টাঙ্গাইলজুড়ে ক্ষোভ, নিন্দা

প্রশাসনের অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত ‘জুলাই শহীদ’ হৃদয়ের পরিবার

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৩৬
জুলাই শহীদ হৃদয়। ছবি : রাজনীতি ডটকম

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ‘জুলাই বিপ্লবে’ পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজছাত্র হৃদয়ের পরিবার উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় জেলাজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারঘোষিত 'জুলাই শহীদ দিবস' উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে এসব অনুষ্ঠানে হৃদয়ের পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

গত বছরের ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হৃদয়ের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ তাকে গলির মধ্যে থেকে টেনে এনে প্রকাশ্যে গুলি করার পর তার মরদেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। হৃদয় গোপালপুর উপজেলার আলমনগর উত্তরপাড়া গ্রামের দিনমজুর লাল মিয়ার ছেলে। হৃদয় হেমনগর ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করতো। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে ভগ্নীপতি ইব্রাহীমের সাথে অটোরিকশা চালাত সে। তার আয়ে পঙ্গু বাবার চিকিৎসা, সংসার ও নিজের পড়াশোনার খরচ চলতো।

বুধবার গোপালপুর উপজেলা পরিষদ হলরুমে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও হৃদয়ের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হৃদয়ের পরিবার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

হৃদয়ের মা রেহানা বেগম বলেন, 'আমার ছেলের লাশ এখনো পাইনি। ওর আয়েই চলতো সংসার। এখন সব কিছু থেমে গেছে। বাড়িতে পঙ্গু স্বামী। সম্পত্তি বলতে তিন শতাংশের ভিটে। মহাজনী ঋণের আড়াই লক্ষ টাকায় ছেলেকে অটো কিনে দেই। এখন অটোর চাকা বন্ধ হওয়ায় সংসারের চাকাও বন্ধ হওয়ার দশা।'

হৃদয়ের ভাগ্নী জেসমিন বলেন, 'অনেক শহীদ পরিবার সরকারি অনুদান পেলেও, লাশ গুম হওয়ায় হৃদয়ের নাম শহীদ তালিকায় ওঠেনি। সম্প্রতি শহিদ তালিকায় হৃদয়কে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে গোপালপুর উপজেলা পরিষদ ঘেরাও এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। আজকের (বুধবারের) অনুষ্ঠানে আমাদের পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ না জানানোয় প্রমাণিত হয়, গোপালপুর উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা লুকিয়ে রয়েছে।'

এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তুহিন হোসেন বলেন, 'আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দেওয়া হয়েছিল। কেন তারা হৃদয়ের পরিবারকে ডাকেনি, তা জানা নেই। তাছাড়া জুলাই ফাউন্ডেশনের শহীদ তালিকায় হৃদয়ের নাম যুক্ত হয়নি। তবে তার নাম শহীদ তালিকায় যুক্ত করতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলছে।'

স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারাও শহীদ দিবসে হৃদয়ের পরিবারের অনুপস্থিতিকে বৈষম্যমূলক ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।

গোপালপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর হাবিবুর রহমান জানান, তার দলের নেতারা হৃদয়ের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে শহিদদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্তকরণ ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া জুলাই শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে তার পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ না জানানোর ঘটনায় নিন্দা জানান তিনি।

গোপালপুর পৌর বিএনপির সম্পাদক চাঁন মিয়া বলেন, 'হৃদয় ৫ আগষ্ট শহীদ হন এটা সবাই জানেন। উপজেলা প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে বৈষম্য করেছে।'

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

গোপালগঞ্জের সহিংসতায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি সরকারের

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা, সহিংসতা এবং মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

১০ ঘণ্টা আগে

গোপালগঞ্জের ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোপালগঞ্জের ঘটনায় যারা অন্যায় করেছে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে, কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

১১ ঘণ্টা আগে

সুপার মার্কেটের আগুনে ইরাকে ৫০ জনের মৃত্যু

ইরাকের একটি শপিংমলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৩ ঘণ্টা আগে

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ১৪

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

১৩ ঘণ্টা আগে