মো. আখতারুজ্জামান ও গাজী মিজানুর রহমান
১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রামসার কনভেনশন থেকে জলাভূমির গুরুত্ব ও সুরক্ষা বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। জলাভূমি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরের ওই ২ ফেব্রুয়ারি দিনটিই বিশ্ব জলাভূমি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘Wetland and Human Well-bing’। এ দিবসে আমাদের চ্যালেঞ্জ সেডিমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জলাভূমি দুষণমুক্ত রাখা ও এর সুরক্ষা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯০০ সাল থেকে বিশ্ব ৬৪ শতাংশ থেকে ৭১ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের দেশে এখনো জলাভূমির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ। তবে বাংলাদেশও জলাভূমি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ জলাভূমি ছিল, তার ৬৯ শতাংশেরই বিলুপ্তি ঘটেছে।
আমাদের ভালো থাকা জলাভূমির অস্তিত্বের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কারণ জলাভূমির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন অণুজীব, গাছপালা, পাখি, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ, মাছ, অতিথি পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব। জলাভূমি আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে। আবার গবাদি পশু, ফসল ও মাছ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের জীবনধারণ ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের প্রধান জলাভূমির মধ্যে রয়েছে হাওর। সাতটি জেলায় (সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া) এই হাওরাঞ্চল বিস্তৃত। দেশের মোট বোরো ধানের ১৮ থেকে ২০ শতাংশ, মাছের ২০ শতাংশ ও গবাদি পশুর ২২ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই হাওর অঞ্চলে।
বর্তমানে হাওরে পর্যটনেরও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। প্রচুর পর্যটক এখন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য হাওর ভ্রমণে গিয়ে থাকেন। কেবল এক টাঙ্গুয়ার হাওরেই চলাচল করছে প্রায় দুই শ হাউজ বোট। কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় প্রতিবছর ভিড় করে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক।
এ বছর ২ ফেব্রুয়ারি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নে কালনী নদীর পূর্ব পাড়ে উদ্যাপিত হচ্ছে দিনব্যাপী হাওর উৎসব। বিশ্ব জলাভূমির দিবসের থিম সামনে রেখে আয়োজন করা হয়েছে গম্ভীরা গান, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য শাহ আব্দুল করিম ও হাসন রাজার গান। রয়েছে সেমিনার, আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও মেলার আয়োজন। উৎসবে অংশ নেবেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সরকারি ও বেসরকারি অংশীজন।
আমাদের দেশ একটি ব্যতিক্রমধর্মী হেটারোজেনাস কাঠামো। এতে আছে সমতল, আছে উঁচুনিচু পাহাড়, আছে সমুদ্র। সমুদ্রের সঙ্গে আছে ১২১ কিলোমিটার সৈকত। আছে মিঠা পানির জলাভূমি, সবুজ-শ্যামল বনভূমি। গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি আর মাছ নিয়ে সম্পদের খনি এই দেশ। বন, পাহাড় আর হ্রদের সমন্বয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের আধার নিয়ে আবার গঠিত তিন পার্বত্য জেলা।
জলাভূমি এলাকার মানুষের জীবনমান ও পরিবেশ আর ইকোসিস্টেমকে আরও উন্নত করার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর’। জলাভূমির গুরুত্ব বিবেচনা করে এই অধিদপ্তর ‘হাওর ও জলাভূমির সুরক্ষা উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইনে’র খসড়া প্রণয়ন করেছে।
