বিবিসি বাংলা
সরবরাহ নেই অথবা অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে- সার নিয়ে কৃষকদের এমন নানা অভিযোগের মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম দেড়শ শতাংশ বাড়ানোর গণশুনানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসি। ফলে সারের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার এবং কৃষক পর্যায়ে এর দাম আরো বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আমনের ভরা মৌসুমে সার পেতে চরম ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক। বিশেষ করে, ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি এবং ইউরিয়া সারের জন্য ডিলার পয়েন্ট ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ঘুরে শূন্য হাতে ফেরার অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এমনকি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে সারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন স্থানীয় অনেকে।
তাদের দাবি, আমনের ভরা মৌসুমে ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি সারের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে। দোকানে দোকানে ঘুরেও চাহিদা অনুযায়ী সার মিলছে না।
স্থানীয় একজন কৃষক বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ডিলার বলে, সার নাই। আমিতো বাজারের দুকানে সার দেখছি, অনেক বেশি দাম দিয়ে বিক্রি হচ্ছে।"
সার নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের এমন অভিযোগ থাকলেও, কোনো সংকট নেই বলে দাবি কৃষি মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে, সার পাওয়া নিয়ে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে দেওয়া পেট্রোবাংলার প্রস্তাব নিয়ে আগামী ছয়ই অক্টোবর গণশুনানি আহ্বান করেছে বিইআরসি।
তবে ওই শুনানীতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব। বিইআরসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে সংস্থাটি।
তারা বলছে, লোক দেখানো শুনানিতে অংশ নেবে না ক্যাব।
যদিও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনকে গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "বিইআরসি দাম নাও বাড়াতে পারে কিন্তু আলোচনা তো করতে হবে।"
এছাড়া, সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দাম বাড়বে, এটি সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন মি. খান।
সার সংকট নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
কুড়িগ্রামের কৃষক আবেদ আলী সরদার। নিজের জমিতে চাষাবাদ করেই জীবন চলে তার। ধানের পাশাপাশি শীতকালিন সবজিরও আবাদ করেন এই কৃষক।
এবছর ভরা আমনের মৌসুমে সার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তিনদিন ধরে বাজারে ঘুরে শেষমেষ বাড়তি দামেই সার কিনেছেন তিনি।
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, "দুই দোকান তিন দোকান ঘুরছি, বাংলা ডিআইবি পাইনি। এক জায়গায় ১৯শ টাকা বস্তা চাইছে, পরে ৩২ টাকা কেজিতে অল্প পরিমাণে কিনছি।"
ওই এলাকার আরেক কৃষক দবির ভূঁইয়া বলছেন, "টাকা দিয়ে সার কেনবো, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। দামের কারণে এখনো জমিতে সার দিবার পারি নাই," বলেন তিনি।
সম্প্রতি সার নিয়ে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের কাছ থেকেই। কেউ বলছেন সার পাচ্ছেন না, আবার কারো অভিযোগ নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তাপ্রতি অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কৃষক মো. আকুর মণ্ডল বিবিসি বাংলাকে জানান, বস্তাপ্রতি পাঁচশ-ছয়শ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনেছেন তিনি। বেশি টাকা দিয়ে সার কেনার অভিযোগ করেছেন পিরোজপুরের কৃষক রাজন মিয়াও। এমনকি ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেট করে সারের দাম বাড়ানোর অভিযোগ তুলছেন কেউ কেউ।
সব মিলিয়ে দেশে সার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশে সারের মোট চাহিদার বেশিরভাগই মূলত আমদানি নির্ভর। দেশের কারখানাগুলোয় উৎপাদিত কিছু ইউরিয়া সার ব্যতিত প্রায় সবই আমদানি করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর।
দেশে সারের কোনো সংকট নেই বলেই দাবি কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তারা বলছে, প্রতিবছর চাহিদা যখন বেশি থাকে, তখন অতিরিক্ত লাভের আশায় একটা মহল সারের কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রতিটি এলাকায় চাহিদার ভিত্তিতে অনেক আগে থেকেই সারের সরবরাহ নিশ্চিত করা থাকে।
"আমাদের সারের কোনো সংকট নাই। সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক ভাবেই অব্যাহত আছে," দাবি করেন মি. ইমাম।
তার দাবি, কেবল সার নয় কৃষি উপকরণ নিয়ে যেসব অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করছে সবসময়ই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেট্রোবাংলার
গত ১০ই অগাস্ট সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বা পেট্রোবাংলা। পরে একই প্রস্তাব আলাদা করে জমা দেয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
যেখানে দাবি করা হয়, গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ছয় টাকা লোকসান দিচ্ছে কোম্পানিটি। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনে ২৮ টাকা ৭৮ পয়সা খরচের বিপরীতে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ভর্তুকি হিসেবে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার।
