সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গেল ঐকমত্য

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩: ১৯
সীমান্ত সম্মেলনে দুপক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি (ডানে) ও বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী। ছবি: বিএসএফ

সীমান্তের শূন্য রেখার দেড় শ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ, পাচারসহ নানা ইস্যুতে বিরোধের মধ্যেই শেষ হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী দুই বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলন। চার দিনের এই সম্মেলনে আলোচনার টেবিলে উঠে আসে দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে চলমান নানা ইস্যু।

সম্মেলন শেষে দুই বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাই ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনার দাবিও করেছেন। তবে সীমান্তের শূন্য রেখার দেড় শ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন নিয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। সীমান্ত সংক্রান্ত আরও কিছু ইস্যুরও কোনো রফা হয়নি।

দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচাল পর্যায়ের বৈঠক ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। ভারতের নয়া দিল্লিতে চার দিন ধরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি। বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। দুই বাহিনীর মধ্যে চার দিন বৈঠক হয়েছে আরও অনেকগুলো।

এসব বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল সীমান্তের দেড় শ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ। গত মাসখানেক সময়ের মধ্যে এই ইস্যুতে সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থানে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। কোথাও কোথাও স্থানীয় গ্রামবাসীও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও লালমনিরহাট জেলাসংলগ্ন সীমান্তের ভারতের দিকের অংশে বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বেশি। এ নিয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতকে পালটাপালটি তলব করার ঘটনাও ঘটেছে।

সীমান্তে দেড় শ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে বিরোধ

কাঁটাতারের বেড়া ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলারের দেড় শ গজের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের পরিপন্থি। বিজিবি মহাপরিচালক জানান, এ রকম স্থানে কিছু নির্মাণ করতে হলে সীমান্তবর্তী দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কেন ওই নির্মাণ জরুরি, তা বলতে হবে। দুই দেশ রাজি হলে তবেই এই ধরনের নির্মাণ করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সীমান্ত সুরক্ষার জন্য আধুনিক কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া জরুরি। সীমান্তে চোরাকারবার ও মানবপাচারের মতো অপরাধ প্রতিরোধ করতে এই বেড়া দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা ও চুক্তি মেনেই বসানোর দাবিও করে ভারত।

এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থানে দেড় শ গজের মধ্যেও ভারতকে বেড়া বসানোর লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুমতি অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যাহার করবে কি না, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

সীমান্ত সম্মেলনে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে যে সিদ্ধান্ত

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, সম্মেলন শেষে বৃহস্পতিবার এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি বলেন, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, তবে ঐকমত্য আসেনি।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীও বলেন, সীমান্তের দেড় শ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে, এমন কোনো প্রতিশ্রুতি তারা দেননি।

সম্মেলন শেষে বিএসএফও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সীমান্তের দেড় শ গজের মধ্যে অবকাঠামো বসানো বা নির্মাণের বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায় উত্থাপন করা হয়েছিল। তবে বৈঠকে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে, সেখানে এ বিষয়ের উল্লেখ নেই।

সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই এ বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি। তিনি বলেন, সীমান্তের এ রকম জায়গায় কিছু উন্নয়নমূলক কাজ আমরা দুপক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে করে থাকি। তবে কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি ঘটে। তখন কাজ থামিয়ে আমরা দুপক্ষ আলোচনা করে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করে থাকি। আগামী দিনেও একইভাবে এ ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

BGB-BSF-Border-Summit-At-New-Delhi-Ended-On-20-02-2025-(2)

দিল্লিতে বৃহস্পতিবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে দুই বাহিনীর প্রধান যৌথ স্মারকে সই করেন। ছবি: বিএসএফ

‘অপরাধী’ ঠেকাতে সমন্বিত টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

বিবিসি বাংলা ও ডয়েচে ভেলে বাংলার খবরে বলা হয়, সীমান্তে বিএসএফের ওপর সীমান্তের অন্য পার থেকে অপরাধী বা দুষ্কৃতিকারীদের হামলা ঠেকাতে দুপক্ষই যৌথভাবে কাজ করবে বলে সম্মত হয়েছে। বিশেষ করে গভীর রাতে ও ভোরের দিকে সীমান্তে ‘সমন্বিত টহল’ বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দিল্লিতে বিএসএফের একটি শীর্ষস্থানীয় সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, বিজিবির ওপরে ভারতের দিক থেকে সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে তারাও সব রকম ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের কোনো দিকে কোনো প্রাণহানি ছাড়াই কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও দুই বাহিনী কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে।

সীমান্তে অনুপ্রবেশ বাড়েনি

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের দিক থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা বাড়েনি বলে দুই বাহিনীর পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে সংখ্যালঘুদের ভারতে চলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে সীমান্তে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলে কিছু ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনুপ্রবেশ মোটেই বাড়েনি।

বিএসএফ মহাপরিচালকও এ তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ৫ অগাস্টের পর থেকে সীমান্তের দুই দিকে দুপক্ষই শান্তিপূর্ণভাবে মোতায়েন আছে, যেন কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ না ঘটে বা তাতে রাশ টানা যায়।

সীমান্তে প্রাণহানি ঠেকাতে কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাণহানির ইস্যুটিও বিজিবির পক্ষ থেকে বৈঠকে প্রতিবারের মতোই তোলা হয়েছিল। জবাবে বিএসএফের পক্ষ থেকেও আগের মতোই বলা হয়েছে, সীমান্তের কোনো দিকে কোনো প্রাণহানি ছাড়াই যেন ‘কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা’ নিশ্চিত করা যায়, এটা তাদের লক্ষ্য থাকবে।

বৈঠকে বিএসএফ আবারও সীমান্তে তাদের ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করা’র পুরানো নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে বিএসএফ বারবারই এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও সাম্প্রতিক অতীতেও বারবার সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সীমান্তে যৌথ টহলদারি ও পাহারা বাড়িয়ে, জনসচেতনতা কর্মসূচি চালিয়ে, সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন ধরনের আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এবং দুই বাহিনীর মধ্যে ‘রিয়েল-টাইম’ তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে প্রাণহানি এড়ানো যেতে পারে বলে বিএসএফের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর (ইন্ডিয়ান ইনসারজেন্ট গ্রুপ, আইআইজি) বিরুদ্ধে বিজিবিকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসএফ। অভিযোগ রয়েছে, এই গোষ্ঠীগুলো ভারতে জঙ্গি হামলা চালানোর ছক কষছে। এদের ঠেকাতে সীমান্তে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আগরতলা সীমান্তে খালে পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিজিবি। সীমান্তবর্তী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা তুলেছে। ভারত সীমান্তে সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীদের আনাগোনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজিবি।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ!

এই কঠোর কর্মসূচির প্রভাবে সারা দেশের প্রায় ৬৫ হাজারেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের অবস্থান কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে।

৪ ঘণ্টা আগে

১৫ জেলায় নতুন ডিসি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা ও মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে এই বদলি ও নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

৪ ঘণ্টা আগে

বিএনপির সঙ্গে কাজ করার আশ্বাস চব্বিশের শহীদ পরিবারের

শনিবার সন্ধ্যায় (৮ নভেম্বর) এসব পরিবারের সদস্যরা রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এসে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ করে এমন আশ্বাস দেন।

১৪ ঘণ্টা আগে

ইসির ২৩ কর্মকর্তাকে বদলি

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২১ নির্বাচন কর্মকর্তা ও দুজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় বদলি করা হলো। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

১৬ ঘণ্টা আগে