১৯৪৭ সালের রেফারেন্ডামে সিলেট এলাকা পাকিস্তানে থাকবে নাকি ভারতের অংশ হবে তার ক্যাম্পেইনের জন্য ৫০০ ছাত্র সিলেট সফর করেছিলেন। হাওর অঞ্চলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কারণে তারা পৃথক একটি দপ্তরের কথা চিন্তা করেন। এরই সূত্র ধরে ১৯৭৪ সালে ‘হাওর উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে ১৯৭৭ সালে স্বপ্নের হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয়। কিন্তু নানা কারণে দপ্তরটি ঢিমেতালে চলতে থাকে।
নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ২০১৬ সালে জলাভূমিকে সংযুক্ত করে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর গঠন করা হয়। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলাসহ সারা দেশের জলাভূমি, নদ-নদী, খাল-বিল নিয়ে এই অধিদপ্তরের পথচলা। সমুদ্রভাগের যে এলাকা ৬ মিটার গভীর, সেটিও এর আওতাভুক্ত। আছে কাজ করার অপার সম্ভাবনা।
মোটা দাগে মরুকরণ প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করতে জলাভূমির নাব্যতা বৃদ্ধি, প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাছের উৎপাদন বাড়ানো, কার্বন নিঃসরণ কমাতে আর সবুজায়ন করতে বৃক্ষ রোপন, স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণে কমিউনিটি বেজড পর্যটনের বিকাশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ভাগীদার হতে চায় আমাদের হাওর অঞ্চলের অবহেলিত মানুষ।
বাংলাদেশের জলাভূমির জন্য এখন মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেডিমেন্ট। একে প্রতিহত করার সক্ষমতা আমাদের নেই, তবে ম্যানেজ করার সুযোগ আছে। উজানের ১৩ দেশের সমআয়তনের পাহাড় থেকে পানি নেমে আসে, সঙ্গে নিয়ে আসে সেডিমেন্ট। বছরে এক বিলিয়ন টন সেডিমেন্ট আসায় হাওর, জলাভূমি ও নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই জলাধারগুলোর প্রধান কাজ এলাকার মরুকরণ প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করা। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটি কেটে হাওরের নাব্য সারা বছরের জন্য বাড়ানো যায়। মাটি তুলে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়। আবার বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। জলাভূমির নাব্য বাড়াতে পারলে সারা বছর মাছ চাষ করে ছয়-সাত গুণ বেশি আয় করা সম্ভব হবে। ফলে জিডিপির আকার বাড়বে, একই সঙ্গে তৈরি হবে অর্থপ্রবাহ।
আমাদের দেশে ৩৭৩টি হাওর, ১০০০ নদী, লক্ষাধিক খালবিলে ১০০ কোটি মাছ ছাড়া যায়। আবার প্রাকৃতিক মাছগুলোকে বাইক্কা বিলের মতো সংরক্ষণ করা যায়। বাইক্কা বিলে ৩০ থেকে ৪০ কেজি আকৃতির মাছ এখন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে যে পরিমাণ মাছ চাষ করা সম্ভব তাতে আমাদের মাছের উৎপাদন কয়েক গুণ বেশি হবে। পুষ্টি চাহিদা মিটবে এবং মিঠা পানির মাছ রপ্তানিও করা যাবে। উন্মুক্ত জলাভূমিতে মাছ ছাড়ার প্রবণতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
হাওর ও জলাশয়ে ১০০ কোটি করচ গাছ লাগনো যেতে পারে। দেশীয় প্রজাতি হিজল তমাল গাছ ও লাগনো যেতে পারে। তাতে সব হাওরই হয়ে উঠতে পারে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা রাতারগুল পর্যটন এলাকার মতো। গাছের গোড়ায় মাছ আশ্রয় নেবে, গাছের ওপরে আশ্রয় নেবে পাখি। গাছগুলোর শেকড় বাধ কিংবা মাটি ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। কার্বন নিঃসরণ নাটকীয়ভাবে কমে আসবে।
