রাজশাহীতে ডা. কাজেম হত্যা

দুই বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল আসামিরা, তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ

রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহীর প্রখ্যাত চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজেম আলী হত্যাকাণ্ডে ছয়জন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্ত মোস্তফাসহ আরও দুইজন এখনও পলাতক রয়েছেন। এই ঘটনায় তদন্তে গড়িমসি ও মূল খুনিদের গ্রেফতারে বিলম্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সহকর্মী চিকিৎসকরা।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ফোরামের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সভাপতি প্রফেসর ডা. ওয়াসিম হোসেন, এনডিএফ-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এনডিএফ রাজশাহীর সভাপতি ডা. রেজাউল ইসলাম, সহ-সভাপতি ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এএসএম আব্দুল্লাহ এবং শহীদ ডা. কাজেম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ডা. মশিউর রহমানসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা।

লিখিত বক্তব্যে ডা. মশিউর রহমান বলেন, “২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর ডা. কাজেম আলীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। পরদিন তাঁর স্ত্রী রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।”

তিনি আরও জানান, পুলিশ মোবাইলের সিডিএআর বিশ্লেষণ করে ছয়জন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে গাড়িচালকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল আসামি মোস্তফাসহ দুজন এখনও পলাতক।

ডা. মশিউর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ভয় পাচ্ছি, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নাও হতে পারে। দুই বছরেও মূল খুনিদের ধরা হয়নি।”

ডা. কাজেমের ব্যাচমেট ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “মূল অভিযুক্ত মহিদুল ইসলাম মোস্তফা, পেশায় বাবুর্চি। তিনি নগরীর শিল্পীপাড়ার বাসিন্দা। ১৬৪ ধারায় শাহাজাদা নামে এক আসামি স্বীকার করেছে—‘আমি ছিলাম, মোস্তফাও ছিল’। এটি নিছক ব্যক্তিগত নয়, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।”

এনডিএফ রাজশাহীর সহ-সভাপতি ডা. মুর্শেদ জামান মিঞা বলেন, “ঘটনাটি নির্বাচনের আগে ঘটে। তখন আমাদের অনেকের নাম কিলিং লিস্টে ছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, নিরাপত্তা নিতে। পরে জানতে পারি, তৎকালীন আরএমপি কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ফেলেছেন।”

রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও এনডিএফ-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, “ডা. কাজেম আলী হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওইদিনই আরও এক পল্লী চিকিৎসক খুন হন। দেশে এ ধরনের গুম-খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

প্রফেসর ডা. ওয়াসিম হোসেন বলেন, “রাজনীতি বাদ দিন—ডা. কাজেম একজন নাগরিক ও চিকিৎসক। তাঁকে খুন করা হয়েছে, এটি সত্য। খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করে চার্জশিট দিতে হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।”

পরে, খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে চিকিৎসকরা দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. ফয়সল আলম, প্রফেসর ডা. রেজাউল ইসলাম, প্রফেসর ডা. হাসানুজ্জামান হাসু, ডা. মুর্শেদ জামান মিঞা, ডা. মশিউর রহমানসহ বহু চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী অংশ নেন।

চিকিৎসক নেতারা বলেন, “আমরা রাস্তায় নেমেছি রোগীদের কষ্ট দিয়ে। কিন্তু ডা. কাজেম আলীর হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা চুপ থাকব না।”

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. গাজিউর রহমান বলেন, “মামলাটি রাজশাহী পিবিআই তদন্ত করছে। তারাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে।”

তবে মামলার অগ্রগতি জানতে পিবিআই রাজশাহীর ইউনিট ইনচার্জ ও পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

আ.লীগের ঘাঁটি দখলে নিতে তৎপর বিএনপি-জামায়াত

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনটি মূলত অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার ছেলে রেজাউন আহমেদ তৌফিক এই আসনের দায়িত্ব নেন। তবে সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাপ-বেটা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেওয়ায় অনেক নেতাই আসনটি দখলের আশায় বুক বেঁধেছেন। এরই মধ্যে বিএনপির আধা-ডজনেরও বেশি নেতা

১১ ঘণ্টা আগে

৭ কোটি টাকার সেতু অকেজো, ৩ বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক নির্মিত এই সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ছিল সাত কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে মূল্যবান সেতুটি জনগণের কোনো কাজে আসছে না। স্থানীয়ভাবে কিছু মাটি ফেলে উঁচু সেতুটির প্রান্তের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে জন

১২ ঘণ্টা আগে

ট্রলারসহ ৭ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

তিনি বলেন, ‘টেকনাফে বঙ্গোপসাগরের অদূরে নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে ট্রলারসহ ৭ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি, যার মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশি ও ২ জন রোহিঙ্গা রয়েছে।’

১ দিন আগে

ভুয়া বিয়ের পর একসঙ্গে বসবাস, তরুণী গর্ভবতী হতেই পালিয়ে যাওয়া যুবক গ্রেপ্তার

ভুয়া বিয়ের নাটক সাজিয়ে এক তরুণীর সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস এবং পরে তাকে গর্ভবতী করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে মাসুম মন্ডল (২৭) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ বুধবার র‌্যাব-৫ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

১ দিন আগে