আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে কোচিং সেন্টার, পালন হয় হাঁস-মুরগি!

নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৩১
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে পালন করা হচ্ছে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। ছবি: রাজনীতি ডটকম

নড়াইলে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দ করা একাধিক ঘরে ঝুলছে তালা। কিছু ঘরে কোচিং সেন্টার চালু করা হয়েছে। আবার বেশ কিছু ঘরে পালন করা হচ্ছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি!

অভিযোগ রয়েছে, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক দুর্নীতি ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনদের বদলে অনেক সচ্ছল পরিবারকেও দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। ফলে এই ঘরে তাদের থাকার প্রয়োজন হয় না। তারাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নানা কাজে ব্যবহার করছে।

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য বলছে, নড়াইলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের নামে বরাদ্দ দেয় সদর উপজেলা প্রশাসন। তবে স্থানীয়দের বক্তব্যে এসব ঘরের বরাদ্দ নিয়েই রয়েছে প্রশ্ন।

সরেজমিনে উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের দূর্বাজুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রেনুকা রানীর নামে বরাদ্দ ঘরটিতে তালা ঝুলছে। রেনুকা রানী মুলিয়া ইউনিয়ন ৪/৫/৬ নম্বর সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য। তার স্বামীর ও পৈত্রিক সম্পত্তি এবং নিজস্ব ঘর থাকা সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে তিনি নিজের নামে টিআর/কাবিটা কর্মসূচির অধীনে দুর্যোগ সহনশীল এ বাসগৃহটি বরাদ্দ নিয়েছেন।

একই ইউনিয়নের হিজলডাঙ্গা গ্রামের জয়ন্তী রানীর নামে বরাদ্দ ঘরটিকে রীতিমতো কোচিং সেন্টার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকারি এ ঘরে সকাল থেকে শুরু হয় স্কুলপড়ুয়াদের কোচিং করানো। কোচিং শেষে তালাবদ্ধ পড়ে থাকে ঘরটি।

Narail-Ashroyon-Prpoject-House-02-Photo-24-04-2025

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পরিণত হয়ে গেছে কোচিং সেন্টারে। ছবি: রাজনীতি ডটকম

সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের রজিবুল ইসলামের নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘরটিতে তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরা জানান, ঘর পাওয়ার পর তাকে কখনো এলাকায় দেখা যায়নি।

সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের এক পরিবারের নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘরে ভাড়া থাকছে অন্য পরিবার। ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় তারাপুর গ্রামের হ্যাপি বেগমের নামে। কিন্তু ওই ঘরটিতে বর্তমানে বসবাস করছেন বড়গাতি গ্রামের এক নারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, আমার ঘর না থাকায় মাসিক ৫০০ টাকায় ঘরটিতে ভাড়া থাকছি।

অন্যদিকে সীতারামপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব ভাবনা রানী। স্বামী দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে আছেন। খুপড়ি ঘরে বসবাসরত ভূমিহীন এ মানুষটির কপালে জোটেনি আবাসন প্রকল্পের ঘর। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘মোগো ঘরবাড়ি নাই। আর সরকার মোগো ঘর দেয় নাই। আর জ্যাগো (যাদের) ঘরবাড়ি, জায়গাজমি আছে হ্যাগো (তাদের) ঘর দিয়া থুইছে।’

উপকারভোগী সাবেক ইউপি সদস্য রেনুকা রানী তার তালাবদ্ধ ঘরের ছবি তুলতে আপত্তি জানিয়ে এ নিয়ে লেখালেখি না করতে অনুরোধে করেন। অন্যদিকে কোচিং সেন্টার পরিচালানাকারী জয়ন্তী রানী বলেন, ‘ঘরটি খালি পড়ে আছে। তাই কোচিং করাচ্ছি।’

জানতে চাইলে শাহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া রাজনীতি ডটকমকে বলেন, বেশির ভাগ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেন না। এ কারণে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন বাছাই করতে পারেন না। এ জন্য অধিকাংশ ঘর খালি থাকে।

নড়াইল সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, কিছু অভিযোগ আসছে। কিছু অভিযোগের সত্যতাও আছে। যেসব ঘর খালি পড়ে আছে সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নামে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

নাটোরে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় যুবদল নেতা কারাগারে

নাটোরের সিংড়া উপজেলার উত্তর দমদমা এলাকায় ধর্ষণচেষ্টা মামলায় পান্না সরকার (৩৬) নামে এক যুবদল নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শনিবার (৩১ মে) দুপুরে পুলিশ তাকে চালান দিলে এ আদেশ দেন আদালত। এর আগে শুক্রবার (৩০ মে) রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে।

১২ ঘণ্টা আগে

চবিতে তরুণীকে লাথি মারা কর্মীকে জামায়াতের বহিষ্কার

চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে তরুণীকে লাথি মারায় আকাশ চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছে মহানগর জামায়াত। অনাকাঙ্ক্ষিত ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহর সই করা বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

১৩ ঘণ্টা আগে

রাজধানীতে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতদের নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাদের বয়স হবে আনুমানিক ২০ থেকে ২৫। আজ শনিবার দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

১৪ ঘণ্টা আগে

শিক্ষার্থীদের অজানা, শিক্ষকদের ভুলে যাওয়া এক জাদুঘর

ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ। দীর্ঘ ইতিহাস আর সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের বাহক এই প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল একটি নিজস্ব জাদুঘর, যা আজ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে তালাবদ্ধ অবস্থায়। অযত্ন, অবহেলা ও অবমূল্যায়নের নিদর্শন হয়ে, গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্

১৪ ঘণ্টা আগে