আমাদের ১৭ কোটি মানুষ। সবাই কোথাও না কোথাও বেড়াতে যেতে চায়। এটা এখন আর সৌখিনতা নয়। সবাই তো কক্সবাজারে যেতে পারে না, তাই হাওর ও জলাভূমিতে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা যায়। মানুষ যেখানে দুই ঘণ্টার বেশি অবস্থান করে সেখানে বাথরুম থাকতে হবে। যেখানে তিন ঘণ্টার বেশি থাকার প্রয়োজন হয়, সেখানে খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ থাকতে হয়। কমিউনিটি-বেজড পর্যটনের মাধ্যমে এগুলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রেমাক্রি বা সাজেক মডেলে বাড়িতে ভাড়া সিস্টেমে পর্যটক রাখা যেতে পারে। একই সঙ্গে পর্যটকদের খাবার সরবরাহও করা যায়। এতে স্থানীয় লোকজন অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে, আবার পর্যটনে তাদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ দুটোই বাড়বে।
জন্ম থেকে হাওরের মানুষ হাওরের পানি খায়, হাওরে গোসল করে, আবার হাওরের পানিতে পায়খানা করে। হাওরের মানুষের জীবনমান বাড়ানোর জন্য হাওরের গ্রামগুলোকে সুরক্ষা দেয়াল দিতে হবে সুইডেন মডেলে। গাছ লাগনো থাকবে বাগানের মতো, সোলার সিস্টেম থাকবে পুরো এলাকায়। লোকজন যেন আইটি সাপোর্ট পায়, ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারে— এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। স্যানিটেশন থাকবে পুরো পরিবারের মতো। খাবার পানি সহজলভ্য করতে হবে। বর্যার দিনে চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরি করতে হবে। সাইলো গোডাউন তৈরি করাও অতি জরুরি। মাছ রিজার্ভ করার জন্যও স্টোরেজ নির্মাণ করা যেতে পারে।
হাওর অঞ্চলের ৩৭৩ হাওরের ৩৭টি উপজেলা সদরকে সংযুক্ত করে ১০০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করলে মানুষজনের মোবিলিটি বাড়বে। অন্যদিকে পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। অল ওয়েদার রোড যেটি বানানো হয়েছে, তাতে পানিপ্রবাহ কিংবা সেডিমেন্ট ও জলজ প্রাণীর চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। ধরে নেওয়া যায়, আগামীতে এখানকার চরিত্র বদলে যাবে। এ রকম কিছু চরিত্র বদলেছে চলন বিল এলাকায়। ব্রিটিশ আমলে যে রেললাইন তৈরি হয়, তাতে চলন বিলের গতিপ্রকৃতি বদলে গেছে। এতে পর্যাপ্ত ব্রিজ রাখা হয়নি। ফলে পানিপ্রবাহ কমেছে, সেডিমেন্ট প্রবাহ কমেছে, জলজ প্রাণী চলাচল কমেছে। ছোট আকারের হলেও সাবমার্জিবল রোড একই সমস্যা তৈরি করছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিবেশ বিরাজ করছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাতাসে কার্বনের মাত্রা বেশি, ধুলাবালি বেশি, শব্দদূষণ বেশি। এসবের বিপরীতে আবার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মারাত্মক দুর্বল। এর চেয়ে বেশি খারাপ মানুষের জীবনযাত্রার মান।
ভারত, চীন, নেপাল থেকে সেডিমেন্ট গড়িয়ে এসে আমাদের হাওর ও নদনদী ভরাট করে চলেছে। এ জন্য নিয়মিত মাটি ড্রেজিং করে হাওর ও নদনদী সারা বছর নাব্য রাখা প্রয়োজন। মাটিগুলো দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। জলাভূমি এলাকায় কয়েক কোটি গাছ লাগালে কিছুটা হলেও পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে।
প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে সমাজের গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ হলে সেখানকার বাজেট ও উন্নয়ন উভয়েরই উন্নয়ন ঘটবে। পর্যটনকে সহনশীল করতে পারলে মানুষের মনোজাগতিক উন্নয়ন ও অর্থ আয় বাড়বে। মাছ ও পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করলে পরিবেশকে আরও উন্নত করা সম্ভব।
হাওর এলাকায় প্রতি জেলা-উপজেলার সঙ্গে, গ্রাম-বন্দরের সঙ্গে নৌ চ্যানেল বানানো যেতে পারে। সাবমার্জিবল রোড বানানো ক্ষতিকর বলে মালদ্বীপ বা ইউরোপের মতো নৌ চ্যানেল কম খরচে ব্যবহারোপযোগী হতে পারে। হাওর ছাড়াও কাপ্তাই লেকে রাঙ্গামাটি থেকে ১০ উপজেলায় স্পিড বোট বা নৌকার রুট করা যেতে পারে।