জানা গেছে, সার কারখানায় বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৬ টাকা। পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে যা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে প্রায় চার হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে বলেও উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইন অনুযায়ী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এর যৌক্তিকতা নির্ধারণে অংশীজনদের সঙ্গে গণশুনানির আয়োজন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। সার কারখানায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে পেট্রোবালার প্রস্তাব নিয়ে আগামী ছয়ই অক্টোবর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে শুনানিতে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব। এমনকি বিইআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকেও চিঠি দিয়েছে ক্যাব।
গত ৩১শে জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে ক্যাব বলেছে, শুনানি না করেই সরকারি কোম্পানির তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। বর্তমান কমিশন জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজের পদের অপব্যবহার করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আইন অনুযায়ী উন্মুক্ত শুনানির মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে জ্বালনির দাম নির্ধারণ হওয়ার কথা থাকলেও প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
"সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি তারা একেবারে তুলেই দিয়েছে। নির্বাহী আদেশে সব সিদ্ধান্ত এখন চেয়ারম্যানই নেয়," অভিযোগ করেন মি. আলম।
উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা সিস্টেম লস কমাতে ব্যবস্থা না নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপরই বারবার দায় চাপানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলছেন, "তারা শুনানি করলেও দাম বাড়াবে, না করলেও বাড়াবে। বারো-চৌদ্দ বছর ধরে তারা এই কাজই করে আসছে। তাদের এই অপকর্ম এবং অবৈধ ক্ষমতা চর্চার বাস্তবায়নে ক্যাব সহায়তা করতে পারে না," বলেন মি. আলম।
তবে, বিইআরসির গণশুনানিতে ক্যাবের অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলেই মনে করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
"একটা বিষয় আপনি না শুনে, যৌক্তিক কি অযৌক্তিক কিভাবে বলেন। অযৌক্তিক বলতে হলে তো আপনাকে ওখানে যেতে হবে," বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অতীতের মতো কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় সেই দায়িত্ব বিইআরসিকে দেওয়া হয়েছে।
"আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বেশি টাকায় গ্যাস এনে ভর্তুকি দিয়ে আমরা কতদিন কারখানাগুলো চালাতে পারবো," বলেন তিনি।
গ্যাসের দাম বাড়লেই কী সারের দাম বাড়বে?
বিইআরসি'র গণশুনানির মাধ্যমে সার কারখানায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সারের দামও বাড়বে কিনা, এই প্রশ্ন সামনে আসছে। একই সাথে বিদ্যমান খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যেই দ্রব্যমূল্য আরও বৃদ্ধির শঙ্কাও রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সারের দামও স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তে পারে। যার প্রভাব পড়বে খাদ্য মূল্যে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ হাসনিন জাহান বলছেন, কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির প্রভাব উৎপাদিত পণ্যের ওপর পড়বে এটা স্বাভাবিক। তবে তার মাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখতে হবে। অন্যথায় বাজারে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির চাপ সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে।
"উৎপাদন খরচ বাড়বে, সরকারও ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসলো সব কিছু একসাথে কনজিউম করা কৃষকের জন্যও কঠিন হবে," বলে মনে করেন মিজ জাহান।
কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দামও বৃদ্ধি পাবে এই দাবির সঙ্গে একমত নন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলছেন, "কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দাম বাড়বে, এটা তো অটোমেটিক না।"
তাহলে সারের মূল্যে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মি. খান বলেন, "সাবসিডি গ্যাসে দিবে, না সারে দিবে, এটা তো সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
তবে, যে মাত্রায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব পেট্রোবাংলা করেছে, তাতে শঙ্কিত না হওয়ার কারণ আছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়ানোসহ কোন উপায়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে, সেই পরিকল্পনাও সরকারকে আগেভাগেই করতে হবে বলে মত তাদের।
