ঢাবি প্রতিনিধি
ছয় বছরের বিরতিতে হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সারা দেশের নজরও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিকে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণে এই নির্বাচন জমজমাট হয়ে উঠেছে। ১০টি প্যানেল আর এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াইয়ে এখন শেষ মুহূর্তে ভোটের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সবাই।
ঢাবি শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা আলোচিত এই ভোটে তিনটি বিষয়কে ‘ফ্যাক্টর’ বিবেচনা করছেন— নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভোট, জগন্নাথ হলের ভোট এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট। শিক্ষার্থী ও ভোটাররা বলছেন, এই তিন ভোটব্যাংকের মধ্যে যেকোনো একটিই এই নির্বাচনের ফল যেকোনো প্রার্থীর অনুকূলে এনে দিতে সক্ষম।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আটটি ভোটকেন্দ্রের ৮১০টি বুথে একযোগে শুরু হবে ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। ডাকসুতে ২৮টি ও হল সংসদে ১৩টি পদের জন্য তারা প্রত্যেকে ভোট দেবেন।
ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব ভোটার উপস্থিত হয়ে গড়ে প্রত্যেকে ভোট দিতে ১০ মিনিট সময় নিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া বিকেল ৪টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রে লাইনে থাকবেন, তাদের সবাইকেই ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে।
গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর দেশের রাজনীতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়েছে ঢাবি ক্যাম্পাসেও। সব ছাত্র সংগঠন এখন প্রকাশ্যে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে। ডাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদল থেকে শুরু করে ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), বামজোটসহ বাকি ছাত্র সংগঠনগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের দ্বিগুণেরও বেশি। এবার ২৮টি পদে লড়াই করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদেই লড়াই করছেন ৪৫ জন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবার হল সংসদেও প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের দ্বিগুণের বেশি। এবার ১৮টি হলে ২৩৪টি পদে লড়াই করবেন মোট এক হাজার ১০৮ জন প্রার্থী।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত ভোটকেন্দ্র ও বুথ। ছবি: ফোকাস বাংলা
ডাকসু নির্বাচনে প্যানেলই রয়েছে ১০টি। আবিদ-হামিম-মায়েদের নেতৃত্বে ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নির্বাচনে রয়েছে আলোচনায়। ঢাবি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বামপন্থি সংগঠনগুলো অবশ্য এবার এক থাকতে পারেনি। তাদের একাংশ ইমি-বসুর নেতৃত্বে গঠন করেছে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’। আবার তিন বাম সংগঠন (ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও জাসদ ছাত্রলীগ) ঘোষণা করেছে ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেল।
এদিকে চব্বিশের আন্দোলন থেকে উঠে আসা বৈষম্যবিরোধীরাও তিন শামিয়ানায় আছেন। কাদের-বাকেরের নেতৃত্বে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’, উমামার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ ও খালিদ-মাহিনের নেতৃত্বে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল এই নির্বাচনে লড়াই করছে। এর বাইরেও প্যানেল দিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ (ডাকসু ফর চেঞ্জ)। জুবায়ের-মোসাদ্দেকদের আংশিক প্যানেলও রয়েছে একটি। এর বাইরেও আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। দীর্ঘ দেড় দশক ঢাবি ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করে আসা ছাত্র সংগঠনটির নেতাদের সবাইকেই গা ঢাকা দিতে হয়েছে। কার্যক্রমে না থাকলেও ছাত্রলীগের নিরব সমর্থক ও অনুসারীরা এবারের ডাকসু নির্বাচনের ফল নির্ধারণে অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু কার পকেটে যাবে ছাত্রলীগের এসব ভোট? এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এক পক্ষের ভাষ্য, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ‘রাজত্ব’ চলাকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেকেই এই সংগঠনটিতে নাম লিখিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ছাত্রশিবিরের যেসব নেতা প্রকাশ্যে ও আলোচনায় এসেছেন, তাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগের কমিটিতে পর্যন্ত ছিলেন। ফলে এসব প্রার্থীরা ছাত্রলীগের ভোট পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন ভোটের লড়াইয়ে। ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের সমর্থক-অনুসারী, যারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ‘রাজত্ব’ চলাকালে হয়তো অনেকটা প্রচ্ছন্ন ও নিষ্ক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এসব প্রার্থীর পক্ষেই হেলে থাকবে ছাত্রলীগের ভোটব্যাংক।
ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল একটি বামপন্থি সংগঠনের একজন নেতা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ছাত্রলীগ না থাকলেও ছাত্রলীগের সমর্থক-অনুসারীরা রয়ে গেছে। তাদের ভোট নেহায়েত কম না। ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার সময় প্রকাশ্যে শিবিরের বিরোধিতা করলেও অনেক শিবিরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন তাদেরই ভোট দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ওই নেতা আরও বলেন, আবার বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আজ দেশের রাজনীতিকে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েছে। ফলে বৈষম্যবিরোধীদের মধ্য থেকে যারা যারা ডাকসুতে প্রার্থী হয়েছে, তাদের ছাত্রলীগ ভোট দেবে বলে মনে হয় না। ছাত্রদলও তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। ছাত্রদলের কাউকেও তাই তাদের ভোট দেওয়ার কথা না। সেক্ষেত্রে শিবির বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই হয়তো ভোট পাবে ছাত্রলীগের।
ছাত্রলীগের একাধিক অনুসারীর কাছে জানতে চাইলে তারা এই নির্বাচন নিয়ে ‘খুব একটা আগ্রহী নন’ বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, তাদের কেউ ভোট দিলে শিবিরকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভোট দেবেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা কাউকেও। বেশির ভাগ অনুসারী হয়তো ভোটই দেবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন জগন্নাথ হলে— দুই হাজার ২২৫ জন। এই হলের শিক্ষার্থীরা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী, কিছু রয়েছেন ইসলাম বাদে অন্যান্য ধর্মের। এই ভোটব্যাংক কোন পক্ষে যাবে, সেটি ডাকসু নির্বাচনের ফল নির্ধারণে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ন্যারেটিভ ও সোচ্চার নামে দুটি সংগঠনের জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, এই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন তাদের একজনও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও । জিএস প্রার্থী ফরহাদকে ভোট দেওয়ার পক্ষে মত দেননি। ওই জরিপে ভিপি পদে সবচেয়ে বেশি ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন যথাক্রমে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা, স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ও প্রতিরোধ পর্ষদের শেখ তাসনিম আফরোজ ইমির পক্ষে।
জগন্নাথ হলের কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলছেন, তারা ‘যোগ্য প্রার্থী’কে ভোট দেবেন। এ ক্ষেত্রে জগন্নাথ হল কমিনিউটির সুযোগ-সুবিধা দেখে বিপদে-আপদে পাশে থাকার মতো কোনো প্রার্থীকে তারা বেছে নিতে পারেন বলে জানান।
ছাত্রদলের প্যানেলের একজন সম্পাদক প্রার্থী অবশ্য বলছেন, জগন্নাথ হলে নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে তারা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। ছাত্রদলের প্যানেলের প্রতি জগন্নাথ হলের ভোটারদের ‘সফট কর্নার’ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ডাকসু ও হল সংসদের ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত কার্জন হল ভোটকেন্দ্র। ছবি: ফোকাস বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি আবাসিক হল থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের জন্য কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নেই। এ কারণে হলে আসন না পেয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় অনাবাসিক হিসেবে, সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় অর্ধেক। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, এসব অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ডাকসুর ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
ঢাবির বিভিন্ন হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কম বলে মনে করা হয়। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই নানা ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন বা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ফলে তাদের ভোটের সিদ্ধান্তও সেই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে পড়ে।
বিপরীতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কম। ফলে যেসব প্রার্থীকে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার ও দাবি পূরণের জন্য যোগ্য বলে মনে করবেন, তাদের পক্ষেই যাবে এসব শিক্ষার্থীর ভোট। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত অনেকটাই হবে রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠনগুলোর বাইরে স্বতন্ত্র বা তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী প্রার্থীদের পক্ষে বেশি থাকবে। অনাবাসিক ভোটারদের উপস্থিতি তাই বেশি হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর বাইরে যেসব প্রার্থী রয়েছেন, তাদের দিকে ফলাফল হেলে পড়তে পারে।
