
বিবিসি বাংলা

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে ২০১০ সালের মার্চে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।
সবশেষ ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য পুনর্গঠন করে একই ট্রাইব্যুনাল।
পুনর্গঠনের আগে ১৫ বছরের বেশি সময়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ৫৭ টি মামলার রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ছয়জনের।
এদের মধ্যে পাঁচজন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং একজন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা।
২০১০ সালে গঠনের পর নানা আলােচনা এবং ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী, আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট, রায়কে ঘিরে স্কাইপ বিতর্ক এবং সাক্ষীদের নিয়ে বিতর্ক নানা ঘটনার জন্ম হয়েছিল সেসময়।
গত বছরের জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলার রায় হতে যাচ্ছে আজ ১৭ই নভেম্বর।
এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত গত এক বছরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১০টি।
আর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্তত ৩৭টি মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর বিবিসিকে জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায়ও শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
এই মামলায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন মামলা ও ঘটনার কথা চলুন জেনে আসি।
বিচারের শুরু যেখান থেকে
'দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩' আইনের অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক, গ্রেফতার, বিচার এবং সাজা দেওয়া হয়।
১৯৭৩ সালের এই আইনটি মূলত বাংলাদেশ কোলাবরেটর (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২-কে প্রতিস্থাপিত করেছে।
বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়াতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩, যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত একটি রাষ্ট্রীয় আইন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী জনগণের প্রতি যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তাদের বিচারের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এ আইনে সংশোধনী আনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরে ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবী প্যানেল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
ঢাকায় পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের বছরই জুলাই মাসে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
শুরুর দিকে একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম চললেও পরে ২০১২ সালের মার্চে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন সরকার।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বেশ কয়েকজন জামায়াতে ইসলামীর নেতার বিচার হয় ট্রাইব্যুনাল।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আব্দুল কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাশেম আলী, আবুল কালাম আজাদ, এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে তদন্ত সংস্থা।
এছাড়া জাতীয় পার্টির নেতা এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিল বিচারাধীন থাকায় কয়েকজন দণ্ডিত আসামি কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন, যার মধ্যে জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম অন্যতম, যিনি ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন।
সে সময়কার ৩০টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা ৫০টিরও বেশি আপিল সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়
জামায়াতে ইসলামীর রুকন আবুল কালাম আযাদ, যিনি বাচ্চু রাজাকার নামেও পরিচিত, তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ই ছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া প্রথম রায়।
২০১৩ সালের ২১শে জানুয়ারি ওই মামলার রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
জামায়াত নেতাদের ট্রাইব্যুনাল আইন চ্যালেঞ্জ
এদিকে, গ্রেফতার হওয়ার পর কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এই দুইজন জামায়াত নেতা ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কয়েকটি ধারা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত সংবিধানের প্রথম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
পরে একপর্যায়ে শুনানি শুরু হওয়ার পর জামায়াত নেতাদের আইনজীবীরা ওই রিট প্রত্যাহার করার আবেদন করলে আদালত উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়।
কাদের মোল্লার রায় ঘিরে বিক্ষোভ, গণজাগরণ মঞ্চ গঠন
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের মে মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে, ২০১৩ সালের পাঁচই ফেব্রুয়ারি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে ট্রাইব্যুনাল।
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় না হওয়া এবং রায়ের পর আদালতের বাইরে তার বিজয়সূচক 'ভি সাইন' প্রদর্শনের কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বাংলাদেশের অনেক মানুষ।
সেই ক্ষােভের সূত্র ধরে শাহবাগে লাগাতার বিক্ষোভ হয়, শাহবাগের এই বিক্ষোভের স্থান সেসময় গণজাগরণ মঞ্চ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
সেসময় ১৯৭৩ সালের আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের উচ্চতর আদালতে আপিল করার সুযোগ ছিল না।
পরে বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস করে।
এরপর ২০১৩ সালে তেসরা মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। একইসাথে খালাস চেয়ে আপিল করেন মি. মোল্লা।
সেবছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। পরে মি. মোল্লার করা রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়।