সরবরাহ নেই অথবা অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে- সার নিয়ে কৃষকদের এমন নানা অভিযোগের মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম দেড়শ শতাংশ বাড়ানোর গণশুনানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসি। ফলে সারের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার এবং কৃষক পর্যায়ে এর দাম আরো বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আমনের ভরা মৌসুমে সার পেতে চরম ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক। বিশেষ করে, ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি এবং ইউরিয়া সারের জন্য ডিলার পয়েন্ট ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ঘুরে শূন্য হাতে ফেরার অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এমনকি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে সারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন স্থানীয় অনেকে।
তাদের দাবি, আমনের ভরা মৌসুমে ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি সারের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে। দোকানে দোকানে ঘুরেও চাহিদা অনুযায়ী সার মিলছে না।
স্থানীয় একজন কৃষক বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ডিলার বলে, সার নাই। আমিতো বাজারের দুকানে সার দেখছি, অনেক বেশি দাম দিয়ে বিক্রি হচ্ছে।"
সার নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের এমন অভিযোগ থাকলেও, কোনো সংকট নেই বলে দাবি কৃষি মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে, সার পাওয়া নিয়ে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে দেওয়া পেট্রোবাংলার প্রস্তাব নিয়ে আগামী ছয়ই অক্টোবর গণশুনানি আহ্বান করেছে বিইআরসি।
তবে ওই শুনানীতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব। বিইআরসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে সংস্থাটি।
তারা বলছে, লোক দেখানো শুনানিতে অংশ নেবে না ক্যাব।
যদিও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনকে গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "বিইআরসি দাম নাও বাড়াতে পারে কিন্তু আলোচনা তো করতে হবে।"
এছাড়া, সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দাম বাড়বে, এটি সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন মি. খান।
সার সংকট নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
কুড়িগ্রামের কৃষক আবেদ আলী সরদার। নিজের জমিতে চাষাবাদ করেই জীবন চলে তার। ধানের পাশাপাশি শীতকালিন সবজিরও আবাদ করেন এই কৃষক।
এবছর ভরা আমনের মৌসুমে সার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তিনদিন ধরে বাজারে ঘুরে শেষমেষ বাড়তি দামেই সার কিনেছেন তিনি।
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, "দুই দোকান তিন দোকান ঘুরছি, বাংলা ডিআইবি পাইনি। এক জায়গায় ১৯শ টাকা বস্তা চাইছে, পরে ৩২ টাকা কেজিতে অল্প পরিমাণে কিনছি।"
ওই এলাকার আরেক কৃষক দবির ভূঁইয়া বলছেন, "টাকা দিয়ে সার কেনবো, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। দামের কারণে এখনো জমিতে সার দিবার পারি নাই," বলেন তিনি।
সম্প্রতি সার নিয়ে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের কাছ থেকেই। কেউ বলছেন সার পাচ্ছেন না, আবার কারো অভিযোগ নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তাপ্রতি অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কৃষক মো. আকুর মণ্ডল বিবিসি বাংলাকে জানান, বস্তাপ্রতি পাঁচশ-ছয়শ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনেছেন তিনি। বেশি টাকা দিয়ে সার কেনার অভিযোগ করেছেন পিরোজপুরের কৃষক রাজন মিয়াও। এমনকি ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেট করে সারের দাম বাড়ানোর অভিযোগ তুলছেন কেউ কেউ।
সব মিলিয়ে দেশে সার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশে সারের মোট চাহিদার বেশিরভাগই মূলত আমদানি নির্ভর। দেশের কারখানাগুলোয় উৎপাদিত কিছু ইউরিয়া সার ব্যতিত প্রায় সবই আমদানি করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর।
দেশে সারের কোনো সংকট নেই বলেই দাবি কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তারা বলছে, প্রতিবছর চাহিদা যখন বেশি থাকে, তখন অতিরিক্ত লাভের আশায় একটা মহল সারের কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রতিটি এলাকায় চাহিদার ভিত্তিতে অনেক আগে থেকেই সারের সরবরাহ নিশ্চিত করা থাকে।
"আমাদের সারের কোনো সংকট নাই। সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক ভাবেই অব্যাহত আছে," দাবি করেন মি. ইমাম।
তার দাবি, কেবল সার নয় কৃষি উপকরণ নিয়ে যেসব অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করছে সবসময়ই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেট্রোবাংলার
গত ১০ই অগাস্ট সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বা পেট্রোবাংলা। পরে একই প্রস্তাব আলাদা করে জমা দেয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
যেখানে দাবি করা হয়, গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ছয় টাকা লোকসান দিচ্ছে কোম্পানিটি। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনে ২৮ টাকা ৭৮ পয়সা খরচের বিপরীতে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ভর্তুকি হিসেবে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার।
