প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশার দলিল জুলাই সনদ নিয়ে সংশয় কাটছে না। এরই মধ্যে এই সনদের একটি খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রুটিন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ‘যেকোনোভাবেই হোক’, চলতি জুলাইয়ের মধ্যেই এ সনদ চূড়ান্ত করা হবে। সে হিসাবে আগামীকালের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে ‘জাতীয় জুলাই সনদ’।
এদিকে জুলাই সনদ যখন চূড়ান্ত হওয়ার মুখে তখন রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদের খসড়া নিয়েই একমত হতে পারেনি। বরং জুলাই সনদকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসা জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই সনদ বাস্তবায়নে দুই বছরের সময়সীমা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আপত্তির কথা জানিয়েছে। বিএনপি বরং এই খসড়াকে স্বাগত জানিয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় জুলাই সনদ ২০২৫-এর খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খসড়ায় জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন থেকে শুরু করে প্রথমে খাতভিত্তিক সংস্কার কমিশন ও পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের পটভূমি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে দুই ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ঐকমত্য বা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলোকে এই খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। অন্যদিকে প্রথম ধাপের আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসা সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার অনেক বিষয় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। ফলে এ ধাপের আলোচনা শেষ হলে সব সিদ্ধান্ত একবারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে সনদে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের নানা সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে বলে সেগুলো নিয়ে দ্বিমত আসার সম্ভাবনা নেই। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে কোন পদ্ধতিতে বা কত সময়ের মধ্যে, তা নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আসছে ভিন্নমত। খসড়ায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে ফাঁক ও দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছে দলগুলো।
মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের একবিংশতিতম দিনের আলোচনায় অংশ নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এই আলোচনার ফাঁকে ফাঁকেই এসেছে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে এসব দলের মন্তব্য।
জুলাই সনদের খসড়াকে ‘অসম্পূর্ণ’ শুধু নয়, বরং এর কিছু অংশকে ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সনদ বাস্তবায়নের দুটি পথ থাকতে হবে— অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত সংসদে অনুমোদন অথবা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া। যেকোনো একটি পদ্ধতিতে সনদের বৈধতা দিতে চাই। না হলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যেতে পারে।
মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনায় অংশ নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। ছবি: পিআইডি
তাহের আরও বলেন, বিএনপি চায়— যেসব বিষয়ে ঐকমত্য আসছে না সেগুলো সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ অধিকাংশ দল মনে করে, সংসদে পাঠালে তা আর সিদ্ধান্ত হবে না। সংসদে পাঁচ-ছয়টা দল আছে, অথচ সংলাপে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নেওয়া জরুরি।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার দিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে এনসিপি। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, কমিশন সভায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে, নির্বাচনের আগে একটি আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি— যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, নির্বাচনের আগেই সেগুলোর আইনি ভিত্তি পেতে হবে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
সনদের খসড়া নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে জাবেদ বলেন, কমিশন ছয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতির কথা বললেও তা নিয়ে আলোচনা না করেই হঠাৎ জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে। এর তীব্র বিরোধিতা করছি। সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়নি, অথচ তারা খসড়া প্রকাশ করেছে— এটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
প্রায় একই ধরনের অবস্থান নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। এই খসড়াকে আইনি বাধ্যবাধকতাহীন দুর্বল উপস্থাপনা বলে অভিহিত করেছে দলটি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ দলের নিয়মিত বৈঠকে এ প্রতিক্রিয়া জানান বলে দলটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, খসড়ায় একবারের জন্যও পতিত ফ্যাসিবাদের মূল হোতা ও অশুভ চক্রের প্রধান শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়নি। জুলাই সনদের ক্ষেত্রে প্রধান চাওয়া ছিল, এর আইনি মর্যাদা ও বাধ্যবাধকতা। কিন্তু খসড়া সনদে এ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ফলে সনদের আদতে কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না।
এদিকে বিএনপি জুলাই সনদের খসড়ায় ‘মোটামুটি একমত’ হয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দুই বছরের ভেতরে সনদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।
এই খসড়া নিয়ে বিএনপির পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, খসড়ার বাক্য, শব্দ, গঠনপ্রণালি ইত্যাদি নিয়ে কারও কোনো মতামত রয়েছে কি না, সে জন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছে এটি দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। আমাদের সংশোধনী থাকবে ভাষাগত ও বাক্যগত। অঙ্গীকারের বিষয়ে আমরা একমত।
এদিকে অন্য দলগুলো জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেও বিএনপির অবস্থান এই সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে। সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জুলাই সনদ দিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনা শেষে এমন অবস্থান নিয়েছে দলটি।
