ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি: জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা

বার্তাকক্ষ, রাজনীতি ডট কম

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা জানান তিনি।

জাতিসংঘ সনদের আট দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে সব সদস্য রাষ্ট্রকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'গত আট দশক ধরে জাতিসংঘ ধারাবাহিকভাবে তার কর্মপরিধি সম্প্রসারিত করেছে এবং নানা ক্ষেত্রে আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার, বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা ও সমতা প্রসারে জাতিসংঘ অনস্বীকার্য ভূমিকা রেখেছে।'

'জাতিসংঘের কারণেই আজ বিশ্বের ১২০টি দেশের প্রায় ১৩ কোটি বিপদাপন্ন মানুষকে জরুরি খাদ্য ও মৌলিক মানবিক সহায়তা এবং ৪৫ শতাংশ শিশুকে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, টিকা এবং অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী সেবা ও সরঞ্জামের যোগান দিয়ে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে,' বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, 'গত বছর এই মহান সভায় আমি দাঁড়িয়েছিলাম সদ্য গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত একটি দেশের রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা শোনানোর জন্য। আজ আমি এই রূপান্তরের অগ্রযাত্রায় আমরা কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি তা বলব।'

'পৃথিবীর প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৩ জন বাংলাদেশে বাস করে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ভূ-রাজনৈতিকভাবে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে বলে আমাদের এ ইতিহাস জানার দরকার, তা কিন্তু নয়। বরং এ কারণে বাংলাদেশের এই বর্ণনা গুরুত্বপূর্ণ যে, তা সাধারণ মানুষের অসাধারণ ক্ষমতার ওপর আস্থা তৈরি করবে।'

'এ কারণে বর্ণনাটি গুরুত্বপূর্ণ যে তা বিশ্বের সব দেশের মধ্যে আশার সঞ্চার করবে, যে সংকট যত গভীরই হোক না কেন বা তার নিরসন যত অসম্ভবই মনে হোক না কেন, কখনোই তা থেকে উত্তরণের পথ হারিয়ে যায় না,' বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জন্ম লাভ করে। কিন্তু যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বিশাল আত্মত্যাগ করেছিলাম তা গত পাঁচ দশকে বার বার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। বারবার আমাদের ছেলেমেয়েদের নেতৃত্বে আমাদের জনগণকে অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করে সে অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এ বছর আমরা "জুলাই গণঅভ্যুত্থানের" প্রথম বার্ষিকী পালন করেছি—যে অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করেছিল, যার ফলে আমরা বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের অভিযাত্রা নতুনভাবে শুরু করতে পেরেছি। সেই বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে ও আমার সহকর্মীদের। ভেঙে পড়া রাষ্ট্র কাঠামোকে পুনর্গঠন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজন ছিল ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের। যে বিপুল জনসমর্থনের মাধ্যমে আমরা দায়িত্ব পেয়েছিলাম, তার প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্যে সহজ পথ ছিল নির্বাহী আদেশে সংস্কার কাজগুলো করা। কিন্তু আমরা বেছে নেই কঠিন পথ—অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পথ।'

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা—যেখানে আর কোনো স্বৈরশাসকের আবির্ভাব হবে না, কোনো নির্বাচিত নেতা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক স্বরূপকে ক্ষুণ্ণ করতে পারবে না, কিংবা রাষ্ট্র ও জনগণের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হতে পারবে না।'

'শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম, নারী অধিকারসহ সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার জন্য আমরা ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করি। কমিশনগুলো জনমত যাচাই ও গভীর পর্যালোচনা করে বিস্তারিত সংস্কার কার্যক্রম সুপারিশ করে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এ সংস্কার সুপারিশগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করি যারা ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে আলোচনায় বসে। এ কমিশনের লক্ষ্য ছিল সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি দলমত নির্বিশেষে একটি টেকসই সামাজিক অঙ্গীকার তৈরি করা। আমাদের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ সফল হয়। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সকলে মিলে "জুলাই ঘোষণা"র মাধ্যমে এই সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি আমাদের সময়াবদ্ধ অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে যেই দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে আর কোনো অনিশ্চয়তার অবকাশ থাকবে না।'

'আপনারা জানেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পাশাপাশি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করবার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে নাগরিকবান্ধব সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছি,' বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এখনই সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা

তিনি বলেন, যেসব বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ড আজকের এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার সমাধান ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা সম্ভব। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ জাতীয় রাজনৈতিক মীমাংসার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।

৩ ঘণ্টা আগে

জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয় তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

৩ ঘণ্টা আগে

এইচএসসির ফল প্রকাশ অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষা আইন অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে।

৪ ঘণ্টা আগে

আসামের বৃদ্ধা সাকিনা বেগমকে ঢাকায় আদালতে পাঠালো পুলিশ

এমন পরিস্থিতিতে সাকিনা বেগমের ভারতে পরিবারের কাছে ফেরার প্রক্রিয়া কী হবে, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। কারণ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে এই মামলায় তার সাজা হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।

৪ ঘণ্টা আগে