ে আনা হবে। এতে উপত্যকাটির প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইসরায়েলি বাহিনী। বর্তমানে গাজার ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। সেনাদের অবস্থান নতুন করে সাজিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীও।

গাজায় বর্তমানে ২০ জন জীবিত জিম্মি রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। উপত্যকাটিতে থাকা আরও ২৬ জিম্মি এরই মধ্যে মারা গেছেন। আর দুজনের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করেছিল হামাস। ধাপে ধাপে তাঁদের বেশির ভাগকে মুক্তি দেওয়া হয়। ওই হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছিলেন। বাকি জিম্মিদের ফেরত পাওয়ার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলে বন্দি ১ হাজার ৯৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে নেতানিয়াহু সরকার।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

নোবেল না পেলে যে কোনো কিছু করতে পারেন ট্রাম্প, আতঙ্কে নরওয়ে

৮ ঘণ্টা আগে

স্টারমারের ভারত সফরে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষায় অংশীদ্বারিত্ব নিয়ে আলোচনা

৮ ঘণ্টা আগে

ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি

১০ ঘণ্টা আগে

শহিদুল আলমসহ আটকরা এখন ইসরায়েল কারাগারে

বুধবার (৯ অক্টোবর) ইসরায়েলি সেনারা নৌবহরে আক্রমণ চালিয়ে সব অধিকারকর্মী ও নাবিকদের আটক করে। এরপর তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে কেৎজিয়েত কারাগারে পাঠানো হয়, যা নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত এবং ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আটককেন্দ্র। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখানে আটক ফিলিস্তিনিরা নৃশংসভাবে নির্যাতনের শিকার হন।

১ দিন আগে