আওয়াল শেখ, খুলনা
এক যুগ পার করলেও এখনো নিজস্ব স্থায়ী ঠিকানা নেই খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির (এনডব্লিউইউ)। নেই পরিপূর্ণ একাডেমিক পরিবেশও। কেবলই সময়ের গায়ে জমেছে অনিয়মের ধুলো। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, অর্থনৈতিক দুর্ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা— এসব যেন প্রতিষ্ঠানের নিত্যদিনের সঙ্গী।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একের পর এক সতর্কবার্তা পৌঁছালেও তাতে কর্ণপাত তো দূরের কথা, প্রকাশ্যেই অবজ্ঞা করে গেছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান তালুকদার আব্দুল খালেক। দীর্ঘদিন ধরে এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিপ্রসূত নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্তে ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন এলেও রয়ে গেছে পুরনো ছায়া। এখনো তাকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে সরানো হয়নি । তারই সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া বর্তমান উপাচার্য দায়িত্বে থেকে আজও থেকে গেছেন সেই একই বন্ধনে আবদ্ধ। অতীতের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার— সব আড়াল করতেই যেন চলছে নিঃশব্দ আঁতাত।
২০১২ সালে খুলনার মাটিতে যাত্রা শুরু করে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। সূচনালগ্ন থেকেই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তার পাশে ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়া বইলেও বোর্ডের কাঠামোয় তেমন কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেনি। শুধু পরিবর্তন হয়েছেন চেয়ারম্যান, কিন্তু পুরনো প্রভাবশালী দুই নেতাকে ট্রাস্টি সদস্য রেখেই সাজানো হয়েছে নতুন বোর্ড।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া খুলনার শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দেশের অন্যান্য স্থানে যখন ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি চালাচ্ছিল, তখনো খুলনায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। তবে ৩০ জুলাই রাতে খুলনা সার্কিট হাউজে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে জীবননাশের হুমকি দেন তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম কামাল হোসেন। সেই সময়ে তারা পুলিশকে ছাত্রদের ওপর গুলি করার সুপ্রিম নির্দেশও দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাঈম মল্লিক বলেন, সেদিন সার্কিট হাউজে তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম কামাল হোসেন আমাদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেন। না মেনে নিলে পরিবারসহ জীবননাশের কথা বলেন। আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও ডেকে এনে একই হুমকি দেন। পরে মিডিয়ার সামনে আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি মর্মে স্টেটমেন্ট দিতে বাধ্য করেন।
ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা জানান, ওই সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশকেও তারা আন্দোলনের নামলে ছাত্রদের ওপর গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। ঠিক পরদিনই পুলিশ আমাদের ওপর গুলি ছোড়ে, গণগ্রেপ্তার চালায়।
নাঈম মল্লিক আরও বলেন, এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় তাদের রাখা হয়েছে, এতে আমরা মর্মাহত। আমরা অবিলম্বে তাদের এই পদ থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানাই। স্বৈরাচারদের এই পদে রেখে জুলাই আন্দোলনের পুরো ছাত্রসমাজের রক্তের সাথে বেইমানি করছে এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, কিছু আইনি জটিলতার কারণে তাদের আমরা বাদ দিতে পারিনি। তবে পরপর তিনটি বোর্ড সভায় কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাকে বাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম কামাল এরই মধ্যে দুটি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের আমরা ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়েও সাড়া পাইনি। তৃতীয়বার আবারও চিঠি পাঠানো হবে। এবার সাড়া না পেলে তাদের বাদ দেওয়ার জন্য যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।
ড. সেখ মো. এনায়েতুল বাবর ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের একজন অধ্যাপক। ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি তাকে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ নিয়োগ পাওয়ার জন্য এনায়েতুল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যে জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছিলেন, তাতে নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে চাকরি জীবনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের খুলনা মহানগর কার্যনির্বাহী পরিষদের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
জীবনবৃত্তান্তে লেখা হয়েছে, ড. এনায়েতুলের ফুফাতো ভাই অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, খালা খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হালিমা ইসলাম। এ ছাড়া তার এই নিয়োগের জন্য তৎকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তালুকদার আব্দুল খালেকের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেখ মো. এনায়েতুল বাবর এই দুই ট্রাস্টির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এ কারণেই তাদের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে টাকা লুটপাট হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনা যাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে উপাচার্যকে সহায়তা করছেন নতুন নিয়োগ পাওয়া দুই ট্রাস্টি মো. মিজানুর রহমান ও সৈয়দ হাফিজুর রহমান। এ প্রসঙ্গে জানতে এই দুই ট্রাস্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘তিনি আওয়ামী লীগের লোক হওয়ায় আমরা ট্রাস্টি বোর্ড থেকে তাকে বারবার পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছি। তবে তিনি কোনোভাবেই পদত্যাগ করতে রাজি নন। এই নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।’
