বিজ্ঞান

পিরিয়ড মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্সি বোঝা যায়

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

নারীর জীবনে মা হওয়ার মুহূর্তটি যেমন আনন্দের, তেমনি এটি এক বিশাল পরিবর্তনের শুরু। অনেক সময় এমন হয়, কোনো মহিলা হঠাৎ লক্ষ্য করেন তাঁর পিরিয়ড নির্ধারিত দিনে হয়নি। এমন অবস্থায় সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রথম প্রশ্নটি আসে—তবে কি আমি প্রেগন্যান্ট? কিন্তু শুধুমাত্র পিরিয়ড মিস হওয়া মানেই কি গর্ভধারণ? আবার এই প্রশ্নের উত্তর বুঝে নেওয়ার জন্য কতদিন অপেক্ষা করা উচিত? এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেরই মধ্যে বিভ্রান্তি থাকে। এই লেখায় আমরা জানব, পিরিয়ড মিস হওয়ার কতদিন পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে কেউ গর্ভবতী হয়েছেন কিনা, আর এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী।

প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার, একজন নারীর শরীরে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট চক্রে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। এই ডিম্বাণু যদি শুক্রাণুর সংস্পর্শে আসে এবং নিষিক্ত হয়, তবে গর্ভধারণ ঘটে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি তারপর জরায়ুতে গিয়ে বসে এবং সেখানে একটি নতুন জীবনের সূচনা হয়। এই প্রক্রিয়াটি ঘটে সাধারণত ডিম্বস্ফোটনের (ovulation) ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই। এই পুরো সময়ের মাঝে পিরিয়ড মিস হওয়াটা ঘটে সবচেয়ে প্রথমে।

বিখ্যাত গাইনোকোলজিস্ট ও যুক্তরাষ্টের ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ম্যারি জেন মিনকিন বলেন, “সাধারণত গর্ভধারণের ১০ থেকে ১৪ দিন পর শরীরে হরমোনের এমন একটি পরিবর্তন ঘটে, যেটি প্রস্রাবে বা রক্তে পরীক্ষা করে ধরা যায়।” তিনি আরও বলেন, “পিরিয়ড মিস হওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পর পরীক্ষা করলে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়।” তাঁর এই বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: “একজন নারী যদি পিরিয়ড মিস করার পর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেন এবং তারপর গর্ভধারণ পরীক্ষার কিট ব্যবহার করেন, তাহলে ভুলের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।”

পিরিয়ড মিস হওয়া মানেই যে কেউ গর্ভবতী, তা কিন্তু নয়। মানসিক চাপ, ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়াম, থাইরয়েড সমস্যা, অথবা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রমের এর মতো নানা কারণে মেয়েদের পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। তাই শুধু পিরিয়ড বন্ধ হওয়া গর্ভধারণের একমাত্র চিহ্ন নয়। তবে এটা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ।

নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হসপিটালের গাইনোকোলজিস্ট ডা. এলিসন ওয়েনার বলেন, “সঠিক সময়ে গর্ভধারণ পরীক্ষা না করলে মিথ্যা নেগেটিভ ফলাফল আসতে পারে, অর্থাৎ আপনি প্রেগন্যান্ট হলেও পরীক্ষায় দেখাবে না।” তাই তিনি পরামর্শ দেন, পিরিয়ড মিস করার অন্তত ৭ দিন পর গর্ভধারণ পরীক্ষা করা উচিত, তবেই তা কার্যকর হয়।

গর্ভধারণ পরীক্ষায় আসলে কী পরীক্ষা করা হয়? এটি শরীরে এইচজিজি (human chorionic gonadotropin) নামক এক ধরনের হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করে। এই হরমোন শুধুমাত্র গর্ভধারণের পর শরীরে তৈরি হয়। সাধারণত নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে বসে যাওয়ার ৬ দিন পর থেকেই এই হরমোন তৈরি হতে থাকে এবং প্রতিদিন এর পরিমাণ বেড়ে যায়।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক একটি গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, বেশিরভাগ নারীর শরীরে গর্ভধারণের ১১ দিন পর hCG হরমোনের মাত্রা পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তাঁদের গবেষণায় বলা হয়েছে, “১০০ নারীর মধ্যে ৯৭ জনের শরীরেই গর্ভধারণের দুই সপ্তাহের মধ্যে যথেষ্ট এইচজিজি তৈরি হয়, যা গর্ভধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে।” এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ড. ক্যারোলিন ডিফার, যিনি বলেন, “সঠিক সময়ে পরীক্ষা করলেই অধিকাংশ নারী গর্ভধারণ শনাক্ত করতে পারবেন।”