দণ্ড কার্যকর নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর সেই বছরের ১২ই ডিসেম্বর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড
২০১১ সালের চৌঠা জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষে ২০১৩ সালের নয়ই মে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এটি ছিল ট্রাইব্যুনালের চতুর্থ রায়।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা এবং খুনের অভিযোগসহ মোট পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে।
প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়েছিল, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন।
সাঈদীর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি নিখোঁজ
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯শে জুন গ্রেফতার করা হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে।
পরে ২০১১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মি. সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিচার শেষে, ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এই রায়ের বিরুদ্ধে মি. সাঈদী আপিল করেন। সেটি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া তৃতীয় রায়।
পরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় তাকে।
এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করলেও আপিল বিভাগ আগের রায় বহাল রাখে।
মামলায় ট্রাইব্যুনালে মি. সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে ঘিরে সেসময় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়।
কারণ ২০১২ সালের পাঁচই নভেম্বর, সাক্ষ্য দিতে গেলে ট্রাইব্যুনালের গেইট থেকেই নিখোঁজ হন মি. বালি। পরে তাকে ভারতে পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়।
বিবিসি বাংলার ২০১৩ সালের ১৬ই মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুখরঞ্জন বালি ভারতে ধরা পড়ার পর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে বলেছিলেন, তিনি তার ভাই পরিতোষ বালির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সেখানে গেছেন।
সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা অভিযোগ এবং মামলার রায় সংক্রান্ত আদালতের নথিপত্র বিবিসি বাংলা হাতে পেয়েছে, যাতে দেখা যায়, তিনি ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ স্বেচ্ছায় স্বীকার করে নিয়েছেন।
পরে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২১শে অগাস্ট, মি. বালি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে প্রসিকিউশনের কাছে পাল্টা অভিযোগ দাখিল করেন।
তাতে তিনি বলেন, ২০১২ সালের পাঁচই নভেম্বর সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে গেলে সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি ও পুলিশ তাকে পিকআপে তুলে নিয়ে যায়।
পরে তাকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে বিজিবির সহায়তায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত বৈকারী বাজার সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন।
মি. সাঈদী ২০২৩ সালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
গোলাম আযমের বিচার
২০১০ সালেই জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারি আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি তর্ক চলে।
পরে ২০১৩ সালের ১৫ই জুলাই মি. আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল।
এসব অভিযোগের বেশিরভাগই হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র,পরিকল্পনা,উস্কানি এবং সংশ্লিষ্টতার।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, গোলাম আযমের অপরাধ বিবেচনায় তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর আগে আরও চারটি রায় ঘোষণা করলেও গোলাম আযমের এই রায়টি নানা দিক থেকে ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে, বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গোলাম আযমকে অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে মি. আযম সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলেও কারাগারে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আপিলটি অকার্যকর বা বাতিল হয়ে যায়।
আপিলে খালাসের প্রথম মামলা
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
একাত্তরে মিস্টার ইসলাম ছিলেন জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি এবং পদাধিকার বলেই রংপুরের আলবদর বাহিনীর প্রধান।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর মি. ইসলাম দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় মি. ইসলামই প্রথম পুনর্বিবেচনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিলে খালাস পেয়েছেন।
মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ড
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা মীর কাশেম আলী ২০১২ সালের জুনে গ্রেফতার হন।
পরের বছর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এর বিরুদ্ধে আপিল করলে সর্বোচ্চ আদালতেও তা বহাল থাকে।
এরপর ২০১৬ সালের ৩০শে অগাস্ট আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
ওই বছরই তেসরা সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড ও স্কাইপ কেলেঙ্কারি
২০১২ সালে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর, পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের পহেলা অক্টোবর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মোট ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।
তিনিই প্রথম কোনও বিএনপি নেতা যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইবুনালে সাজার রায় ঘোষণা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা যখন রায় ঘোষণা করছিলেন তখন কাঠগড়ায় থাকা মি. চৌধুরী ওই রায় অনলাইনে ফাঁস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন।
পরে তার পরিবারের সদস্যরাও বেশ কিছু নথি ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের দেখান, যেটি তারা রায়ের কপি বলে দাবি করেন।