প্রধান তিন ‘ফ্যাক্টরে’র বাইরেও ডাকসু নির্বাচনের ফল নির্ধারণে নারী ভোটাররা ভূমিকা রাখতে পারেন। ডাকসুতে মোট ভোটারের প্রায় ৪৮ শতাংশ বা অর্ধেকই নারী। একসময় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সে চিত্র বদলে গেছে। বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে অনুপাতে ডাকসুতে নারী প্রার্থী কম হলেও তা আগের তুলনায় বেশি।
এবারের নির্বাচনে ভিপি পদে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী— স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা, প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের তাসনিম আফরোজ ইমি, রোকেয়া হলের মোসা. জান্নাতী বুলবুল, কবি সুফিয়া কামাল হলের মারজিয়া হোসেন জামিল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তাহমিনা আক্তার। এই পাঁচজনের মধ্যে অবশ্য উমামা ও ইমিকে ঘিরেই আলোচনা হচ্ছে বেশি।
সাধারণ সম্পাদক পদে একমাত্র নারী প্রার্থী রোকেয়া হলের সাবিনা ইয়াসমিন। আর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নারীদের মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন শামসুন নাহার হলের সানজানা আফিফা (অদিতি), একই হলের ফাতেহা শারমিন (এ্যানি), একই হলের আশরেফা চৌধুরী ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের অদিতি ইসলাম।
জিএস প্রার্থী সাবিনা খুব একটা আলোচনায় নেই ভোটের মাঠে। এজিএস পদের প্রার্থীদের মধ্যে আশরেফা চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী, তিনি রয়েছেন আলোচনায়।
নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা নারী ভোটার বলেই যে নারী প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন, বিষয়টি এমন না। তবে ক্যাম্পাস ও হলে নারীদের যেসব সমস্যা সেগুলো সমাধানে যাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবসম্মত মনে করবেন, তাদের পক্ষেই ভোট দেবেন তারা।
তারপরও একাধিক নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে উমামা ফাতেমা ও আশরেফা চৌধুরীর বিষয়ে নারী ভোটারদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ১২টি সম্পাদক পদের বেশ কয়েকটিতেও নারী প্রার্থীদের প্রতি তাদের পক্ষপাত গোপন করেননি।
ভোটের হিসাব দিন শেষে যাই হোক, এবারের ডাকসু নির্বাচন অবাধ হবে বলেই মনে করছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, একক কোনো রাজনৈতিক দলের আধিপত্য না থাকায় এবারের ডাকসু নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠিত হবে বলে বিশ্বাস তাদের।
ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সাইফ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। এ ছাড়া যেহেতু এবারের ডাকসু কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপের মুখোমুখি হবে না, তাই আশা করা যায় আমরা এবার একটি অবাধ, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ডাকসু প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি।
একই আশাবাদ জানিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানও। তিনি বলেন,
অধ্যাপক নিয়াজ আরও বলেন, সারা দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা শুভ কামনা জানাচ্ছেন। এখন একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণের প্রক্রিয়াকে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে যে কাজ করছে, তাতে তোমরা তোমাদের ভূমিকা পালন করবে, সেটাই প্রত্যাশা করছি।
সবাইকে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য বলেন, তোমাদের আগ্রহ ও ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করেছি। তোমরা নির্ভয়ে ভোট দিতে আসবা, আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। ভোটকেন্দ্রে আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তারা নির্ভয়ে এসে ভোট দিতে পারবে।
ছয় বছরের বিরতিতে হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সারা দেশের নজরও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিকে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণে এই নির্বাচন জমজমাট হয়ে উঠেছে। ১০টি প্যানেল আর এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াইয়ে এখন শেষ মুহূর্তে ভোটের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সবাই।
ঢাবি শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা আলোচিত এই ভোটে তিনটি বিষয়কে ‘ফ্যাক্টর’ বিবেচনা করছেন— নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভোট, জগন্নাথ হলের ভোট এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট। শিক্ষার্থী ও ভোটাররা বলছেন, এই তিন ভোটব্যাংকের মধ্যে যেকোনো একটিই এই নির্বাচনের ফল যেকোনো প্রার্থীর অনুকূলে এনে দিতে সক্ষম।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আটটি ভোটকেন্দ্রের ৮১০টি বুথে একযোগে শুরু হবে ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। ডাকসুতে ২৮টি ও হল সংসদে ১৩টি পদের জন্য তারা প্রত্যেকে ভোট দেবেন।
ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব ভোটার উপস্থিত হয়ে গড়ে প্রত্যেকে ভোট দিতে ১০ মিনিট সময় নিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া বিকেল ৪টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রে লাইনে থাকবেন, তাদের সবাইকেই ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে।
গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর দেশের রাজনীতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়েছে ঢাবি ক্যাম্পাসেও। সব ছাত্র সংগঠন এখন প্রকাশ্যে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে। ডাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদল থেকে শুরু করে ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), বামজোটসহ বাকি ছাত্র সংগঠনগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের দ্বিগুণেরও বেশি। এবার ২৮টি পদে লড়াই করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদেই লড়াই করছেন ৪৫ জন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবার হল সংসদেও প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের দ্বিগুণের বেশি। এবার ১৮টি হলে ২৩৪টি পদে লড়াই করবেন মোট এক হাজার ১০৮ জন প্রার্থী।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত ভোটকেন্দ্র ও বুথ। ছবি: ফোকাস বাংলা
ডাকসু নির্বাচনে প্যানেলই রয়েছে ১০টি। আবিদ-হামিম-মায়েদের নেতৃত্বে ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নির্বাচনে রয়েছে আলোচনায়। ঢাবি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বামপন্থি সংগঠনগুলো অবশ্য এবার এক থাকতে পারেনি। তাদের একাংশ ইমি-বসুর নেতৃত্বে গঠন করেছে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’। আবার তিন বাম সংগঠন (ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও জাসদ ছাত্রলীগ) ঘোষণা করেছে ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেল।
এদিকে চব্বিশের আন্দোলন থেকে উঠে আসা বৈষম্যবিরোধীরাও তিন শামিয়ানায় আছেন। কাদের-বাকেরের নেতৃত্বে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’, উমামার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ ও খালিদ-মাহিনের নেতৃত্বে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল এই নির্বাচনে লড়াই করছে। এর বাইরেও প্যানেল দিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ (ডাকসু ফর চেঞ্জ)। জুবায়ের-মোসাদ্দেকদের আংশিক প্যানেলও রয়েছে একটি। এর বাইরেও আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। দীর্ঘ দেড় দশক ঢাবি ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করে আসা ছাত্র সংগঠনটির নেতাদের সবাইকেই গা ঢাকা দিতে হয়েছে। কার্যক্রমে না থাকলেও ছাত্রলীগের নিরব সমর্থক ও অনুসারীরা এবারের ডাকসু নির্বাচনের ফল নির্ধারণে অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু কার পকেটে যাবে ছাত্রলীগের এসব ভোট? এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এক পক্ষের ভাষ্য, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ‘রাজত্ব’ চলাকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেকেই এই সংগঠনটিতে নাম লিখিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ছাত্রশিবিরের যেসব নেতা প্রকাশ্যে ও আলোচনায় এসেছেন, তাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগের কমিটিতে পর্যন্ত ছিলেন। ফলে এসব প্রার্থীরা ছাত্রলীগের ভোট পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন ভোটের লড়াইয়ে। ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের সমর্থক-অনুসারী, যারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ‘রাজত্ব’ চলাকালে হয়তো অনেকটা প্রচ্ছন্ন ও নিষ্ক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এসব প্রার্থীর পক্ষেই হেলে থাকবে ছাত্রলীগের ভোটব্যাংক।
ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল একটি বামপন্থি সংগঠনের একজন নেতা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ছাত্রলীগ না থাকলেও ছাত্রলীগের সমর্থক-অনুসারীরা রয়ে গেছে। তাদের ভোট নেহায়েত কম না। ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার সময় প্রকাশ্যে শিবিরের বিরোধিতা করলেও অনেক শিবিরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন তাদেরই ভোট দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ওই নেতা আরও বলেন, আবার বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আজ দেশের রাজনীতিকে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েছে। ফলে বৈষম্যবিরোধীদের মধ্য থেকে যারা যারা ডাকসুতে প্রার্থী হয়েছে, তাদের ছাত্রলীগ ভোট দেবে বলে মনে হয় না। ছাত্রদলও তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। ছাত্রদলের কাউকেও তাই তাদের ভোট দেওয়ার কথা না। সেক্ষেত্রে শিবির বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই হয়তো ভোট পাবে ছাত্রলীগের।
