বিজ্ঞান

প্রথমবার প্রেগনেন্সির লক্ষণ

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ১৭: ৪৭

নারীদের জীবনে গর্ভধারণ একটি গভীর ও আবেগঘন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে যখন কেউ প্রথমবার মা হতে যাচ্ছেন, তখন শরীর ও মনে নানা প্রশ্নের ঝড় ওঠে—"আমি কি সত্যিই গর্ভবতী?", "এ অনুভবগুলো কি স্বাভাবিক?" কিংবা "এই অদ্ভুত পরিবর্তনের অর্থ কী?" অনেক সময় প্রথম গর্ভধারণের লক্ষণগুলো এতটাই হালকা ও অস্পষ্ট হয় যে কেউ কেউ বুঝতেই পারেন না, নতুন একটি জীবন গঠিত হচ্ছে তাঁর শরীরে।

প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত গর্ভধারণের এক-দুই সপ্তাহ পর থেকেই দেখা দিতে শুরু করে। যদিও প্রতিটি নারীর দেহ আলাদা, তবু কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে যা অধিকাংশ নারীর মধ্যেই দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত লক্ষণটি হলো মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। অনেকেই মাসিক বন্ধ হলে ঘাবড়ে যান বা কখনও কখনও এটিকে মানসিক চাপের ফল ভেবে উড়িয়ে দেন। অথচ এটাই হতে পারে শরীরের প্রথম স্পষ্ট সংকেত—একটি নতুন প্রাণের শুরু হয়েছে।

কিন্তু শুধু মাসিক বন্ধ হওয়া নয়, আরও অনেক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে এই সময়ে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব হওয়া, যা "মর্নিং সিকনেস" নামে পরিচিত। তবে এটি শুধু সকালেই হয় না, দিন-রাত যেকোনো সময় হতে পারে। অনেকের আবার খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা বিতৃষ্ণা দেখা যায়। কোনো খাবার হঠাৎ খুব প্রিয় হয়ে ওঠে, আবার কোনোটি দেখলেই বমি পায়। কেউ কেউ হালকা গন্ধেই অস্বস্তি বোধ করেন। স্তনের আকার ও গঠনেও পরিবর্তন আসতে পারে—ফুলে ওঠা, ব্যথা করা কিংবা স্তনবৃন্তের গাঢ় হওয়া এসবও সাধারণ লক্ষণ।

এই পরিবর্তনগুলো কেন হয়? কারণ, গর্ভধারণের পর নারীর শরীরে হরমোনের একটি বিশাল পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে "হিউম্যান কোরিওনিক গনাডোট্রপিন" (hCG) নামের একটি হরমোন তৈরি হতে থাকে, যেটি প্ল্যাসেন্টা তৈরি হওয়া শুরু করলেই নিঃসৃত হয়। এই হরমোনটি শরীরকে বলে দেয়, "তুমি এখন গর্ভবতী, নিজেকে প্রস্তুত করো!" এই নির্দেশেই শরীরে শুরু হয় নানা ধরনের পরিবর্তন।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি'র প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. মার্সি রিচম্যান বলেন, “গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলো আমাদের বলে দেয় যে শরীর নিজেই শিশুর আগমনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই লক্ষণগুলো ভয় পাওয়ার কিছু নয়, বরং এগুলো একটি নতুন জীবনের আশ্বাস।”

অনেকেই গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন। এটি খুবই সাধারণ। শরীর তখন নিজের সব শক্তি ব্যয় করছে শিশুর প্রাথমিক অঙ্গগুলো তৈরি করতে। তাই হঠাৎ করে অনেক ঘুম পাওয়া, কোনো কাজেই আগ্রহ না থাকা, কিংবা দিনভর ক্লান্ত বোধ করাও গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে। কারও কারও আবার হালকা জ্বর বা গরম অনুভব হয়, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় “বেসাল বডি টেম্পারেচার”-এর সামান্য বৃদ্ধি।