নারীদের জন্য সেলাই, হাঁস পালন ও শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পুরুষদের জন্য ইলেকট্রিকের কাজ, ড্রাইভিং, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। নার্সিং, ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনাসহ নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশের জন্যও প্রস্তুত করা যেতে পারে জনবল। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক অন্যান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।
দিনাজপুরের আশুরার বিল, নাটোরের চলন বিল, যশোরের ভবদহ বিল, টুঙ্গীপাড়ার বর্ণি বাওড়, মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার কাপ্তাই লেক ও বগা লেক এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে সীতাকুন্ড ও মিরেরসরাই এলাকাতেও একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া যায়।
একইভাবে কুয়াকাটা ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকিত ঘিরে পর্যটন সহায়ক প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। সুন্দরবন এলাকা এরই মধ্যে বিশ্ববাসীর মন কেড়েছে। এখানে পরিদর্শন সহায়ক ও ইকোসিস্টেম উন্নত করার জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। এভাবেই দেশের সব জলাভূমিকেই নিজ নিজ ভৌগলিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুসমন্বিত উন্নত এলাকায় পরিণত করা যায়। এর মাধ্যমে এলাকাবাসীর জীবনমানও বদলে দেওয়া সম্ভব।
লেখক পরিচিতি:
মো. আখতারুজ্জামান, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর;
ড. গাজী মিজানুর রহমান, পরিচালক (পরিকল্পনা ও আইসিটি), বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর
১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রামসার কনভেনশন থেকে জলাভূমির গুরুত্ব ও সুরক্ষা বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। জলাভূমি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরের ওই ২ ফেব্রুয়ারি দিনটিই বিশ্ব জলাভূমি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘Wetland and Human Well-bing’। এ দিবসে আমাদের চ্যালেঞ্জ সেডিমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জলাভূমি দুষণমুক্ত রাখা ও এর সুরক্ষা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯০০ সাল থেকে বিশ্ব ৬৪ শতাংশ থেকে ৭১ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের দেশে এখনো জলাভূমির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ। তবে বাংলাদেশও জলাভূমি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ জলাভূমি ছিল, তার ৬৯ শতাংশেরই বিলুপ্তি ঘটেছে।
আমাদের ভালো থাকা জলাভূমির অস্তিত্বের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কারণ জলাভূমির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন অণুজীব, গাছপালা, পাখি, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ, মাছ, অতিথি পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব। জলাভূমি আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে। আবার গবাদি পশু, ফসল ও মাছ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের জীবনধারণ ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের প্রধান জলাভূমির মধ্যে রয়েছে হাওর। সাতটি জেলায় (সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া) এই হাওরাঞ্চল বিস্তৃত। দেশের মোট বোরো ধানের ১৮ থেকে ২০ শতাংশ, মাছের ২০ শতাংশ ও গবাদি পশুর ২২ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই হাওর অঞ্চলে।
বর্তমানে হাওরে পর্যটনেরও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। প্রচুর পর্যটক এখন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য হাওর ভ্রমণে গিয়ে থাকেন। কেবল এক টাঙ্গুয়ার হাওরেই চলাচল করছে প্রায় দুই শ হাউজ বোট। কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় প্রতিবছর ভিড় করে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক।
