বিজ্ঞানী

নিউটন যখন গোয়েন্দা

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
গোয়েন্দাগিরিতেও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন নিউটন

টাকার লোভ মানুষকে কেমন করে বদলে দিতে পারে, তা তো আমরা প্রায়ই দেখি। কেউ কেউ বলে, টাকা দেখলে কাঠের পুতুলও নড়ে। যদিও এটা একটু বাড়িয়ে বলা, কিন্তু অনেকটা সত্যি! রাস্তায় পড়ে থাকা একটা এক টাকার কয়েন দেখলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষও একবার হলেও তাকাই। কিন্তু যদি ভাবো, বিজ্ঞানীরা এসব লোভে পড়ে না—তাহলে একটু ভুল করবে। বিজ্ঞানীরাও মানুষ, তারাও লোভে পড়ে, প্রতিশোধ নিতে পারে, এমনকি ভুলও করে।

যেমন স্যার আইজ্যাক নিউটনের কথাই ধরা যাক। স্কুলে আমরা সবাই পড়েছি নিউটনের বলবিদ্যার নিয়ম, আপেল পড়ে যাওয়ার গল্প, মহাকর্ষের তত্ত্ব। মনে হয়, উনি ছিলেন একেবারে সাধু প্রকৃতির ভালো মানুষ। কিন্তু বাস্তবে তিনি ছিলেন একটু রাগী, জেদি, আর টাকার লোভ থেকেও মুক্ত ছিলেন না। এমনকি তিনি একসময় অ্যালকেমি—মানে সস্তা ধাতু থেকে সোনা বানানোর গোপন বিজ্ঞানে আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ধনী হওয়া। ভাবা যায়, এত বড় বিজ্ঞানী হয়ে এমন এক অলীক স্বপ্নে বিভোর ছিলেন!

নিউটন ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বড় অধ্যাপক। ভালো সম্মান, ভালো বেতন—সবই ছিল। তবু তিনি ব্রিটিশ সরকারের টাঁকশালের (Royal Mint) দায়িত্ব নিতে রাজি হলেন। অনেকে বলেন, এটা তিনি নিজের ইচ্ছায় নেননি, রাজা চাইলে তখন অস্বীকার করার উপায় ছিল না।

শুরুতে ওয়ার্ডেন পদে যোগ দেন নিউটন। এ কাজটা মূলত দেখার জন্য—সাম্মানিক, বেশি কিছু করার দরকার ছিল না। কিন্তু নিউটন তো আর সাধারণ মানুষ নন। তিনি কাজটা মন থেকে করতে লাগলেন। ধীরে ধীরে তিনি পুরো বিভাগের প্রধান হয়ে গেলেন।

এ সময় ইংল্যান্ডে বড় সমস্যায় পড়েছে টাকা-পয়সা নিয়ে। যুদ্ধ চলছিল ফ্রান্সের সঙ্গে। রাজা প্রচুর টাকা খরচ করছিলেন। আবার দেশে রুপার মুদ্রা ছিল, যেটাতে জাল করার সুযোগ বেশি ছিল। কারণ মুদ্রার ভেতরের রুপার দাম বাইরে বিক্রি করলে অনেক বেশি পাওয়া যেত। তাই মানুষ মুদ্রা গলিয়ে রুপা বের করে বিক্রি করত, আর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল জাল টাকা।

এত বড় সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? তখন রাজা বললেন, জাল টাকার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর নিউটনের কাঁধে পড়ল আসল দোষীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব।

নিউটন এই কাজে নেমে পড়লেন একেবারে গোয়েন্দা হয়ে। তিনি শহরের অলিগলিতে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। কখনও ভিখিরি, কখনও সাধারণ লোক সেজে চোর-বাটপারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলেন। টাকা খরচ করে, ভয় দেখিয়ে, নানা কৌশলে তথ্য বের করে আনলেন। ধরা পড়ল ২৮ জন জাল কারবারি!