ছাত্রলীগের একাধিক অনুসারীর কাছে জানতে চাইলে তারা এই নির্বাচন নিয়ে ‘খুব একটা আগ্রহী নন’ বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, তাদের কেউ ভোট দিলে শিবিরকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভোট দেবেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা কাউকেও। বেশির ভাগ অনুসারী হয়তো ভোটই দেবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন জগন্নাথ হলে— দুই হাজার ২২৫ জন। এই হলের শিক্ষার্থীরা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী, কিছু রয়েছেন ইসলাম বাদে অন্যান্য ধর্মের। এই ভোটব্যাংক কোন পক্ষে যাবে, সেটি ডাকসু নির্বাচনের ফল নির্ধারণে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ন্যারেটিভ ও সোচ্চার নামে দুটি সংগঠনের জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, এই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন তাদের একজনও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও । জিএস প্রার্থী ফরহাদকে ভোট দেওয়ার পক্ষে মত দেননি। ওই জরিপে ভিপি পদে সবচেয়ে বেশি ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন যথাক্রমে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা, স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ও প্রতিরোধ পর্ষদের শেখ তাসনিম আফরোজ ইমির পক্ষে।
জগন্নাথ হলের কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলছেন, তারা ‘যোগ্য প্রার্থী’কে ভোট দেবেন। এ ক্ষেত্রে জগন্নাথ হল কমিনিউটির সুযোগ-সুবিধা দেখে বিপদে-আপদে পাশে থাকার মতো কোনো প্রার্থীকে তারা বেছে নিতে পারেন বলে জানান।
ছাত্রদলের প্যানেলের একজন সম্পাদক প্রার্থী অবশ্য বলছেন, জগন্নাথ হলে নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে তারা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। ছাত্রদলের প্যানেলের প্রতি জগন্নাথ হলের ভোটারদের ‘সফট কর্নার’ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ডাকসু ও হল সংসদের ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত কার্জন হল ভোটকেন্দ্র। ছবি: ফোকাস বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি আবাসিক হল থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের জন্য কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নেই। এ কারণে হলে আসন না পেয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় অনাবাসিক হিসেবে, সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় অর্ধেক। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, এসব অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ডাকসুর ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
ঢাবির বিভিন্ন হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কম বলে মনে করা হয়। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই নানা ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন বা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ফলে তাদের ভোটের সিদ্ধান্তও সেই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে পড়ে।
বিপরীতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কম। ফলে যেসব প্রার্থীকে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার ও দাবি পূরণের জন্য যোগ্য বলে মনে করবেন, তাদের পক্ষেই যাবে এসব শিক্ষার্থীর ভোট। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত অনেকটাই হবে রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠনগুলোর বাইরে স্বতন্ত্র বা তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী প্রার্থীদের পক্ষে বেশি থাকবে। অনাবাসিক ভোটারদের উপস্থিতি তাই বেশি হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর বাইরে যেসব প্রার্থী রয়েছেন, তাদের দিকে ফলাফল হেলে পড়তে পারে।
প্রধান তিন ‘ফ্যাক্টরে’র বাইরেও ডাকসু নির্বাচনের ফল নির্ধারণে নারী ভোটাররা ভূমিকা রাখতে পারেন। ডাকসুতে মোট ভোটারের প্রায় ৪৮ শতাংশ বা অর্ধেকই নারী। একসময় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সে চিত্র বদলে গেছে। বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে অনুপাতে ডাকসুতে নারী প্রার্থী কম হলেও তা আগের তুলনায় বেশি।