এখন প্রশ্ন হলো, যদি কেউ তাড়াতাড়ি জেনে নিতে চান, তাহলে কী করবেন? সে ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা অধিক নির্ভরযোগ্য। কারণ রক্তে hCG এর উপস্থিতি প্রস্রাবের চাইতে আগে ধরা পড়ে। এই পরীক্ষাটি পিরিয়ড মিস হওয়ার ৬ থেকে ৮ দিন পর করানো যেতে পারে। তবে সাধারণ মানুষের জন্য বাসায় করা কিট পরীক্ষা সবচেয়ে সহজ ও প্রচলিত পদ্ধতি।

অনেক সময় আবার এমনও হয়, নারী নিজেই গর্ভধারণের কিছু লক্ষণ অনুভব করেন— যেমন স্তন ফুলে যাওয়া বা ব্যথা, ক্লান্তি লাগা, বমি বমি ভাব বা গন্ধে অস্বস্তি লাগা। তবে এগুলো শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ অন্য অসুখেও এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

এখন অনেকেই জানতে চান, যদি কেউ অনিরাপদ যৌনসম্পর্ক করে থাকেন এবং পরবর্তীতে পিরিয়ড না হয়, তাহলে কী করবেন? সে ক্ষেত্রে প্রথমেই গর্ভধারণ পরীক্ষার কথা ভাবতে হবে। পিরিয়ড মিস করার অন্তত এক সপ্তাহ পর পরীক্ষা করাই শ্রেয়। তাড়াহুড়ো করলে ভুল ফলাফল আসার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি ফলাফল নেগেটিভ আসে, কিন্তু পিরিয়ড না হয়, তাহলে কয়েকদিন পরে আবার পরীক্ষা করা উচিত।

আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (ACOG) এর মতে, “যদি কোনো নারী টানা দুইবার গর্ভধারণ পরীক্ষায় নেগেটিভ পান এবং তবুও তাঁর পিরিয়ড না আসে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।” কারণ এ অবস্থায় পেছনে অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে।

সুতরাং, পিরিয়ড মিস হওয়ার পর যদি গর্ভধারণ নিয়ে সন্দেহ হয়, তাহলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষাটি করলে যেমন সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়, তেমনি অকারণে দুশ্চিন্তাও কম হয়।

শেষ কথা হলো, একজন নারীর শরীর অত্যন্ত সংবেদনশীল। গর্ভধারণ একটি প্রাকৃতিক ও জটিল প্রক্রিয়া। পিরিয়ড মিস হওয়ার ৭ দিন পর পরীক্ষা করলেই সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায় প্রেগন্যান্সি হয়েছে কিনা। এর আগেও বোঝা যেতে পারে, তবে তাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শরীরের বার্তা শোনা, নিজের প্রতি সচেতন থাকা, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হোক প্রতিটি নারীর অগ্রাধিকার।

গবেষণার আলোকে নিশ্চিত হওয়া যায়—অপেক্ষা করলে যেমন বিজ্ঞান কথা বলে, তেমনি নিজের শরীরও সত্যিটা বুঝিয়ে দেয়।

সূত্র: ল্যানসেট

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

কুরআন অবমাননার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার

৪ ঘণ্টা আগে

মানবপাচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের অগ্রগতি: মার্কিন টিআইপি রিপোর্ট

বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করলেও আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে।

৬ ঘণ্টা আগে

সরকার গঠন করতে পারলে শিক্ষায় সব বৈষম্য দূর করা হবে: মিলন

এহছানুল হক মিলন বলেন, আদর্শ শিক্ষকরা সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের সমর্থনে যদি সরকার গঠন করা যায়, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য ও অব্যবস্থা দূর করা হবে।

১৪ ঘণ্টা আগে

শহিদুল আলম ও গাজার সঙ্গে আছি: প্রধান উপদেষ্টা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও অধিকার কর্মী শহিদুল আলমের পক্ষে সংহতি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের শিকার গাজার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

১৪ ঘণ্টা আগে