ভারত ইস্যুতে তারেকের মন্তব্যে কী বলছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা

ডয়েচে ভেলে
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ১১
তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভারত নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। ভারতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তারেক রহমান এই কথাগুলো বলেছেন আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। তিনি আসলে ভোটদাতাদের বার্তা দিতে চাইছেন।

বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান ভারত প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের স্বার্থ দেখবেন। তিনি পানির হিস্যা চান, তিনি দেখতে চান না, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে, তিনি মানুষের হিস্যা ও হিসাব চান। শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ভারত যদি স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয় তো তার কিছু করার নেই৷ বাংলাদেশের মানুষের সিদ্ধান্ত, শীতল সম্পর্ক থাকবে, তাকে মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে।

কী বলছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা?

ওপি জিন্দল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘'তারেক রহমান তার নির্বাচনি কনস্টিটুয়েন্সির কথা ভেবে এই কথাগুলো বলেছেন। তারেক একটা পপুলিস্ট বা জনমোহিনী অবস্থান নিয়েছেন। তিনি এমন কথা বলেছেন, যাতে তার সমর্থকরা খুশি হবেন। এটাকে একটা নির্বাচনি আবেদন বলা যেতে পারে।‘'

১৯৭১ সালের যুদ্ধে অংশ নেওয়া অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘'তারেক রহমানের বাবা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৭১ সালের অপারেশনের আগে বার দুয়েক দেখা হয়েছিল এবং কথা হয়েছিল। এখানে মনে রাখা দরকার, বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখনো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতলই ছিল। খুব খারাপ ছিল না, আবার খুব উষ্ণও ছিল না।‘'

তিনি মনে করেন, ‘'বাংলাদেশে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তারেক রহমানকে আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাতে হবে। তিনি সেটাই করেছেন।‘'

কাজের সূত্রে বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার সময় এবং আওয়ামী লীগের শাসনকাল কাছ থেকে দেখা কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘'প্রতিটি দেশই নিজের স্বার্থ দেখে। সেইমতো সিদ্ধান্ত নেয়। এটা নতুন কোনো কথা নয়। তবে যে দলই ক্ষমতায় আসুক তাদের ভূরাজনীতির কথা মাথায় রাখতেই হবে।‘'

সীমান্তহত্যা নিয়ে উৎপল ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘'সীমান্তে আমাদের বিএসএফ, ওদের বিজিবি আছে। গুলি দুইদিক থেকেই চলে। সীমান্ত এমনিতে ৩৬০ দিন শান্ত থাকে। দুই তরফের মধ্যে উৎসবে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। সীমান্তে গুলি ও মৃত্যু একেবারেই কাঙ্খিত নয়, খুবই দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু অনুপ্রবেশ, চোরাচালানের বাস্তবতাকেও তো অস্বীকার করা যায় না। আর এটা একতরফা হয় না, বিএসএফ ও বিজিবি দুই পক্ষের গুলিতেই মানুষ মারা গেছেন।‘'

শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, ‘'তিস্তা ছাড়া আর তো জল নিয়ে খুব একটা সমস্যা নেই। তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে গত দেড় বছরে তারেক রহমানের কাছ থেকে ভারতবিরোধী বিবৃতি পাইনি। নির্বাচনের আগে তিনি এই ধরনের কথা বলবেন, সেটা প্রত্যাশিত। তারেক রহমানের কথাতে আমি অন্তত আশ্চর্য হইনি।‘'

সুমিত দত্ত মজুমদার মনে করেন, ‘‘তিস্তা চুক্তির সুযোগ তো রয়েছে। আলোচনা হতে পারে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে বড় বিষয় হলো, কট্টরপন্থিদের সঙ্গে তারেক রহমান ও তার দলের সম্পর্ক কী হবে সেই বিষয়টি?''

তিনি মনে করেন, ‘'শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি মানবিক বিষয়। রাজনীতির বিষয়টি বাদ দিয়েই এটা বলা যায়। শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল। তিনি উত্তরপূর্বের চরমপন্থিদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেননি। এ কথাটাও মনে রাখতে হবে।''

উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘'বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক রীতি অনুসরণ করার কথা বলে। অতীতে তাদের শাসনকালেই ভারতে আশ্রয় নেওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বাংলাদেশে ফিরতে পেরেছিলেন।''

'প্রত্যাশিত মন্তব্য'

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সম্প্রতি বলেছেন, দিল্লি কেবল মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গেই ভারত কথা বলবে। ফলে ভারত এখন নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় আসার অপেক্ষা করছে। তারপরেই বোঝা যাবে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সকলেই জানিয়েছেন, তারেক রহমানের এই প্রতিক্রিয়ায় তাদের কাছে প্রত্যাশিত। নির্বাচনের সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা আক্রমণাত্মক থাকেন। তারেক রহমান যে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট‘ নীতির কথা বলেছেন, সেটাও প্রত্যাশিত। এখন বিশ্বজুড়ে সব রাজনীতিকই একই কথা বলছেন।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহযোগিতা করছে সরকার : প্রেস সচিব

শফিকুল আলম আরও বলেন, খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দেশবাসীকে দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

৬ ঘণ্টা আগে

আজ তফসিল চূড়ান্তের সম্ভাবনা

সভায় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক অগ্রগতি, পোস্টাল ভোটিংয়ের সময়সীমা নির্ধারণসহ মোট ১০টি বিষয় আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, আগামী ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসি সদস্যরা প্রস্তুতি অবহিত করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, আজকের বৈঠকেই ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ চূড়ান

৬ ঘণ্টা আগে

প্রার্থিতা ঘিরে মিত্রদের অসন্তোষ নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি?

আর এটিই ক্ষুব্ধ করেছে বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত কয়েকটি দলকে। আবার কোনো মিত্র দল মনে করছে আলোচনার মাধ্যমেই এসব বিষয়ের নিষ্পত্তি হওয়ার সময় ও সুযোগ একেবারেই ফুরিয়ে যায়নি।

১৮ ঘণ্টা আগে

নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সভা রবিবার

এ ছাড়া তফসিলসহ ১০টি বিষয়ে সভার আলোচ্যসূচি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তফসিলের আগের ও পরের কার্যক্রমগুলো, গণভোট আয়োজনসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা, মাঠ পর্যায়ে সর্বোচ্চ যোগাযোগ, মতবিনিময়, সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদি। ‎

১৮ ঘণ্টা আগে