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক এনায়েতুল বাবর বলেন, আমি আওয়ামী লীগের লোক— এটি সত্য। এর বাইরে যাওয়ার আমার সুযোগ নেই। তবে আমি আওয়ামী আদর্শের হলেও লোক হিসেবে সৎ, কোনো দুর্নীতি করি না।
ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বলার পরও কেন পদত্যাগ করছেন না— এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আমাকে এখানে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি যদি না সরান তাহলে পদত্যাগ করব কেন? আর যদি দেখি পরিস্থিতি খারাপ দিকে যাচ্ছে, এখানে আর সম্মান নিয়ে টিকে থাকা যাচ্ছে না, তখন পদত্যাগ করতে পারি। তবে সহজে পদত্যাগ করতে রাজি নই।
সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তালুকদার আব্দুল খালেকের দুর্নীতি ও তার সঙ্গে সখ্য বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক এনায়েতুল বলেন, আমাকে নিয়োগে তার সুপারিশ ছিল। তবে আমার আমলে তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি। এর আগে আমরা তদন্ত করে কাগজে-কলমে কোনো দুর্নীতি পাইনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) খুলনা শাখার সভাপতি কুদরত-ই-খুদা বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা এই প্রতিষ্ঠানে থাকলে তা কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। গত এক যুগে তারা একযোগে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। এদের অবিলম্বে এ সব পদ থেকে সরিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক। আর শিক্ষার্থীদের টাকা এখনো স্বৈরাচারদের পকেটে যাবে— এটা মানা যায় না। এ বিষয়ে ইউজিসিকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রাস্টি হিসেবে থাকাটা আইনিভাবে দেখা হবে। এরই মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে একটি তদন্ত করেছিলাম। সেখানে বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছিলাম এবং তাদের কিছু রিকমেন্ডেশন দেওয়া হয়েছে। তবে এই দুই ট্রাস্টির বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এই নিয়ে আমরা আবারও তদন্ত করব।
উপাচার্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, উপাচার্য যদি তাদের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে, সেটিও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে।
এক যুগ পার করলেও এখনো নিজস্ব স্থায়ী ঠিকানা নেই খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির (এনডব্লিউইউ)। নেই পরিপূর্ণ একাডেমিক পরিবেশও। কেবলই সময়ের গায়ে জমেছে অনিয়মের ধুলো। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, অর্থনৈতিক দুর্ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা— এসব যেন প্রতিষ্ঠানের নিত্যদিনের সঙ্গী।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একের পর এক সতর্কবার্তা পৌঁছালেও তাতে কর্ণপাত তো দূরের কথা, প্রকাশ্যেই অবজ্ঞা করে গেছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান তালুকদার আব্দুল খালেক। দীর্ঘদিন ধরে এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিপ্রসূত নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্তে ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন এলেও রয়ে গেছে পুরনো ছায়া। এখনো তাকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে সরানো হয়নি । তারই সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া বর্তমান উপাচার্য দায়িত্বে থেকে আজও থেকে গেছেন সেই একই বন্ধনে আবদ্ধ। অতীতের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার— সব আড়াল করতেই যেন চলছে নিঃশব্দ আঁতাত।
২০১২ সালে খুলনার মাটিতে যাত্রা শুরু করে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। সূচনালগ্ন থেকেই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তার পাশে ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়া বইলেও বোর্ডের কাঠামোয় তেমন কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেনি। শুধু পরিবর্তন হয়েছেন চেয়ারম্যান, কিন্তু পুরনো প্রভাবশালী দুই নেতাকে ট্রাস্টি সদস্য রেখেই সাজানো হয়েছে নতুন বোর্ড।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া খুলনার শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দেশের অন্যান্য স্থানে যখন ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি চালাচ্ছিল, তখনো খুলনায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। তবে ৩০ জুলাই রাতে খুলনা সার্কিট হাউজে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে জীবননাশের হুমকি দেন তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম কামাল হোসেন। সেই সময়ে তারা পুলিশকে ছাত্রদের ওপর গুলি করার সুপ্রিম নির্দেশও দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাঈম মল্লিক বলেন, সেদিন সার্কিট হাউজে তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম কামাল হোসেন আমাদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেন। না মেনে নিলে পরিবারসহ জীবননাশের কথা বলেন। আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও ডেকে এনে একই হুমকি দেন। পরে মিডিয়ার সামনে আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি মর্মে স্টেটমেন্ট দিতে বাধ্য করেন।
ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা জানান, ওই সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশকেও তারা আন্দোলনের নামলে ছাত্রদের ওপর গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। ঠিক পরদিনই পুলিশ আমাদের ওপর গুলি ছোড়ে, গণগ্রেপ্তার চালায়।
