ছাত্রলীগ হয়ে নির্যাতনে অংশ নিতেন শিবিরের নেতাকর্মীরা— ফেসবুকে আব্দুল কাদের

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আব্দুল কাদের। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত) পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে থাকতেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। বলেছেন, ছাত্রশিবিরের এসব নেতাকর্মী ঢাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনাগুলোতেও অংশ নিয়েছেন।

রোববার (৩ আগস্ট) রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে আব্দুল কাদের এসব অভিযোগ তুলেছেন শিবিরের বিরুদ্ধে। কাদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কও ছিলেন।

আব্দুল কাদের ফেসবুকে লিখেছেন, হলে থাকার কারণে শিবিরের যে ছেলেগুলা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করত, তারা মূলত আইডেন্টেটি ক্রাইসিস থেকে উৎরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত। সেটা কেবল নিজেকে লীগার প্রমাণের দায় থেকে। লীগ যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাত, তারা সেগুলার অংশীদার হতো, লীগের কালচার-ই চর্চা করত। আমার এই কথাটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি তো এমন ছিল।

কাদের বলেন, ‘আমি বলেছি, শিবির করে আসা ছেলেরা নিজেকে ছাত্রলীগার প্রমাণ করার জন্য ক্ষেত্রবিশেষ উগ্রবাদী ছিল।’ এমন দাবির সমর্থন দিতে গিয়ে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে বিজয় একাত্তর হলে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের রাতভর মারধরের ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, সেখানে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত মাজেদুর রহমান সেই মারধরে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।

ছাত্রশিবিরের আরও এমন অনেকের বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগ করা ও নির্যাতন-নিপীড়নে অংশ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন আব্দুল কাদের। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির দপ্তর সম্পাদক ২০১৭-১৮ সেশনের মুসাদ্দিক বিল্লাহ, জসীমউদ্দিন হলের ২০১৬-১৭ সেশনের আফজালুন নাঈম, মুজিব হলের ২০১৬-১৭ সেশনের ইলিয়াস হোসাইন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ওরফে সোহেল।

কাদের লিখেছেন, ‘শিবিরের স্ট্র‍্যাটিজির জায়গা থেকে ওরা ছাত্রলীগের বড় পদে নিত। হল ক্যান্ডিডেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্ডিডেট হওয়ার কারণে তাকে ছাত্রলীগ যে স্টাইলে কার্যক্রম পরিচালনা করে, ঠিক সেই স্টাইল ফলো করা লাগত। শিক্ষার্থীদেরকে গণরুম, গেস্টরুম, জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার কাজটা একিনের সঙ্গে করতেন তারা। উদ্দেশ্য একটাই— পদ পাইতেই হবে।’

ছাত্রলীগের হল শাখার সম্ভাব্য প্রার্থীদের পেছনে কিছু ‘গুপ্ত শিবির’ থাকত বলেও দীর্ঘ স্ট্যাটাসের একাংশে উল্লেখ করেছেন কাদের। তার ভাষ্য, এ ধরনের শিবির তেলবাজি আর চাটুকারিতায় অনন্য। তারা সবকিছু আগ বাড়িয়ে ‘আনজাম’ দিতেন। ভাই কখন কোথায় আসবে, কখন ভাইটাল প্রোগ্রাম— এসবের তাগিদ দিয়ে জোর করে শিক্ষার্থীদের হাজির করার দায়িত্ব নিতেন।

এ ধরনের কয়েকজনের কথাও স্ট্যাটাসে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন কাদের। তাদের মধ্যে রয়েছে জহুরুল হক হলের ২০২১-২২ সেশনের হাসানুল বান্না, যিনি ৫ আগস্টের পরে শিবিরের সদস্য সম্মলনে গিয়ে নিজেকে সদস্য হিসেবে প্রকাশ করেন এবং এখন তিনি শিবিরের জহু হল শাখার বড় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন বলে লিখেছেন কাদের।

এফ রহমান হলের ২০১৮-১৯ সেশনের রায়হান উদ্দিনের কথাও উল্লেখ করেছেন আব্দুল কাদের। লিখেছেন, রায়হান ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মেধাবী হওয়ায় হল ক্যান্ডিডেটের বক্তব্যগুলা নিজে লিখে দিতেন। এফ রহমানের হলের কুখ্যাত ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের একনিষ্ঠ অনুসারী রায়হান ৫ আগস্টের পরে শিবিরের বড় নেতা হিসেবে হাজির হয়েছেন। আগের ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে এখন নতুন আইডি চালান।

কাদের বলেন, ৫ আগস্টের পরে হলে হলে ব্যাচ প্রতিনিধি হয়, শৃঙ্খলা কমিটি হয়। এটা কার প্রেসক্রিপশনে হয়, সেটা প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখলেই বোঝা যায়। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটাভুটি করে অধিকাংশ ব্যাচ প্রতিনিধি শিবির নিজেদের লোকজনকে নির্বাচিত করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই পরে সর্বেসর্বা হয়ে উঠে, একপ্রকার ছায়া প্রশাসন হিসেবে হলে ফাংশন করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই আবার ৫ তারিখে পরে ছাত্রলীগের নাম তালিকা তৈরির দায়িত্ব নেয়। স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদের সাথী ভাইদের তালিকার বাইরে রাখে।