বিএনপি বলছে, জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে অতীতের আরও ঘটনা যেমন— নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতেও গণঅভ্যুত্থান হলে তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে জটিলতা বাড়বে।
একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যেটি ২০১১ সালে শেখ হাসিনা সরকার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে সপ্তম তফসিলে। এটি নিয়ে মামলাও চলমান। বিএনপি বলছে, একইভাবে জুলাই সনদও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি নয়। জুলাই ঘোষণাপত্রকেও সংবিধানে যোগ না করে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে সংরক্ষণের পক্ষে বিএনপি।
ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আলী রীয়াজ। ছবি: পিআইডি
২০টি বিষয়ে ঐকমত্যের আশায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরই মধ্যে ১২টি বিষয়ে সবগুলো রাজনৈতিক দল সাধারণ একটি অবস্থান তথা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বাকি আটটি বিষয়ে এখনো ঐকমত্য আসা বাকি। তবে আলী রীয়াজের ভাষ্য, এসব বিষয়েও দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে দলগুলো কাছাকাছি চলে এসেছে।
এ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আগের আলোচনায় এ বিষয়ে ঐকমত্য না এলে মঙ্গলবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সংশোধিত একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করে। তবে এতেও একমত হতে পারেনি সব রাজনৈতিক দল।
ঐকমত্য না আসা আরেকটি বিষয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে সাধারণ ৩০০ আসনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়ে সেগুলোতে নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার আনার প্রস্তাব তুলেছিল কমিশন। ঐকমত্য আসেনি সে প্রস্তাবেও।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ঐকমত্য আসেনি মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি এই দুই পদসহ কিছু সাংবিধানিক পদে নিয়োগের পদ্ধতি নিয়েও।
গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে ঐকমত্য না এলেও বৃহস্পতিবারের (৩১ জুলাই) মধ্যেই সনদ চূড়ান্ত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, জুলাই সনদের খসড়ায় আজ বুধবার পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেবেন। সেগুলো সমন্বয়ক করে চূড়ান্ত করা হবে সনদ, যেখানে যুক্ত করা হবে আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো বিষয়গুলো।
আলী রীয়াজ বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেসব বিষয় ও মন্তব্যগুলো নিয়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সনদের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশার দলিল জুলাই সনদ নিয়ে সংশয় কাটছে না। এরই মধ্যে এই সনদের একটি খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রুটিন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ‘যেকোনোভাবেই হোক’, চলতি জুলাইয়ের মধ্যেই এ সনদ চূড়ান্ত করা হবে। সে হিসাবে আগামীকালের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে ‘জাতীয় জুলাই সনদ’।
এদিকে জুলাই সনদ যখন চূড়ান্ত হওয়ার মুখে তখন রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদের খসড়া নিয়েই একমত হতে পারেনি। বরং জুলাই সনদকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসা জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই সনদ বাস্তবায়নে দুই বছরের সময়সীমা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আপত্তির কথা জানিয়েছে। বিএনপি বরং এই খসড়াকে স্বাগত জানিয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় জুলাই সনদ ২০২৫-এর খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খসড়ায় জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন থেকে শুরু করে প্রথমে খাতভিত্তিক সংস্কার কমিশন ও পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের পটভূমি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে দুই ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ঐকমত্য বা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলোকে এই খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। অন্যদিকে প্রথম ধাপের আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসা সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার অনেক বিষয় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। ফলে এ ধাপের আলোচনা শেষ হলে সব সিদ্ধান্ত একবারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে সনদে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের নানা সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে বলে সেগুলো নিয়ে দ্বিমত আসার সম্ভাবনা নেই। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে কোন পদ্ধতিতে বা কত সময়ের মধ্যে, তা নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আসছে ভিন্নমত। খসড়ায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে ফাঁক ও দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছে দলগুলো।
মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের একবিংশতিতম দিনের আলোচনায় অংশ নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এই আলোচনার ফাঁকে ফাঁকেই এসেছে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে এসব দলের মন্তব্য।
জুলাই সনদের খসড়াকে ‘অসম্পূর্ণ’ শুধু নয়, বরং এর কিছু অংশকে ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সনদ বাস্তবায়নের দুটি পথ থাকতে হবে— অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত সংসদে অনুমোদন অথবা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া। যেকোনো একটি পদ্ধতিতে সনদের বৈধতা দিতে চাই। না হলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যেতে পারে।
মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনায় অংশ নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। ছবি: পিআইডি
তাহের আরও বলেন, বিএনপি চায়— যেসব বিষয়ে ঐকমত্য আসছে না সেগুলো সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ অধিকাংশ দল মনে করে, সংসদে পাঠালে তা আর সিদ্ধান্ত হবে না। সংসদে পাঁচ-ছয়টা দল আছে, অথচ সংলাপে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নেওয়া জরুরি।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার দিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে এনসিপি। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, কমিশন সভায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে, নির্বাচনের আগে একটি আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি— যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, নির্বাচনের আগেই সেগুলোর আইনি ভিত্তি পেতে হবে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