এই সময়ে মেজাজেও পরিবর্তন আসতে পারে। এক মুহূর্তে হাসছেন, পরমুহূর্তেই কান্না পাচ্ছে—এ রকম আবেগের ওঠানামা খুব স্বাভাবিক। কারণ, হরমোন প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মাত্রা এ সময় অনেক বেড়ে যায়, যা আবেগের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. সারাহ রেনল্ডস বলেন, “গর্ভাবস্থার শুরুতেই মানসিক ওঠানামা হওয়া নারীর দোষ নয়, বরং এটি একটি জৈবিক প্রতিক্রিয়া। একে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া উচিত।”

অনেকে আবার প্রাথমিক পর্যায়েই হালকা রক্তপাত বা ‘স্পটিং’ দেখতে পান। এটা নিয়ে অনেকে ভয় পান—ভেবে বসেন হয়তো গর্ভপাত হতে চলেছে। কিন্তু ডাক্তাররা বলেন, এটা প্রায়ই “ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং”—যেটা ডিম্বাণু জরায়ুতে বসার সময় ঘটে এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। তবে যদি রক্তপাত বেশি হয় বা ব্যথা যুক্ত থাকে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।

একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, সব নারীর সব লক্ষণ একরকম হয় না। কেউ হয়তো বুঝতেই পারেন না যে তিনি গর্ভবতী, আবার কেউ প্রথম সপ্তাহ থেকেই একাধিক লক্ষণে ভোগেন। কাজেই লক্ষণ দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রথম গর্ভাবস্থার সময় নারীরা প্রায়ই আতঙ্কিত হন—শরীরের প্রতিটি পরিবর্তন তাদের মনে নানা প্রশ্ন তোলে। এই সময় আশ্বস্ত করা ও যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। বিশেষ করে পরিবার ও সঙ্গীর সহানুভূতি ও উপস্থিতি এক্ষেত্রে নারীর মানসিক শক্তির বড় উৎস হতে পারে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গাইনোকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যালিসন ক্রেইন বলেন, “প্রথমবার গর্ভধারণ নারীর জীবনে একধরনের শারীরিক-মানসিক রূপান্তর। এই অভিজ্ঞতাটি নিরাপদ ও ইতিবাচক করতে হলে নারীর পাশে থাকতে হবে—তার অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।”

সর্বশেষে বলা যায়, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলো নারীদেহের এক অসাধারণ ভাষা, যা বলে দেয়—একটি নতুন প্রাণের সূচনা হয়েছে। এই লক্ষণগুলো শুধু শারীরিক পরিবর্তন নয়, বরং এক নতুন জীবনের গল্প শুরুর সংকেত। তাই প্রথমবার যখন শরীরের অজানা কোনো বার্তা আসে, তখন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। সন্দেহ হলে গর্ভাবস্থা পরীক্ষার কিট ব্যবহার করা যায় অথবা ডাক্তারের কাছে যাওয়া যায়। কারণ, একটিই জীবন, একটিই মা হওয়ার প্রথম অনুভব—এটি যেন নিরাপদ ও শান্তিময় হয়, সেটাই সবচেয়ে জরুরি।

সূত্র: ল্যানসেট

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

শহিদুল আলম ও গাজার সঙ্গে আছি: প্রধান উপদেষ্টা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও অধিকার কর্মী শহিদুল আলমের পক্ষে সংহতি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের শিকার গাজার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

১৩ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বেশ গুরুত্ব দেয় চীন : শি জিনপিং

চীনা প্রেসি‌ডেন্ট ব‌লেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন এবং বাংলাদেশ পারস্পরিক আস্থা সুসংহত করে চলেছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতা প্রসারিত করেছে এবং তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব আরও গভীর করেছে।

১৭ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশ-চীনের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা

অভিনন্দন বার্তায় ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ৫০ বছর আগে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমশ বিকশিত হয়েছে এবং সহযোগিতা ফলপ্রসূ ফলাফল এনেছে, যা উদযাপনের যোগ্য।

১৮ ঘণ্টা আগে

ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৭৪

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ৯৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০২ জন, ঢাকা বিভাগে ৬৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৬৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৭ জন ও রাজশাহী বিভাগে ১১ জন ভর্তি হয়েছেন।

১৮ ঘণ্টা আগে