এদের মধ্যেই ছিল একজন সবচেয়ে ধূর্ত অপরাধী—উইলিয়াম শ্যালোনার। এই লোকটা একদিকে জাল টাকা বানাত, আবার অন্যদিকে সরকারকে দোষীদের ধরিয়ে দিত। এই চালাকিতে সে হয়ে উঠেছিল রাজার প্রিয়ভাজন। এমনকি সে নিউটনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছিল—নাকি নিউটনই জাল টাকার হোতা! সেই শ্যালোনারই নিউটনের বিরুদ্ধে আঙুল উঁচিয়ে বলে, এই বিজ্ঞানীই আসলে চোরাকারবারির হোতা। এঁকে সরিয়ে দিলেই বন্ধ হবে জাল টাকার কারবার। নিউটন তো মহাখাপ্পা! তার ওপর তিনি ভীষণ প্রতিশোধপরায়ণ। আর তাঁকেই কিনা চটিয়েছে ধোঁকাবাজ শ্যালোনার। তিনি কিছুটা জানতেন শ্যালোনারের দুষ্কর্মের কথা। কানাঘুষাও শুনেছিলেন এই শ্যালোনারই জাল টাকার কারবারিদের চাঁই, তার দৃষ্টি এখন রয়্যাল মিন্টের প্রধান পদটির দিকে। কিন্তু প্রমাণ কই? নিউটন তাই গোয়েন্দা বনে গেলেন। উদ্দেশ্য এক ঢিলে দুই পাখি শিকার—ব্রিটেনের তাবৎ টাকার চোরাকারবারিদের ধরা আর মূল হোতা শ্যালোনারকেও শুলে চড়ানো।

নিউটন চুপ থাকেননি। প্রতিশোধপরায়ণ স্বভাব তো ছিলই। ছদ্মবেশ তিনি নিয়ে ভিখিরি সেজে অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন নিউটন। শহরের চোর-বাটপার, ভিখিরিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুললেন। এ জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করতেও কুণ্ঠা ছিল না তাঁর। ভয় দেখিয়ে, টাকা খাইয়ে দলে ভেড়ালেন শ্যালোনারের চ্যালাদের, বের করে নিলেন তাদের পেটের কথা। ধরা পড়ল ২৮ জন জাল টাকার কারবারি। সেই সঙ্গে প্রমাণ মিলল, শ্যালোনারই পালের গোদা। শ্যালোনার তখন হার স্বীকার করল। চিঠি লিখে ক্ষমা চাইল নিউটনের মানহানির জন্য। কিন্তু নিউটনের মন গলেনি। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলো শ্যালোনার। ১৬৯৯ সালের কোনো একদিন ফাঁসি হয় শ্যালোনারের। প্রথম কেসেই তাই বাজিমাত গোয়েন্দা নিউটনের।

১৬৯৯ সালে তার ফাঁসি হয়। আর নিউটনের প্রথম ‘মামলাই’ হয় দারুণ সফল।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

লিবিয়া থেকে ফিরলেন ১৭০ বাংলাদেশি

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের বেশির ভাগই সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার উদ্দেশে মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। তাদের অনেকে লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

১ ঘণ্টা আগে

কেনা হচ্ছে না ৪০ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা: অর্থ উপদেষ্টা

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য ৪০ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা কেনা হচ্ছে না। যেসব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, কেবল সেখানে (বডি ওর্ন ক্যামেরা) দেওয়া হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে কেনা হবে। ইসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচনা করে ঠিক করবে।

১ ঘণ্টা আগে

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কপি আজ যাচ্ছে না মন্ত্রণালয়ে

আজ মঙ্গলবার এ রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপির কাছে পাঠানোর কথা ছিল। এ সত্যায়িত কপিতে চেয়ারম্যানসহ তিন বিচারকের সই প্রয়োজন। ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন বলছে, চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকার কারণেই সেটি পাঠানো সম্ভব হয়নি।

১ ঘণ্টা আগে

সরকার ‘এনজিও-গ্রাম’— ফেসবুকে জবাব দিলেন প্রেস সচিব

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘এনজিও-গ্রাম’ অভিহিত করে যারা সমালোচনা করে থাকেন, তাদের জবাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ১৪টি বিষয়ে সরকারের ‘অর্জন’ তুলে ধরে বলেছেন, সরকারের সমালোচনাকারীর সমালোচনা অন্যায্য।

১ ঘণ্টা আগে