সনদের খসড়া নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে জাবেদ বলেন, কমিশন ছয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতির কথা বললেও তা নিয়ে আলোচনা না করেই হঠাৎ জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে। এর তীব্র বিরোধিতা করছি। সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়নি, অথচ তারা খসড়া প্রকাশ করেছে— এটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
প্রায় একই ধরনের অবস্থান নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। এই খসড়াকে আইনি বাধ্যবাধকতাহীন দুর্বল উপস্থাপনা বলে অভিহিত করেছে দলটি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ দলের নিয়মিত বৈঠকে এ প্রতিক্রিয়া জানান বলে দলটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, খসড়ায় একবারের জন্যও পতিত ফ্যাসিবাদের মূল হোতা ও অশুভ চক্রের প্রধান শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়নি। জুলাই সনদের ক্ষেত্রে প্রধান চাওয়া ছিল, এর আইনি মর্যাদা ও বাধ্যবাধকতা। কিন্তু খসড়া সনদে এ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ফলে সনদের আদতে কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না।
এদিকে বিএনপি জুলাই সনদের খসড়ায় ‘মোটামুটি একমত’ হয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দুই বছরের ভেতরে সনদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।
এই খসড়া নিয়ে বিএনপির পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, খসড়ার বাক্য, শব্দ, গঠনপ্রণালি ইত্যাদি নিয়ে কারও কোনো মতামত রয়েছে কি না, সে জন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছে এটি দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। আমাদের সংশোধনী থাকবে ভাষাগত ও বাক্যগত। অঙ্গীকারের বিষয়ে আমরা একমত।
এদিকে অন্য দলগুলো জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেও বিএনপির অবস্থান এই সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে। সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জুলাই সনদ দিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনা শেষে এমন অবস্থান নিয়েছে দলটি।
বিএনপি বলছে, জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে অতীতের আরও ঘটনা যেমন— নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতেও গণঅভ্যুত্থান হলে তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে জটিলতা বাড়বে।
একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যেটি ২০১১ সালে শেখ হাসিনা সরকার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে সপ্তম তফসিলে। এটি নিয়ে মামলাও চলমান। বিএনপি বলছে, একইভাবে জুলাই সনদও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি নয়। জুলাই ঘোষণাপত্রকেও সংবিধানে যোগ না করে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে সংরক্ষণের পক্ষে বিএনপি।
ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আলী রীয়াজ। ছবি: পিআইডি
২০টি বিষয়ে ঐকমত্যের আশায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরই মধ্যে ১২টি বিষয়ে সবগুলো রাজনৈতিক দল সাধারণ একটি অবস্থান তথা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বাকি আটটি বিষয়ে এখনো ঐকমত্য আসা বাকি। তবে আলী রীয়াজের ভাষ্য, এসব বিষয়েও দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে দলগুলো কাছাকাছি চলে এসেছে।
এ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আগের আলোচনায় এ বিষয়ে ঐকমত্য না এলে মঙ্গলবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সংশোধিত একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করে। তবে এতেও একমত হতে পারেনি সব রাজনৈতিক দল।
ঐকমত্য না আসা আরেকটি বিষয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে সাধারণ ৩০০ আসনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়ে সেগুলোতে নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার আনার প্রস্তাব তুলেছিল কমিশন। ঐকমত্য আসেনি সে প্রস্তাবেও।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ঐকমত্য আসেনি মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি এই দুই পদসহ কিছু সাংবিধানিক পদে নিয়োগের পদ্ধতি নিয়েও।
গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে ঐকমত্য না এলেও বৃহস্পতিবারের (৩১ জুলাই) মধ্যেই সনদ চূড়ান্ত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, জুলাই সনদের খসড়ায় আজ বুধবার পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেবেন। সেগুলো সমন্বয়ক করে চূড়ান্ত করা হবে সনদ, যেখানে যুক্ত করা হবে আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো বিষয়গুলো।
আলী রীয়াজ বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেসব বিষয় ও মন্তব্যগুলো নিয়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সনদের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হতে প্রত্যাহারপূর্বক সিনিয়র সহকারী কমিশনার/সহকারী কমিশনার হিসেবে পরবর্তী পদায়নের জন্য ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত করা হলো।
৮ ঘণ্টা আগেসাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অন-অ্যারাইভাল ভিসা বাতিল হচ্ছে না। যে সব দেশের সঙ্গে আমাদের অন-অ্যারাইভাল ভিসার চুক্তি রয়েছে, আমরা তাদেরকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিচ্ছি। যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই, তাদেরকে আমরা অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিবো না।
৮ ঘণ্টা আগেআজ বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তার আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদের বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায়
৮ ঘণ্টা আগেডা. দেবপ্রিয় বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপকে পরবর্তী সরকার কী পরিমাণ বৈধতা দেবে, তা এখনই চিন্তা করতে হবে। বিশেষ করে যেসব সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা প্রয়োজন। এখন এক্সিট পলিসি ও অর্জনের স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার সময় এসেছে।”
৯ ঘণ্টা আগে