জানা গেছে, সার কারখানায় বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৬ টাকা। পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে যা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে প্রায় চার হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে বলেও উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইন অনুযায়ী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এর যৌক্তিকতা নির্ধারণে অংশীজনদের সঙ্গে গণশুনানির আয়োজন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। সার কারখানায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে পেট্রোবালার প্রস্তাব নিয়ে আগামী ছয়ই অক্টোবর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে শুনানিতে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব। এমনকি বিইআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকেও চিঠি দিয়েছে ক্যাব।
গত ৩১শে জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে ক্যাব বলেছে, শুনানি না করেই সরকারি কোম্পানির তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। বর্তমান কমিশন জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজের পদের অপব্যবহার করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আইন অনুযায়ী উন্মুক্ত শুনানির মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে জ্বালনির দাম নির্ধারণ হওয়ার কথা থাকলেও প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
"সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি তারা একেবারে তুলেই দিয়েছে। নির্বাহী আদেশে সব সিদ্ধান্ত এখন চেয়ারম্যানই নেয়," অভিযোগ করেন মি. আলম।
উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা সিস্টেম লস কমাতে ব্যবস্থা না নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপরই বারবার দায় চাপানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলছেন, "তারা শুনানি করলেও দাম বাড়াবে, না করলেও বাড়াবে। বারো-চৌদ্দ বছর ধরে তারা এই কাজই করে আসছে। তাদের এই অপকর্ম এবং অবৈধ ক্ষমতা চর্চার বাস্তবায়নে ক্যাব সহায়তা করতে পারে না," বলেন মি. আলম।
তবে, বিইআরসির গণশুনানিতে ক্যাবের অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলেই মনে করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
"একটা বিষয় আপনি না শুনে, যৌক্তিক কি অযৌক্তিক কিভাবে বলেন। অযৌক্তিক বলতে হলে তো আপনাকে ওখানে যেতে হবে," বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অতীতের মতো কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় সেই দায়িত্ব বিইআরসিকে দেওয়া হয়েছে।
"আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বেশি টাকায় গ্যাস এনে ভর্তুকি দিয়ে আমরা কতদিন কারখানাগুলো চালাতে পারবো," বলেন তিনি।
গ্যাসের দাম বাড়লেই কী সারের দাম বাড়বে?
বিইআরসি'র গণশুনানির মাধ্যমে সার কারখানায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সারের দামও বাড়বে কিনা, এই প্রশ্ন সামনে আসছে। একই সাথে বিদ্যমান খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যেই দ্রব্যমূল্য আরও বৃদ্ধির শঙ্কাও রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সারের দামও স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তে পারে। যার প্রভাব পড়বে খাদ্য মূল্যে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ হাসনিন জাহান বলছেন, কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির প্রভাব উৎপাদিত পণ্যের ওপর পড়বে এটা স্বাভাবিক। তবে তার মাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখতে হবে। অন্যথায় বাজারে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির চাপ সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে।
"উৎপাদন খরচ বাড়বে, সরকারও ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসলো সব কিছু একসাথে কনজিউম করা কৃষকের জন্যও কঠিন হবে," বলে মনে করেন মিজ জাহান।
কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দামও বৃদ্ধি পাবে এই দাবির সঙ্গে একমত নন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলছেন, "কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দাম বাড়বে, এটা তো অটোমেটিক না।"
তাহলে সারের মূল্যে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মি. খান বলেন, "সাবসিডি গ্যাসে দিবে, না সারে দিবে, এটা তো সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
তবে, যে মাত্রায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব পেট্রোবাংলা করেছে, তাতে শঙ্কিত না হওয়ার কারণ আছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়ানোসহ কোন উপায়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে, সেই পরিকল্পনাও সরকারকে আগেভাগেই করতে হবে বলে মত তাদের।
জানা গেছে, বিমানটি প্রায় ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকাকালে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সে সময় ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস মিথিলা কেবিনে তাঁর রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ প্রবল টার্বুলেন্স শুরু হয়, যা প্রায় ছয় সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। সে সময় যাত্রীদের জন্য সিটবেল্টের সতর্কীকরণ সংকেত তখনো চালু হয়নি।
১৭ ঘণ্টা আগে