যদিও সেসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রসিকিউশন পক্ষ এমন অভিযোগ নাকচ করে দেয়।
তবে পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ও মুখপাত্র এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা উদ্ঘাটনে তদন্তের জন্য শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসের এই ঘটনা 'স্কাইপ কেলেঙ্কারি' নামে বহুল পরিচিত।
তবে রায় ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং স্ত্রী ফারহাৎ কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
মি. চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়ার প্রায় তিন মাস পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওই দুইজনের বিচার শুরু হয়েছিল।
সে সময় তারা আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবী করেছিলেন।
তৎকালীন প্রসিকিউটর তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করে সরকার।
অপসারণের আদেশ সম্বলিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তুরিন আফরোজকে "শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের" দায়ে অপসারণ করা হয়েছে।
তবে, আইন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এসসময় বিবিসি বাংলাকে বলেন, তুরিন আফরোজকে যে মামলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো, তিনি সেই মামলার আসামির সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করে পেশাগত অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের পরিচয় দিয়েছেন।
গণঅভ্যুত্থানের পরে চলতি বছরের সাতই এপ্রিল, একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তুরিন আফরোজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শেখ হাসিনার বিচার
গতবছর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে ২০২৪ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।
পরে গত বছরের নভেম্বরে ট্রাইব্যুনাল আইনে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়।
গত বছরের ১৭ই অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
ওইদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওইসময় শেখ হাসিনাই মামলাটির একমাত্র আসামি ছিলেন।
পরে এ বছরের মার্চে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাবেক আইজিপিকে এ মামলায় আসামি করতে প্রসিকিউশনের করা আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল।
এ বছরের ১২ই মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। তিনি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ মামলায় পলাতক আসামি।
বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সাবেক আইজিপি মি. মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামি। তিনি এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ১৭ই নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে ২০১০ সালের মার্চে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।
সবশেষ ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য পুনর্গঠন করে একই ট্রাইব্যুনাল।
পুনর্গঠনের আগে ১৫ বছরের বেশি সময়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ৫৭ টি মামলার রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ছয়জনের।
এদের মধ্যে পাঁচজন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং একজন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা।
২০১০ সালে গঠনের পর নানা আলােচনা এবং ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী, আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট, রায়কে ঘিরে স্কাইপ বিতর্ক এবং সাক্ষীদের নিয়ে বিতর্ক নানা ঘটনার জন্ম হয়েছিল সেসময়।
গত বছরের জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলার রায় হতে যাচ্ছে আজ ১৭ই নভেম্বর।
এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত গত এক বছরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১০টি।
আর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্তত ৩৭টি মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর বিবিসিকে জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায়ও শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
এই মামলায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন মামলা ও ঘটনার কথা চলুন জেনে আসি।
বিচারের শুরু যেখান থেকে
'দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩' আইনের অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক, গ্রেফতার, বিচার এবং সাজা দেওয়া হয়।
১৯৭৩ সালের এই আইনটি মূলত বাংলাদেশ কোলাবরেটর (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২-কে প্রতিস্থাপিত করেছে।
বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়াতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩, যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত একটি রাষ্ট্রীয় আইন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী জনগণের প্রতি যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তাদের বিচারের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এ আইনে সংশোধনী আনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরে ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবী প্যানেল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
ঢাকায় পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের বছরই জুলাই মাসে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
শুরুর দিকে একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম চললেও পরে ২০১২ সালের মার্চে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন সরকার।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বেশ কয়েকজন জামায়াতে ইসলামীর নেতার বিচার হয় ট্রাইব্যুনাল।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আব্দুল কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাশেম আলী, আবুল কালাম আজাদ, এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে তদন্ত সংস্থা।