শিবিরের যেসব নেতাকর্মী ছাত্রলীগের ভেতরে থেকে ছাত্রলীগের মতো আচরণ করেছে, ৫ আগস্টের পর তাদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে ঢাবি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েমের সঙ্গে আলোচনা হয় বলে জানান কাদের। তার দাবি, সাদিক কায়েম এ সময় কাদেরকেই বলেন তারা যেন এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। শেষ পর্যন্ত এমন কয়েকজনের নামে মামলা দেওয়া যায়নি বলে জানান কাদের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক সাদিক কায়েমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, নির্যাতনে জড়িত ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি বাধা দিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে এনেছেন।

কাদের লিখেছেন, ৫ আগস্টের পরে জুলাইয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি মামলা হয়। মাহিম সরকার ও আরমান হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। এই দুই মামলার বাদীর সঙ্গেই শিবিরের সাদিক কায়েম সরাসরি দেখা করে কয়েকজন ব্যক্তির ব্যাপারে তদবির করেন। মাহিন ও আরমানকে তালিকা দেন। ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের নাম মামলা থেকে যেন কেটে দেয়, সে বিষয়ে সাদিক কায়েম সরাসরি তদবির করেন। আরমান পরে খোঁজ নিয়ে দেখেন, সাদিক কায়েম যে নামগুলা দিয়েছেন, তারা শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

কাদের বলছেন, জুলাইয়ের অঙ্গীকার রক্ষা করা যায়নি এই তদবিরকাণ্ডের কারণে। সবাই সবার দলীয় মানুষজনকে বাঁচিয়ে দিতে গিয়ে জুলাইয়ের সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তি দিয়েছে। শিবির অস্বীকার করছে, তাদের কোনো নেতাকর্মী গুপ্তভাবে লীগের ভেতরে ঢুকে লীগের কালচার চর্চা করেনি। তারা আমাদের কাছে প্রমাণ চাচ্ছে। কিন্তু শিবির তাদের বিগত এক যুগের হল কমিটি ও ঢাবি শাখা কমিটি প্রকাশ করুক। তাহলেই সবাই বুঝতে পারবে, শিবির ছিল নাকি ছিল না।

শিবিরের হল কমিটিগুলোও নেতকর্মীদের আড়ালে রাখার জন্যই প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে মনে করেন আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, বর্তমানের হল কমিটিও তো প্রকাশ করতে পারে। ৫ তারিখের পর তাদের ভয় কীসের? নাকি তাদের কৃতকর্ম প্রকাশ হয়ে যাবে, সেই ভয়ে প্রকাশ করছে না! হলে হলে এখন শিবিরের হয়ে মাতব্বরি করা মানুষের পূর্বের চেহারা প্রকাশ হয়ে যাবে!

সত্য রাজনীতি চালিয়ে যাবেন জানিয়ে আব্দুল কাদের লিখেছেন, অনেকেই ভয় দেখাচ্ছেন যে সংঘবদ্ধভাবে ওরা মিডিয়ায় ক্রমাগত চরিত্র হনন করছে। কিন্তু আমি হার মানার পাত্র না। হাসিনার আমলে গুটিকয়েকজন মানুষ লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছিল। হামলা-মামলা, জেল জুলুম সহ্য করে টিকে গিয়েছিলাম একটা সুন্দর সত্য রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই লড়াই চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ, সেটা আমি একা হলেও।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

তফসিল 'প্রত্যাখ্যান' করলেও নির্বাচন বয়কট করছে না আ.লীগ

ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনকে "একটি অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে অবৈধ নির্বাচন" বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে অবস্থানরত দলটির নেতারা।

৮ ঘণ্টা আগে

তফসিলের পর হাদির ওপর গুলি-নির্বাচন অফিসে আগুন, ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

১৯ ঘণ্টা আগে

রুহুল কবীর রিজভীর দুঃখ প্রকাশ

শনিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আরটিভির লোগো ব্যবহার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় এবং এ ছাড়া শরিফ ওসমান হাদিকে আক্রমণকারী একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে ডাকসুর ভিপির চা খাওয়ার দৃশ্যটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল

২০ ঘণ্টা আগে

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার শপথ ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা যোদ্ধাদের

গেরিলা কমান্ডার ও কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল আহসান খান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ও কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মো. শাহ আলম, খুলনা আঞ্চলিক কমান্ডার ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি অ্যাড. এস এম এ সবুর, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কামরুজ্জামান ননী, আনোয়ারুল হক, অধ্যক্ষ আবু হোসেন, অ্যাড.

২০ ঘণ্টা আগে