এবারের নির্বাচনে ভিপি পদে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী— স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা, প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের তাসনিম আফরোজ ইমি, রোকেয়া হলের মোসা. জান্নাতী বুলবুল, কবি সুফিয়া কামাল হলের মারজিয়া হোসেন জামিল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তাহমিনা আক্তার। এই পাঁচজনের মধ্যে অবশ্য উমামা ও ইমিকে ঘিরেই আলোচনা হচ্ছে বেশি।
সাধারণ সম্পাদক পদে একমাত্র নারী প্রার্থী রোকেয়া হলের সাবিনা ইয়াসমিন। আর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নারীদের মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন শামসুন নাহার হলের সানজানা আফিফা (অদিতি), একই হলের ফাতেহা শারমিন (এ্যানি), একই হলের আশরেফা চৌধুরী ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের অদিতি ইসলাম।
জিএস প্রার্থী সাবিনা খুব একটা আলোচনায় নেই ভোটের মাঠে। এজিএস পদের প্রার্থীদের মধ্যে আশরেফা চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী, তিনি রয়েছেন আলোচনায়।
নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা নারী ভোটার বলেই যে নারী প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন, বিষয়টি এমন না। তবে ক্যাম্পাস ও হলে নারীদের যেসব সমস্যা সেগুলো সমাধানে যাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবসম্মত মনে করবেন, তাদের পক্ষেই ভোট দেবেন তারা।
তারপরও একাধিক নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে উমামা ফাতেমা ও আশরেফা চৌধুরীর বিষয়ে নারী ভোটারদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ১২টি সম্পাদক পদের বেশ কয়েকটিতেও নারী প্রার্থীদের প্রতি তাদের পক্ষপাত গোপন করেননি।
ভোটের হিসাব দিন শেষে যাই হোক, এবারের ডাকসু নির্বাচন অবাধ হবে বলেই মনে করছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, একক কোনো রাজনৈতিক দলের আধিপত্য না থাকায় এবারের ডাকসু নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠিত হবে বলে বিশ্বাস তাদের।
ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সাইফ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। এ ছাড়া যেহেতু এবারের ডাকসু কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপের মুখোমুখি হবে না, তাই আশা করা যায় আমরা এবার একটি অবাধ, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ডাকসু প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি।
একই আশাবাদ জানিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানও। তিনি বলেন,
অধ্যাপক নিয়াজ আরও বলেন, সারা দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা শুভ কামনা জানাচ্ছেন। এখন একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণের প্রক্রিয়াকে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে যে কাজ করছে, তাতে তোমরা তোমাদের ভূমিকা পালন করবে, সেটাই প্রত্যাশা করছি।
সবাইকে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য বলেন, তোমাদের আগ্রহ ও ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করেছি। তোমরা নির্ভয়ে ভোট দিতে আসবা, আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। ভোটকেন্দ্রে আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তারা নির্ভয়ে এসে ভোট দিতে পারবে।
চিংড়ি রেণু পরিবহনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। সহজলভ্যভাবে চাষিদের চিংড়ি সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে অবতরণ এবং রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণে সঠিক মাননিয়ন্ত্রণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী বা মুনাফাখোর যেন চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করতে না পারে, সেদিকে খেয়া
১১ ঘণ্টা আগেতারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহি নষ্ট করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ব্যবহার করে গুম-খুনের রাজনীতি চালিয়েছে। লাখ লাখ গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আদালতের বারান্দায় ঘুরিয়েছে। দেশে তিন কোটি নতুন
১৩ ঘণ্টা আগে‘জুলাই স্মরণ সভায় জামায়াতের আমিরের প্রদত্ত বক্তব্যের জন্য মিস হুমা খান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আলোচনায় তারা বাংলাদেশে বিদ্যমান মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম-খুনের বিচারসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময় করেন। মিস হুমা খান জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতের আমি
১৬ ঘণ্টা আগেনির্বাচন নিয়ে কারা শঙ্কা তৈরি করছে, এবং তাদের কেন ধরা হচ্ছে না মন্তব্য করে সরকারের উদ্দেশ্যে ফারুক বলেন, সরকার আপনি বসে আছেন কেন? আপনার আশেপাশেই তো শঙ্কা তৈরি করা লোকগুলো বসে আছে। কারা মিছিল করে বুঝতে পারেন না? কারা মব সৃষ্টি করে নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করছে, সেটা জানতে পারেন না? আপনি কারো ব্য
১৮ ঘণ্টা আগে