স্বাস্থ্য

ডুমুর ফল কেন খাবেন?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

মাটির কাছাকাছি বেড়ে ওঠা এক শান্ত গাছ, যার পাতার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় ছোট্ট, গোল, সবুজ বা বেগুনি রঙের একেকটি ফল। এই ফলের নাম ডুমুর। গ্রামবাংলার মানুষ একে চেনে নানা নামে—কেউ বলে ডুমুর, কেউ বলে ডগডগি, কেউবা আবার ডুমরি। কিন্তু শহর আর প্যাকেটজাত খাবারের ভিড়ে এই সহজ, উপকারী ফলটা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের চোখের আড়ালে। অথচ এই ডুমুর ফল শুধু যে সুস্বাদু তাই নয়, বরং একে বলা যেতে পারে প্রকৃতির দেওয়া এক শক্তিশালী ওষুধ।

ডুমুর ফল আসলে এক ধরনের "ফলবিন্যাস" বা inflorescence, যার ভেতরে অনেকগুলো ছোট ছোট ফুল থাকে। এই ফুলগুলো ডুমুরের ভেতরেই বেড়ে ওঠে এবং পরে বীজে পরিণত হয়। ডুমুর সাধারণত দুই রকমের হয়—তাজা (fresh fig) এবং শুকনো (dried fig)। তাজা ডুমুর খেলে যেমন তাজা মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়, তেমনি শুকনো ডুমুরেও থাকে ঘন পুষ্টিগুণ। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান বলছে, শুকনো ডুমুরের পুষ্টিগুণ আরও বেশি ঘন ও কার্যকর। কারণ, পানিশূন্যতার কারণে এর মধ্যে খনিজ ও ভিটামিনের ঘনত্ব বেড়ে যায়।

ডুমুরে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা আমাদের হজমে সহায়তা করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাঁদের জন্য ডুমুর একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা। নিয়মিত এক থেকে দুটি ডুমুর খেলে পেট পরিষ্কার থাকে, গ্যাস-অম্বলও কমে আসে। শুধু তা-ই নয়, আঁশ থাকার কারণে ডুমুর রক্তে কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিদ ড. মেরি এনডারসন বলেন, “ডায়েটারি ফাইবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (LDL) কমায়, আর ফিগ বা ডুমুর হচ্ছে এমন একটি ফল যা আঁশে ভরপুর।” তিনি আরও বলেন, “শুকনো ডুমুরে প্রায় ১০% ফাইবার থাকে, যা হার্টের জন্য উপকারী।”

ডুমুরের আরেকটি বড় গুণ হচ্ছে এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। দুধে যেখানে প্রতি ১০০ গ্রামে ১২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, সেখানে শুকনো ডুমুরে থাকে প্রায় ১৬২ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ দুধ না খেলে যাঁদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়, তাঁদের জন্য ডুমুর হতে পারে এক চমৎকার বিকল্প। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটির নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞ ড. ক্লেয়ার রবিনসন বলেন, “হাড় মজবুত রাখতে ক্যালসিয়াম দরকার, আর অনেকেই দুধ খেতে পারেন না বা খান না। তাঁদের জন্য ফিগ হতে পারে ক্যালসিয়ামের সহজ উৎস।”

ডুমুরে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে পলিফেনল নামক একটি যৌগ, যা শরীরের কোষগুলিকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এই পলিফেনল শরীরে ক্যানসার সৃষ্টিকারী ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল নামের ক্ষতিকর উপাদানের বিরুদ্ধে কাজ করে। ক্যালিফোর্নিয়ার টাফটস ইউনিভার্সিটির ফুড সায়েন্স গবেষক ড. জেনিফার মুলিন্স বলেন, “শুকনো ডুমুরে যে পরিমাণ পলিফেনল রয়েছে, তা অনেক বিখ্যাত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফল যেমন ব্লুবেরি বা ড্রাইড অ্যাপ্রিকটের চেয়েও বেশি। এটি কোষের রক্ষণাবেক্ষণে দারুণ কাজ করে।”

শুধু শরীরের ভিতর নয়, ডুমুর ফল চামড়ার জন্যও উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং ফেনলিক অ্যাসিড ত্বককে কোমল রাখে এবং বলিরেখা দূর করে। তাই প্রাচীন ভারতে আয়ুর্বেদে ডুমুর ব্যবহার হতো ত্বকের যত্নে।