এছাড়া জাতীয় পার্টির নেতা এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিল বিচারাধীন থাকায় কয়েকজন দণ্ডিত আসামি কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন, যার মধ্যে জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম অন্যতম, যিনি ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন।
সে সময়কার ৩০টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা ৫০টিরও বেশি আপিল সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়
জামায়াতে ইসলামীর রুকন আবুল কালাম আযাদ, যিনি বাচ্চু রাজাকার নামেও পরিচিত, তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ই ছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া প্রথম রায়।
২০১৩ সালের ২১শে জানুয়ারি ওই মামলার রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
জামায়াত নেতাদের ট্রাইব্যুনাল আইন চ্যালেঞ্জ
এদিকে, গ্রেফতার হওয়ার পর কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এই দুইজন জামায়াত নেতা ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কয়েকটি ধারা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত সংবিধানের প্রথম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
পরে একপর্যায়ে শুনানি শুরু হওয়ার পর জামায়াত নেতাদের আইনজীবীরা ওই রিট প্রত্যাহার করার আবেদন করলে আদালত উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়।
কাদের মোল্লার রায় ঘিরে বিক্ষোভ, গণজাগরণ মঞ্চ গঠন
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের মে মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে, ২০১৩ সালের পাঁচই ফেব্রুয়ারি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে ট্রাইব্যুনাল।
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় না হওয়া এবং রায়ের পর আদালতের বাইরে তার বিজয়সূচক 'ভি সাইন' প্রদর্শনের কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বাংলাদেশের অনেক মানুষ।
সেই ক্ষােভের সূত্র ধরে শাহবাগে লাগাতার বিক্ষোভ হয়, শাহবাগের এই বিক্ষোভের স্থান সেসময় গণজাগরণ মঞ্চ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
সেসময় ১৯৭৩ সালের আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের উচ্চতর আদালতে আপিল করার সুযোগ ছিল না।
পরে বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস করে।
এরপর ২০১৩ সালে তেসরা মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। একইসাথে খালাস চেয়ে আপিল করেন মি. মোল্লা।
সেবছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। পরে মি. মোল্লার করা রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়।
দণ্ড কার্যকর নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর সেই বছরের ১২ই ডিসেম্বর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড
২০১১ সালের চৌঠা জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষে ২০১৩ সালের নয়ই মে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এটি ছিল ট্রাইব্যুনালের চতুর্থ রায়।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা এবং খুনের অভিযোগসহ মোট পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে।
প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়েছিল, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন।
সাঈদীর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি নিখোঁজ
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯শে জুন গ্রেফতার করা হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে।
পরে ২০১১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মি. সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিচার শেষে, ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এই রায়ের বিরুদ্ধে মি. সাঈদী আপিল করেন। সেটি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া তৃতীয় রায়।
পরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় তাকে।
এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করলেও আপিল বিভাগ আগের রায় বহাল রাখে।
মামলায় ট্রাইব্যুনালে মি. সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে ঘিরে সেসময় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়।
কারণ ২০১২ সালের পাঁচই নভেম্বর, সাক্ষ্য দিতে গেলে ট্রাইব্যুনালের গেইট থেকেই নিখোঁজ হন মি. বালি। পরে তাকে ভারতে পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়।
বিবিসি বাংলার ২০১৩ সালের ১৬ই মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুখরঞ্জন বালি ভারতে ধরা পড়ার পর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে বলেছিলেন, তিনি তার ভাই পরিতোষ বালির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সেখানে গেছেন।
সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা অভিযোগ এবং মামলার রায় সংক্রান্ত আদালতের নথিপত্র বিবিসি বাংলা হাতে পেয়েছে, যাতে দেখা যায়, তিনি ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ স্বেচ্ছায় স্বীকার করে নিয়েছেন।
পরে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২১শে অগাস্ট, মি. বালি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে প্রসিকিউশনের কাছে পাল্টা অভিযোগ দাখিল করেন।
তাতে তিনি বলেন, ২০১২ সালের পাঁচই নভেম্বর সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে গেলে সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি ও পুলিশ তাকে পিকআপে তুলে নিয়ে যায়।
পরে তাকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে বিজিবির সহায়তায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত বৈকারী বাজার সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন।
মি. সাঈদী ২০২৩ সালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
গোলাম আযমের বিচার