এ বছর ২ ফেব্রুয়ারি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নে কালনী নদীর পূর্ব পাড়ে উদ্যাপিত হচ্ছে দিনব্যাপী হাওর উৎসব। বিশ্ব জলাভূমির দিবসের থিম সামনে রেখে আয়োজন করা হয়েছে গম্ভীরা গান, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য শাহ আব্দুল করিম ও হাসন রাজার গান। রয়েছে সেমিনার, আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও মেলার আয়োজন। উৎসবে অংশ নেবেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সরকারি ও বেসরকারি অংশীজন।
আমাদের দেশ একটি ব্যতিক্রমধর্মী হেটারোজেনাস কাঠামো। এতে আছে সমতল, আছে উঁচুনিচু পাহাড়, আছে সমুদ্র। সমুদ্রের সঙ্গে আছে ১২১ কিলোমিটার সৈকত। আছে মিঠা পানির জলাভূমি, সবুজ-শ্যামল বনভূমি। গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি আর মাছ নিয়ে সম্পদের খনি এই দেশ। বন, পাহাড় আর হ্রদের সমন্বয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের আধার নিয়ে আবার গঠিত তিন পার্বত্য জেলা।
জলাভূমি এলাকার মানুষের জীবনমান ও পরিবেশ আর ইকোসিস্টেমকে আরও উন্নত করার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর’। জলাভূমির গুরুত্ব বিবেচনা করে এই অধিদপ্তর ‘হাওর ও জলাভূমির সুরক্ষা উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইনে’র খসড়া প্রণয়ন করেছে।
১৯৪৭ সালের রেফারেন্ডামে সিলেট এলাকা পাকিস্তানে থাকবে নাকি ভারতের অংশ হবে তার ক্যাম্পেইনের জন্য ৫০০ ছাত্র সিলেট সফর করেছিলেন। হাওর অঞ্চলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কারণে তারা পৃথক একটি দপ্তরের কথা চিন্তা করেন। এরই সূত্র ধরে ১৯৭৪ সালে ‘হাওর উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে ১৯৭৭ সালে স্বপ্নের হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয়। কিন্তু নানা কারণে দপ্তরটি ঢিমেতালে চলতে থাকে।
নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ২০১৬ সালে জলাভূমিকে সংযুক্ত করে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর গঠন করা হয়। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলাসহ সারা দেশের জলাভূমি, নদ-নদী, খাল-বিল নিয়ে এই অধিদপ্তরের পথচলা। সমুদ্রভাগের যে এলাকা ৬ মিটার গভীর, সেটিও এর আওতাভুক্ত। আছে কাজ করার অপার সম্ভাবনা।
মোটা দাগে মরুকরণ প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করতে জলাভূমির নাব্যতা বৃদ্ধি, প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাছের উৎপাদন বাড়ানো, কার্বন নিঃসরণ কমাতে আর সবুজায়ন করতে বৃক্ষ রোপন, স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণে কমিউনিটি বেজড পর্যটনের বিকাশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ভাগীদার হতে চায় আমাদের হাওর অঞ্চলের অবহেলিত মানুষ।
বাংলাদেশের জলাভূমির জন্য এখন মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেডিমেন্ট। একে প্রতিহত করার সক্ষমতা আমাদের নেই, তবে ম্যানেজ করার সুযোগ আছে। উজানের ১৩ দেশের সমআয়তনের পাহাড় থেকে পানি নেমে আসে, সঙ্গে নিয়ে আসে সেডিমেন্ট। বছরে এক বিলিয়ন টন সেডিমেন্ট আসায় হাওর, জলাভূমি ও নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই জলাধারগুলোর প্রধান কাজ এলাকার মরুকরণ প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করা। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটি কেটে হাওরের নাব্য সারা বছরের জন্য বাড়ানো যায়। মাটি তুলে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়। আবার বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। জলাভূমির নাব্য বাড়াতে পারলে সারা বছর মাছ চাষ করে ছয়-সাত গুণ বেশি আয় করা সম্ভব হবে। ফলে জিডিপির আকার বাড়বে, একই সঙ্গে তৈরি হবে অর্থপ্রবাহ।
