উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ০৯: ১২
বুধবার রাত ১০টার পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় ভিড় থেকে ছোঁড়া একটি বোতল মাহফুজ আলমের মাথায় আঘাত করে। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের বোঝাতে গিয়ে বোতল হামলার মুখে পড়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বুধবার রাত ১০টার পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় ভিড় থেকে ছোঁড়া একটি বোতল মাহফুজ আলমের মাথায় আঘাত করে।

আঘাত পেয়ে উপদেষ্টা বললেন, ‘যারা করেছে ভুল করেছে’। ‘যমুনামুখী রাজনীতি, চল চল যমুনায় চল এই মুভমেন্ট আমরা আর হতে দেব না,’ বলেন তথ্য উপদেষ্টা।

মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, “আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে নায্যতা দিলেন।” হামলার একটু আগে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলে তারা অভিযোগ করছিলেন উপদেষ্টার কাছে।

রাত একটার দিকেও আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান করছিলেন। তিন দফা দাবিতে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাত দশটার পর কথা বলতে কাকরাইলে যান মাহফুজ আলম। হ্যান্ডমাইকে মাহফুজ কথা শেষ করতে না করতেই ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান ওঠেন।

উপদেষ্টা বলতে থাকেন, কথা শেষ করতে দিতে হবে। এরই মধ্যে কেউ একজন বোতল ছুঁড়ে মারলে তা উপদেষ্টার মাথায় লাগে। এ সময় মাহফুজ হাত নেড়ে বলেন, তিনি কথা বলবেন না। আঘাতের পর নিজের মাথায় পানি ঢালেন মাহফুজ। এরপর তিনি সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি শুধু দুঃখ প্রকাশ করতে চাই এই কারণে এখানে অনেকেই আমাদের সাথে জুলাইয়ে আন্দোলন করেছেন। যারা জুলাইয়ে আমাদের সাথে আন্দোলন করেছেন তারা আমার ওপর হামলা করেননি, হামলা করেছেন তারাই যারা স্যাবোটাজ করতে চেয়েছেন। আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই আজকে থেকে যমুনামুখী রাজনীতি, চল চল যমুনায় চল এই মুভমেন্ট আমরা আর হতে দেব না।’

ঘটনার বর্ণনায় তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার সাথে যেটা হয়েছে, আমি এখানে আসার পরেএকটি অংশ যারা স্যাবোটাজ করার জন্য আন্দোলনে ঢোকে। তাদের নাম আজকে উল্লেখ করব না। মিডিয়ার দায়িত্ব, প্রশাসনের দায়িত্ব তাদের এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা। আমি বলব না। দেখবেন যে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে খুঁজে পাওয়া যাবে।একজন ব্যক্তির ওপর গত আট মাস ধরে তাদের যে হিংসা, তাদের যে হিংস্রতা অনলাইনে দেখা যায় তারা আজকে সেটা এখানে করেছেন।’

‘এই বিষয়টা আমাকে দুঃখ দিয়েছে। তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব আমাদের ধৈর্য রাখতে হবে। আমি শুনেছি কয়েকজন শিক্ষকও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। শিক্ষার্থীদের বলব যেকোনো ন্যায্য আন্দোলন সরকার শুনতে, বসতে কথা বলতে রাজি আছে।’

তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বল প্রয়োগ না করার পরামর্শ দেন। দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার বিষয়গুলো দেখবে। এখানে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজগুলো করতে হবে।

আবাসন সংকট নিরসনসহ তিন দফা দাবি আদায়ে বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও দপ্তর যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করে। পথে পথে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

দুপুরের দিকে পাঁচ দফা ব্যারিকেড ও পুলিশের বাধা ভেঙে তাদের মিছিল কাকরাইল গেলেপুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশের লাঠিচার্জে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে মাহফুজ আলমের ওপর হামলার ঘটনাকে ’বর্বরতা’ হিসেবে তুলে ধরে ফেইসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সকল গণদাবির মুখে ছাত্র উপদেষ্টাদের ‘ঠেলে দেওয়া’ হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লেখেন, “অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণও সন্দেহজনক। সকল জনদাবির সম্মুখেছাত্র উপদেষ্টাদের ঠেলে দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট।

”জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও সেটির বিষয়ে কেনএখনও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সেটিও এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা লেখেন, “একজন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মাহফুজ আলম সমস্যা সমাধানে গিয়েছিলেন, তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এ কথা স্পষ্টভাবে মনে রাখা প্রয়োজন– আপনাদের প্রতিনিধিত্বের দাবি বলেই তিনি আপনাদের কাছে এসেছেন। কিন্তু এ ধরনের উগ্র ও হঠকারী আচরণ ভবিষ্যতে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’

রাত ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা নিজেরফেইসবুক পেইজে উপদেষ্টার ওপর বোতল ছুড়ে মারার নিন্দা জানিয়ে বলেন, যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

‘কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক। আমি অনুরোধ করতে চাই, আপনারা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব হিসেবে ছাত্রদের দাবিগুলো মেনে নিন। আপনারা সরকারে থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই জগন্নাথের ছাত্রদের গায়ে একটা টোকাও যাতে না লাগে।’

মাহফুজ আলমের সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটিকে ‘হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করে এর নিন্দা জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সঙ্গে নিন্দা জানাই, যাঁরা উল্লাস করছেন তাঁদেরও। হামলাকারী কোন ইনটেনশনে (উদ্দেশ্যে) হামলা করেছে, তাএখনো অজানা। সেটা খুঁজে বের করা হোক। এই হামলাকে জাস্টিফিকেশন (ন্যায্যতা) দেওয়ার সুযোগ নেই।’

ad
Ad

ছাত্র রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ঢাবি ভিসির পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে তাৎক্ষণিক মিছিল বের করেন তারা।

২ দিন আগে

শপথ ভঙ্গ করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ : শিবির সেক্রেটারি

তিনি জানান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সংবিধানবিরোধী যে কাজটি করেছেন তাতে তিনি শপথের ভায়োলেশন করেছেন। কোনো রাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাউকে হুমকি দেওয়া বা কোনো বিষয়ে তার দায়িত্ব থাকাকালীন সময় এটা তার জন্য মানায় না।

৩ দিন আগে

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জয় গ্রেপ্তার

নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক সঞ্জয় পাশী জয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (১১ মে) সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভানুগাছ রোডের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট সংলগ্ন একটি দোকান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৪ দিন আগে

ঢাবিতে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা

এ বি যুবায়ের বলেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অপচেষ্টা রুখে দিতে ছাত্র-জনতা আবারও প্রস্তুত। আমরা রাজু ভাস্কর্যে আমরা একত্র হয়ে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ তৈরি করেছি। আসুন, আবার এক হই, জুলাইয়ে যেমন হয়েছিলাম। গণহত্যাকারীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না।

২১ মার্চ ২০২৫