২০১০ সালেই জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারি আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি তর্ক চলে।
পরে ২০১৩ সালের ১৫ই জুলাই মি. আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল।
এসব অভিযোগের বেশিরভাগই হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র,পরিকল্পনা,উস্কানি এবং সংশ্লিষ্টতার।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, গোলাম আযমের অপরাধ বিবেচনায় তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর আগে আরও চারটি রায় ঘোষণা করলেও গোলাম আযমের এই রায়টি নানা দিক থেকে ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে, বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গোলাম আযমকে অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে মি. আযম সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলেও কারাগারে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আপিলটি অকার্যকর বা বাতিল হয়ে যায়।
আপিলে খালাসের প্রথম মামলা
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
একাত্তরে মিস্টার ইসলাম ছিলেন জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি এবং পদাধিকার বলেই রংপুরের আলবদর বাহিনীর প্রধান।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর মি. ইসলাম দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় মি. ইসলামই প্রথম পুনর্বিবেচনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিলে খালাস পেয়েছেন।
মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ড
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা মীর কাশেম আলী ২০১২ সালের জুনে গ্রেফতার হন।
পরের বছর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এর বিরুদ্ধে আপিল করলে সর্বোচ্চ আদালতেও তা বহাল থাকে।
এরপর ২০১৬ সালের ৩০শে অগাস্ট আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
ওই বছরই তেসরা সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড ও স্কাইপ কেলেঙ্কারি
২০১২ সালে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর, পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের পহেলা অক্টোবর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মোট ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।
তিনিই প্রথম কোনও বিএনপি নেতা যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইবুনালে সাজার রায় ঘোষণা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা যখন রায় ঘোষণা করছিলেন তখন কাঠগড়ায় থাকা মি. চৌধুরী ওই রায় অনলাইনে ফাঁস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন।
পরে তার পরিবারের সদস্যরাও বেশ কিছু নথি ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের দেখান, যেটি তারা রায়ের কপি বলে দাবি করেন।
যদিও সেসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রসিকিউশন পক্ষ এমন অভিযোগ নাকচ করে দেয়।
তবে পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ও মুখপাত্র এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা উদ্ঘাটনে তদন্তের জন্য শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসের এই ঘটনা 'স্কাইপ কেলেঙ্কারি' নামে বহুল পরিচিত।
তবে রায় ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং স্ত্রী ফারহাৎ কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
মি. চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়ার প্রায় তিন মাস পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওই দুইজনের বিচার শুরু হয়েছিল।
সে সময় তারা আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবী করেছিলেন।
তৎকালীন প্রসিকিউটর তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করে সরকার।
অপসারণের আদেশ সম্বলিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তুরিন আফরোজকে "শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের" দায়ে অপসারণ করা হয়েছে।
তবে, আইন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এসসময় বিবিসি বাংলাকে বলেন, তুরিন আফরোজকে যে মামলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো, তিনি সেই মামলার আসামির সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করে পেশাগত অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের পরিচয় দিয়েছেন।
গণঅভ্যুত্থানের পরে চলতি বছরের সাতই এপ্রিল, একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তুরিন আফরোজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শেখ হাসিনার বিচার
গতবছর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে ২০২৪ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।
পরে গত বছরের নভেম্বরে ট্রাইব্যুনাল আইনে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়।
গত বছরের ১৭ই অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
ওইদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওইসময় শেখ হাসিনাই মামলাটির একমাত্র আসামি ছিলেন।
পরে এ বছরের মার্চে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাবেক আইজিপিকে এ মামলায় আসামি করতে প্রসিকিউশনের করা আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল।
এ বছরের ১২ই মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। তিনি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ মামলায় পলাতক আসামি।
বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সাবেক আইজিপি মি. মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামি। তিনি এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ১৭ই নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন)। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে।
৩ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন)। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে।
৩ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায়ের আগের রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১৩ ঘণ্টা আগে