আমাদের দেশে ৩৭৩টি হাওর, ১০০০ নদী, লক্ষাধিক খালবিলে ১০০ কোটি মাছ ছাড়া যায়। আবার প্রাকৃতিক মাছগুলোকে বাইক্কা বিলের মতো সংরক্ষণ করা যায়। বাইক্কা বিলে ৩০ থেকে ৪০ কেজি আকৃতির মাছ এখন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে যে পরিমাণ মাছ চাষ করা সম্ভব তাতে আমাদের মাছের উৎপাদন কয়েক গুণ বেশি হবে। পুষ্টি চাহিদা মিটবে এবং মিঠা পানির মাছ রপ্তানিও করা যাবে। উন্মুক্ত জলাভূমিতে মাছ ছাড়ার প্রবণতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
হাওর ও জলাশয়ে ১০০ কোটি করচ গাছ লাগনো যেতে পারে। দেশীয় প্রজাতি হিজল তমাল গাছ ও লাগনো যেতে পারে। তাতে সব হাওরই হয়ে উঠতে পারে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা রাতারগুল পর্যটন এলাকার মতো। গাছের গোড়ায় মাছ আশ্রয় নেবে, গাছের ওপরে আশ্রয় নেবে পাখি। গাছগুলোর শেকড় বাধ কিংবা মাটি ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। কার্বন নিঃসরণ নাটকীয়ভাবে কমে আসবে।
আমাদের ১৭ কোটি মানুষ। সবাই কোথাও না কোথাও বেড়াতে যেতে চায়। এটা এখন আর সৌখিনতা নয়। সবাই তো কক্সবাজারে যেতে পারে না, তাই হাওর ও জলাভূমিতে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা যায়। মানুষ যেখানে দুই ঘণ্টার বেশি অবস্থান করে সেখানে বাথরুম থাকতে হবে। যেখানে তিন ঘণ্টার বেশি থাকার প্রয়োজন হয়, সেখানে খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ থাকতে হয়। কমিউনিটি-বেজড পর্যটনের মাধ্যমে এগুলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রেমাক্রি বা সাজেক মডেলে বাড়িতে ভাড়া সিস্টেমে পর্যটক রাখা যেতে পারে। একই সঙ্গে পর্যটকদের খাবার সরবরাহও করা যায়। এতে স্থানীয় লোকজন অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে, আবার পর্যটনে তাদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ দুটোই বাড়বে।
জন্ম থেকে হাওরের মানুষ হাওরের পানি খায়, হাওরে গোসল করে, আবার হাওরের পানিতে পায়খানা করে। হাওরের মানুষের জীবনমান বাড়ানোর জন্য হাওরের গ্রামগুলোকে সুরক্ষা দেয়াল দিতে হবে সুইডেন মডেলে। গাছ লাগনো থাকবে বাগানের মতো, সোলার সিস্টেম থাকবে পুরো এলাকায়। লোকজন যেন আইটি সাপোর্ট পায়, ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারে— এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। স্যানিটেশন থাকবে পুরো পরিবারের মতো। খাবার পানি সহজলভ্য করতে হবে। বর্যার দিনে চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরি করতে হবে। সাইলো গোডাউন তৈরি করাও অতি জরুরি। মাছ রিজার্ভ করার জন্যও স্টোরেজ নির্মাণ করা যেতে পারে।
হাওর অঞ্চলের ৩৭৩ হাওরের ৩৭টি উপজেলা সদরকে সংযুক্ত করে ১০০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করলে মানুষজনের মোবিলিটি বাড়বে। অন্যদিকে পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। অল ওয়েদার রোড যেটি বানানো হয়েছে, তাতে পানিপ্রবাহ কিংবা সেডিমেন্ট ও জলজ প্রাণীর চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। ধরে নেওয়া যায়, আগামীতে এখানকার চরিত্র বদলে যাবে। এ রকম কিছু চরিত্র বদলেছে চলন বিল এলাকায়। ব্রিটিশ আমলে যে রেললাইন তৈরি হয়, তাতে চলন বিলের গতিপ্রকৃতি বদলে গেছে। এতে পর্যাপ্ত ব্রিজ রাখা হয়নি। ফলে পানিপ্রবাহ কমেছে, সেডিমেন্ট প্রবাহ কমেছে, জলজ প্রাণী চলাচল কমেছে। ছোট আকারের হলেও সাবমার্জিবল রোড একই সমস্যা তৈরি করছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিবেশ বিরাজ করছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাতাসে কার্বনের মাত্রা বেশি, ধুলাবালি বেশি, শব্দদূষণ বেশি। এসবের বিপরীতে আবার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মারাত্মক দুর্বল। এর চেয়ে বেশি খারাপ মানুষের জীবনযাত্রার মান।
