চবিতে তরুণীকে লাথি মারা কর্মীকে জামায়াতের বহিষ্কার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে তরুণীকে লাথি মারায় আকাশ চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছে মহানগর জামায়াত। অনাকাঙ্ক্ষিত ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহর সই করা বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ওই তরুণীর ওপর প্রকাশ্যে লাথি মারার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ঝড় উঠে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক তীব্র আঘাতে এক নারীকে ফেলে দেন মাটিতে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবক হিসেবে শনাক্ত হন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আকাশ চৌধুরী। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগর পর্যায়ের কর্মী বলে স্বীকার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত। তবে সংগঠনটি এক বিবৃতির মাধ্যমে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে এবং ঘটনাটিকে "চরম নিন্দনীয় ও অনভিপ্রেত" হিসেবে অভিহিত করেছে।

ঘটনার দু’দিন পর শুক্রবার (৩০ মে) জামায়াতের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকায় যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য দেখা গেছে, তা নিন্দনীয়। জামায়াতের কোনো পর্যায় থেকে সেদিনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশনা ছিল না।”

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আকাশ চৌধুরী নামের যে ব্যক্তি সেদিন নারীকে লাথি মারার ঘটনায় জড়িত, তিনি নিজ ইচ্ছায় সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। তার ওই কর্মকাণ্ড জামায়াতের নীতিমালার পরিপন্থী। এজন্য তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

ঘটনার দিন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের একটি শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলছিল প্রেস ক্লাব এলাকায়। দাবি ছিল, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির প্রতিবাদ এবং রাজশাহীতে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা। মানববন্ধনে হঠাৎ হামলা চালায় ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ নামের একটি গ্রুপ। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন।

এই হামলার সময়ই ভাইরাল ছবির ঘটনা ঘটে, যেখানে আকাশ চৌধুরী এক নারীকে সজোরে লাথি মারছেন। এতে নারীর মাথা আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে এ ঘটনাকে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ হিসেবে উল্লেখ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

ভাইরাল হওয়া আকাশ চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌর এলাকার নেছার আহমদের বাড়িতে। তিনি জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নগরের মুরাদপুর এলাকায় একটি সুন্নি দলের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় তার সম্পৃক্ততা আগে থেকে নানা মহলে আলোচিত হলেও এবার সরাসরি ভিডিওপ্রমাণ সামনে আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো থানায় মামলা হয়নি। তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত নারী যদি অভিযোগ করেন, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন-সাধারণ কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে একজন যুবক কীভাবে এতটা আগ্রাসী হতে পারে এবং সংগঠনগুলো এদের কীভাবে প্রশিক্ষিত করছে। অনেকেই জামায়াতের বিবৃতিকে ‘দায় এড়ানোর কৌশল’ হিসেবেও দেখছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, “এটা কেবল একজন ব্যক্তির আচরণ নয়, বরং দীর্ঘদিনের সহিংস রাজনৈতিক চর্চার ফসল। এই ধরনের ঘটনা সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার অভাবকে স্পষ্ট করে।”

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

হঠাৎ ঝড়ে ঘরবাড়ি-গাছপালা লণ্ডভণ্ড, পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি

ঝড়ের কবলে পড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের পর গাছে চাপা পড়ে জাটিয়া ইউনিয়নের নিজতুলন্দর গ্রামের সুরুজ আলীর দুটি, নুরুল ইসলামের একটি, আব্দুর রহিমের দুটি, আবু সিদ্দিকের একটি ও ইদ্রিস আলীর দুটি এবং সোহাগী ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের রিপনের দুটি, শাহ্ নেওয়াজের একটি ও সিরাজুল ইসলামের একটি বসতঘর ভেঙে গেছে

১ দিন আগে

আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এখন সিলেটের ডিসি

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা সারোয়ার আলমকে সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি ও পদায়ন করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

১ দিন আগে

৩ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ৪৩তম নন-ক্যাডারদের

প্রার্থীরা জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিপুলসংখ্যক শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকারি উদাসীনতার কারণে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে দেশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শূন্যপদ বাড়ছে, অন্যদি

১ দিন আগে

১১ এনজিও'র ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে রাজশাহীতে এবার কৃষকের আত্মহত্যা

এনজিও ও স্থানীয় সুদকারবারিদের ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে রাজশাহীতে এবার আকবর হোসেন (৫০) নামে এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।

১ দিন আগে