নাঈম মল্লিক আরও বলেন, এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় তাদের রাখা হয়েছে, এতে আমরা মর্মাহত। আমরা অবিলম্বে তাদের এই পদ থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানাই। স্বৈরাচারদের এই পদে রেখে জুলাই আন্দোলনের পুরো ছাত্রসমাজের রক্তের সাথে বেইমানি করছে এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, কিছু আইনি জটিলতার কারণে তাদের আমরা বাদ দিতে পারিনি। তবে পরপর তিনটি বোর্ড সভায় কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাকে বাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম কামাল এরই মধ্যে দুটি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের আমরা ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়েও সাড়া পাইনি। তৃতীয়বার আবারও চিঠি পাঠানো হবে। এবার সাড়া না পেলে তাদের বাদ দেওয়ার জন্য যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।
ড. সেখ মো. এনায়েতুল বাবর ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের একজন অধ্যাপক। ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি তাকে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ নিয়োগ পাওয়ার জন্য এনায়েতুল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যে জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছিলেন, তাতে নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে চাকরি জীবনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের খুলনা মহানগর কার্যনির্বাহী পরিষদের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
জীবনবৃত্তান্তে লেখা হয়েছে, ড. এনায়েতুলের ফুফাতো ভাই অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, খালা খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হালিমা ইসলাম। এ ছাড়া তার এই নিয়োগের জন্য তৎকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তালুকদার আব্দুল খালেকের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেখ মো. এনায়েতুল বাবর এই দুই ট্রাস্টির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এ কারণেই তাদের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে টাকা লুটপাট হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনা যাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে উপাচার্যকে সহায়তা করছেন নতুন নিয়োগ পাওয়া দুই ট্রাস্টি মো. মিজানুর রহমান ও সৈয়দ হাফিজুর রহমান। এ প্রসঙ্গে জানতে এই দুই ট্রাস্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘তিনি আওয়ামী লীগের লোক হওয়ায় আমরা ট্রাস্টি বোর্ড থেকে তাকে বারবার পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছি। তবে তিনি কোনোভাবেই পদত্যাগ করতে রাজি নন। এই নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।’
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক এনায়েতুল বাবর বলেন, আমি আওয়ামী লীগের লোক— এটি সত্য। এর বাইরে যাওয়ার আমার সুযোগ নেই। তবে আমি আওয়ামী আদর্শের হলেও লোক হিসেবে সৎ, কোনো দুর্নীতি করি না।
ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বলার পরও কেন পদত্যাগ করছেন না— এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আমাকে এখানে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি যদি না সরান তাহলে পদত্যাগ করব কেন? আর যদি দেখি পরিস্থিতি খারাপ দিকে যাচ্ছে, এখানে আর সম্মান নিয়ে টিকে থাকা যাচ্ছে না, তখন পদত্যাগ করতে পারি। তবে সহজে পদত্যাগ করতে রাজি নই।
সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তালুকদার আব্দুল খালেকের দুর্নীতি ও তার সঙ্গে সখ্য বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক এনায়েতুল বলেন, আমাকে নিয়োগে তার সুপারিশ ছিল। তবে আমার আমলে তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি। এর আগে আমরা তদন্ত করে কাগজে-কলমে কোনো দুর্নীতি পাইনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) খুলনা শাখার সভাপতি কুদরত-ই-খুদা বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা এই প্রতিষ্ঠানে থাকলে তা কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। গত এক যুগে তারা একযোগে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। এদের অবিলম্বে এ সব পদ থেকে সরিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক। আর শিক্ষার্থীদের টাকা এখনো স্বৈরাচারদের পকেটে যাবে— এটা মানা যায় না। এ বিষয়ে ইউজিসিকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রাস্টি হিসেবে থাকাটা আইনিভাবে দেখা হবে। এরই মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে একটি তদন্ত করেছিলাম। সেখানে বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছিলাম এবং তাদের কিছু রিকমেন্ডেশন দেওয়া হয়েছে। তবে এই দুই ট্রাস্টির বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এই নিয়ে আমরা আবারও তদন্ত করব।
উপাচার্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, উপাচার্য যদি তাদের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে, সেটিও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে।
ঝড়ের কবলে পড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের পর গাছে চাপা পড়ে জাটিয়া ইউনিয়নের নিজতুলন্দর গ্রামের সুরুজ আলীর দুটি, নুরুল ইসলামের একটি, আব্দুর রহিমের দুটি, আবু সিদ্দিকের একটি ও ইদ্রিস আলীর দুটি এবং সোহাগী ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের রিপনের দুটি, শাহ্ নেওয়াজের একটি ও সিরাজুল ইসলামের একটি বসতঘর ভেঙে গেছে
১ দিন আগেপ্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা সারোয়ার আলমকে সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি ও পদায়ন করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
১ দিন আগেপ্রার্থীরা জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিপুলসংখ্যক শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকারি উদাসীনতার কারণে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে দেশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শূন্যপদ বাড়ছে, অন্যদি
১ দিন আগে