ভারত, চীন, নেপাল থেকে সেডিমেন্ট গড়িয়ে এসে আমাদের হাওর ও নদনদী ভরাট করে চলেছে। এ জন্য নিয়মিত মাটি ড্রেজিং করে হাওর ও নদনদী সারা বছর নাব্য রাখা প্রয়োজন। মাটিগুলো দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে। জলাভূমি এলাকায় কয়েক কোটি গাছ লাগালে কিছুটা হলেও পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে।
প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে সমাজের গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ হলে সেখানকার বাজেট ও উন্নয়ন উভয়েরই উন্নয়ন ঘটবে। পর্যটনকে সহনশীল করতে পারলে মানুষের মনোজাগতিক উন্নয়ন ও অর্থ আয় বাড়বে। মাছ ও পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করলে পরিবেশকে আরও উন্নত করা সম্ভব।
হাওর এলাকায় প্রতি জেলা-উপজেলার সঙ্গে, গ্রাম-বন্দরের সঙ্গে নৌ চ্যানেল বানানো যেতে পারে। সাবমার্জিবল রোড বানানো ক্ষতিকর বলে মালদ্বীপ বা ইউরোপের মতো নৌ চ্যানেল কম খরচে ব্যবহারোপযোগী হতে পারে। হাওর ছাড়াও কাপ্তাই লেকে রাঙ্গামাটি থেকে ১০ উপজেলায় স্পিড বোট বা নৌকার রুট করা যেতে পারে।
নারীদের জন্য সেলাই, হাঁস পালন ও শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পুরুষদের জন্য ইলেকট্রিকের কাজ, ড্রাইভিং, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। নার্সিং, ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনাসহ নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশের জন্যও প্রস্তুত করা যেতে পারে জনবল। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক অন্যান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।
দিনাজপুরের আশুরার বিল, নাটোরের চলন বিল, যশোরের ভবদহ বিল, টুঙ্গীপাড়ার বর্ণি বাওড়, মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার কাপ্তাই লেক ও বগা লেক এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে সীতাকুন্ড ও মিরেরসরাই এলাকাতেও একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া যায়।
একইভাবে কুয়াকাটা ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকিত ঘিরে পর্যটন সহায়ক প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। সুন্দরবন এলাকা এরই মধ্যে বিশ্ববাসীর মন কেড়েছে। এখানে পরিদর্শন সহায়ক ও ইকোসিস্টেম উন্নত করার জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। এভাবেই দেশের সব জলাভূমিকেই নিজ নিজ ভৌগলিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুসমন্বিত উন্নত এলাকায় পরিণত করা যায়। এর মাধ্যমে এলাকাবাসীর জীবনমানও বদলে দেওয়া সম্ভব।
লেখক পরিচিতি:
মো. আখতারুজ্জামান, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর;
ড. গাজী মিজানুর রহমান, পরিচালক (পরিকল্পনা ও আইসিটি), বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর
২০০৮ থেকে ২০২৪। বাংলাদেশে শুরু হলো এক রক্তঝরানোর অধ্যায়। হত্যা, খুন, গুম, আয়নাঘর— বিরোধী দলের নেতাদের ওপর অমানুষিক, নির্মম, নিষ্ঠুর অত্যাচার। মানবতা বিসর্জন দিয়ে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে গিয়ে নিজের দেশের
৪ দিন আগেতবে হঠাৎ করেই ঘুরে গেছে হাওয়া। বদলে গেছে সবার সুর। সবার মুখে মুখে এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতেই হবে। তবে সংস্কার নিয়ে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিন দলের অবস্থান ভিন্
৫ দিন আগেএই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।
১৮ দিন আগেএকটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং
১৯ দিন আগে