ডুমুর ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও তুলনামূলক নিরাপদ। যদিও এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তবুও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে হঠাৎ করে চিনি বাড়িয়ে দেয় না। যুক্তরাষ্ট্রের ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ফিগ ফল ‘মডারেট’ পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে ডায়াবেটিকদের জন্য, বিশেষ করে যদি তা শুকনো না হয়ে তাজা হয়। তবে এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে—তাজা নাকি শুকনো ডুমুর বেশি উপকারী? যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. ডায়ান ফিলিপস এই বিষয়ে বলেন, “শুকনো ডুমুরে যেহেতু পানি কম, তাই প্রতি গ্রামে এর পুষ্টি বেশি ঘন। কিন্তু তাজা ডুমুরে বেশি ভিটামিন সি থাকে। তাই দুই ধরনের ডুমুরের উপকার আলাদা আলাদা।” তাই দুটোই খাওয়া যেতে পারে পালাক্রমে। তবে ডায়াবেটিস বা ওজনের ঝুঁকি থাকলে শুকনো ডুমুর কম খাওয়াই ভালো, কারণ এতে চিনি ঘন থাকে।

ডুমুর খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা ভালো। একেবারে পাঁকা ডুমুর না খেলে মুখে এলার্জির মতো সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া ডুমুর শুকনো অবস্থায় বেশি খেলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাস, ডায়রিয়া বা এলার্জি হতে পারে। তাই যাঁদের হজম সমস্যা আছে বা যাঁরা নতুনভাবে ডুমুর খাওয়া শুরু করছেন, তাঁদের অল্প পরিমাণে শুরু করাই নিরাপদ।

বাংলাদেশে যদিও তাজা ডুমুর খুব বেশি পাওয়া যায় না, তবে বর্তমানে বাজারে প্যাকেটজাত শুকনো ডুমুর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সুপারশপ ও অনলাইন মার্কেটে। এগুলো বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, বা ইরান থেকে আমদানি করা হয়।

এই ফলটির একটা চমৎকার দিক হলো—এটি প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি, কিন্তু কৃত্রিম মিষ্টিজাতীয় খাবারের মতো শরীরের ক্ষতি করে না। তাই যাঁরা চিনির বিকল্প খুঁজছেন, তাঁদের জন্য এটি হতে পারে স্বাস্থ্যকর সমাধান।

শেষ কথা হলো, ডুমুর ফল শুধু শরীরের জন্য ভালো নয়, বরং এটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এক প্রাকৃতিক ভারসাম্য এনে দিতে পারে। হজম, হৃদরোগ, ত্বক, হাড়—সবকিছুতেই এর ভূমিকা রয়েছে। একবার নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে বোঝা যাবে, প্রকৃতির কাছেই রয়েছে সবচেয়ে বড় ওষুধ।

চিত্র অনুরোধ করলে এখানে সংযুক্ত করা যেতে পারে। চাইলে জানাবেন watercolor illustration তৈরি করে দেব।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

তারেক রহমানকে শাশুড়ির আবেগঘন অভ্যর্থনা

বিমান থেকে নেমে তারেক রহমান ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেখানে তাকে গোলাপ ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। দীর্ঘ সময় পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে উপস্থিত সকলের চোখে আনন্দের অশ্রু দেখা যায়। এ সময় পাশে ছিলেন ডা. জুবাইদা রহমান ও জাইমা রহ

৭ ঘণ্টা আগে

যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার কথিত সমন্বয়ক সুরভী

পুলিশ জানায়, সুরভীর বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় নাইমুর রহমান দুর্জয় নামে এক যুবকের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। মামলায় চাঁদাবাজি, অপহরণ করে অর্থ আদায় ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তিনি সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন বলেও দাব

৮ ঘণ্টা আগে

সিলেটে পৌঁছে জাইমা রহমানের বার্তা— ‘অবশেষে বাংলাদেশের মাটিতে’

৯ ঘণ্টা আগে

আজ বড়দিন

তার জন্মক্ষণ স্মরণ করতেই ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে সারা বিশ্বে তার অনুসারীরা বড়দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। তার স্মরণে গির্জা গির্জায় প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে বাজানো হয় ঘণ্টাধ্বনি, যা মানুষের কাছে শুভ সংবাদের বার্তা বয়ে নিয়ে যায় বলে বিশ্বাস করেন খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীরা।

১৮ ঘণ্টা আগে